What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আদিবাসী লোককথা: সিঁদুর যেভাবে এলো (1 Viewer)

perfect man

Former Developer
Former Staff
Joined
Mar 6, 2018
Threads
158
Messages
825
Credits
19,228
চার বন্ধু। সবার মধ্যে ভাব খুব। যে কোন কাজই একসঙ্গে করে তারা। একবার কোনো এক কাজে তারা রওনা হয় দূরদেশে। যেতে যেতে তারা পৌঁছায় এক জঙ্গলের ভেতর। সন্ধ্যা গড়িয়ে ঠিক তখনই হলো রাত।


কী করবে তারা? বাধ্য হয়ে সবাই সিদ্ধান্ত নিল জঙ্গলের মধ্যেই রাত্রিযাপনের। কিন্তু জঙ্গলে তো অনেক বিপদ। বন্যপ্রাণীও আক্রমণ করতে পারে। তাহলে কীভাবে থাকবে তারা? চিন্তা করতে থাকলো তারা। শেষে সিদ্ধান্ত হয় গোটা রাতে বিপদ এড়াতে পালাক্রমে একজন করে জেগে থেকে পাহারা দিবে।​

চার বন্ধুর মধ্যে একজন কাঠুরে, একজন স্বর্ণকার, একজন তাঁতি এবং চতুর্থজন ছিল সিঁদুর বিক্রেতা। প্রথমে জেগে থাকল কাঠুরে। বাকি তিন বন্ধু তখন ঘুমিয়ে থাকে। কাঠুরে একা একা জেগে কী করবে? সে একটি কাঠ কেটে এনে তা থেকে গড়ল অপরূপ এক নারীমূর্তি। মূর্তিটি তৈরি করেই সে স্বর্ণকার বন্ধুটিকে জাগিয়ে দিয়ে নিজে ঘুমিয়ে পড়ল।

স্বর্ণকার বন্ধুটি ঘুম থেকে জেগেই পাহারা দিতে থাকে। এক কোণে নারী মূর্তিটি দেখে তো সে অবাক! সে তখন জেগে জেগে কী করবে? গয়না তৈরি করে তা নিয়ে সাজাল নারী মূর্তিটিকে। তার সময় শেষ হতেই সে তাঁতি বন্ধুকে জাগিয়ে নাক ডেকে ঘুমোতে থাকলো।

তাঁতি জেগে মূর্তি দেখেই চমকে যায়। একা একা জেগে সে কী করবে? কাপড় তৈরি করে মূর্তিটিকে চমৎকার করে জড়াল। নারীমূর্তিটিকে দেখতে তখন অপরূপ লাগল। এরপর সে সিঁদুর বিক্রেতা বন্ধুটিকে জাগিয়েই নিজে ঘুমিয়ে পড়ল।

সিঁদুর বিক্রেতা নারীমূর্তি দেখে তো অবাক। মধ্যরাত্রে অলংকার ও কাপড়ে মোড়ানো এমন অপরূপ নারীমূর্তি কোথা থেকে এলো? সে তখন কী করবে? সিঁদুর পরিয়ে দিল নারীমূর্তিটিকে। ঠিক তখনই নারীমূর্তিটি প্রাণ পেয়ে কথা বলা শুরু করলো। ওই নারীর কণ্ঠে ঘুম ভাঙল অন্য বন্ধুদের। জেগেই অপরূপ নারীকে দেখে সবাই চমকে যায়। মূর্তি হয়ে গেছে অপরূপা সুন্দরী রমণী।

এবার কাঠুরে বলে, এ রমণী আমার। কারণ আমিই ওকে প্রথম গড়েছি। স্বর্ণকার বলে, আমি ওকে সাজিয়েছি। তাই সে আমারই হবে। তাঁতি বলে, আমি কাপড় বুনে ওর লজ্জা ঢেকেছি। সুতরাং ও আমারই হবে। সিঁদুর বিক্রেতা বলে, আমার সিঁদুরে সে প্রাণ পেয়েছে। তাই এ রমণী আমার। এসব নিয়ে চার বন্ধুর মধ্যে চলছে তুমুল ঝগড়া।

এমন সময় আসমান থেকে নেমে এলো এক দেবতা। তাকে পেয়ে চার বন্ধুই ছুটে আসে। তারা দেবতাকে সব খুলে বলে এবং প্রত্যেকেই সুন্দরী রমণীকে নিজের বলে দাবি করে। সব শুনে তিনি মুচকি হাসেন। তারপর দেবতা রায় দেন, যে কাঠ দিয়ে মূর্তি গড়ল সে রমণীর বাবা। যে অলঙ্কার তৈরি করে সাজিয়েছে সে ওর মামা। যে কাপড় পরিয়েছে সে ওর ভাই। আর যে সিঁদুর দান করে ওর প্রাণ দিয়েছে সে হবে রমণীর স্বামী। দেবতার এ রায় মেনে নিয়ে চার বন্ধু রমণীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

সিঁদুরের প্রচলন নিয়ে আদিবাসী সমাজে খুঁজে পাওয়া যায় এমন কাহিনী। এভাবে আদিবাসী সমাজে সিঁদুর দান থেকে একটি সুখি পরিবারের সৃষ্টি হয়। বাঙালি হিন্দু সমাজে সিঁদুরের ব্যবহারটি এসেছে মূলত আদিবাসী সমাজ থেকেই। হিন্দুদের শাস্ত্রীয় গ্রন্থ পুরাণ, ভবিষ্যৎ পুরাণ প্রভৃতিতে ঘট স্থাপনের কথা বলা হলেও কোথাও সিঁদুরের উল্লেখ নেই।

এছাড়া পণ্ডিতেরা সিঁদুর দানের বিষয়ে পৌরাণিক কোনো শাস্ত্রও খুঁজে পায়নি। সর্বপ্রথম পালযুগে হিন্দু সমাজে প্রথানুসারে সিঁদুর দানের স্বীকৃতি পায়। অথচ তারও বহু আগে থেকে স্বীকৃতি ছাড়াই আদিবাসী সমাজে সিঁদুর জনপ্রিয় ছিল।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top