What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other বাংলাদেশি গানের চিরস্মরণীয় চার গীতিকবি (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
umfFj4f.jpg


বাংলাদেশের সঙ্গীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডার এক অমুল্য রত্ন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডার সম্পর্কে যারা অজ্ঞ তাঁরা কোনদিনই বুঝতে পারবে না যে এই গানের ভাণ্ডারে কত মণিমুক্তোয় পূর্ণ হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডারকে যেসকল মেধাবীরা করেছেন সমৃদ্ধ তাদের মধ্যে গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মনিরুজ্জামান মনির, মাসুদ করিম ও নজরুল ইসলাম বাবু এই চারটি নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

তাঁরা শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নয়, আধুনিক, দেশাত্মবোধক গানকেও করেছেন সমৃদ্ধ। অথচ এই মানুষগুলো সম্পর্কে আমাদের বর্তমান প্রজন্মসহ আমার সমসাময়িক অনেক শ্রোতারাই রয়ে গেছেন অজ্ঞ। যারা কোনদিন প্রচারের আলোয় আসেননি অথচ এই মানুষগুলোর লেখা গানগুলো গেয়ে অনেক শিল্পী হয়েছেন বিখ্যাত, জনপ্রিয়। এই চারজন মেধাবী ও চিরস্মরণীয় গীতিকবিদের নিয়ে আমার আজকের আয়োজন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার

এই নামটি শোনেননি বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাংলা গান ও চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত কিংবদন্তীর নাম গাজী মাজহারুল আনোয়ার। যিনি ২১ হাজার গানের স্রষ্টা ও আমাদের বাংলা গানের সর্বকালের সেরা গীতিকারদের একজন। একজন স্বনামধন্য কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় (১৯৬২-৬৩ সালে) প্রথম গান লিখেন 'বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে', যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন। ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। সেইসময়ে গানপ্রতি ৫০ টাকা পেতেন যা দিয়ে তাঁর পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু। সেই যে শুরু করেছিলেন আজ অবধি তাঁর গান লেখা আজো চলছে । বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেও টেলিভিশনের জন্য গান লিখে গেছেন। রেডিও ও টেলিভিশনে গান নিয়ে যখন ব্যস্ত তখন ১৯৬৫ সালে যুক্ত হোন চলচ্চিত্রের সাথে। সুভাষ দত্তের 'আয়না ও অবশিষ্ট' ছবিতে 'আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল' গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা সফলতার সাথে শুরু করেন। গানটি আজো প্রয়াত আঞ্জুমান আরা বেগম ও বশির আহমেদের কণ্ঠের সেরাগানগুলোর তালিকায় শীর্ষে আছে।

রুনা লায়লার গাওয়া চলচ্চিত্রের প্রথম গান 'গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে কী হবে'ও গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা। তাঁর লেখা বহু কালজয়ী গান আমাদের চলচ্চিত্রের গানের ভাণ্ডারের আলাদা এক সম্পদ হয়ে আছে। শুধু তাই নয়, তাঁর লেখা 'জয় বাংলা, বাংলার জয়' আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রেরণাদায়ক গান হিসেবে শ্রেষ্টত্ব অর্জন করেছিল যা আজো গাওয়া হয় ও হবে চিরকাল। বিবিসি বাংলা শতাব্দির সেরা ২০ গানের মাঝে এ গানটিসহ আরও দুটো গানসহ গাজীর লেখা মোট ৩টি গান স্থান পেয়েছে। আঞ্জুমান আরা বেগম , রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, সৈয়দ আব্দুল হাদীসহ এমন কোন খ্যাতিমান শিল্পী নেই যে যার কণ্ঠে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গান নেই। জহিরুল হকের 'সারেণ্ডার' ছবিতে জসিমের লিপে 'সবাই তো ভালোবাসা চায়' গানটি দিয়ে তো সারেণ্ডার ও জসিমকে দর্শকদের হৃদয়ে ঠাই করে দিয়েছেন এবং যে গানটির জন্য সুরকার আলম খান ও শিল্পী এন্ড্রু কিশোর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে 'উচিৎ শিক্ষা', ১৯৯৬ সালে 'অজান্তে', ২০০১ সালে 'চুড়িওয়ালা', ২০০২ সালে 'লাল দরিয়া', ২০০৩ সালে 'কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি' চলচ্চিত্রগুলোর জন্য শ্রেষ্ট গীতিকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গানগুলোর কথা যেমন হৃদয়ছোঁয়া ঠিক তেমনি তাঁর চলচ্চিত্রগুলোও ছিল হৃদয়ছোঁয়া দারুণ কিছু। তিনি একজন সফল কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ছবিগুলোর কাহিনীগুলো হতো নাটকীয়তায় ভরপুর যা বেশ কয়েকবার মোড় নিতো। কিন্তু তিনি যেন কিভাবে কিভাবে সব নাটকীয়তা এক সুতোয় বেঁধে সুন্দর এক সমাপ্তি টানতেন যা আমাকে বারবার খুব মুগ্ধ করতো।

