What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review দীপু নাম্বার টু : কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চার (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
fQuCUit.jpg


ছেলেবেলায় দেখা আপনার সেরা দেশীয় সিনেমা কোনটি?

প্রশ্নের উত্তরে যে সিনেমাগুলোর নাম মিলবে তার মধ্যে 'দীপু নাম্বার টু' প্রথম কাতারে থাকবে এটুকু নিশ্চিত। ছেলেবেলার সাইকোলজি যেদিকে যায় বা পরিবার, নিজের আলাদা ভুবন, আবিষ্কারের নেশা এসব স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হিশেবেই থাকে।লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সূক্ষ্মভাবে সে প্লটকে তাঁর উপন্যাসে কাজে লাগিয়েছেন। আর উপন্যাস থেকে সিনেমা বানিয়ে বিরল মুন্সিয়ানার হাত দেখানো নির্মাতা হলেন মোরশেদুল ইসলাম। সিনেমাটি আমাদের ছেলেবেলার ইমোশনকে টাচ করতে পেরেছিল বলেই আজো দেখতে ভালো লাগে এবং আমরা নস্টালজিক হই। পাশাপাশি এ প্রজন্ম বা আগামী প্রজন্ম তাদের ছেলেবেলাকে ছুঁয়ে দিতে চাইলেও এ সিনেমার কাছে অনেককিছুই পাবে। অতঃপর, সময় এবং দর্শক ইমোশন ধারণ করার বিরল যোগ্যতা নিয়েই সিনেমাটি ক্লাসিক। বর্তমান লেখাটি পড়তে পড়তে আপনার কাছে 'ক্লাসিক' দিকটি পরিষ্কার হবে।

ডিরেক্টরস ইমোশন

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 'পথের পাঁচালী' লিখেছেন আর সেটা থেকে সিনেমা বানিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। লেখক ও চলচ্চিত্রকারের মধ্যে দূরত্ব ছিল না। দুজনের ইমোশন বই এবং সিনেমার আলাদা আবেদনে ফুটে উঠেছে যার যার হাতে।এমন মেলবন্ধন মেলে না।লেখক জাফর ইকবাল 'দীপু নাম্বার টু' লেখার সময় যে adventurous life কে তুলে ধরেছেন কৈশোরের বৈশিষ্ট্য হিশেবে তাকে জায়গায় জায়গায় আনন্দ, বেদনা, আবিষ্কারের নেশা দিয়ে নানা মোড়কে সাজিয়েছেন।সেটাকে গড়েপিটে নিজের মতো করে আর্টিস্টদের মধ্য থেকে অভিনয়টাকে বের করে ইমোশনকে জয়ী করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। তাঁর ইমোশনকে অন্যান্য সিনেমার মতোই খাঁটি মানতে হবে। যেমন – চাকা, অনিল বাগচীর একদিন।

প্রথম ও শেষ সিকোয়েন্সের সংযোগ

সিনেমার প্রথম সিকোয়েন্সে দীপুর (অরুণ সাহা) সাথে যে পাহাড়ি মেয়েটির দেখা হয় তার পা পঙ্গু ছিল। তাই ক্র্যাচে ভর করে দাঁড়াতে দেখা গেছে। দীপু ঐ মেয়েটির বলটি এগিয়ে দেয়। মানবিক দিকগুলো ছেলেবেলায় খুব ভালো জেগে ওঠে।ঠিক একই দৃশ্য শেষ সিকোয়েন্সে এসে দেখানো হয়। এর আগে দীপুকে তার নানা কাজে বন্ধু, বাবা, মা সবার প্রতি দায়িত্বশীল দেখা গেছে। তাই সেটারই সংযোগ শেষে আবার দেখা গেছে। অসাধারণ এ সাইকোলজি।

