What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other একজন ও অনেক আমজাদ হোসেন (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
gIrcqKA.jpg


'মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়
অতীতের থেকে উঠে এসে আজকের মানুষের কাছে
প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।' – জীবনানন্দ দাশ

কিছু কিছু মানুষ মৃত্যুর পর আরো বেশি মানবীয় হয়ে ওঠে জীবিত মানুষের কাছে তাঁদের কর্মের মাধ্যমে। আমজাদ হোসেন তাঁদের একজন এবং তিনি একজনই। বহরূপী তিনি। বহুরূপী বলতে তাঁর সত্তা অনেক নির্মাণের জগতে। পরিচালক, অভিনেতা, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, কাহিনীকার, গীতিকার, নাট্যকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক।

জন্ম ১৪ আগস্ট, ১৯৪২। জামালপুরে। ভারতের মেঘালয় রাজ্য দেখা যেত বাড়ির কাছ থেকে। বিরাট রেললাইন ছিল বাড়ির পাশে। রেললাইনে ঈদের চাঁদ দেখতে যেতেন বন্ধুদের সাথে। ব্রক্ষ্মপুত্র নদের তীরে ঘুরতেন।

পঞ্চাশের দশকে ঢাকা এসে সাহিত্য ও নাটকের সাথে জড়িত হন। নাটকে তখন কাজ করছিলেন মুনীর চৌধুরী, নুরুল মোমেন ও আসকার ইবনে শাইখ। ঢাকায় নিয়মিত নাটক করতেন মঞ্চে। বিশ টাকার সম্মানী থেকে চারআনায় হয়ে যেত নাস্তা। স্ট্রাগল পিরিয়ড সেখান থেকেই শুরু। সাহিত্যিক শওকত আলীর ঢাকা হলের চারতলায় বসে প্রথম নাটক লেখেন। নাটকের নাম 'ধারাপাত'। সৈয়দ শামসুল হক 'চিত্রালী'তে নাটকটি নিয়ে অসাধারণ প্রবন্ধ লেখেন। তার কিছুদিন পর পরিচালক সালাহউদ্দিন আমজাদ হোসেনকে প্রস্তাব দেন 'ধারাপাত' তিনি ছবি নির্মাণ করতে চান। তারপর হয়ে গেল ছবি। হুমায়ূন আহমেদও তাঁর একটা লেখায় নাটক ও চলচ্চিত্রে চিত্রনাট্যকার আমজাদ হোসেনের আধিপত্যের কথা বলেছিলেন এবং তিনিও তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ ছিলেন। তিনি নিজে জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন।

অভিনীত ছবি : তোমার আমার, হারানো দিন, লেট দেয়ার বি লাইট, জুলেখা, সংসার, বাল্যবন্ধু, পিতাপুত্র, এই নিয়ে পৃথিবী, প্রাণের মানুষ, ভালো থেকো।

কাহিনীকার : দুই ভাই, মানুষ-অমানুষ, আবার তোরা মানুষ হ, সুজন সখি।

প্রযোজনা : বাল্যবন্ধু, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, কসাই, জন্ম থেকে জ্বলছি, সখিনার যুদ্ধ, হীরামতি।

পরিচালনা : আগুন নিয়ে খেলা, জুলেখা, বাল্যবন্ধু, পিতাপুত্র, এই নিয়ে পৃথিবী (অসমাপ্ত), বাংলার মুখ (অসমাপ্ত), শহীদ আসাদ (অসমাপ্ত), নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, কসাই, জন্ম থেকে জ্বলছি, দুই পয়সার আলতা, সখিনার যুদ্ধ, ভাত দে, হীরামতি, গোলাপী এখন ঢাকায়, গোলাপী এখন বিলাতে, আদরের সন্তান, কাল সকালে, প্রাণের মানুষ।

5AsBzRK.jpg


তিনি বাণিজ্যিক ছবিতে পরিবর্তন এনেছিলেন গ্রাম থেকে শুরু করে শহুরে সংস্কৃতির ছবির প্যারালাল নির্মাণে। গ্রামীণ জীবন, অন্যায়, প্রতিবাদ, প্রেম, মিলন, বিচ্ছেদ এ ধরনের জীবনমুখী গল্প থাকত তাঁর ছবিতে। 'নয়নমনি'-র প্রেমের গল্পতে দর্শক আবহমান গ্রামীণ জীবনের একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনকে খুঁজে পাবে। 'গোলাপী' সিরিজের তিনটি ছবিতে তিন রকমের ঘটনার বিবরণ আছে। 'গোলাপী এখন ট্রেনে' দিয়ে একদম প্রান্তিক জনজীবনের কথা বলেছেন ববিতাকে ঘিরে, 'গোলাপী এখন ঢাকায়' দিয়ে সেই গোলাপীকে শহুরে সংস্কৃতির সাথে তুলে ধরেছেন যেখানে তার জীবন আরো বেশি চ্যালেন্জিং হয়ে ওঠে, 'গোলাপী এখন বিলাতে' সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্বদেশ ও বিদেশ মিলিয়ে মৌসুমীর মাধ্যমে আলাদা গল্প তুলে ধরেছে।