তার ছবি প্রযোজনার একটি প্রতিষ্ঠান ছিল যার নাম 'দেশ চিত্রকথা'। এখান থেকে গাজী মাজহারুল আনোয়ার ৪২টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যার সবগুলোতে তিনি পরিচালক হিসেবে ছিলেন না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলো হলো– শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন,আর্তনাদ,পাষাণের প্রেম ও এই যে দুনিয়া। পরিচালনা করেননি কিন্তু ছবি প্রযোজনা করেছেন সেই ছবিগুলো হলো সমাধান, অগ্নিশিখা, অনুরোধ, জিঞ্জির, আনারকলি, নান্টু ঘটক, চোর, বিচারপতি, সন্ধি ও স্বাক্ষর। আরো পরিচালনা করেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের 'জীবনের গল্প' ও অনন্ত জলিল প্রযোজিত 'হৃদয় ভাঙা ঢেউ'।

তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি, তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের সদস্য, সেন্সরবোর্ডের সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাঁচবার গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছাড়াও তিনি ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, জিয়া স্বর্ণপদক, এসএম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেন ।

চিরকাল 'বাংলাদেশী' বা বাংলাদেশপন্থি হয়ে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এই মেধাবী মানুষটি যিনি আজ আমাদের মিডিয়ায় বড় অবহেলিত। এই বরেণ্য মেধাবী মানুষটিকে জানাই অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দোয়া করি, প্রিয় এই মানুষটি আমাদের মাঝে জীবিত থাকুক আরো অনেক অনেক দিন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার শুধু একজন ব্যক্তি নন, বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির একটি 'প্রতিষ্ঠান' হয়ে চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের উল্লেখযোগ্য কিছু গান ও লিঙ্ক :

জয় বাংলা বাংলার জয়

একবার যেতে দে না আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয়

একতারা তুই দেশের কথা

আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল

গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে

চোখের নজর এমনি কইরা

তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে

সাতটি রঙের মাঝে মিল খুঁজে না পাই

আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে

অনেক সাধের ময়না আমার

শুধু গান গেয়ে পরিচয়

চলে আমার সাইকেল হাওয়ায়

আমার নাম কালু মিয়া

মাগো মা ওগো মা

আউল বাউল লালনের দেশে

জয় হবে হবেই আমার

এই মিথ্যেটুকু যদি সত্যি হলো

কোকিলা কালো বলে গান শুনেনা কে

ঝিলমিল ঝিলমিল করবে রাত

একটা চিঠি লিখে দাও

জয় আবাহনী জয় মোহামেডান

জীবনটা যেন এক

সবাই তো ভালোবাসা চায়

মামা ও মামা আমি তোমার

চিঠি লিখলাম তোমাকে

ভালোবাসা জীবন থেকে অনেক বড়

মাগো তুমি একবার খোকা বলে ডাকো

আমরা দুজন চিরসাথী

সবার জীবনের প্রেম আসে

মনিরুজ্জামান মনির

বাংলাদেশের গানের ভাণ্ডারে ডুব দিলেই আপনি মনিরুজ্জামান মনির নামের এক মহারথীর সন্ধান পাবেন যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবেই। একটা মানুষ এতো এতো দারুন গান কিভাবে সৃষ্টি করতে পারে সেটা আপনার কাছে এক বিরাট প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে। আধুনিক, দেশাত্মবোধক, ফোক, চলচ্চিত্র কোন ধারার গানে আপনি মনিরুজ্জামান মনিরকে খুঁজে পাবেন না বলতে পারবেন?

