What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other সিনেমার গল্প : প্রেম দিওয়ানা (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
Rweuh8J.jpg


১৯৯৩ সাল বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন যুগের খুবই জমজমাট একটি বছর ছিলো। যে বছরে আমরা সালমান শাহ, মৌসুমী, আমিন খান, শাবনুর'দের মতো নতুন তারকাদের পেয়েছিলাম ঠিক একই সময়ে জসিম, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, মান্না'রাও জ্বলে উঠেছিলেন। ১৯৯২ সালে মোস্তফা আনোয়ারের মেগাহিট 'কাসেম মালার প্রেম' সিনেমা দিয়ে যে মান্না–চম্পা জুটির দেখা মিলেছিলো এবং যে মান্না সহনায়ক থেকে প্রধান নায়ক হয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে এসে মান্না শক্ত একটি ভিত গড়েছিলেন আগামী দিনের জন্য আর মান্না চম্পা জুটিও পূর্ণতা পেয়েছিলো।

যে আলমগীর পিকচার্সের অফিসে গিয়ে দিনের পর দিন মান্না বসে থেকেও প্রযোজক এ কে এম জাহাঙ্গীর খানের দেখা পেতেন না সেই আলমগীর পিকচার্সের আধুনিক একটি প্রেম কাহিনির সিনেমা দিয়ে মান্না-চম্পা জুটি একেবারে জ্বলে উঠলেন যার নাম ছিলো 'প্রেম দিওয়ানা'। পরিচালনা করেন মনতাজুর রহমান আকবর।

'প্রেম দিওয়ানা' নাম শুনেই বুঝা যায় কোন রোমান্টিক গল্পের সিনেমা, হ্যাঁ সিনেমার গল্পটি প্রেম কেন্দ্রিক কিন্তু গল্পটি ছিলো সম্পূর্ণ আধুনিক।অর্থাৎ ধনী-গরিবের গতানুগতিক প্রেমকাহিনীর চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একটা সিনেমা যা ছিল গল্প, গান, নাটকীয়তা ও অ্যাকশনে ঠাসা যেখানে বোনাস হিসেবে পাবেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী লুকে খলনায়ক হুমায়ুন ফরীদি ও রাজীবের দুর্দান্ত রসায়ন। ফরীদি ও রাজীব ছিলো এই গল্পের প্রাণ যারা ছিলেন কেহ কারে নাহি ছাড়ি সমানে সমান। রেডিওতে নাজমুল হোসেন ভাইয়ের কণ্ঠে বিজ্ঞাপন শুনতে শুনতে সিনেমাটি দেখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। অবশেষে মুক্তির প্রথম দিন থেকেই সিলেটের মনিকা সিনেমা হলে প্রেম দিওয়ানা প্রদর্শিত হতে লাগলো আর আমরা দলবেঁধে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে গেলাম ২ দিন পর মর্নিং শোতে দেখতে গেলাম । হলের সামনে স্কুল ও কলেজের ক্লাস ফাঁকি দেয়া কিশোর ও তরুণদের দীর্ঘ সারি, কোথাও কোথাও ব্ল্যাকারদের সাথে জটলা। আমরা ব্ল্যাকারের কাছ থেকে চড়ামূল্য টিকেট কেটে হলে প্রবেশ করলাম । কার আগে কে ঢুকে সিট দখল করবে তা নিয়ে শুরু হলো দর্শকদের মাঝে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি।

সিনেমার গল্পে মান্না একজন সন্ত্রাসী যার গডফাদার হলেন রাজীব। রাজীবের মেয়ে চম্পা ও মান্না একই কলেজে পড়ে। চম্পা মান্নার সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য পছন্দ করে না। মান্না চম্পার পিছু ছাড়ে না। ঐ একই কলেজে পড়ে অপরাধ জগতের আরেক গডফাদার হুমায়ুন ফরীদির ছেলে আফজাল শরীফ। আফজাল শরীফও চম্পার পিছনে লেগে থাকে কিন্তু মান্নার কাছে পরাজিত হয়। মান্না চম্পার প্রেম হয়। অন্যদিকে রাজীব ও ফরীদি একে অপরের শত্রু। রাজীব অনেক ক্ষমতাবান তাই সে ফরীদিকে গোনায় ধরেনা। অন্যদিকে ফরীদি চায় তার একমাত্র ছেলে আফজাল শরীফের সাথে চম্পার বিয়ে দিয়ে রাজীবের সাথে সম্পর্ক গড়বে। কিন্তু মান্না চম্পা জুটির প্রেম বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। রাজীব ফরীদির ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিবে না বলে ফরীদিকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয় অন্যদিকে যখন জানতে পারে তারই পালিত সন্ত্রাসী মান্নার সাথে চম্পার প্রেম সেটাও মেনে নিতে পারে না। চম্পা বাড়ি ছেড়ে পালানোর সময় রাজীবের দেহরক্ষী কবির খাঁ চম্পাকে অপহরণ করে। কবির খাঁ ফরীদির সাথে হাত মিলিয়ে রাজীবের ক্ষতি করতে চায়। এই সুযোগ কাজে লাগায় ফরীদি অন্যদিকে রাজীব মান্নাকে মেরে ফেলার জন্য কবির খাঁকে আদেশ দিলে কবির খাঁ মান্নার উপর আক্রমণ করে এবং মৃত্যু ভেবে ফেলে চলে যায় যেখান থেকে ফরীদি মান্নাকে তুলে আনে। মান্নাকেও বশ করে কাজে লাগাতে চায় ফরীদি। মান্না ফরীদির দলে যোগ দেয়। কবির খাঁ চম্পাকে বিয়ে করার জন্য ফরীদির কাছে সাহায্য চায় , ফরীদি সাহায্য করবে বলে কথা দিলেও পরে কবির খাঁকে মেরে ফেলে। উদ্দেশ্য একটাই আফজাল শরীফের সাথে চম্পার বিয়ে দিবে।

