What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম স্টান্টম্যান জেমস ফাইটিং গ্রুপের গল্প (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
Wv9aUah.jpg


হা হা হা…। ছেড়ে দে শয়তান। আমাকে ছেড়ে দে। বাঁচাও, বাঁচাও…। আকাশ থেকে লাফ দিয়ে নায়ক এসে পড়ল গাড়ির সামনে। গাড়ি থেমে গেল, আর ভিলেনের পাণ্ডাদের সঙ্গে ধুন্দুমার মারপিট চলছে। 'হা…' 'হু…' 'ইয়া…' 'ভিসুম, ভিসুম'…। সব শেষে ভিলেন আর নায়কের ফাইনাল মারপিট এবং নায়িকাকে ছেড়ে দিয়ে ভিলেনের পলায়ন।

কাজ তাদের ঝগড়া-ফ্যাসাদ। কখনো ভাড়াটে খুনি, কখনো ছিনতাই আবার কখনোবা শুধু শুধুই মারপিট করা। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। ঢাকাই সিনেমায় জেমস ফাইটিং গ্রুপ পথিকৃত্ তো বটেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ঢাকায় সিনেমা জগতে নতুন এক ধারার সূচনা করে জেমস ফাইটিং গ্রুপ।

১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরল বীরের দল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যে যার জায়গায় মনোনিবেশ করতে শুরু করলেন। যাদের মন একটু অন্য রকম, সাদা চোখে যাকে বলে শিল্পমনা; তাদের যুদ্ধ থেমে থাকেনি। শুরু হলো নতুন এক যুদ্ধ। শিল্পক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু করলেন মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা যোদ্ধারা।

জেমস ফাইটিং গ্রুপ নামকরণের অন্তর্নিহিত তাত্পর্য জানালেন আমান ও বাবুল। জসিমের 'জে', আমানের 'এ', মাহবুবের 'এম' আর বহুবচন অর্থে 'এস' যোগ করে জেমস নাম রাখা হয়। সূচনা হয় বাংলাদেশের সিনেমা জগতে এক নতুন যুগের। তবে সৃষ্টির কথা আরো পেছনে।

এম এ সাঈদের অফিস ছিল গুলিস্তান বিল্ডিংয়ে। সেখানে আড্ডা দিতেন জসিম-আমানরা। সাঈদ তখন 'দেবর' ছবির কাজ করছিলেন। সাঈদের কর্মকাণ্ড দেখে সিনেমা করার কথা চিন্তা মাথায় আসে এবং সে বছরেই একটা ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। জসিম, আমান, হারুন ও সাঈদ মিলে 'আলেয়ার আলো' নামে ছবির কাজে হাত দিলেন। সময়টা ছিল বৈশাখ মাস আর ইংরেজি এপ্রিল। এফডিসির দোতলায় গান রেকর্ডিং দিয়ে সিনেমার কাজ শুরু করা হলো। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন মালেক মনসুর। সেই ছবিতে শাবানা ও উজ্জ্বল অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে মুক্তিযুদ্ধ ফেরত বন্ধুর দলটি ভালো করেই জড়িয়ে গেলেন। ছবিতে কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিলেন। 'দেবর' ছবির বাকি কাজ করতে আজিমের সঙ্গে কক্সবাজার যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিলেন। চট্টগ্রামে গিয়ে আজিমের বাসায় উঠলেন। সেখানেই প্রথম মাহবুব গুইয়ের সঙ্গে জসিম, আমানের পরিচয়। জসিম, আমানরা তো সিনেমার সঙ্গে জড়ালেনই, মাহবুবও সেই থেকে সিনেমার লোক হয়ে গেলেন।

'উত্সর্গ' ছবিতে প্রথম অ্যাকশন দৃশ্য যুক্ত হলো। রুহুল আমিন বাবুল পরিচালিত ছবিটিতে বেশ কয়েকটি ফাইটিং দৃশ্য ছিল। সব দৃশ্যের অ্যাকশন পরিকল্পনা করেছিলেন জসিম, আমানরা। ছবির পরিচালক জহুরুল আলম আর প্রযোজক ছিলেন মধু। জহরত অভিনয় করেছিলেন সেই ছবিতে। এর মধ্য দিয়ে তাদের গ্রুপ সিনেমাজগতে কাজের ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল।