মনিরুজ্জামান মনির ১৯৫২ সালের ২৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের তেঘরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। চার ভাই-তিনবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। স্কুল জীবনে পড়ার সময়েই ছড়া কবিতা লিখে লেখার হাতেখড়ি শুরু এবং সেইসময় দৈনিক পয়গাম, দৈনিক পাকিস্তান, সবুজপাতায় প্রায় নিয়মিত ছড়া লিখতেন। সিলেট বেতারের কণ্ঠশিল্পী উজির মিয়া ছিলেন মনিরুজ্জামান মনিরের মামা যিনি হাসন রাজার গানের জন্য বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।
মামা উজির মিয়ার সুবাদে কিশোর বয়সেই মনিরুজ্জামান মনির রেডিওতে গান লেখার সুযোগ পান। এভাবে গান লিখতে লিখতে ১৯৭০ সালেই বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হয়ে গেলেন। সেই যে গান লেখার নেশা তাঁকে পেয়ে বসে তা আর ছাড়তে পারেননি। বিজ্ঞান বিভাগে মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর বাবা মা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হবে। তাই ভর্তি করালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে কিন্তু ছেলে আর ডাক্তার হয়নি, হয়ে গেলেন বাংলাদেশের গানের চিরস্মরণীয়, দেশসেরা, অসাধারণ গীতিকারদের একজন। আসলে তার মনের ভেতরেই ছিল পেশাদার গীতিকার হওয়ার বাসনা যার কারণে ডাক্তারি পড়ার কারণ দেখিয়ে ঢাকাতে চলে আসার সুযোগটি কাজে লাগালেন।

এরই মাঝে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নওয়াজিশ আলী খান প্রযোজিত 'বর্ণালী' অনুষ্ঠানের জন্য 'প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি দেশাত্মবোধক গান লিখেন যার সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন আলাউদ্দিন আলী। শিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহর কণ্ঠে বিটিভিতে গানটি প্রচারিত হওয়ার পর দারুণ সাড়া পান। যার ফলে বিটিভির 'মালঞ্চ' অনুষ্ঠানের দুই পর্বে সৈয়দ আব্দুল হাদীর কণ্ঠে 'সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি' এবং নিয়াজ মোহাম্মদের কণ্ঠে 'রাঙামাটির রঙে চোখ জুড়ালো' গান দুটি প্রচারিত হয়। যে গান দুটিও প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। কিন্তু 'প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ' গানটির জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দুবার ডেকে পাঠান মনিরুজ্জামান মনিরকে।
'প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ' জিয়াউর রহমান বিএনপির দলীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত করেন যা আজ অবধি আছে। সেদিন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন জানলেন যে মনিরুজ্জামান মনির শিক্ষিত বেকার যুবক তখনই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে অফিসার পদে নিয়োগ দেন যার থেকে পরবর্তীতে মনিরুজ্জামান মনির পরিচালক হিসেবে অবসর নেন। সরকারি-বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি অথবা দলনেতা হিসেবে ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, আরব আমীরাত, ইরান, চীন, তুরস্কসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে এসেছেন। সরকারি সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে সর্বশেষ ঘুরে আসেন মিশর। তিনি ছিলেন টিম ম্যানেজার এবং দলনেতা ছিলেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। মিশরে তারা জসীম উদ্দীনের 'সুজন বাধিয়ার ঘাট' গীতিনাট্য পরিবেশন করেছিলেন।

তাঁর লেখা গানগুলোর মাঝে বাংলাদেশের মানুষের মনের সহজ সরল কথাগুলো নান্দনিক ভাবে ফুটে উঠেছে। তাই তো গান শুনলেই আমরা সেইসম বুঝতে পারতাম এটা মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা গান।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা'র আসামী বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম মেজর মুতালিবের কন্যা ফাতেমা মনিরকে বিয়ে করেন যিনি কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন।

