What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review বিপ্লব : যে সিনেমা আজ কেউ বানাতে পারবে না (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
ljhHQ2t.jpg


আমাদের বাংলা চলচ্চিত্র নাকি আজ গল্পের শূন্যতায় ভুগছে !!! আজকের বর্তমান সময়ের প্রযোজক পরিচালকরা উপভোগ্য কোন গল্পের সিনেমা বানাতে পারেনা। অথচ আজ থেকে ২৬ বছর আগেও আমরা কত দারুন দারুন সব গল্পের দুর্দান্ত সব সিনেমা দেখেছিলাম । নিচের ছবিতে তেমনই একটি দুর্দান্ত সিনেমার বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং দেখতে পাচ্ছেন যার নাম ''বিপ্লব''। পেপার কাটিংটা দেখে ২৬ বছর আগের স্মৃতিগুলো জ্বলজ্বল করে উঠছে আমার ।

আমরা তখন 'কংফু নায়ক' রুবেলের ভীষণ ভক্ত। 'লড়াকু' সিনেমার পর রুবেলের একেকটি সিনেমা মুক্তি পায় আর আমরা হুমড়ি খেয়ে সিনেমা হলে সেগুলো দেখতে যেতাম। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া ''বিপ্লব'' ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর তেমন করেই সিলেটের মনিকা সিনেমা হলে দেখতে গেলাম। তখনও আমরা বুঝতে পারিনি যে ''বিপ্লব' সিনেমায় আমাদের জন্য কত চমক অপেক্ষা করছে !!!

যতদূর মনে পড়ে ছবির গল্পের শুরুতেই দেখতে পেয়েছিলাম প্রবীরমিত্র ভয়ংকর গডফাদার খলিলের দলের একজন খুব বিশ্বস্ত সদস্য হিসেবে কাজ করছে। খলিলের সব গোপন তথ্য প্রবীর মিত্রের জানা। একদিন রাতে খলিলের অফিসে খলিলের কামরায় লুকিয়ে ঢুকে একটি পুতুলের ভেতরে রাখা খুব গোপন ও মূল্যবান একটি ভবিষ্যৎ অপারেশন চালানোর তথ্য চুরি করে নিয়ে যায় এবং যা প্রবীর মিত্র তার শিশু সন্তানের [রুবেল] গলার চেইনের লকেটের ভেতর লুকিয়ে রাখে। খলিল বুঝতে পারে যে প্রবীর মিত্র তাঁর সাথে বেঈমানি করেছে। খলিলের লোকজন প্রবীর মিত্রের বাড়িতে হানা দেয় এবং খলিলের লোকজন প্রবীর মিত্রকে ধরে নিয়ে যায় এবং বন্দি করে নির্যাতন চালাতে থাকে। প্রবীর মিত্র কিছুতেই মুখ খুলে না। এভাবেই প্রবীর মিত্রের বন্দি জীবন শুরু হয় আর দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে খালেদা আক্তার কল্পনা অজানার উদ্দেশ্য রওনা হয় …এভাবেই শুরু হয় 'বিপ্লব' নামের একটি দুর্দান্ত সিনেমা যার প্রতিটি পরতে পরতে ছিল শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা।

এক সময় রুবেল বড় হয় এবং একজন শ্রমিক হিসেবে কাজ জীবিকা নির্বাহ করে কিন্তু জানতে পারেনা তাঁর গলায় থাকা চেইনের লকেটে কি লুকিয়ে আছে তা। খলিলের ব্যবসাপরিধি ও দলবল রুবেলদের পাহাড়ি জনপদেও ছড়িয়ে পড়ে। রুবেলের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বড় কর্মকর্তা আমির সিরাজি [ যিনি প্রবীর মিত্রের পূর্ব পরিচিত] রুবেলকে একটি কঠিন অপারশনের জন্য দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় পাঠায় । রুবেল যে বিমানে ঢাকায় যাবে সেই বিমানেই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুর্ধর্ষ অপরাধী ইলিয়াস কোবরাকে [ খলিলের ছেলে]নিয়ে পুলিশ অফিসার ঢাকায় রওনা দেয়। বিমানের ভেতর যাত্রীবেশে খলিলের লোকজন উঠে যাদের উদ্দেশ্য হলো পাইলটকে জিম্মি করে ইলিয়াস কোবরাকে পুলিশের হাত থেকে ইলিয়াস কোবরাকে ছিনিয়ে নেয়া। কিন্তু ছদ্মবেশে থাকা নারি পুলিশ অফিসার মিশেলা ও রুবেলের বীরত্বের কারনে তা আর সম্ভব হয়না এবং ইলিয়াস কোবরা মারা যায়। বিমানের ভেতরে কোন এক সময় রুবেলের গলায় চেইনটি হারিয়ে যায়। রুবেল আমির আমির সিরাজির পরিকল্পনা মোতাবেক ছদ্মবেশে খলিলের দলে যোগ দেয় এবং একসময় বন্দিবস্থায় থাকা প্রবীর মিত্রের সাথে দেখাও করে। প্রবীর মিত্রের কাছে রুবেল নিজেকে তাঁর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিলেও প্রবীর মিত্র রুবেলের গলায় চেইনটি না দেখে তাকে অস্বীকার করে। রুবেল কিছুতেই বুঝাতে পারেনা প্রবীর মিত্রকে। রুবেল ও প্রবীর মিত্রের কথপোকথন গোপন ক্যামেরায় খলিল ও ড্যানি সিডাক [ খলিলের ছেলে ] দেখে ফেলে এবং রুবেলের আসল পরিচয় জেনে ফেলে । ড্যানি সিডাক তাঁর ভাই ইলিয়াস কোবরার হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রুবেলকে অমানুষিক নির্যাতন করে মৃত ভেবে পাহাড়ের উপর থেকে অজ্ঞানবস্থায় ফেলে দেয় । ……শুরু হয় আরেক গল্প ।