ঠিক সে সময় নায়ক রাজ রাজ্জাক মজনুর প্রযোজনায় 'রংবাজ' ছবির কাজ শুরু করলেন। আজিম যেহেতু তাদের প্রমোট করছিলেন, তাই তার সঙ্গে কথা বলে রংবাজ ছবিতে মডার্ন ফাইটে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হলেন। ওই ছবির প্রধান ভিলেন ছিলেন জসিম। সে সময়টায় একচেটিয়া কাজ করে জেমস। জসিমের অ্যাকশন আর সহকারী অ্যাকশন ডিরেক্টর আমান। তারপর তারা জেমস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করলেন। জেমস গ্রুপের নামকরণের ব্যাপারটাও বেশ মজার। রংবাজ ছবি করে তাদের খুব নামডাক হয়েছে। সে সময়ে 'এখানে আকাশ নীল' নামে প্রথম রঙিন ছবির কাজ শুরু হলে এমদাদ নামে একজন পোস্টার ডিজাইনার জেমস গ্রুপের নামকরণের বুদ্ধি দিলে সেভাবেই জসিম, আমানরা এর নামকরণ করেন। গ্রুপের কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে গুলিস্তান বিল্ডিংয়ে অফিস নিলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেরা ছবি বানাবেন। সে সময়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। জেমসের আর প্রডিউসার হওয়া হলো না।' তবে তারা থেমে থাকলেন না। ঢাকা জুট মিলে চাকরি করেন দোলন নামে একজন। জেমসের অফিসে এসে আড্ডা দেন। তার ভাই রূপালী ব্যাংকের চাকুরে। দোলন আশ্বাস দিলেন, টাকার সংস্থান তিনি করবেন। আমান আজিমের চিত্রবিতানে ১২৫ টাকায় ও আমিন এস এ প্রডাকশনে ২৫০ টাকা বেতনে চাকরি নিলেন। গুই তখন দেখাশোনা করছে এস এস প্রডাকশনের কাজ। জেমসকে বাঁচাতে বাবুল ও চুন্নু মিলে সিনেমা হলের মালিকদের কাছ থেকে টাকা কালেকশন করেন ছবি বানানোর জন্য। অবশেষে দোলন টাকার সংস্থান করলে ৫০ শতাংশ শেয়ারে সিনেমার কাজ শুরু করল জেমস।

আসমত ও রাজশ্রী রায়কে নেয়া হয়েছিল জেমসের প্রথম ছবির জন্য। ভারত থেকে 'সোলে' ছবির অডিও ক্যাসেট এনে এর কাহিনীচিত্র তৈরি করা হলো। ছবির নাম দেয়া হলো 'দোস্ত-দুশমন'। জেমসের প্রথম ছবির পরিচালক দেওয়ান নজরুল ইসলাম। ১৯৭৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বারী স্টুডিওতে ছবির কাজ শুরু হলো। এর অনেক কাজ কুমিল্লায় বার্ডে করা হয়েছিল। ছবির দ্বিতীয় সহকারী পরিচালক ছিলেন ইবনে মিজান। ১২ হাজার ২০০ ফিটের ছবি দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত। সেই ছবির পোস্টারে লিখে দেয়া হয়েছিল, 'ভারতের সোলে ছবির ছায়া অবলম্বনে'। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর সুপার-ডুপার হিট।

এ কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে আমান বলেন, '১৯৭৯ সালে ছবির কলাকুশলী সবাই মিলে ভারতে গিয়ে সোলে ছবিটি দেখলাম। জসিম বললেন, এটি আগে দেখে ফেললে ছবিটি এত সুন্দর করে বানানো যেত না।'

দোস্ত-দুশমন ছিল ঢাকায় প্রথম বড় বাজেটের ছবি। বস্তির শুটিং করতে এফডিসির ২নং বিল্ডিংয়ের পেছন থেকে রেললাইন পর্যন্ত বস্তি বানানো হয়েছিল। তখন ল্যাব ও প্রশাসন বিল্ডিং ছিল না। শুটিংয়ে আসার পথে ডাটসান ৬০০ গাড়ি ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের সামনে অ্যাকসিডেন্ট হয়। মারাত্মক ইনজুরি নিয়ে সেদিন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আমান। তিন দিন অচেতন অবস্থায় ছিলেন। মাথায় কাচ ঢুকে গিয়েছিল, পা কেটে যায়। হাসপাতাল থেকে এসে দেখেন জসিম সুচরিতাকে আর বাবুল (রুহুল আমিন বাবুল) নতুনকে বিয়ে করে ফেলেছে। বারুদ রিলিজ হওয়ার আগেই বাবুল জেমস ছেড়ে চলে গেল।

১৯৭৮ সালের ২৪ জুন জেমসের বারুদ ছবি মুক্তি পায়। এটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। দোস্ত-দুশমন, বারুদ ছাড়া জেমসের উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে 'ওস্তাদ-সাগরেদ', 'জনি', 'আক্রোশ', 'বাইদা', 'মাস্তান', 'কালিয়া', 'বাংলার নায়ক', 'গরিবের ওস্তাদ', 'ভাইজান', 'জিদ্দি' ইত্যাদি। এছাড়া জসিমের 'কাজের বেটি রহিমা', রায়হান মুভিজের 'হিরো', দেওয়ান নজরুলের 'মাস্তান রাজা' ইত্যাদি মিলিয়ে জেমস ছবি করেছে ২৩টি। এর মধ্যে ১৩টি সুপার হিট বলে জানালেন আমান।

