What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other নানা ফরীদির একখানা মালা (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
CO7kZD9.jpg


মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়
অতীতের থেকে উঠে এসে আজকের মানুষের কাছে
প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে
– মানুষের মৃত্যু হলে, জীবনানন্দ দাশ

কবি যা বলছেন তাতে একথা পরিষ্কার মৃত্যু সব মানুষের জীবনে এলেও কারো কারো জীবন এতটাই মহিমান্বিত হয়ে ওঠে যে মৃত্যু তাকে শুধু কেড়ে নিতে পারে যেখানে চোখের দেখাটা আর থাকে না কিন্তু মনের দেখাটা থাকে চিরদিন। একজন হুমায়ূন ফরীদি-ও তাই।

কোত্থেকে শুরু করব তাকে নিয়ে! ফরীদিকে নিয়ে বলতে গেলে কীভাবেই বা শুরু করতে হয় বোঝা মুশকিল। তারপরও শুরু করলাম নিজের মতো করেই। খালি চোখে সামনাসামনি আমরা আর দেখতে পাই না সবচেয়ে প্রিয় অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদিকে। তিনি অসাধারণ, অপূর্ব। বিশ্বমানের অভিনেতা। তাকে হারিয়ে আমরা নিঃস্ব হবার পথে অনেক ধাপ এগিয়েছি। আমরা কী হারিয়েছি তা টের পাই তার মৃত্যুর পরেই। অবশ্য আমাদের দেশে এমনটা নতুনও নয়। আমরা আগে হারাই তারপর আফসোস করি এটাই আমাদের চিরদিনের অভ্যাস। অভ্যাসকে সার্থক করতে, পূর্ণতা দিতে মরণোত্তর একুশে পদক দেই অথচ ভাবি না জীবিতাবস্থায় নিজ হাতে পেলে তিনি কতটা তৃপ্ত হতেন!

যা বলছিলাম একজন হুমায়ূন ফরীদিকে শুরু করা যায় কীভাবে। নাটক থেকেই শুরু করাটা ভালো। তিনিও যে কোনো সাক্ষাৎকার শুরুর আগে দেখতাম নাটক দিয়েই শুরু করতেন। প্রথম ভালোলাগার একটা আলাদা মূল্য থাকে তাই হয়তো। বিটিভি যখন ছিল ভরসা। তখন এক একটা নাটকের জন্য লোকে তীর্থের কাক হয়ে প্রতীক্ষায় থাকতেন। সেভাবেই যখন শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস থেকে 'সংশপ্তক' নাটকটি বিটিভিতে দেখানো হত হুমায়ূন ফরীদির রমজান চরিত্রটি প্রতাপশালী হয়ে ওঠে। জমিদার খলিল-এর সাথে তার নিজস্ব তুলনাহীন অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শক-সমালোচককে। তারপর সেই যে নাটকগুলি 'ভাঙনের শব্দ শুনি, বকুলপুর কতদূর, একদিন হঠাৎ, পাথর সময়, শীতের পাখি, কোথাও কেউ নেই, সবুজ সাথী, সমুদ্রে গাঙচিল।' মঞ্চ নাটকেও ছিলেন অসাধারণ। 'কেরামত মঙ্গল, মুনতাসির ফ্যান্টাসি, কীর্তনখোলা' আরো অনেক। নাট্যকার সেলিম আল দীনও তার কাজের ভক্ত ছিলেন। নাটকে পরীক্ষামূলক কাজ কিংবা প্যাকেজ নাটক দু'জায়গাতেই ছিলেন অনবদ্য। মঞ্চ নাটক 'কোথাও কেউ নেই'-এর ফরীদির সাথে কমার্শিয়াল নাটক 'আরমান ভাই দ্য জেন্টেলম্যান' এর কোনো মিল নেই। এভাবেই ভাঙতে পারতেন নিজে। কোথায় কতটুকু দিতে হবে সেটা তার নখদর্পণে ছিল।