'সুন্দরী, সখিনার যুদ্ধ, দুই পয়সার আলতা, কাল সকালে' ছবিগুলো একদম নারীকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের জীবনের কঠিন সত্যগুলোকে তুলে এনেছে। এটাও আমজাদ হোসেনের একটা বক্তব্যধর্মী ভাষা তাঁর ছবির। নিজের লেখা উপন্যাস 'ভাত' থেকে নির্মিত ছবি 'ভাত দে'-ও ছিল দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে তখনকার সময়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে তুলে ধরার অসাধারণ প্রচেষ্টা। 'জন্ম থেকে জ্বলছি' আবার ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বিপ্লব, সঙ্গীত, প্রেম-কে একসাথে তুলে ধরেছে। 'আদরের সন্তান'-এর মাধ্যমে টোটালি ফুল প্যাকেজ বাণিজ্যিক ফ্যামিলি ড্রামাতে অপরাধ ও অনুতপ্ত হবার শিক্ষণীয় মেসেজ দিয়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের গল্পে। 'প্রাণের মানুষ' রোমান্টিক ফ্যামিলি ড্রামাতে ত্রিভুজ প্রেমের ট্র্যাজেডিতে অসাধারণ আরেক ছবি হয়ে উঠেছে।

'গোলাপী এখন ট্রেনে' থেকে 'জন্ম থেকে জ্বলছি' পর্যন্ত প্রযোজনা করেছেন। ডিস্ট্রিবিউটর থেকে টাকা-পয়সা দিত না তাই নিজেই শুরু করলেন প্রযোজনা।

'জীবন থেকে নেয়া'-র মতো মাস্টারপিস ছবির কাহিনী আমজাদ হোসেনের লেখা। এছাড়া আরো অনেক ছবির গল্প লিখেছেন। এস এ হক অলিক পরিচালিত 'আকাশছোঁয়া ভালোবাসা' ছবির গল্পও তাঁর লেখা।

CgBV3nX.jpg


প্রত্যেকটি ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি নিয়মিত পড়াশোনা করতেন। ছবিতে যে গানগুলো তাঁর লেখা সেগুলোর জন্যও তিনি পড়াশোনা করতেন কোন প্রেক্ষাপটে কোন গান ভালো লাগবে সেজন্য। কল্লোল যুগের কবিদের স্টাডি করে তিনি কবিতা লিখতে থাকেন। কবিতা লিখেছেন প্রচুর তাই তাঁর ছবিতে যে গানগুলো থাকত নিজের লেখা বা অন্যের লেখা হোক কাব্যিক ব্যাপারটা মাথায় রাখতেন। 'দেশ' পত্রিকায় তাঁর সমসাময়িক কারো কবিতা ছাপা হয়নি একমাত্র তাঁরই কবিতা ছাপা হয়েছিল। তাঁর শিক্ষকও তাঁকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলেন। কলেজ জীবনেই এতবড় অর্জন ভাবা যায় না। কবিতার রেশটি তিনি ছবির গানে রাখতেন সচেতনভাবে। 'জন্ম থেকে জ্বলছি' ছবির টাইটেল গানে 'এবার আদেশ করো তুমি আদেশ করো/ভাঙনের খেলা খেলব' এ লাইন দুটি নিজের মাকে মনে করে লিখেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন মা তাকে আদেশ দিচ্ছেন বাস্তবের সাথে মুখোমুখি হতে এবং সেটাই 'ভাঙনের খেলা' হিসেবে পরিণত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রচলিত বাণিজ্যিক ছবির ফরম্যাট ভেঙে ভাঙনটা শুরুও করেছিলেন।

উপন্যাস : ভাত, অবেলায় অসময়, নিরক্ষর স্বর্গে, অস্থির পাখিরা, আমি এবং কয়েকটি পোস্টার, উঠোন। গল্পগ্রন্থ – কাল সকালে।

উল্লেখযোগ্য গান :