মনিরুজ্জামান মনির বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানকে করেছিলেন সমৃদ্ধ। 'সন্ধিক্ষণ' ছবিতে 'চলতি পথে বাধা আসে, তাই বলে কি পথ চলবে না' গানটি দিয়েই যুক্ত হোন চলচ্চিত্রের সাথে। এরপর ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের গানে হয়ে যান অপরিহার্য একজন গীতিকার। 'প্রানসজনী', 'নিতিবান', 'দুই জীবন', 'ভেজা চোখ', 'চেতনা', 'সত্য মিথ্যা', 'পিতা মাতা সন্তান' 'প্রথম প্রেম' 'অন্তরে অন্তরে', 'স্বপ্নের ঠিকানা' 'প্রেমের অহংকার'-এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর সবগুলো গান তিনি একাই লিখেছিলেন। এছাড়াও গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মো. রফিকুজ্জামান, আমজাদ হোসেন, মিল্টন খন্দকারের মতো গীতিকারদের সাথেও বিভিন্ন অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন। বাংলাদেশের গানের সুর সম্রাট আলম খান ও কিংবদন্তীতুল্য কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের অসংখ্য অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার হলেন মনিরুজ্জামান মনির। প্রায় ৫ শতাধিক ছবিতে গান লিখেছেন যার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ (দুই জীবন), ১৯৮৯ (চেতনা) ও ১৯৯০ সালে (দোলনা) টানা তিনবার শ্রেষ্ট গীতিকার হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও অর্জন করেছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরস্কার। কয়েকবার পেয়েছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কার। বাংলাদেশের এমন কোন চলচ্চিত্র পরিচালক নেই, যার ছবিতে তিনি গান লেখেননি। ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রের জন্যেও তিনি গান লিখেছেন।

বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন, সৈয়দ আব্দুল হাদী, শাহনাজ রহমতুল্লাহসহ দেশের সকল বিখ্যাত শিল্পীই তার গান গেয়েছেন। ভারতের হৈমন্তী শুল্কা, শ্রাবন্তী মজুমদার, কুমার সানু, অনুরাধা পাড়োয়াল, অভিজিৎ, অলকা ইয়াগনিকসহ বিখ্যাত শিল্পীরা তার গান গেয়েছেন।

আজ খুব কষ্ট হয় যখন দেখি আবোল তাবোল কথার আধুনিক গীতিকারদের যারা একজন মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা গান শুনেও শিখতে পারেনি কীভাবে গান লিখতে হয় তা। এমন একজন গীতিকার আমাদের দেশে আছেন যাকে আমরা যথাযথ ভাবে মূল্যায়ন করিনি অথচ যাকে পেলে অন্যরা চিরকাল মাথায় তুলে রাখতো। মনিরুজ্জামান মনির আমাদের শুধু দিয়েই গেলেন কিন্তু পেলেন না কিছুই যা আমাদের চিরায়ত অকৃতজ্ঞতার সংস্কৃতির চরম উদাহরণ। এমন কি আমাদের অনলাইন তথ্যভাণ্ডারে নেই অসাধারণ এই গীতিকার সম্পর্কে কোন পরিপূর্ণ তথ্য। বিজয়ের এই মাসে দেশের সেরা এই গীতকবিকে জানাই অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

মনিরুজ্জামান মনিরের লেখা অসংখ্য গান থেকে কিছু গানের নাম ও লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো

প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ

সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি

রাঙামাটির রঙে চোখ জুড়ালো

যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়

নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন

ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে

কী জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা

কত রঙ্গ জানো রে মানুষ

চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার

বাড়ির মানুষ কয় আমায়

জীবন মানে যন্ত্রণা নয় ফুলের বিছানা

তুমি যেখানে আমি সেখানে

তিনকন্যা এক ছবি

আজ রাত সারারাত জেগে থাকবো

গুনে গুনে এক দুই তিন

বুকে আছে মন

ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা

আবার দুজনে দেখা হলো

আমি একদিন তোমায় না দেখিলে

তুমি ছাড়া আমি একা

তুই তো কাল চলে যাবি

জীবনের গল্প আছে বাকী অল্প

প্রিয়া আমার প্রিয়া

কী দিয়া মন কাড়িলা

শূন্য এ হাতে হাত রেখে

আমার এ ঘর যেন স্বর্গ

মন্দ হোক ভালো হোক

তুমি আরও কাছে আসিয়া

পিতা মাতার পায়ের নীচে

মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে

তুমি আমার প্রথম প্রেম

আমি চিরকাল প্রেমেরই কাঙ্গাল

তোমাকে ভালোবেসে দিতে পারি প্রাণ

এই মাটি আমার মায়েরই কান্না মাখা

আমার এ গান তোমারই জন্য

জীবনের গান আজ গাইবো

তুমি আমার জীবন প্রিয়া

কাল তো ছিলাম ভালো

এখানে দুজনে নির্জনে

টেলিফোনে কিছু কথা হলো

এইদিন সেইদিন কোনদিন

মাসুদ করিম

এরশাদ সরকারের আমলে [সম্ভবত ১৯৮৭/৮৮] এক ঈদে বিটিভিতে দেশসেরা কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রচার হবে। আমরা সবাই টেলিভিশনের সেটের সামনে উপস্থিত। অনুষ্ঠান শুরু হলো 'যখন থামবে কোলাহল, ঘুমে নিঝুম চারিদিক' শিরোনামে একটি অদ্ভুত সুন্দর রোমান্টিক গান দিয়ে। সুবল দাসের সুর করা ও রুনার পাগল করা কণ্ঠে গানটি সেদিনই মনের ভেতর গেঁথে যায়। সেই অনুষ্ঠানে রুনা ১০টি গান পরিবেশনা করেছিলেন যার মধ্য 'শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো' শিরোনামে আরেকটি গান ছিল। সেই অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তীতে ঐ গানগুলো 'যখন আমি থাকবো নাকো' শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন।

সেই প্রথম মাসুদ করিম নামে একজন গীতিকারের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল 'যখন থামবে কোলাহল' গানটির জন্য। এর আগেও বিভিন্ন চলচ্চিত্রের টাইটেলে 'গীতিকার মাসুদ করিম' নামটি দেখেছিলাম তবে চলচ্চিত্রের সেই মাসুদ করিমই যে রুনার গানটির গীতিকার বুঝতে পারিনি।
মাসুদ করিম ১৯৩৬ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বাবা রেজাউল করিম ছিলেন একজন সরকারি চাকরিজীবী আর মা নাহার ছিলেন গৃহিনী।

১৯৫৫ সাল থেকে মাসুদ করিম গান লেখা শুরু করেন। রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রেও দায়িত্ব পালন করেন। এরপর কয়েক বছর চাকরি করেছেন ময়মনসিংহ এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিতে ভাইস চ্যান্সেলরের সেক্রেটারি হিসেবে। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি রেডিও এবং টেলিভিশনের জন্য গান রচনা আরম্ভ করেন। ৬০, ৭০ ও ৮০ এর দশকে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য প্রচুর গান লিখেছেন। রচনা করেছেন অনেক গীতিনকশা, যার মধ্যে অন্যতম ছিল স্বাধীনতা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে গানের অনুষ্ঠান, ঈদের অনুষ্ঠান ইত্যাদি। মাসুদ করিম চলচ্চিত্র প্রযোজনাতেও ছিলেন। তার প্রযোজিত ছবির নাম- 'অচেনা অতিথি', 'ওয়াদা' ও 'ভালো মানুষ'।

বাংলাদেশের পাঠক মহলে কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা 'মাসুদ রানা' আজো জনপ্রিয় একটি সিরিজ হিসেবে বিবেচিত হয় অথচ কেউ জানে না এই 'মাসুদ রানা' নামটির পেছনের কথা। নামকরণ করা হয় দুজন বাস্তব মানুষের নামের অংশ মিলিয়ে। কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর স্ত্রী আধুনিক সংগীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমীনের সাথে পরামর্শ করে নামটি নির্বাচন করেন। তাদের দুজনেরই বন্ধু স্বনামধন্য গীতিকার মাসুদ করিমের 'মাসুদ' আর কাজী আনোয়ার হোসেনের ছেলেবেলার হিরো (নায়ক) ইতিহাসে পড়া মেবারের রাজপুত রাজা রানা প্রতাপ সিংহ থেকে 'রানা' নিয়ে নাম হলো 'মাসুদ রানা'। অর্থাৎ মাসুদ রানার মাসুদ হলেন লেখকের প্রিয় বন্ধু গীতিকার মাসুদ করিম।

ষাট ও সত্তর দশকের রেডিও টিভি ও চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় শিল্পী দিলারা আলোর সাথে গীতিকার মাসুদ করিমের সঙ্গে ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রাম রেডিওতে পরিচয় ও বিয়ে। মাসুদ করিম তখন চট্টগ্রাম বেতারের প্রযোজক।

মাসুদ করিমের লেখা বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য লেখা অনেক গান জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৮২ সালে আমজাদ হোসেনের 'দুই পয়সার আলতা' ছবির গানের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার গ্রহণ করেন এবং এরপর ১৯৯৪ সালে দিলিপ সোমের 'হৃদয় থেকে হৃদয়' ছবির গানের জন্য দ্বিতীয়বার সেরা গীতিকারের পুরস্কার অর্জন করেন ।