ছবিতে বিভিন্ন সাউন্ডের ব্যবহার আবিষ্কার করেছিলেন জসিম। মারামারির সময় এখন যে স্পেশাল ইফেক্টের সাউন্ড ব্যবহার করা হয় তা জসিমের আবিষ্কৃত। আর ফাইটিংয়ে জসিম এনেছিলেন এক নতুন ধারা। 'ডাকু মনসুর' কিংবা 'বাহাদুর' ছবিতে জসিমের হাতে সরাসরি তলোয়ারের কোপ লেগেছিল। হাতে আকিক পাথরের একটা আংটি থাকায় কোনো অঘটন ঘটেনি। না হলে হাতের আঙুল সব কেটে যেত বলে জানান আমান। এছাড়া জসিম আরো যেসব ছবি করেছেন এর মধ্যে রয়েছে— এস এস প্রডাকশনের 'স্বামী কেন আসামি', 'স্বামী ছিনতাইকারী', রাজ্জাকের 'অভিযান' ইত্যাদি।

সেই ছবির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমান বলেন, "ছবিতে শাবানা মডার্ন মেয়ে। নিজের গাড়ি নিজে ড্রাইভ করেন। রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বনেট খুলে দাঁড়িয়ে আছেন। ভিলেন আমান বন্ধুদের নিয়ে ওই পথ দিয়ে যাচ্ছেন। গাড়ি থামিয়ে জানতে চাইলেন, 'ম্যাডাম আপনার গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে?'— এটাই ছিল আরমানের জীবনের প্রথম ডায়লগ। শাবানা ঘুরে আমাকে বললেন, 'নন সেন্স'।"

জসিমের সঙ্গে স্মরণীয় স্মৃতি বলতে গিয়ে একটা সিনেমার ঘটনা বললেন আমান— ছবিতে শাবানার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। ভিলেন খলিল জসিমকে ভাড়া করেছেন বিয়ের আসর থেকে শাবানাকে উঠিয়ে আনার জন্য। পরিচালক দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, বন্ধুদের নিয়ে জসিম শাবানাকে কাঁধে করে নিয়ে চলে আসবে। এটা শুনে তো জসিমের অবস্থা খারাপ। শীতের মধ্যে জসিম ঘেমে ভিজে চুপচুপা। একে তো সিনিয়র আর্টিস্ট, তার ওপর এত বড় স্টার। তাকে কাঁধে তুলে নিতে হবে। ভয়ে ভয়ে আছেন, সারা শরীরে ভালো করে পারফিউম মেখে তারপর শুটিং সেটে গিয়েছিলেন। যাতে শাবানার নাকে কোনো রকমে ঘামের গন্ধ না যায়।

জেমসের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চুন্নু বলেন, এক ছবিতে পাহাড়ি দৃশ্যে শুটিং হচ্ছে। ঘোড়ার ফাইট। পুলিশের ঘোড়া ব্যবহার করা হচ্ছিল সে ফাইটে। মাউনটেইন হর্সগুলোকে নিয়ে লালমাই পাহাড়ে সেই দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল। ঘোড়াগুলো পাহাড়ের প্রায় ১০০-১৫০ ফিট নিচে ফেলে দেয় ছয়-সাতজনকে। পুলিশের সেরা ঘোড়াটি ব্যবহার করছিলেন জসিম। এর নাম ছিল বিদ্যুত্, এটি কিন্তু জসিমকে ফেলতে পারেনি। জসিম ছিল সত্যি বস, বাস্তবের নায়ক। সে সময় ছবিতে ফেন্সি সোর্ড ফাইটিং কেবল চালু হয়েছিল। চিকন পাতলা তলোয়ারের মাথা কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে এ ফাইটটা হতো। জসিম যে ফেন্সি সোর্ড চালাতেন, তেমন আরেকজনও পারতেন না।

মূলত জসিম ছিলেন জেমস ফাইটিং গ্রুপের কাণ্ডারি। জসিমকে ছবির জগতে এনে ছিলেন আজিম। তাই আজিমকে গুরু বলতেন জসিম। ১৯৭৮ সালে দেওয়ান নজরুল পরিচালিত 'দোস্ত-দুশমন' ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন জসিম। শুরুটা ভালোই ছিল। এর আগে শুধু ফাইটিংয়ে অংশ নিতেন। বাংলাদেশে ফাইটিং ছবির জগতে জসিম ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পান। দুই হাতে ছবি করেন সে সময়টায়। 'মহেশখালীর বাঁকে', 'আলিবাবা', 'সিন্দবাদ', 'হিরো', 'অন্যায়', 'কারিয়া'সহ প্রচুর ছবি। এরপর 'সবুজ সাথী' ছবিতে জসিম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন। পাশাপাশি এ ছবির ফাইটের দৃশ্যও জেমস করে। সে সময়টায় ছবিতে ফাইটিংয়ের একটা বড় জায়গা ছিল। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর 'পরিস্থান', 'গীত', 'ওয়ারেন্ট', 'আবদুল্লাহ' ছিল এমনই ফাইটিং ছবি।