এভাবেই নানা ঘটনা ও নাটকীয়তা নিয়ে ছবিটি এগিয়ে যায় এবং একসময় সেই কাংখিত লকেটটি রুবেল ফিরে পায় যা পুলিশের হাতে তুলে দেয় আর আমরা সকল দর্শক উপভোগ্য একটি সিনেমা দেখে হল থেকে তৃপ্তি নিয়ে বের হই । একটি গলার চেইনের লকেট নিয়ে যে এতো দারুন ও দুর্দান্ত একটি সিনেমা নির্মাণ করা যায় সেটা 'বিপ্লব' সিনেমাটি না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আজো 'বিপ্লব' সিনেমাটি কথা মনে পড়লে ২৬ বছর আগের স্মৃতিগুলো ভেবে শিহরিত হই ।

'বিপ্লব' ছবিটি আমাদের কাছে ছিল সেদিন বিশেষ একটি সিনেমা যার কারনগুলো হলো –
সর্বপ্রথম রুবেলকে আমরা ন্যাড়া মাথায় অভিনয় করতে দেখি।
সেদিন সর্বপ্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের কোন সিনেমায় চলন্ত বিমানের ভেতর দুর্দান্ত আকশন দৃশ্য দেখতে পাই।
সর্বপ্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে 'ক্যাট ফাইট' নামে মার্শালআর্টের নতুন একটি কৌশল দেখতে পাই।
ড্যানি সিডাকের হাতে রুবেলের নির্যাতনের কৌশলটাতেও ছিল নতুনত্ব যেখানে গাছের ডালে রুবেলের পা উপর দিয়ে বেঁধে মাথা ও মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলে কাপড়ের ভেতর জ্যান্ত একটি ইঁদুর ছেড়ে দেয়া হয়।
ছবির বিশেষ একটি চরিত্রে ছিলেন সিরাজ পান্না নামের একজন অভিনেতা যার মার্শাল আর্টের কলাকৌশল আর মৃত্যুর আগে ১০/১২ জন শসস্র শত্রুর বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই দেখে পুরো হল ভর্তি দর্শকরা মুগ্ধ। সিরাজ পান্নার মার্শাল আর্টের কলাকৌশল দেখে হলিউডের ব্রুস্লির ছবিগুলোর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল দর্শকদের ।

ছবিতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে মিশেলার দুর্দান্ত কংফু অ্যাকশন এবং রুবেল ও ড্যানি সিডাকের মাঝে শেষ ফাইটিং দৃশ্যটাও ছিল মুগ্ধ করার মতো যা এর আগে দর্শকরা ভিসিআরে ব্রুস্লির ছবিতে দেখতে পেতো । এককথায় একটি পরিপূর্ণ 'মার্শালআর্ট' ভিত্তিক গল্পের চলচ্চিত্রে যা যা থাকা প্রয়োজন তার সব উপাদানই ছিল 'বিপ্লব' সিনেমায় ।

বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট অনুসরন করেও যে একটি আধুনিক মানের 'মার্শাল আর্ট' ধাঁচের চলচ্চিত্র নির্মাণ করা যায় সেটা 'বিপ্লব' ছবি দিয়ে প্রয়াত শহিদুল ইসলাম খোকন বেশ ভালো ভাবেই প্রমান করেছিলেন । পরিচালক খোকন সেদিন 'বিপ্লব' ছবিটির ট্যাগ লাইন দিয়েছিলেন ' Symbol of New Generation' যা তিনি সিনেমার পর্দায় সফলভাবেই প্রমাণ করেছিলেন । শহিদুল ইসলামের 'বিপ্লব' ছিল সেদিনকার প্রেক্ষাপটের নতুন প্রজন্মের একটি আধুনিক সফল চলচ্চিত্র যা বর্তমান সময়ের চলচ্চিত্রগুলোকেও হার মানাবে। আজ ২০১৬ তে এসেও 'বিপ্লব' এর গল্পটি দিয়ে একটি আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব । কেউ বুঝলো না , কেউ জানতো চাইলো না আজ থেকে ২৬ বছর আগেও আমাদের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রগুলো কত আধুনিক ছিল, কত দারুন ছিল। আফসোস !!!!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top