R55YQIG.jpg


সময়কে তিনি শাসন করেছেন চলচ্চিত্র দিয়ে। ফরীদির ইতিহাস চলচ্চিত্র থেকে নতুন করে লিখতে হয়। ফরীদির খলনায়ক চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়কে যারা বের করে নিয়েছেন বা নিতে পেরেছেন তেমন পরিচালক অনেক আছেন। তবে সব থেকে এগিয়ে থাকবেন শহীদুল ইসলাম খোকন। তার ছবি মানেই একসময় ফরীদি ছিল মাস্ট। 'পালাবি কোথায়' সিনেমার সেই যে অফিসের বড়কর্তা যে মেয়েদের দেখলেই খাতির জমাতে চায় তাকে কী আমরা ভুলতে পারি! 'বাংলার কমান্ডো' ছবির দুর্ধর্ষ ডাকাত চরিত্রে তাকে দেখে রীতিমত ভয় লাগত। সমুদ্রের ধারে আলীরাজের জিভ কেটে নেয়ার ভয়ঙ্কর সিকোয়েন্সটি দেখে পরপর কদিন ঘুমাতে পারিনি স্কুললাইফে। 'সন্ত্রাস, ঘাতক, পলাতক আসামী, দোলা, শাসন, বিশ্বপ্রেমিক, বিষদাঁত, রাক্ষস, আত্ম-অহংকার, অধিকার চাই, লাট সাহেবের মেয়ে, শয়তান মানুষ, দুনিয়ার বাদশা, স্ত্রী হত্যা, প্রেমপ্রীতি, বেঈমানী, আজকের হাঙ্গামা, হিংসার আগুন, লম্পট, চারিদিকে শত্রু, রাগ অনুরাগ, নির্মম, বিদ্রোহী বধূ, ম্যাডাম ফুলি, বীর সৈনিক, মিথ্যার মৃত্যু, হিংসা, নরপিশাচ, ঘৃণা, সেয়ানা পাগল, সতর্ক শয়তান, ত্যাগ, অজানা শত্রু, দুঃসাহস, হিংসা, লক্ষীর সংসার, নির্মম, রাগ অনুরাগ, ঘাত-প্রতিঘাত, প্রেম দিওয়ানা, শাসন, শুধু তুমি, লাভ, জিদ, আবদার, আগুন জ্বলে, দুর্জয়, বিচার হবে, আণ্জুমান, বিপ্লবী জনতা, কি জাদু করিলা' এমন আরো অসংখ্য ছবিতে খলনায়কের ক্যারেক্টারাইজেশনে ফরীদি আলাদা আলাদা এবং সবগুলোকে চেনা যায় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। 'নরপিশাচ, পলাতক আসামী, ঘৃণা, লম্পট' ছবিগুলোতে রুবেলের সাথে ফরীদির অভিনয় ছিল অপূর্ব। রুবেল-ফরীদি মিলে হিরো+ভিলেন জুটি জমত জমজমাট। পর্দা কাঁপাত তারা। জমত জসিম, মান্না, কাঞ্চনদের সাথেও। 'দোলা' ছবির প্রেমিক আর 'বিশ্বপ্রেমিক' ছবির প্রেমিক এক নয়। দোলা-র প্রেমিক খুবই মাথা গরম আর বিশ্বপ্রেমিক-এর প্রেমিক মাথা গরমের পাশাপাশি অনেক যুক্তিও দেয়। থ্রিলার আমেজটা জমায় পুরোদমে। 'লাট সাহেবের মেয়ে' ছবিতে সন্তান অদল বদল করে লাট সাহেবের ঘরে নিজের মেয়ে মৌসুমীকে প্রতিষ্ঠা করা আর লাট সাহেবের ছেলে ওমর সানী-কে চাকর বানানোর বুদ্ধি দেখে দর্শক ভালো একটা প্রতিযোগিতার গন্ধ পায় যেখানে ফরীদি তার অভিনয় দেখানোর একটা গ্রেট অপরচুনিটি পান। আর এই অপরচুনিটি যখন 'আনন্দ অশ্রু'-র মত ছবিতে যায় সেটা যেন স্ফূরণ ঘটায়। নানাশাহকে বলা সেই সংলাপ 'টনিসাহেব, দেওয়ান খসরুকে (সালমান শাহ) সারাজীবন পাগল হয়ে থাকতে হবে, বদ্ধ উন্মাদ হয়ে থাকতে হবে, নইলে ওকে মরতে হবে।' বলার সময় যে অগ্নিমূর্তি থাকে ওটা আর কেউ পারবে না। 'স্ত্রী হত্যা' ছবিতে শাবানাকে খুন করতে যাওয়া ভয়ঙ্কর ফরীদির কথা কে ভুলতে পারে! 'ঘাতক' ছবির গোলাম আজমের ভূমিকায় রাজাকার চরিত্রে মাইন্ডব্লোয়িং ছিলেন।