কৈশোরের আনন্দ, ছেলেমি, বন্ধুত্ব, শত্রুতা

কৈশোর বয়সটাই জীবনের একটা ক্লাসিক বয়স। প্রশ্ন উঠতে পারে 'বয়স আবার ক্লাসিক হয় নাকি?' উত্তরটাও আছে 'হ্যাঁ, বয়সটা তখনই ক্লাসিক হয় যখন এটা আপনাকে জীবনভর নাড়া দিতেই থাকবে। আপনি বড় হবার সাথে সাথে জীবনের কঠিন সময়ে যত ঢুকবেন ঐ ফেলে আসা কৈশোর মনে পড়বে, ভাববেন আবার সময়গুলো ফিরে পেলে মন্দ হত না।' দীপু তাই কৈশোরের সময়গুলোতে বাবা বুলবুল আহমেদের ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তন হওয়ার সুবাদে এ স্কুল থেকে ও স্কুল যাবার ফলে নানা অভিজ্ঞতার মধ্যে তাকে পড়তে হয়। তেমনি করে নতুন স্কুলে ক্লাসের প্রথম দিনেই শিক্ষক আবুল খায়ের নাম বিভ্রাটে পড়েন কারণ ক্লাসে দীপু আছে আর একটা ছেলে। তাই বুদ্ধি করে সহজে যাতে চেনা যায় সেজন্য 'দীপু নাম্বার টুু' দিয়ে দিলেন। নতুন ছেলেকে ঘিরে ক্লাসের অন্য বন্ধুদের আগ্রহ বাড়ল। গুণ থাকলে সেটাই হবে। দীপু ভালো ছাত্র, ভালো ফুটবল খেলে তাছাড়া ছেলেও দারুণ। স্কুলে কড়া শিক্ষকও থাকেন যার প্রমাণ কেরামত মওলা।ক্লাসে দুষ্টু ছেলে থাকেই, তারিক ( শুভাশিস) সে ছেলে। তার ভয়ে অন্যরা যখন তটস্থ দীপু ভয় পায় না।ওর সাথেই বাঁধে সমস্যা। ফুটবলে ক্যাপ্টেন হওয়া নিয়ে ঝামেলা বেঁধেই গেল। তখন তারিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে রাস্তার মোড়ে তাকে আটকালো। হাতে কলম মলে শাস্তি দিল রাস্তার ধারে স্কুল শেষে। দীপু তারিকের গোঁফওয়ালা ছবি এঁকে নিজের ঝাল মেটালেও পরের দিনই তার ধারণা পাল্টাল। পানির ট্যাঙ্কিতে ওঠার বাজি ধরে দীপু, তারিক ও আর এক বন্ধু।তারিক আগে ওঠে কারণ তার কাছে ওটা ডালভাত। ট্যাঙ্কির ছাদে উঠে সে উপহাস করে দীপুদের 'ও মাগো দুধ খাব গো, বার্লি খাবো গো।' দীপু ঠিকঠাক উঠলেও বন্ধু্টি অর্ধেক উঠে ভয়ে আর উঠতে চাইল না। তারপর তারিক তাকে ওঠাল আবার নামাল কাঁধে করে সে এক বিরল ব্যাপার।সেদিন তারিকের গোঁফওয়ালা ছবির পরিবর্তে সুন্দর ছবি আঁকে দীপু। দীপুর বুদ্ধি নজর কাড়ে বরাবরই। পিটি করার সময় টিচার কেরামত মওলাকে বোকা বানাতে দলীয় জোটের বুদ্ধিটা দীপুরই ছিল।

gU6PsDr.jpg


অনুভূতির জায়গাগুলোকে এভাবেই কৈশোরের সহজ স্বাভাবিক অনুভূতি হিশেবে তুলে ধরা হয়েছে। আমি, আপনিও এভাবেই বড় হয়েছি।

গল্পের মোড় ও চিরন্তন অনুভূতির স্পর্শ

বাবা বুলবুল আহমেদ দীপুকে জানায় দীপুর মা ববিতা বেঁচে আছে গল্প মোড় পায়। মায়ের সাথে দেখা করতে যায় দীপু।সেখানে মায়ের মুখোমুখি হয়ে ইনোসেন্ট দীপু যখন বলে 'আমি দীপু' ববিতা জড়িয়ে ধরে আর বলে 'এতদিন পর আমায় দেখতে এলে?' মায়ের সাথে ঘুরতে বের হলে গাড়ির মধ্যে ছেলেকে জড়িয়ে কথা বলা, ছেলে খাওয়ার সময় তার দিকে অপলক চোখে তাকানো, হাতের আঙুল ধরে মায়ের সাথে মিিল খোঁজা এসব অসাধারণ অনুভূতি। তারও চেয়ে অসাধারণ যখন দীপুর মুখে 'মা' ডাক শুনতে চায় ববিতা। দীপু লজ্জা পেলে বলে 'মায়ের কাছে লজ্জা কি?' তখন দীপু ডাকে আর ববিতা বুকে জড়িয়ে কাঁদে। ঐ সিকোয়েন্স ভোলার মতো না। মাকে হারানো, মিস করা বা মায়ের আলাদা সংসার হবার পর আগের সন্তানের সাথে দূরত্ব এসব অনুভূতির স্পর্শ অনবদ্য।দীপু ট্রেনে আসার সময় ফার্স্টক্লাসে যাবার ব্যবস্থা করে দেয় ববিতা। বলে 'তুই কষ্ট করে যাবি আর আমি শান্তি পাব!' ট্রেন ছাড়ার সময় মাকে বিদায় দিয়ে একদিকে ববিতা আর একদিকে দীপুর কান্না সিনেমার অন্যতম আবেদনের সময়। পাশের সিটে বসা ভদ্রমহিলার মুখের সংলাপটি সান্ত্বনার হলেও তা চিরন্তন 'কেঁদো না খোকা, আবার যখন ছুটি হবে মায়ের সাথে দেখা হবে। এইতো সামনেই পূজোর ছুটি।'

