What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other মাসুদ করিমঃ বাংলা গানের অমর গীতিকবি (1 Viewer)

Placebo

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Jul 31, 2018
Threads
847
Messages
16,671
Credits
181,489
Recipe soup
Onion
4tmJufu.jpg


এরশাদ সরকারের আমলে [সম্ভবত ১৯৮৭/৮৮] এক ঈদে বিটিভিতে দেশসেরা কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রচার হবে। আমরা সবাই টেলিভিশনের সেটের সামনে উপস্থিত। অনুষ্ঠান শুরু হলো ''যখন থামবে কোলাহল/ ঘুমে নিঝুম চারিদিক'' শিরোনামে একটি অদ্ভুত সুন্দর রোমান্টিক গান দিয়ে। সুবল দাসের সুর করা ও রুনার পাগল করা কণ্ঠে গানটি সেদিনই মনের ভেতর গেঁথে যায়। সেই অনুষ্ঠানে রুনা ১০ টি গান পরিবেশনা করেছিলেন যার মধ্য ''শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো'' শিরোনামে আরেকটি গান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তীতে ঐ গানগুলো '' যখন আমি থাকবো নাকো'' শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন । সেই প্রথম মাসুদ করিম নামে একজন গীতিকারের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল 'যখন থামবে কোলাহল' গানটির জন্য। এর আগেও বিভিন্ন চলচ্চিত্রের টাইটেলে 'গীতিকার মাসুদ করিম' নামটি দেখেছিলাম তবে চলচ্চিত্রের সেই মাসুদ করিমই যে রুনার গানটির গীতিকার বুঝতে পারিনি।

মাসুদ করিম বাংলা চলচ্চিত্র ও আধুনিক গানের এক অমর গীতিকবি যিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার। ১৯৩৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বাবা রেজাউল করিম ছিলেন একজন সরকারী চাকরিজীবী আর মা নাহার ছিলেন গৃহিনী।

১৯৫৫ সাল থেকে মাসুদ করিম গান লিখা শুরু করেন। রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কয়েক বছর চাকরি করেছেন ময়মনসিংহ এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিতে ভাইস চান্সেলরের সেক্রেটারি হিসেবে। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য গান রচনা আরম্ভ করেন। ৬০, ৭০ ও ৮০র দশকে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। রচনা করেছেন অনেক গীতিনকশা, যার মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গানের অনুষ্ঠান, ঈদের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। গীতিকার মাসুদ করিম চলচ্চিত্র প্রযোজনাতেও ছিলেন। তার প্রযোজিত ছবির নাম- 'অচেনা অতিথি', 'ওয়াদা' এবং 'ভালো মানুষ'। বাংলাদেশের পাঠক মহলে কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা সিরিজ 'মাসুদ রানা' আজো জনপ্রিয় একটি সিরিজ হিসেবে বিবেচিত হয় অথচ কেউ জানে না এই 'মাসুদ রানা' নামটির পেছনের কথা। কেউ জানে না এই ''মাসুদ রানা'' নামটা কেন দিয়েছিলেন লেখক! মাসুদ রানা'র নামকরণ করা হয় দুজন বাস্তব মানুষের নামের অংশ মিলিয়ে। কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর স্ত্রী আধুনিক সংগীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমীনের সাথে পরামর্শ করে নামটি নির্বাচন করেন। তাদের দুজনেরই বন্ধু স্বনামধন্য গীতিকার মাসুদ করিমের 'মাসুদ' আর কাজী আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলার হিরো (নায়ক) ইতিহাসে পড়া মেবারের রাজপুত রাজা রানা প্রতাপ সিংহ থেকে 'রানা' নিয়ে নাম হলো "মাসুদ রানা"। অর্থাৎ মাসুদ রানা'র মাসুদ হলেন লেখকের প্রিয় বন্ধু গীতিকার মাসুদ করিম।