এত কাছে চাঁদ বুঝি কখনো আসেনি – ধারাপাত
কত কাঁদলাম কত সাধলাম – ভাত দে
গাছের একটা পাতা ঝরলে – ভাত দে
তিলে তিলে মইরা যামু – ভাত দে
দিন থাকিতে হাইটা যাইও – ভাত দে
চুল ধইরো না খোঁপা খুলে – নয়নমনি
নানী গো নানী – নয়নমনি
কতই তোমার গুণ – নয়নমনি
বাবা বলে গেল – জন্ম থেকে জ্বলছি
জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো – জন্ম থেকে জ্বলছি
দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা – জন্ম থেকে জ্বলছি
কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না – সুন্দরী
কী করে বলিব আমি – সুন্দরী
আমি আছি থাকব – সুন্দরী
আছেন আমার মোক্তার – গোলাপী এখন ট্রেনে
বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম – কসাই
আমার দোষে দোষী আমি – কসাই
এই দুনিয়া এখন তো আর – দুই পয়সার আলতা
এমনো তো প্রেম হয় – দুই পয়সার আলতা
তারায় করে ঝিকিমিকি – গোলাপী এখন ঢাকায়
কেন তারে আমি এত ভালোবাসলাম – গোলাপী এখন ঢাকায়
আমি হৃদয় চিরিয়া দেখাব – হীরামতি
যোগী ভিক্ষা লয় না – হীরামতি
ছোটখাটো সংসার কত ঝামেলা – সখিনার যুদ্ধ
সময় হয়েছে ফিরে যাওয়ার – আদরের সন্তান
দাঁড়াও বন্ধু বহুদিনে – কাল সকালে
রঙের মানুষ রঙ্গিলা রে – প্রাণের মানুষ
একটা গল্প লেখা হলো – প্রাণের মানুষ
পাস্ট ইজ পাস্ট – প্রাণের মানুষ

গান লেখার সময় তিনি হয়ে যেতেন অন্য মানুষ। একা একটা চাদর দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে শব্দ কল্পনা করতেন। শব্দ মনের মতো না হলে তিনি কাঁদতেনও। অনেক গান লিখেছেন।

তাঁর ছবির সেরা জুটি ছিল ফারুক-ববিতা। গ্রামীণ পটভূমির ছবিতে ফারুক অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তাদের 'নয়নমনি' ছবি মুক্তির পরে প্রায় কয়েক লক্ষ ছেলের নাম রাখা হয় নয়ন কিন্তু 'গোলাপী এখন ট্রেনে' মুক্তির পর গোলাপীর দুঃখ দেখে মেয়েদের নাম গোলাপী রাখতে চাইত না। এর বাইরে শাবানা-আলমগীরও অন্যতম সেরা 'ভাত দে, সখিনার যুদ্ধ' ছবির মধ্য দিয়ে।

নিজের ছবির মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা ছিল 'ভাত দে' ছবিতে। শাবানাকে তাঁর বাবা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে বলা হলো-'চাইরটা ভাত দেন আমার বাবায় খাইব।' শাবানা তাই করলেন। কিন্তু শাবানার কান্না আর তিনি থামাতে পারছিলেন না। সকাল ১১টায় শুটিং শেষ হবার পর বিকাল ৪টা পর্যন্ত তারপরেও শাবানার কান্না থামে না।

6iJXelP.jpg


জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪)। একুশে পদক (১৯৯২)
অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৩, ১৯৮৪)
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৪)
এছাড়াও আরো অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি যেমন চলচ্চিত্রে পুরস্কার নিজে পেয়েছেন অনেক তেমনি অভিনয়শিল্পীরাও অবধারিতভাবে পেতেন। অনেক অভিনয়শিল্পীই তাঁর ছবি থেকে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল।

তিনি ডিজিটাল ফরম্যাটেও ছবি নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন উপযুক্ত গল্প পেলে।

টেলিভিশন নাটকেও তাঁর আধিপত্য ছিল আকাশচুম্বী। ঈদ এলে তাঁর কাছ থেকে গল্প নেবার ধুম পড়ে যেত। বিটিভি থেকে চ্যানেল আইয়ের 'জব্বর আলী' সিরিজের জনপ্রিয়তা ছিল অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দর্শকদের বাড়ির বাইরে দেখা যেত না 'জব্বর আলী' শুরু হলে। 'টাকা নেবো দুবাই যাবো' সংলাপটি ছিল মুখে মুখে। সামাজিক বিভিন্ন অপরাধের বিরুদ্ধে কমেডির মাধ্যমে স্যাটায়ার করা হয়েছিল নাটকে। তিনি একজন ভালো অভিনেতাও।

একজন আমজাদ হোসেন আমাদের প্রজন্মকে অভিভাবকশূন্য করার পথে, আমাদেরকে নিঃস্ব করার পথে আরেকধাপ এগিয়ে দিলেন। ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ সালে ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করলেন। মৃত্যু তাঁকে দৈহিকভাবে আমাদের কাছে রাখবে না, তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে শিল্পকে ভালোবাসা মানুষেরা তাঁকে স্মরণ করে যাবে।

আমজাদ হোসেন নামটি অমর হোক।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top