What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review মহানায়ক : প্লেবয় অ্যাডভেঞ্চার (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
0A7IVNR.jpg


একজন আলোকবর্তি নির্মাতা আলমগীর কবির। তাঁর চেতনার জায়গাটা তাঁর সময়ের থেকে কমপক্ষে পঞ্চাশ বছর এগিয়ে। তিনি ঢালিউডে গ্রাম-শহর জীবনের সাথে সেতুবন্ধ তৈরির একজন আদর্শ সিনেমাযোদ্ধা। উঁচুতলার ও নিচুতলার মানুষের বিভেদ ঘুচিয়ে দিয়েছেন তাঁর সিনেমার ভাষায়। আমাদের আকিরা কুরোসাওয়া, আব্বাস কিয়ারোস্তমি না থাকলেও চেতনার জাগরণ ঘটানোর ক্ষেত্রে যে নির্মাতারা অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে আলমগীর কবির প্রথম কাতারের। আশ্চর্য হলেও সত্য তাঁর মতো লিজেন্ড নির্মাতাকে দৃষ্কৃতিকারীরা আরিচা ঘাটে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলে। তাঁর আরিচা ঘাটে পৌঁছানোর খবর দৃষ্কৃতিকারীদের কাছে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক পাপের একটা অংশ অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকেছে এ নির্মাতাকে বাঁচতে না দেয়া। যে অন্ধকারে বাঙালি জাগরণ থমকে গেছে জহির রায়হানের মতো মাস্টার আর্টিস্টকে হারিয়ে।নিঃসঙ্গতার পথে এগিয়ে গেছি আমরা।

বুলবুল আহমেদ ঢালিউডের জেন্টেলম্যান অ্যাক্টর। তাঁর অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, স্টারডম এসবে একটা ক্লাসিক বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি সিনেমা অল্প করেছেন। যা করেছেন বেছে বেছে করেছেন। তাঁর চরিত্রের গুরুত্ব দেখে কাজ করেছেন। তাঁর সাথে আলমগীর কবিরের সংযোগ ঘটেছিল ব্যাটেবলে তাই এই দুই নির্মাতা ও শিল্পী মিলে আদর্শ শিল্প নির্মিত হয়েছে। 'সূর্যকন্যা, সীমানা পেরিয়ে' এ ধরনের ওয়ার্ল্ড ক্লাস সিনেমার ধারাবাহিকতায় নির্মিত হয় 'মহানায়ক' নামের আর একটি মাস্টারপিস ক্লাসিক সিনেমা। এ সিনেমা একবার দেখলে আর একবার দেখতে ইচ্ছে করে। একজন প্লেবয়কে শুধুই প্লেবয় হিশেবে আলমগীর কবির দেখাননি। এর পাশাপাশি অন্যায়ের সাথে মানুষের বিবেককে জাগানোর কাজও করেছেন।

B9bfYie.jpg


গলি থেকে রাজপথ, রাজপথ থেকে ফাইভ স্টার হোটেল সব জায়গায় পৌঁছে যায় বুলবুল আহমেদ। কাজ তাঁর প্রতারণা। প্রতারণার প্রধান অস্ত্র প্রেম তার সাথে মানুষের সাথে মিশে পারিবারিক ও আত্মিক সম্পর্ক তৈরি করা। শুরুটা হয়েছিল দিলদারকে দিয়ে। পকেট মারতে সেন্ট্রাল শপের বাইরে বুলবুল আহমেদকে দাঁড় করায় দিলদার। বুঝিয়ে দেয় তাঁকে-'কেউ যদি আমাকে ধরার জন্য দৌড় দেয় আপনি আমাকে চেনেন না।' তারপর গাড়িতে উঠতে গিয়ে একজন লোকের মানিব্যাগ পড়ে যায়। সেটা ফেরত দিতে পেছন থেকে যাক দেন বুলবুল আহমেদ। দিলদার সে যাত্রায় পাবলিকের কাছ থেকে তাঁকে সেভ করে পাগলের পরিচয় দিয়ে। বুলবুল আহমেদ মানিব্যাগটা ফেরত দিতে চাইলে দিলদার কৌতুক করে-'আল্লাহ আপনার জন্য রহমত পাঠাইছে আর আপনি ফেরত দিবেন?আল্লাহ নারাজ হবেন না!' ইমোশনাল পার্টকে এখানেই শুধু না পুরো সিনেমায় ব্যবহার করেছেন পরিচালক। বুলবুল আহমেদ ভাগ্যক্রমে নতুন পার্টি পান। আহমেদ শরীফ তার উপরে ওঠার সিঁড়ি করে দেন। প্রতারণা পর্বের অভিজাত পর্ব শুরু হয়। অভিজাত বলছি কারণ প্রতারণা করতে গিয়ে বুলবুল আহমেদের গেটআপ পরিবর্তন হতে থাকে রাজসিকভাবে।গোঁফছাড়া, গোঁফযুক্ত, স্যুট-টাই পরা পারফেক্ট জেন্টেলম্যান তখন। পর্যটক হয়ে নেপাল, বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) শ্রীলংকা ঘোরার সাথে প্রেমের ফাঁদে ফেলার কাজটাও তার সাথে করে ফেলে। সুবর্ণা পোখরেলকে বশ করে। বলা হয় প্রথম প্রেম ভোলা যায় না। সুবর্ণা পোখরেল বুলবুলকে মন থেকে ভালোবেসেছিল তাই প্রথম প্রেমের কাছেই তাকে ফিরে আসতে হয়েছিল সবকিছুর পরে। হৈমন্তী শুক্লার কণ্ঠে 'তুমি চাও প্রিয় নদী হয়ে' গানটি এ জুটির অন্যতম সুন্দর রোমান্টিক গান। সেখানে আহমেদ শরীফের বনিবনা হয় না।সমস্যা বাঁধে এবং কেরামত মওলা ঘটনাক্রমে মারা যায়।নেপালে আসার পর যে মেয়েটির সাথে ঘোরাফেরা করে বুলবুল আহমেদ সে মেয়েটিও তাঁকে ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু বু্লবুল আহমেদ জানেন প্রতারণাই তার শেষ সম্বল। 'আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়' এ গানটি তাঁর অন্তর্দহনের কথা বলে। নেপাল ছাড়ার সময় মেয়েটি বলে-'তুমি আসবে না আমাকে দেখতে?'বুলবুলের উত্তর-'তোমার সাথে আর কোনোদিন দেখা হবে কিনা জানি না। তোমার চোখে দেখা এই হিমালয়কন্যা নেপালকে আমি কোনোদিন ভুলব না।' এটা একইসাথে বুলবুল আহমেদের বিবেকবোধ আবার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল দুটোকেই দেখায়। পরের মক্কেল কাজরী। কাজরীর পরিবার বিশেষ করে তার বাবা শওকত আকবর বুলবুলকে গ্রহণ করে দারুণভাবে।যেহেতু অভিজাত পরিবার তাই বাড়ি, গাড়ি এসবের কথা বলে ম্যানেজ করে। কাজরী বুলবুলকে ভালোবেসে ফেলে তাঁর স্মার্টনেসের কারণে।কাউকে ভালোবাসে কিনা জানতে চাইলে 'হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে' গান ধরে। এ সিনেমার অন্যতম সেরা গান এটি। কাজরীকে বিয়ের প্রস্তাবটা নিজে থেকেই দেন বুলবুল আহমেদ। অনাথ, এতিম বলে পরিচিতি দেয়া বুলবুল কাজরীর মা-বাবার কাছে ততদিনে মন থেকে জায়গা করেছে। শওকত আকবরের কাছে ক্যাশ টাকা কৌশলে নেবার পর প্রতারণা করে। সে যাত্রায়ও সফল হয়। দেশে ফিরে পুলিশি অ্যাকশনে বাচ্চা কিডন্যাপ করেন বুলবুল আহমেদ। সুবর্ণা পোখরেলকে পুলিশ কাজে লাগিয়ে মধ্যস্থতা করে। জেল থেকে বেরিয়ে সু্বর্ণার সাথেই মিল হয়। প্রথম প্রেমই হয় শেষ আশ্রয়।