cghUKH4.jpg


ষাট ও সত্তর দশকের রেডিও টিভি ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় শিল্পী দিলারা আলোর সাথে গীতিকার মাসুদ করিমের সঙ্গে ১৯৬৫-তে চট্টগ্রাম রেডিওতে পরিচয় এবং বিয়ে। মাসুদ করিম তখন চট্টগ্রাম বেতারের প্রযোজক। মাসুদ করিমের লেখা বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য লেখা অনেক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৮২ সালে আমজাদ হোসেনের 'দুই পয়সার আলতা' ছবির গানের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহন করেন এবং এরপর ১৯৯৪ সালে দিলিপ সোমের 'হৃদয় থেকে হৃদয়' ছবির গানের জন্য ২য়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সেরা গীতিকারের পুরস্কার অর্জন করেন।

মাসুদ করিমের লিখা চলচ্চিত্রের গানগুলো একেকটি চলচ্চিত্রকে যেমন করেছে স্মরণীয় তেমনি একেকজন শিল্পিকেও দিয়েছিল শ্রোতামহলে তুমুল জনপ্রিয়তা। কামাল আহমেদের 'রজনিগন্ধা' ছবিতে তাঁর লিখা '' আমি রজনিগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই'' , 'লালুভুলু' ছবিতে ' তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছো মানুষ কিনা ' , 'দুই পয়সার আলতা' ছবিতে ''এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই'', 'পুত্রবধু' ছবিতে ' সন্ধ্যারও ছায়া নামে' গানগুলো সাবিনা ইয়াসমিন , খুরশিদ আলম ও মিতালি মুখারজিকে আজো স্মরণীয় করে রেখেছে। মাসুদ করিমের লিখা গানে শুধু এই দেশের কিংবদন্তীতুল্য শিল্পীরা কণ্ঠ দেয়নি , উপমহাদেশের কিংবদন্তীতুল্য অনেক শিল্পী মাসুদ করিমের লিখা গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন যাদের মধ্য আছেন গজল শিল্পী মেহেদি হাসান, শ্যামল মিত্র, কুমার শানু, অলকা ইয়াগনিক, উশা উথুপ। মাসুদ করিমের গানগুলোর কথা এতো কাব্যিক ও নান্দনিক যে খুব সহজেই মনে গেঁথে যেতো ।আজকের ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে বেড়ে উঠা ডিজিটাল গীতিকারদের মাসুদ করিমের গানগুলো থেকে শেখা উচিৎ যে গান লিখাটা কত নান্দিনিক ও মেধার ব্যাপার যা সবাই পারে না। ১৯৯৬ সালের ১৬ই নভেম্বর বাংলা গানের এই মহান গীতিকার কানাডায় মৃত্যুবরন করেন । আজ এই মহান গীতিকারের জন্মদিন কিন্তু কোথাও কোন পত্র পত্রিকা, টিভি চ্যানেল কিংবা এফএম রেডিও তে এই গীতিকারকে স্মরণ করার চেষ্টা দেখিনা। আমরা এতোটাই আধুনিক ও অকৃতজ্ঞভাবে এগিয়ে যাচ্ছি যেখানে আমাদের গুনি মানুষদের কেউ মনে রাখে না।

মাসুদ করিমের লিখা কিছু উল্লেখযোগ্য গান-

যখন থামবে কোলাহল

শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাবো
সন্ধ্যারও ছায়া নামে
আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো
পথেরও সাথী নামো গো পথে আজ
তুমি আমি দুজনাতে

তোমরা যারা আজ আমাদের
Meri Zindagi Merey Paas Aa
তুমি যে আমার ভালোবাসা
যে বাঁশী ভেঙে গেছে
খোলা জানালায় এক মুঠো আলো
হেসে খেলে এই মনটা আমার
জোনাক জোনাক রাত
আমাদের পৃথিবীতে তোমরা দুজন
দুঃখ দেয়ার মানুষটাও হারিয়ে গেছে আমার
ভালোবাসা মানে না কোন পরাজয়

তুমি এমন কোন কথা বলো না
 

Users who are viewing this thread

Back
Top