পজেটিভ+নেগেটিভ চরিত্রে 'পাহারাদার' ছবির অভিনয় ছিল অন্য লেভেলের। আলীরাজের গোলাম হয়ে তার কথামতো খুনও করে আবার বাড়ি ফিরলে স্ত্রী-সন্তানকে জড়িয়ে কাতর হয়ে পড়ে। 'মায়ের অধিকার' ছবিতে সালমান শাহ-র সাথে মামা-ভাগ্নের রসায়ন দর্শক কখনো ভুলতে পারবে না। এমনকি 'স্নেহ' ছবিতেও তাদের রসায়ন ভুলতে পারবে না কেউ। 'মায়ের অধিকার' ছবিতে ফেরদৌসী মজুমদারকে বড়লোকি অহংকারের জন্য শিক্ষা দিতে বস্তির টোকাইদের নিয়ে তার আলিসান জাহান মণ্জিলে দামি সব জিনিসপত্র নষ্ট করায়, খাবারগুলো টোকাইদের খেতে বলে। তারপর সংলাপগুলো যখন বলে সেগুলো থেকে সাহিত্যের সম্পর্ক খোঁজা যায়-'এই ভদ্রলোকের বাচ্চা! তোর ক্ষুধা লাগে ওদের লাগে না! আর একবার যদি বস্তি উচ্ছেদের কথা ভাবিস এরা সবাই তোর জাহান মণ্জিলের সব ইট খুলে নিয়ে যাবে।' বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম যেমন উঁচুতলার লোকের সাথে নিম্নশ্রেণির বিরোধ ও বিদ্রোহ দেখান, সাম্যের কথা বলেন ফরীদির সংলাপে মেলে সেই বিদ্রোহী সুর।'মাতৃত্ব' ছবিতে মৌসুমীর স্বামীর ভূমিকায় কালজয়ী হয়ে আছেন। প্রথমদিকের 'দহন' নামের মাস্টারপিস ছবিতে ছিল চরিত্রকে শাসন করা অভিনয়। 'ব্যাচেলর' ছবিতে ইলোরা গহরের প্রেমে পড়ার সময় তার বেশি বয়সের যে প্রেমিক চরিত্রের অভিনয় তা কি ভোলা যায়! তার ওপর আবার ঐ হিট গানটি-'আমি তো প্রেমে পড়িনি প্রেম আমার উপরে পড়েছে।' গান চলে আর মাথায় জল ঢালা হয়। অসাধারণ গান। মুক্তিযুদ্ধের মাস্টারপিস কাজ 'একাত্তরের যীশু'-র প্রাণ ফরীদি। বিস্ময় কাটে না 'একাত্তরের যীশু' দেখে। কী সাদামাটা একজন লোক মুক্তিযোদ্ধাদের আগলে রাখে। জীবন বাঁচাতে চার্চে আশ্রয় দেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের না চেনার ভান করে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। ক্রুশবিদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে 'না না' বলে ওঠে ফরীদি। এক্সপ্রেশন তখন অন্য লেভেলের। এ ছবিতে পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ফরীদির কাছ থেকে বের করে নেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ইমেজের ক্যারেক্টারাইজেশন। এছাড়া 'শ্যামল ছায়া, জয়যাত্রা''-তেও স্মরণীয়। 'শ্যামল ছায়া'-তে 'কোন বা পথে নিতাইগণ্জ যাই' গানটিতে গানের দলের ভূমিকায় ফরীদি মিশে যায়। শিমুল যখন রেডিও শোনে আর তার নিজের গল্প শোনাতে চায় ফরীদি বলেন-'গল্প পরে হবে, আসেন যুদ্ধ করি' তখন ঐ সংলাপ ছবির লক্ষ্যকে দেখায়। 'বাঙলা' ছবিতে পাকিস্তানপন্থী চরিত্রে বাড়ির বাইরের দেয়ালে শ্লোগান লেখা দেখে এক চোখের এক্সপ্রেশনটি জানিয়ে দেয় তার অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয়শক্তি। অভিনয় তো একেই বলে যদি চরিত্রে মিশেই না যাওয়া গেল তো চরিত্র নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে না। ফরীদি চরিত্রকে শাসন করতে জানতেন।