P0aA4WA.jpg


আলমগীর কবির নিজের ক্রিয়েটিভিটির জায়গাগুলোকে তীক্ষ্ণ করে দেখান সিনেমায়। বুলবুল আহমেদকে স্টাইলিশ প্লেবয় হিশেবে তুলে ধরেন। বুলবুলের চরিত্রটি এতই রাজসিক যে তার প্রেমে অনায়াসে পড়ে গিয়েছিল নায়িকারা, তিনি আগে পড়েননি। পার্টনার আহসান আলির সাথে মিলে প্রতারণার পর্বগুলোর শেষপর্বে এসে শওকত আকবরের সই জালিয়াতি করার সময় বুলবুল আহমেদ তাকে বলেন-'এ লাইনে আপনাকে গুরু মানলাম। সই জালিয়াতে আপনাকে মেডেল দেয়া উচিত। 'আহসান আলির জবাব দারুণ- "আমাকে সই জালিয়াত বললেন! মনে বড় দুঃখ পেলাম। আমি কিন্তু নিজেকে একজন 'signature artist' মনে করি।" বুলবুল আহমেদের পাল্টা কাউন্টারটা আরো জোস-"আমিও কিন্তু নিজেকে একজন বড় 'pocket scientist' বলে মনে করি।" প্রতারণাকে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছেন পরিচালক। বুলবুল আহমেদ কাজরীকে দেবার জন্য একটা চিঠি পোস্ট করতে বলে আহসান আলিকে। তখন আহসান আলি বলে-'আমাদের মতো আর্টিস্টদের জন্য প্রেম জিনিসটা হচ্ছে বিষ। 'বুলবুল আহমেদ বলেন-'প্রেমের থেকেও দুর্ধর্ষ বিষ হচ্ছে বিবেক সে আপনি বুঝবেন না।' এখানে এসেই বুলবুল আহমেদের ক্যারেক্টারাইজেশন চূড়ান্ত মেসেজটা দেয় সেটা হলো প্লেবয়রাও পরিস্থিতির শিকার হয়ে কাজ করে এবং বিবেক তাদেরও আছে। সিনেমার কাজ শুধুই বিনোদন নয় মানবিক বোধ জাগানো বা দেখানোও তার কাজ। আলমগীর কবির সেটা দেখিয়েছেন। সিনেমাটিতে প্রেম, প্রতারণা, বিবেববোধ সব মিলিয়েই পূর্ণাঙ্গ চরিত্রের মহানায়ক বুলবুল আহমেদ।

একজন বু্লবুল আহমেদের চুজি ক্যারেক্টারের সিনেমা বাছাই আর স্টাইলিশ অভিনয়কে কেন্দ্র করে তাঁকে ঢালিউডে যতটা স্পেস দেয়া উচিত ছিল ততটা দেয়া হয়নি। বুলবুল আহমেদকে নিয়ে দর্শকের আক্ষেপের জায়গা এটাই। তারপরেও তাঁর যে সিনেমাগুলো আছে সেগুলো দেখা ও আলাপ-আলোচনা চালু রাখার কাজটা করলে বুলবুল আহমেদের বিশেষত্ব পৌঁছে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top