What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other গাজী মাজহারুল আনোয়ারঃ একজন ‘বাংলাদেশী’ ও একটি ‘প্রতিষ্ঠান’এর নাম (1 Viewer)

Placebo

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Jul 31, 2018
Threads
847
Messages
16,671
Credits
181,489
Recipe soup
Onion
xBPEOKh.jpg


'গাজী মাজহারুল আনোয়ার' এই নামটি শুনেনি বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তী'র নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যিনি ২১ হাজার গানের স্রস্টা ও আমাদের বাংলা গানের সর্বকালের সেরা গীতিকারদের একজন । একজন স্বনামধন্য কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও ।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় [১৯৬২-৬৩ সালে] প্রথম গান লিখেন '' "বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে" যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্থানে গান লিখা শুরু করেন। সেইসময়ে গানপ্রতি ৫০ টাকা পেতেন যা দিয়ে তাঁর পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু। সেই যে শুরু করেছিলেন আজ অবধি তাঁর গান লিখা আজো চলছে । বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেও টেলিভিশনের জন্য গান লিখে গেছেন।

রেডিও ও টেলিভিশনে গান নিয়ে যখন ব্যস্ত তখন ১৯৬৫ সালে যুক্ত হোন চলচ্চিত্রের সাথে। সুভাষ দত্তের 'আয়না ও অবশিষ্ট' ছবিতে ''আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল'' গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লিখা সফলতার সাথে শুরু করেন। গানটি আজো প্রয়াত আঞ্জুমান আরা বেগম ও বশির আহমেদের কণ্ঠের সেরাগানগুলোর তালিকায় শীর্ষে আছে । রুনা লায়লার গাওয়া চলচ্চিত্রের প্রথম গান 'গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে কি হবে '' গানটিও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা । তাঁর লিখা বহু কালজয়ী গান আমাদের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডারের আলাদা এক সম্পদ হয়ে আছে। শুধু তাই নয় , তাঁর লিখা 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' গানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রেরণাদায়ক গান হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল যা আজো গাওয়া হয় ও হবে চিরকাল । বিবিসি বাংলা শতাব্দির সেরা ২০ গানের মাঝে জয় বাংলা বাংলার জয় গানটি সহ আরও দুটো গানসহ গাজির লিখা মোট ৩ টি গান স্থান পেয়েছে ।আঞ্জুমান আরা বেগম , রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন,এন্দ্রু কিশোর, সৈয়দ আব্দুল হাদি সহ এমন কোন খ্যাতিমান শিল্পী নেই যে যার কণ্ঠে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা গান নেই । জহিরুল হকের 'সারেন্ডার' ছবিতে জসিমের লিপে 'সবাই তো ভালোবাসা চায় ' গানটি দিয়ে তো সারেন্ডার ও জসিমকে দর্শকদের হৃদয়ে ঠাই করে দিয়েছেন এবং যে গানটির জন্য সুরকার আলম খান ও শিল্পী অ্যান্ড্রো কিশোর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ।১৯৯২ সালে 'উচিৎ শিক্ষা', ১৯৯৬ সালে 'অজান্তে' ,২০০১ সালে 'চুড়িওয়ালা', ২০০২ সালে 'লাল দরিয়া', ২০০৩ সালে 'কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি' চলচ্চিত্রগুলোর জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে সর্বমোট ৫ বার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।

QkHH4jv.jpg


গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গানগুলোর কথা যেমন হৃদয়ছোঁয়া ঠিক তেমনি তাঁর চলচ্চিত্রগুলোও ছিল হৃদয় ছোঁয়া দারুন কিছু । তিনি একজন সফল কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও ।গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবিগুলোর কাহিনীগুলো হতো নাটকীয়তায় ভরপুর যা বেশ কয়েকবার মোড় নিতো।কিন্তু গাজী যেন কিভাবে কিভাবে সব নাটকীয়তা এক সুতোয় বেঁধে সুন্দর এক সমাপ্তি টানতেন যা আমাকে বারবার খুব মুগ্ধ করতো । গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবি প্রযোজনার একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যার নাম 'দেশ চিত্রকথা'। দেশ চিত্রকথা থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ৪২ টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার সবগুলোতে তিনি পরিচালক হিসেবে ছিলেন না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলো হলো –শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন,আর্তনাদ,পাষাণের প্রেম, এই যে দুনিয়া, । পরিচালনা করেননি কিন্তু ছবি প্রযোজনা করেছেন সেই ছবিগুলো হলো সমাধান,অগ্নিশিখা, অনুরোধ, জিঞ্জির, আনারকলি, নানটু ঘোটক, চোর, বিচারপতি, সন্ধি, স্বাক্ষর ছবিগুলো । অন্যর প্রযোজিত কিন্তু গাজীর পরিচালনার ছবিগুলো হলো ইমপ্রেস টেলিফিল্মের 'জীবনের গল্প', অনন্ত জলিল প্রযোজিত 'হৃদয় ভাঙা ঢেউ'। এছাড়াও তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি, ৩ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য, সেন্সরবোর্ডের সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ৫বার গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক , জিয়া স্বর্ণপদক , এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন ।

চিরকাল 'বাংলাদেশী' বা বাংলাদেশপন্থি হয়ে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এই মেধাবী মানুষটি যিনি আজ আমাদের মিডিয়ায় বড় অবহেলিত। জন্মদিনে দেশের এই বরেণ্য মেধাবী মানুষটিকে জানাই অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দোয়া করি প্রিয় এই মানুষটি আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক আরও অনেক অনেক দিন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার শুধু একজন ব্যক্তি নন, বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির একটি 'প্রতিষ্ঠান' হয়ে চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লিখা উল্লেখযোগ্য কিছু গান –

জয় বাংলা বাংলার জয়
একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয়
একতারা তুই দেশের কথা
আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল
গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে
চোখের নজর এমনি কইরা
তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে
সাতটি রঙের মাঝে মিল খুঁজে না পাই
আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে
অনেক সাধের ময়না আমার
শুধু গান গেয়ে পরিচয়

চলে আমার সাইকেল হাওয়ায়
আমার নাম কালু মিয়া
মাগো মা ওগো মা
আউল বাউল লালনের দেশে
জয় হবে হবেই আমার
এই মিথ্যেটুকু যদি সত্যি হলো
কোকিলা কালো বলে গান শুনেনা কে
ঝিলমিল ঝিলমিল করবে রাত
একটা চিঠি লিখে দাও
জয় আবাহনী জয় মোহামেডান
জীবনটা যেন এক
সবাই তো ভালোবাসা চায়
মামা ও মামা আমি তোমার
চিঠি লিখলাম তোমাকে
ভালোবাসা জীবন থেকে অনেক বড়
মাগো তুমি একবার খোকা বলে ডাকো
আমরা দুজন চিরসাথি
সবার জীবনের প্রেম আসে

এমন অসংখ্য অসংখ্য শ্রুতিমধুর , চিরস্মরণীয় গান লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ।।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top