আমার ১ম সিনেমা Kuch Kuch Hota Hai এর কাস্টিং এ শাহরুখ এবং কাজল তখন একেবারে কনফার্ম। ঝামেলা বাধে বাকি দুইজন সাপোর্টিং কাস্টের হিরো ও হিরোইনকে নিয়ে।
.
টিনা চরিত্রটির জন্য আমার প্রথম পছন্দ ছিল টুইংকেল খান্না। ছোটবেলা থেকেই তার সাথে পরিচয় থাকার সুবাদে আমার বিশ্বাস ছিল এই চরিত্রটির জন্য সে পারফেক্ট। তাকে মুভিটি অফার করা হলে ২দিন পর সে জানায়, মুভির প্রথম অর্ধেকে থাকব অথচ বাকিসময় থাকবনা এমন চরিত্রে অভিনয় করা সম্ভব না। কারন পরবর্তী সময়ে মানুষ সিনেমাটা শাহরুখ-কাজলের সিনেমা হিসেবেই মনে রাখবে।
.
এরপর কারিশমা, ঐশ্বরিয়া, টাবু, উর্মিলা, রভীনা ট্যান্ডন সবাই এই রোলটি রিজেক্ট করে দেয়। একসময় আদিত্য চোপড়া ও শাহরুখের সাজেশনে বাধ্য হয়ে প্রায় নতুন অভিনেত্রী রানী মুখার্জীকে অফার করা হলে সে রাজি হয়। তবে সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, কিভাবে তুমি দর্শকদের বিশ্বাস করাবে যে শাহরুখ কাজলকে ছেড়ে আমার মত মেয়ের প্রেমে পড়বে? আমি বললাম, ঐটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।
.
তবে, আমান চরিত্রটির জন্য অভিনেতা খুঁজতে গিয়ে আরো ঝামেলায় পড়তে হল। চরিত্রটি প্রথমে অফার করি সাইফ আলি খানকে। সাইফ জানায়, এই চরিত্রটি হচ্ছে NRI। সে এইধরনের বিদেশ ফেরত পশ্চিমা স্টাইলের কোন চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি নয়। সে চায় তার চরিত্রটি হবে শুদ্ধ ভারতীয়।
.
এরপর তখনকার সময়ে উদীয়মান অভিনেতা ' চন্দ্রচূড় সিং' কে চরিত্রটি অফার করি। ঐসময়ে অনেকে তাকে 'পরবর্তী বচ্চন' হিসেবে মনে করত। যথারীতি চন্দ্রচূড় সিংও প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেয়।
.
এর কিছুদিন পর আমি চাংকি পান্ডের বাসায় পার্টিতে গিয়েছি। সবাই তখন আমাকে ঘিরে ধরে আমার সিনেমা সম্পর্কে জানতে চাইলো। আমি বললাম, বাকি সব চরিত্র কনফার্ম হলেও 'আমান' চরিত্রটির জন্য কাউকে পাচ্ছিনা। সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং সালমান খান। আমাদের কাছে এসে জানতে চাইলেন কি ব্যাপার? সালমানের বোন আলভিরা বলল, কারান একটা চরিত্রের জন্য অভিনেতা খুঁজছে। ১০-১৫ দিনের পার্ট। কেউ রাজি হচ্ছেনা।
.
সালমান আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি চরিত্র এইটা? আমি তাকে বিস্তারিত বললাম। সব শুনে সালমান বলল, কেউ এই চরিত্রটি করবেনা। কোন হিরোই এই চরিত্রের জন্য রাজি হবেনা। পুরো ইন্ড্রাস্ট্রিতেই একজন বেকুবই এই চরিত্রটি করতে রাজি হবে। সেটা হচ্ছি আমি। আমার বোন বলেছে, তুমি অনেক ভাল মানুষ। আগামীকাল আমার বাসায় এসে ন্যারাশন করে যাও।
.
বাড়ি ফিরে ঘটনাটি বাবাকে বললাম। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বাবা বললেন, পাগল হয়ে গেছো? সালমান কোনদিনও এই চরিত্রে অভিনয় করবেনা। আমিও মনে মনে একই কথাই ভাবছিলাম। তখন সালমান খান 'Jab Pyar Kisi Se Hota Hai' মুভির শ্যুটিং করছিল। তাই আমি শ্যুটিং সেটেই তার সাথে দেখা করতে গেলাম। সালমান তখন টুইংকেলকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কেন কারানের মুভি করতে রাজি হওনি? টুইংকেল জানাল, চরিত্রটা মোটেই ভাল না। সালমান বলল, আমার কাছেও সে এই মুভির একটা রোলের জন্য অফার করতে আসছে। এই রোলটাও অত ভাল না।
.
আমি পুরোদিন শ্যুটিং সেটে কাটালাম। সন্ধ্যায় সালমানের সাথে তার বাড়িতে গেলাম। তার মায়ের সাথে আমাদের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। আমাকে দেখেই বলল, সবাই দেখে যাও, যশ আর হিরুর ছেলে এসেছে বাসায়। সালমান তাকে বলল, কারান শীঘ্রই একটা সিনেমাও বানাতে যাচ্ছে।
.
কিছুক্ষণ পরে আমরা স্ক্রিপ্ট ন্যারেশনের জন্য বসলাম। যেহেতু এটা আমার প্রথম সিনেমা তাই আমি আমার মনঃপ্রাণ উজাড় করে স্ক্রিপ্ট ন্যারেট করলাম। সিনেমার ১ম অংশের ন্যারেশন শুনে সালমান বলল, পানি খাবে? আমি বললাম, হ্যা। সালমান বাড়ির ভেতরে গিয়ে পানি নিয়ে এলো। আমি পানির গ্লাস মুখে দেয়া মাত্রই সে একটা হাসি দিয়ে বলল, অসাধারণ ন্যারেশন করেছো!
.
আমার তখন পানি গলায় আটকে যায় অবস্থা। কোনক্রমে ধাতস্থ হয়ে বললাম, কিন্তু আপনার চরিত্রের ন্যারেশন তো এখনো শোনা বাকি। সালমান আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আমি জানি তোমার সিনেমাটি কেমন হবে। এবং আমি চরিত্রটি করতে রাজি। যতটা না তোমার জন্য তার চেয়েও বেশি তোমার বাবা যশ জোহারের কারনে। কারন ওনার মতন ভাল মানুষ ইন্ড্রাস্ট্রিতে আর দুটি নেই। বাসায় গিয়ে তোমার বাবাকে বলো, তার জন্যই আমি তোমার সিনেমাটি করতে রাজি হয়েছি।
.
বাড়ি ফিরে ঘটনাটি বাবাকে জানালাম। তিনি খুশি হলেন। আদিত্য চোপড়া খবরটি জানার পরই আমাকে বলল, তুমি বুঝতে পারছো তোমার সিনেমায় কোন লেভেলের কাস্টিং রয়েছে? শাহরুখ, সালমান, কাজল ও রানির মত অভিনেতারা তোমার সিনেমার অংশ। আর এভাবেই আমার প্রথম সিনেমার কাস্টিং চূড়ান্ত হল।- করন জোহর।।।