কমেডি চরিত্রেও ফরীদি অনবদ্য। 'মনে পড়ে তোমাকে' ছবিতে এটিএম শামসুজ্জামানের সাথে কমেডি পার্ট ছিল। এটিএম শামসুজ্জামান রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যাবার সময় ফরীদির গায়ে কাদা লাগে। কৈফিয়ত চাইলে এটিএম বলে-'আপনি চ্যাগাইয়া খাড়াইলে আমি কি করব?' ফরীদি প্রশ্ন করে-'হোয়াট ডু ইউ মিন বাই চ্যাগাইয়া?' 'ম্যাডাম ফুলি' ছবিতেও তাই। ভণ্ড ওঝার সঙ্গে প্রেমিক ফরীদি ছিল দুর্দান্ত। পরে শেষের দিকে পুলিশ যখন নিয়ে যাচ্ছিল এটিএম কে দেখে বলে-'আমি একা জেলে যামু না তোমারেও নিয়া যামু।' এ টিএম অস্বীকার করে। 'কুলি' ছবিতে ফরীদি ও দিলদারের দ্বৈত কমেডি অসাধারণ ছিল। তার গেটআপের মধ্যেই কমেডি ছিল। ছবিতে ফরীদির মেয়ে পপিকে ওমর সানী দেখতে যায়। আড়াল থেকে ফরীদি ও দিলদার তাকায়। কমেডি জোস ছিল। 'অপহরণ' ছবিতে পুরোদমে কমেডি করেছেন ফরীদি। এরকম মজার দৃশ্যগুলোতে ফরীদি ছিল চরিত্র ভেঙে চরিত্র গড়ার কারিগর।

খলনায়কের গান দেখতে কার না ভালো লাগে! সে গানে দর্শক যেমন আনন্দ পায় তেমনি ছবিতে বাড়তি একটা আনন্দ যোগ করে। ফরীদি সেখানে লিজেন্ডারি। 'পালাবি কোথায়' ছবিতে শাবানা, সুবর্ণা মুস্তাফা, চম্পার সাথে 'জাদুরে সোনারে ও খুকুমনিরে আমাকে ভালোবাসোরে' মজার গান ছিল। গানে গানে অফিসের বড়কর্তার চরিত্রহীন স্বভাব ফুটে ওঠে। 'বিশ্বপ্রেমিক' ছবিতে মৌসুমীর সাথে 'তোমরা কাউকে বোলো না' পুরো ঢালিউডে ওয়ান পিস সং। মাইলফলক হয়ে আছে গানটি। খলনায়কের সাথে নায়িকার রোমান্সের এ কালজয়ী গান আজও দর্শককে মুগ্ধ করে। গানে ফরীদির গেটআপ নায়কের থেকেও আকর্ষণীয় ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। 'মানুষ' ছবিতে দিতির সাথে 'আজ পাশা খেলব রে শাম' আরেকটি জনপ্রিয় গান। 'ত্যাগ' ছবিতে 'তেল গেলে ফুরাইয়া বাত্তি যায় নিভিয়া' আরেকটি মাইলফলক গান। 'বাংলার কমান্ডো'-তে 'সাজিয়ে গুজিয়ে দে মোরে সজনী তোরা' খলনায়কের লিপে হার্ট টাচিং সং। 'মায়ের অধিকার' ছবির 'পিঁপড়া খাবে বড়লোকের ধন ও সোনারে' এ গানটি পজেটিভ রোলের ফরীদির আরেকটি কালজয়ী গান। গানগুলো আমাদের ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে। এরকম গান আমাদর চলচ্চিত্রে আর হবে কিনা সন্দেহ আছে।

FLc9hvn.jpg


খলনায়কের জনপ্রিয় সংলাপে ফরীদি আছেন টপ লেভেলে। বিভিন্ন ছবিতে তার জনপ্রিয় সংলাপ ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি-

