What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ব্ল্যাকমেইল – নকল হলেও ভাল, কিন্তু নকল কেন? (1 Viewer)

Placebo

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Jul 31, 2018
Threads
847
Messages
16,671
Credits
181,489
Recipe soup
Onion
cDRuwys.jpg


ববি আর মৌসুমী দুই বান্ধবী। সমাজের নোংরা সিস্টেমের ফাঁদে পড়ে তারা বাধ্য হয় অপরাধজগতে জড়িয়ে পড়তে। এক সময় ঢাকা শহরের সব অবৈধ ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠে তারা। পুলিশ তাদের ধরতে বদ্ধপরিকর। তাদের নামে পুলিশের কাছে জমা হয়েছে ফাইলের পর ফাইল। কিন্তু নেই কোন প্রমাণ। তাই গভীর জাল বিছাল পুলিশ। একসময় যারা সবাইকে ব্ল্যাকমেইল করে এসেছে, এখন তারাই ব্ল্যাকমেইলের শিকার। কি হবে এবার? ববি-মৌসুমীর বন্ধুত্ব কি ভেঙে যাবে? এমনই কাহিনী নিয়ে 'ব্ল্যাকমেইল' – একটি অনন্য মামুন চলচ্চিত্র!

কাহিনীর ব্যাপারে আসা যাক। সবাই-ই জানেন এ ছবির কাহিনী গুন্ডে ছবির কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত। এই 'অনুপ্রাণিত' কথাটা আমার নয়, পরিচালকের ভাষ্য। তবে সে যাইহোক, ঢাকাই ছবিতে আজকাল দেখা যায় সেগুলো নকল হলেও নির্দিষ্ট একটা ছবির নকল না, একাধিক ভারতীয় ছবি থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে নিজেদের মৌলিক দাবি করা ছবি। কিন্তু নির্বোধের মত একাধিক ছবির কাহিনী নিতে গিয়ে সেসব ছবি হয়ে ওঠে দুর্বোধ্য। কিন্তু 'ব্ল্যাকমেইল' ছবির কাহিনী একাধিক ছবি থেকে নয়, শুধুই গুন্ডে থেকে নেওয়া আর তাই ব্ল্যাকমেইল আদতে গুন্ডে ছবির নকল না অনুপ্রাণিত সে নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও একটা বিষয় নিশ্চিত যে এ ছবির কাহিনী সাজানো গোছানো, মোটেই খাপছাড়া নয়।

ছবির চিত্রনাট্যের ব্যাপারেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গুন্ডেকেই অনুসরণ করা হয়েছে। গুন্ডে ছবির চিত্রনাট্য মোটের উপর ভালোই ছিল। ব্ল্যাকমেইলের চিত্রনাট্যও তাই ভালোই। তবে ইতিবাচক দিক হল এ ছবির সংলাপ। একশন ছবি হওয়া সত্ত্বেও 'জ্বালিয়ে দেব, পুড়িয়ে দেব, খেয়ে ফেলব' মার্কা সংলাপ নেই। বরং সংলাপে পরিচয় মিলেছে অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সব হাস্যরসের। কিছু সংলাপের অন্তর্নিহিত অর্থও আবার দারুণ গভীর। তাই শিক্ষিত শ্রেণির দর্শকের ভাল লাগবে এ ছবির সংলাপ। রোমান্টিক সিনগুলো যে অন্য আর দশটা ছবির মত যাত্রাপালায় পরিণত হয়নি, সে জন্যেও সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব ছবির সংলাপেরই।

অনন্য মামুনের পরিচালনা ভাল। শুধু ভাল নয়, বেশ ভাল। আগের দুই ছবির চেয়ে অনেক ভাল কাজ দেখিয়েছেন। তার ডিরেকশন খুবই স্মার্ট। ডিজিটাল প্রিন্ট আর আধুনিক প্রযুক্তির সম্ভাব্য সেরা প্রয়োগটাই ঘটিয়েছেন তিনি এই ছবিতে। তার পরিচালনায় ভুলত্রুটি খুব কমই চোখে পড়েছে। অভিনেতাদের থেকে সেরাটা বের করে এনেছেন মুনশিয়ানার সাথে। পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন ঝঞ্ঝা ঝামেলা এড়িয়ে চলতে পারলে সম্ভাবনাময় একজন পরিচালক হয়ে ওঠার সব প্রতিভাই তার কাজে লক্ষণীয়।

এ ছবির গানগুলো সবই মাঝারিমানের। শুনতে ভাল কিন্তু মনে দাগ কাটার মত নয়। থ্রিলিং কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে দর্শককে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করেছে গানগুলো, এর বেশি কিছু নয়। পাশাপাশি চোখেরও আরাম দেবে, কারণ গানগুলোর পিকচারাইজেশন সুন্দর। লোকেশন যেমন নয়নাভিরাম তেমনি গ্রাফিক্সের কাজও অসাধারণ। কিন্তু সবমিলিয়ে একটা পরিপূর্ণ গান হিসেবে 'প্রিয়া' ছাড়া আর কোন গানের কথাই মনে করতে পারছি না।

mU2wyNQ.jpg


একশন এ ছবির একটা দুর্বল দিক। আজকের দিনে এসেও যদি একশন দৃশ্যে ঢিসুম ঢিসুম জাতীয় শব্দ আর দুই নায়িকার মুখে টেনিস প্লেয়ারদের মত ধ্বনি শুনতে হয়, তবে তা বড্ড কানে লাগে। একশনগুলোও মোটের উপর স্রেফ চলনসই মনে হয়েছে, খুব একটা ভাল লাগেনি।