অ্যাডভেঞ্চারাস মন

মায়ের কাছ থেকে ফেরা দীপু অন্য দীপু। তার বয়সের থেকেও অনেক বেশি ম্যাচিউর লাগে তাকে। তারিকের খোঁজ করতে গেলে তারিকের পাগল মাকে দেখে সে। দীপুর মূল্যবোধ এখানে প্রকাশ পায়। তারিক বলে-'এখন তুই স্কুলে গিয়ে সবাইকে বলে দিবি যে আমার মা পাগল। 'দীপু বলে-'তুই আমাকে তাই ভাবিস?'বোঝা যায় দীপু আর পাঁচজনের থেকে আলাদা। তার অনুভূতির জায়গা মূল্যবোধসম্পন্ন।তারিককে নিজের মায়ের গল্প বলে। তারিক শুনে বলে-'আমাদের দুঃখগুলো কেউ বুঝবে না।' লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এখানে একটা কিশোর সাইকোলজি খাটান উপন্যাসে। কৈশোরের সময়টাতে নিঃসঙ্গতা কাটাতে নতুন বা সৃজনশীল কিছুতে আগ্রহ বাড়ে যদি প্রতিভা তাতে মিশে যায়। উপন্যাস ও সিনেমাতে তাই-ই ঘটেছে। তারিকের সাথে বন্ধুত্ব হয় দীপুর। তারিক দীপুকে 'কালা চিতা' উপহার দেয় যেটা ছিল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তারিক ছিল দীপুর জীবনে আবিষ্কারের উপাদান। তারিক তাকে গুপ্তধনের সুড়ঙ্গের খোঁজ দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জায়গাটি পরে অন্য বন্ধুদের বলে।সবাই মিলে নির্দর্শন উদ্ধার করতে যায়। সেখানে লুটেরার দল পৌঁছালে নিজেদের দলীয় বুদ্ধিতে তাদের হারায়। পরে দীপুর দল সবার নজর কাড়ে।

অভিযোজন

দীপুর সেই স্কুল, বন্ধু ফেলে তাকে চলে যেতে হয় কারণ তার বাবার মন বসছে না সেখানে। দীপু শেষবারের মতো তারিকের সাথে দেখা করে মনে মনে ক্ষমা করে দিতে বলে বন্ধুদের। দীপু প্রথম যেদিন স্কুলে যায় সেদিনই বলেছিল তার ঘন ঘন স্কুল পরিবর্তন হয়। তাই তার নতুন জায়গার সঙ্গে অভিযোজন করতে হয়। কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চারে এটা অভিজ্ঞতাময়।

যে জীবন আমরা ফেলে আসি সে জীবন পাই না কিন্তু মস্তিষ্কের কোষে তাকে রেখে দেই চিরতরে। অতীত মুছে যায় না, তাড়িয়ে বেড়ায়। সে অতীতের একটা পার্ট 'কৈশোর'-কে এ সিনেমায় চিরচেনা অনুভূতির মধ্যে এনে আমাদের দর্শকদের সাথে এক করে ফেলে। চিরন্তন অনুভূতি যেগুলো আমরা চাইলেও মন থেকে মুছতে পারি না সেসবকে স্পর্শ করার মধ্যেই 'দীপু নাম্বার টু' ক্লাসিক সিনেমা। সময় চলে গেলেও চিরন্তন অনুভূতি সব ঠিকঠাক থাকে তাই ক্লাসিক না হয়ে যায় কোথায়!..

বি : দ্র : দীপু চরিত্রের অরুণ সাহা যদি নিয়মিত কাজ করত তবে আমরা আর একজন শক্তিমান নায়ক/ অভিনেতা পেতাম।বঞ্চিত হতাম না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top