তার লেখা গানগুলো একেকটি চলচ্চিত্রকে যেমন করেছে স্মরণীয় তেমনি একেকজন শিল্পীকেও দিয়েছিল শ্রোতামহলে তুমুল জনপ্রিয়তা। কামাল আহমেদের 'রজনীগন্ধা' ছবিতে তাঁর লেখা 'আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই', 'লালুভুলু' ছবিতে 'তোমরা যারা আজ আমাদের ভাবছো মানুষ কিনা', 'দুই পয়সার আলতা' ছবিতে 'এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই', 'পুত্রবধু'তে 'সন্ধ্যারও ছায়া নামে' গানগুলো সাবিনা ইয়াসমিন, খুরশীদ আলম ও মিতালী মুখার্জীকে আজো স্মরণীয় করে রেখেছে। মাসুদ করিমের লেখা গানে শুধু এই দেশের কিংবদন্তীতুল্য শিল্পীরা কণ্ঠ দেয়নি, উপমহাদেশের কিংবদন্তীতুল্য অনেক শিল্পী মাসুদ করিমের লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন। যাদের মধ্য আছেন গজল শিল্পী মেহেদি হাসান, শ্যামল মিত্র, কুমার শানু, অলকা ইয়াগনিক ও উষা উথুপ।

মাসুদ করিমের গানগুলোর কথা এতো কাব্যিক ও নান্দনিক যে খুব সহজেই মনে গেঁথে যেতো। আজকের ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে বেড়ে উঠা ডিজিটাল গীতিকারদের মাসুদ করিমের গানগুলো থেকে শেখা উচিৎ যে গান লেখাটা কত নান্দিনিক ও মেধার ব্যাপার- যা সবাই পারে না। ১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর বাংলা গানের এই মহান গীতিকার কানাডায় মৃত্যুবরণ করেন।

মাসুদ করিমের লেখা কিছু উল্লেখযোগ্য গান :

যখন থামবে কোলাহল

শিল্পী আমি তোমাদের গান শোনাবো

সন্ধ্যারও ছায়া নামে

আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো

পথেরও সাথী নামো গো পথে আজ

তুমি আমি দুজনাতে

তোমরা যারা আজ আমাদের

Meri Zindagi Merey Paas Aa

তুমি যে আমার ভালোবাসা

যে বাঁশী ভেঙে গেছে

খোলা জানালায় এক মুঠো আলো

হেসে খেলে এই মনটা আমার

জোনাক জোনাক রাত

আমাদের পৃথিবীতে তোমরা দুজন

দুঃখ দেয়ার মানুষটাও হারিয়ে গেছে আমার

ভালোবাসা মানে না কোন পরাজয়

তুমি এমন কোন কথা বলো না

নজরুল ইসলাম বাবু

'সব কটা জানালা, খুলে দাও না। আমি গাইবো গাইবো বিজয়েরই গান'… সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠের অসাধারণ এই দেশাত্মবোধক গানটি শুনেনি এমন বাংলা গানের শ্রোতা খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু সেইসব শ্রোতাদের যদি জিজ্ঞেস করেন 'গানটির গীতিকার কে?' তাহলে দেখবেন ৯৫ ভাগ শ্রোতাই সঠিক ভাবে নাম বলতে পারবে না। এটা শ্রোতাদের দোষ নয়, দোষ আমাদের, আমরা যারা এমন সব মেধাবী মানুষগুলোর সৃষ্টি ও কর্ম সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কোন তথ্যভাণ্ডার শ্রোতাদের দিতে পারিনি।