মান্না ফরীদির চাল বুঝতে পারলে ফরীদির সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ……এইভাবে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা ও টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে মান্না চম্পার মিলনের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় ''প্রেম দিওয়ানা'' নামের জমজমাট সিনেমাটি। রাজীব চম্পাকে মান্নার হাতে তুলে দেয়।

সিনেমার গল্প ও মেকিংয়ের সাথে যুক্ত হয়েছিল কিছু জমজমাট গান যে গানগুলো তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। গীতিকার মুন্সী ওয়াদুদের লেখা ও শেখ সাদী খানের সুর করা গানগুলোর মাঝে নতুনত্ব ছিলো যা সিনেমা গান না জেনে কেউ শুনলে মনে করবে কোন আধুনিক গানের অ্যালবামের গান। পুরো সিনেমায় জমজমাট সব গানের ভিড়ে একমাত্র ঠাণ্ডা পরশ বুলিয়ে দেয়ার মতো একটা গান ছিলো সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে '' চন্দ্র সূর্য সবই আছে আগের মতন'' যা ছিলো প্রেম দিওয়ানা সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় গান।

সিনেমাটি ছিলো আলমগীর পিকচার্সের বিগবাজেটের একটি সিনেমা যেখানে প্রযোজক পরিচালক কোন কার্পণ্য করেননি। ফরীদির গেটআপ আর সংলাপ বলার আগে জনপ্রিয় বিভিন্ন গানের অন্তরা গাওয়াটা ছিলো জোশ , বুদ্ধিমত্তা ও হিংস্রতা দুটোই ছিলো চরিত্রের মাঝে। রাজীব ছিলেন সিংহের মতো , বিশেষ করে ফরীদির সাথে দৃশ্যগুলোতে রাজীবের ব্যক্তিত্ব ও কণ্ঠ ছিলো দারুন। সিনেমার একটি দৃশ্য রাজীবের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে জীবন ভিক্ষা চায় ফরীদি , রাজীব চলে যাওয়ার পর আফজাল শরীফ প্রশ্ন করে '' বাবা, তুমি পা ধরলে কেন?'' জবাবে সাথে সাথে আফজাল শরীফের গালে কষে একটা চড় দিয়ে বলে '' বিপদে পরলে বাঘও চামচিকার পা ধরে'' যেখানে ফরীদির অভিব্যক্তিটি ছিলো দুর্দান্ত। এমন অনেক দৃশ্য আছে পুরো সিনেমায় যেখানে ফরীদিকে লেগেছিলো দুর্দান্ত।

সহ নায়ক থেকে একক নায়ক হওয়ার পথটা অনেক শক্তিশালী করে ফেলেছিলেন মান্না প্রেম দিওয়ানা সিনেমার মধ্য দিয়ে। মান্নাকে পর্দায় দেখেই বুঝা গিয়েছিলো এই মান্না আগামীতে ইন্ডাস্ট্রি শাসন করবে এবং হয়েছিলও তাই। এই সিনেমাটি ছিলো মান্না চম্পা জুটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ যেখানে এই জুটি ছিলো পুরোপুরি সফল। কারণ ৯০ দশকের শুরুতেই সুপারস্টার কাঞ্চনের সাথে দিতির রসায়নটা জমে উঠলে কাঞ্চন দিতি জুটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় প্রযোজক পরিচালকরা কাঞ্চন –দিতি জুটির কাউন্টার জুটি হিসেবে মান্না-চম্পাকে দাঁড় করায় এবং মান্না চম্পা জুটিকে কাঞ্চন দিতি জুটির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় করে ফেলার পেছনে যে কয়টি সিনেমা তখন অবদান রেখেছিলো প্রেম দিওয়ানা সিনেমাটি তার অন্যতম সুপারহিট সিনেমা ছিলো।

প্রেম দিওয়ানা সিনেমার ব্যাপক সফলতার পর ক্ষমতাধর ও ঐতিহ্যবাহী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলমগীর পিকচার্সের পরবর্তী প্রায় সবগুলো সিনেমাতেই ছিলেন মান্না -ম্পা জুটি। প্রেম দিওয়ানার পর এই জুটিকে নিয়ে আলমগীর পিকচার্স বাবার আদেশ, ডিস্কো ড্যান্সার, খলনায়ক-এর মতো সুপারহিট সিনেমা নির্মাণ করেছিলো।আজ আলমগীর পিকচার্স নেই, নেই এ কে এম জাহাঙ্গীর খানের মতো প্রযোজক তাই তো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন দর্শকদের জন্য প্রেম দিওয়ানা'র মতো কোন সিনেমা এখন নির্মাণ হয় না, কাঞ্চন- দিতির মতো শক্তিশালী জুটির বিপরীতে মান্না-চম্পা জুটির মতো আরেকটি জুটি গড়ে উঠে না। পুরো ইন্ডাস্ট্রিই আজ এক স্বৈরাচারের দখলে যা হয়েছে আজ ‌'হবলঙ্গের বাজার'।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top