'দস্যু ফুলন' ছবিতে জেমসের ফাইট ছিল অনবদ্য। মনে আছে, দেওয়ান নজরুলের 'ধর্ম আমার মা' ছবিতে ঘোড়ার ফাইট ছিল, সে ফাইটে পুরান ঢাকার নাজিমের ঘোড়া দিয়ে কাজ চলছিল। ওরা ঘোড়াকে তালের রস খাওয়ানোর কারণে প্রায়ই বেতাল হয়ে যেত। একবার নুরুল আসলাম সিনিয়রকে ঘোড়া নিচে ফেলে দেয়। ফাইটিং দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে নুরুল আসলাম সিনিয়রের আরেকটা কাহিনী শোনালেন তিনি; মারামারির এক পর্যায়ে নুরুল ইসলামের হাতে দা দিয়ে কোপ দেয়া হবে। দুর্ভাগ্যক্রমে সে কোপ গিয়ে পড়ে আঙুলে। তিনটা আঙুল হাত থেকে আলাদা হয়ে যায় নুরুল ইসলামের। এমন হাজারো কাহিনী আছে জেমসের। কোনোটা আনন্দের, কোনোটা বেদনার।

সামস ইরানির 'বাহাদুর' আর 'রাজদুলালী' ছবির ফাইটিং দৃশ্যও করেছিল জেমস। ওয়াসিমের প্রথম ছবি বাহাদুর বলা চলে জেমস ফাইটিং গ্রুপের সেরা কাজগুলোর একটি। ওয়াসিম ছিলেন ইস্ট পাকিস্তানের সেরা বডি বিল্ডার। তাই তাকে নিয়ে বানানো সেই ছবিটা ছিল মারামারি দৃশ্যের জন্য টেক্সট ছবি।

তবে 'হাতি আমার সাথী' ছিল বাংলা ছবির জগতে ভিন্ন ধারার প্রবর্তক, নায়ক ছিলেন জসিম। সেই ছবিতে ৩০ কেজি ওজনের একটি অজগর সাপ ব্যবহার করা হয়েছিল। লামা পাহাড়ে শুটিংকৃত এ ছবিতে সবকিছু রিয়েল হচ্ছিল। তখন তো ঢাকায় তেমন প্রযুক্তি ছিল না। তাই নায়ক যে দৃশ্য করতে পারতেন না, সেটাতে ডামি ব্যবহার করা হতো। তখন জসিমের ডামি হতেন চুন্নু। হাতি আমার সাথী ছবিতে অজগরের একটা দৃশ্য ধারণ চলছিল। অজগর মাথা ঘুরিয়ে জিহ্বা বের করবে এমন একটা দৃশ্য ধারণ হওয়ার কথা। অজগর তো আর মাথা ঘুরায় না। লাঠির মাথায় পিন লাগিয়ে পেটের দিকে খোঁচা দেয়া হচ্ছিল, যাতে সাপ এদিকে তাকায়। খোঁচাখুঁচির ফলে রাগ করে সাপ হঠাত্ মাথা ঘুরিয়ে খপ করে হাতের বাহুর মাংসপেশি কামড়ে ধরে। এতে মাংসপেশি প্রায় আলাদা হয়ে যায়। সাপের মুখের ভেতরে রড ঢুকিয়ে তারপর চার-পাঁচজনে মিলে মুখ হা করিয়ে ছাড়ানো হয়। তা সম্ভবত এস ডি বাদল ছিলেন। পরে তাকে রাবেতা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অজগরের বিষ থাকে না, তাই রক্ষা।

এরপর সাপের দৃশ্য করার সময় মুখের কিছু অংশ সেলাই করে দেয়া হতো। এখন অবশ্য মুখে এক ধরনের প্লাস্টিকের ক্যাপ ব্যবহার করা হয়। 'হাতি আমার সাথী'তে জেমস প্রায় সব প্রজাতির পশুপাখি জড়ো করেছিল লামায়। এটা ছিল বাংলা ছবির ধারায় নতুন সংযোজন এবং জসিম বা জেমসের শ্রেষ্ঠ কাজ। ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর জসিম মারা যান। ২০০০ সালে গুই জেমস থেকে বেরিয়ে গেলেন। জেমস ভেঙে গেল।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top