এবার মূল কথায় আসি। আপনি যদি স্বাধীন বাংলাদেশের গত শতাব্দীর গানের ভাণ্ডারের রত্নগুলোর সন্ধান পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই অবশ্যই নজরুল ইসলাম বাবু নামের একজন মেধাবীর সন্ধান পেয়ে যাবেন। কারণ গানের ভাণ্ডারে থাকা অনেক দারুণ দারুন গান যে ঐ মেধাবী মানুষটির লেখা যা দিয়ে অনেক কণ্ঠশিল্পী হয়েছেন চিরস্মরণীয় ও বরণীয় কিন্তু ঐ মেধাবী রয়ে গেছেন আজও অনেকের জানার বাইরে।
বাবু ১৯৪৯ সালের ১৭ই জুলাই জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় চরনগর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিকভিটা একই উপজেলা হেমাড়াবাড়ি গ্রামে। পিতা বজলুল কাদের, মাতা রেজিয়া বেগম। পিতা বজলুল কাদেরের সঙ্গীতানুরাগ ছোটবেলা থেকেই বড় সন্তান নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রভাবিত করে। স্কুল জীবন থেকেই তিনি সাহিত্য চর্চার পাশাপামি সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০ সালে তৎকালীন সরকার তার উপর গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে তিনি আত্মগোপন করেন এবং ১৯৭১ সালে ভারতে চলে যান। ট্রেনিং শেষে দেশে ফিরে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার লেখাপড়া, সাহিত্য ও সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭৩ সালেই তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর একে একে লিখতে থাকেন দারুণ সব গান। যার মধ্যে 'সব কটা জানালা খুলে দাও না' অন্যতম। এই গানটি তৎকালীন বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাংলা ও ইংরেজি সংবাদের আগে আবহ সঙ্গীত হিসেবে সংবাদের টাইটেলে প্রচার করা হতো কখনো সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে আবার কখনো শুধু বাদ্যযন্ত্রে। সুরকার ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। পরবর্তীতে গানটি কাজী হায়াত ১৯৯২ সালে 'সিপাহী' ছবির টাইটেলেও ব্যবহার করেছিলেন। এই গানটি ছাড়াও বাবুর লেখা 'একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার', 'আমায় গেঁথে দাও না মাগো একটা পলাশ ফুলের মালা' দেশাত্মবোধক গানগুলোও আজো বিভিন্ন জাতীয় দিবসে গাওয়া হয়।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রয়াত চিত্রনায়ক ও কণ্ঠশিল্পী জাফর ইকবালের কণ্ঠে 'সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী' গানটি তাকে দেয় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, যা আজো শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরে যার সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন আলাউদ্দিন আলী। শুধু জাফর ইকবালই নন, দিলরুবা খানের কণ্ঠের ঝড় তোলা 'দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা' গানটিও নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা ।
তিনি বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদের প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদের (১৯৭৮-৭৯)সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সাথে প্রথম চলচ্চিত্রে গান লিখতে শুরু করেন। মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত 'আঁখি মিলন' ছবির 'আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে', 'কথা বলবো না, বলেছি' গানগুলো আজও শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আছে। চলচ্চিত্রে নজরুল ইসলাম বাবুকে আমরা পেয়েছি 'দুই পয়সার আলতা', 'মহানায়ক', 'প্রতিরোধ', 'উসিলা', 'পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'প্রেমের প্রতিদান' এর মতো দারুণ সব চলচ্চিত্রের দারুণ দারুণ সব গানে। শুধু বাংলাদেশের সাবিনা, রুনা, সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোরের মতো শিল্পীদের কণ্ঠে নয় বাবুর লেখা গান আছে কুমার শানু, আশা ভোষলে, হৈমন্তী শুক্লা'র মতো উপমহাদেশের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তীতুল্য শিল্পীদের কণ্ঠেও। ১৯৯১ সালে 'পদ্মা-মেঘনা-যমুনা' চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ট গীতিকার হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র ও বাংলাদেশ প্রযোজক সমিতির পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮৪ সালের ২৩ নভেম্বর নজরুল ইসলাম বাবু সংগীতপ্রিয় শাহীন আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের দুটি কন্যা সন্তান- নাজিয়া ও নাফিয়া। ১৯৯০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর অকালে ইন্তেকাল করেন বাংলা গানের এই মেধাবী ও অসাধারণ গীতিকার। তথ্য সহযোগিতায় ও কৃতজ্ঞতায়ঃ মাইদুল ইসলাম শাকিল ভাই।

নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু গান :

সব কটা জানালা খুলে দাও না

আমায় গেঁথে দাওনা মাগো

সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী

দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা

আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে

কথা বলবো না, বলেছি

পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই

আমার এ দুটি চোখ

ডাকে পাখী খোলো আঁখি

এই অন্তরে তুমি ছাড়া নেই কারো

কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো

আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা

তোমার হয়ে গেছি আমি

কাল সারারাত ছিলো স্বপ্নের রাত

কাঠ পুড়লে কয়লা হয়

(১৯৯১ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র 'পদ্মা মেঘনা যমুনা'-এর এই গানটির জন্য গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবু, সুরকার খন্দকার নুরুল আলম ও কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর তিনজনেই জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top