১. উত্থান পতন – আমারে আইজ না চিনলে কাইল চিনবা, কাইল না চিনলে পরশু চিনবা চিনতেই হইব নাম আমার রমজান আলী।
২. তিল রাখা ভালো না, কেটে ফেলতে হয় – বিশ্বপ্রেমিক
৩. টু দ্য পয়েন্টে – ঘাতক
৪. আই আই ও – অপহরণ
৫. পানি খাইতে টাইম দিমু না – বাংলার কমান্ডো
৬. মা রে ও মা হিশাব মিলছে রে মা – আত্ম অহংকার
৭. বিষে বিষক্ষয় – স্ত্রী হত্যা
৮. কুকুরু কুকুরু কুকুরুকু ঢু – নির্মম
৯. ছি ছি কি লজ্জা – হিংসার আগুন
১০. লাগছে রে লাগছে জায়গা মতো লাগছে – ত্যাগ
১১. ইয়া হিয়া হিয়া হিয়া – সতর্ক শয়তান

ফরীদির কথা বলার মধ্যেও আর্ট ছিল। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দেখা যায় তিনি উপস্থাপককে ডমিনেট করে যুক্তি দিয়ে নিজের বক্তব্য পরিষ্কার করেছেন। ব্যক্তিত্ব অনুসরণীয়।

কবিতায় আছে –
'অবশেষে জেনেছি মানুষ একা
জেনেছি মানুষ তার চিবুকের কাছেও ভীষণ অচেনা ও একা
দৃশ্যের বিপরীত সে পারে না একাত্ম হতে এ পৃথিবীর সাথে কোনোদিন
-পাখি হয়ে যায় প্রাণ,আবুল হাসান

এত রঙিন কর্মময় জীবনের পরেও হুমায়ূন ফরীদি শেষ পর্যন্ত একা। সুবর্ণা মুস্তাফার সাথে ডিভোর্সের পর ফরীদি সত্যিকার অর্থেই চিরতরে একা হয়ে যায়। যেদিন সুবর্ণার দ্বিতীয় বিয়ে হয় এখনো মনে আছে আমাদের বিভাগে বড়আপুরা ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে লিখেছিল 'সুবর্ণা, আজকের পর থেকে তোমাকে আর শ্রদ্ধা করি না, শুধুই ঘৃণা করি।' তারাও তো নারী ছিল অথচ দেখুন নারী হয়ে আর একজন নারীকে তারাও সেদিন সাপোর্ট করতে পারেনি। কেন পারেনি সেটা অনেক বড় দর্শনকে মিন করে। 'অপিস গ্লোয়িং চেয়ার' অনুষ্ঠানে সুবর্ণা বলেছিলেন তার সাথে ফরীদির বন্ধুত্বের জায়গাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হয়তো তার দিক থেকে বড় যুক্তি সেটাই। সুবর্ণা আরো বলেছেন- 'মানুষ ফরীদিকে আমি মিস করি না কিন্তু অভিনেতা ফরীদিকে ভীষণ মিস করি।' যেদিন চিরতরে চলে যান চ্যানেলে ইমদাদুল হক মিলন একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি ফরীদির খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। বললেন- 'যেদিন আমি শেষবারের মত আমার বন্ধুকে দেখতে যাই দেখি আমার বন্ধু অসহায়ের মত সোফায় বসে আছে। তার মুখের রং পাল্টে গেছে। চামড়া ঝুলে গেছে। আমার বন্ধুকে এত অসহায় আমি কখনো দেখিনি।'

হুমায়ূন ফরীদিকে প্রথম দেখি আমার ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকার সেলিম আল দীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে। তিনি জাবির ছাত্র ছিলেন এটা আলাদাভাবে গর্ব আমাদের। ফুল দিতে এসেছিলেন সমাধিতে। কথা বলার সৌভাগ্য হয়নি। শুধু দেখছিলাম একদৃষ্টিতে সেলিম আল দীনের সমাধির দিকে তাকিয়ে আছে। আর শেষবারের মত দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তাকে চেনা যাচ্ছিল না। মৃত্যুর পরে অনেককেই চেনা যায় না। মৃত্যু পাল্টে দেয় মুখশ্রী। মৃত্যু শুধু পাল্টাতে পারে না জীবনের যত আয়োজন। সে আয়োজনে একজন হুমায়ূন ফরীদি ইতিহাস। আমরা সে ইতিহাসে আমৃত্যু গর্বিত।

হুমায়ূন ফরীদি একজনই। মাস্টারপিস ওয়ার্ল্ড ক্লাস অভিনেতা। যে অভিনেতার বিচরণ আজ-কাল-পরশু সব দিন।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top