অভিনয়ে আসা যাক। মিলনের চরিত্র কাহিনীর শেষে এসে নতুন মোড় নেবে ঠিকই কিন্তু সবমিলিয়ে তার চরিত্রটি প্রধান দুই নারী চরিত্রের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ছবি তাকে একজন বাণিজ্যিক ধারার একক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে কতটা সাহায্য করবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তবে একজন অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তিনি আবারও দারুণ প্রভাবশালী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তাই একটা বিষয় নিশ্চিত যে পরিচালকরা সঠিকভাবে তাকে ব্যবহার করতে পারলে বাণিজ্যিক ছবির একক নায়ক হিসেবেও ঠিকই উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারবেন তিনি। এবং একজন বাণিজ্যিক নায়ক হিসেবে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে তার মত পরিপূর্ণ অভিনেতার খুবই দরকার।

ছবির কেন্দ্রীয় দুই চরিত্রে আছেন ববি ও মৌসুমী হামিদ। তাদের দুজনের কারও পারফরম্যান্সই উচ্ছ্বসিত হবার মত নয়। গল্প অনুযায়ী তারা ভীষণ ডেয়ারিং দুজন নারী। কিন্তু সেই ডেয়ারিং ভাবটা তুলে ধরার ক্ষেত্রে কাউকেই খুব একটা সপ্রতিভ মনে হয়নি। লাউড অভিনয় সে খামতি ঢাকতে পারে নাই। তবে বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রের নায়িকাসুলভ ভাবভঙ্গি বেশ ভালোই রপ্ত করেছেন ববি। সব ধরণের দৃশ্যেই তার অভিনয় ভাল না হলেও সাবলীল। অপরদিকে অভিনেত্রী হিসেবে মৌসুমী ভাল। কিন্তু বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হিসেবে নিজেকে উপস্থাপনের খুঁটিনাটি তার এখনো শেখা বাকি। আর তার এক্সপ্রেশনগুলো দর্শককে কনফিউজড করে দেয়। সিরিয়াস দৃশ্যে তিনি এমনভাবে মুখ ফুলিয়ে থাকেন যে মনে হয় তিনি ভীষণ বিরক্ত কিংবা এই বুঝি কেঁদে দেবেন। তার এক্সপ্রেশন আরেকটু ন্যাচারাল হলে ভাল হয়।

মিশা সওদাগর বরাবরের মতই ভাল। কারও কারও কাছে অন্য ছবির তুলনায় এ ছবিতে তার চরিত্রটা কিছুটা নিরামিষ মনে হতে পারে। কারণ এ ছবিতে তার চিরাচরিত ভিলেনসুলভ মারমুখী ভাব নেই, নেই কোন ক্যাচফ্রেজ জাতীয় সংলাপও। কিন্তু এসব ছাড়াই তিনি দুর্দান্ত। তার চরিত্রটা এমনিতেই ইন্টারেস্টিং, পাশাপাশি তার সংলাপের হিউমারগুলোও অসম্ভব মজার। এছাড়া ছবির আরেকটা উল্লেখযোগ্য চরিত্রে আছেন দিপালী। তার অভিনয় ভালো লেগেছে। তবে অভিনয়ের চেয়েও এক্সপ্রেশন দিয়ে একেবারে প্রথম দৃশ্য থেকেই তিনি নিজের চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তুলেছেন। বলতে দ্বিধা নেই, প্রধান দুই নায়িকার চেয়ে তার কাজ বেশি নজর কেড়েছে।

সবমিলিয়ে ব্ল্যাকমেইল সুন্দর নির্মাণে সুন্দর একটা ছবি। এ ছবির প্রধান বিশেষত্ব হল এ ছবিতে কোন অশ্লীলতা নেই। মাঝেমধ্যে দুই নায়িকার শর্ট প্যান্ট পরে থাকা দৃশ্য বাদে অস্বস্তিকর কোন দৃশ্য নেই। তাই নির্দ্বিধায় পরিবারের সাথে বসে দেখা যায়। মৌলিক ছবি হলে ব্ল্যাকমেইলকে অসাধারণ বলতে কোন দ্বিধা থাকত না। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অনন্য মামুনের নির্মাণশৈলীকে অসাধারণ বলাই যায়। আর নাচ-গান, কমেডি, একশন, থ্রিলার সবমিলিয়ে বিনোদনের কমপ্লিট প্যাকেজ এ ছবি দেখলে যে দর্শকের টিকিটের পয়সা উসুল হবে, তাও বলা যায় সন্দেহাতীতভাবে।

পুনশ্চঃ বাংলা ছবিতে কিছুদিন ধরে একটা নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তা হল কাহিনী ঠিক রেখে শুধু মূল চরিত্রের লিঙ্গান্তর ঘটিয়ে ভারতীয় কোন ছবিকে হুবহু নকল করা। ইফতেখার চৌধুরী এ কাজ করেছিলেন প্রথম, এবার অনন্য মামুনও সে পথে পা বাড়ালেন। কিন্তু কেন? পরিচালকরা কাহিনীতে মৌলিকত্ব আনবেন এটাই সবার কাম্য। কিন্তু তারা যদি উল্টে চৌর্যবৃত্তিকেই আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলে, সেটাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান, তাহলে কিভাবে হয়? পরিচালকরা এ বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন কি?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top