What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other কিংবদন্তি সব্যসাচী (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
Qq38RCT.jpg


একটা ছবির সাধারণ সিকোয়েন্স দিয়ে লেখা শুরু করছি। ছবির নাম 'ত্যাজ্যপুত্র'। পরিচালক সাইফুল আজম কাশেম। ওমর সানীকে ত্যাজ্যপুত্র করেছেন গোলাম মুস্তাফা। একসময় ছেলের মৃত্যুর খবরও তিনি পান। কিন্তু ছবির ফিনিশিং-এ ওমর সানী অনেকদিন বাদে বাড়ি ফিরে 'বাবা, বাবা' ডাকছে। মুস্তাফার তো বিশ্বাসই হয় না। দোতলা থেকে নিচতলায় নামতে নামতে সানীকে দেখে তাঁর এক্সপ্রেশন জাস্ট অ্যামেজিং। জীবন্ত অভিনয়। সিকোয়েন্সটি দেখে যে কারো মনে দাগ কাটবে। অভিনয়ে তাঁর জুড়ি নেই।

চলচ্চিত্র অভিনেতা গোলাম মুস্তাফাকে আমজনতা সবচেয়ে বেশি জানে দুটি দিক থেকে –
* বংশ মর্যাদার গৌরবের দিক থেকে তার ধারেকাছেও কেউ নেই। তিনি শ্রেষ্ঠ।
* হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অভিনয়ে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিনেতা এবং এ অভিনয়ে তাঁর দখল আছে।

শুরুর দিকে ছিলেন খলনায়ক। 'হারানো দিন' ছবিতে রহমান-শবনম জুটির প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান। সাদাকালো সময়ের বেশকিছু ছবিতে খলনায়ক ছিলেন। রঙিনের মধ্যে 'দোষী' ছবিতে।

তিনি চলচ্চিত্র ও নাট্য অভিনেতা। মঞ্চে, বেতারে, টিভিতে সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। অসাধারণ আবৃত্তিকার। তাঁর আবৃত্তির ক্যাসেটের চাহিদা আজও আছে। জন্ম পিরোজপুর জেলার দপদপিয়া গ্রামে ১৯৩৫ সালের ২ মার্চ। মঞ্চের দাপুটে পেশাদার অভিনেতা তাই চলচ্চিত্রে দাপটের সাথেই অভিনয় করতেন। ১৯৪৭ সালে বরিশালের অশ্বিনীকুমার টাউন হলে প্রথমবার 'পল্লীমঙ্গল' নামে একটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। প্রামাণ্যচিত্র 'এক একর জমি'-র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে ডাক পান। বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

গোলাম মুস্তাফার স্ত্রী অভিনেত্রী হোসনে আরা। দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। মেয়ে আরেক কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, ক্যামেলিয়া মুস্তাফাও তাঁর মেয়ে। জেনেটিক ফর্মের ট্যালেন্টে দুর্দান্ত উদাহরণ সুবর্ণা মুস্তাফা। জামাতা হুমায়ুন ফরীদিও কিংবদন্তি অভিনেতা।

প্রথম ছবি ছিল – নাচঘর। এ ছবিতে প্রথম সবাক বাংলা ছবি 'মুখ ও মুখোশ'-এর পরিচালক আব্দুল জব্বার খান তাঁকে কাস্ট করেন।

y7dzFin.jpg


উল্লেখযোগ্য ছবি : রাজধানীর বুকে, হারানো দিন, তালাশ, চান্দা, প্রীত জানে না রীত, ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো, নদী ও নারী, চকোরী, চাওয়া পাওয়া, নতুন দিগন্ত, ভাইয়া, প্রতিকার, বিনিময়, রং বদলায়, কে আসল কে নকল, সোনার খেলনা, বলাকা মন, তিতাস একটি নদীর নাম, বন্দিনী, আলোর পথে, কুয়াশা, সূর্যকন্যা, সূর্যগ্রহণ, সারেং বউ, ফকির মজনু শাহ, এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, সীমানা পেরিয়ে, রূপালী সৈকতে, কার পাপে, সোনার হরিণ, সখি তুমি কার, লুটেরা, মোকাবেলা, রাজনন্দিনী, গাঙচিল, কলমিলতা, সময় কথা বলে, বড় ভালো লোক ছিল, ধীরে বহে মেঘনা, মাসুদ রানা, টাকা আনা পাই, মানসী, ঘুড্ডি, চরিত্রহীন, দেবদাস, ছুটির ফাঁদে, শুভদা, নাজমা, জালিম, সুরুজ মিয়া, চন্দ্রনাথ, লক্ষীবধূ, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, স্ত্রী, স্বামীর আদেশ, বিশ্বপ্রেমিক, কমান্ডার, দুঃসাহস, রাক্ষস, অবুঝ সন্তান, দোলা, অবদান, সান্ত্বনা, রাজার মেয়ে বেদেনী, ববি, পিতা মাতা সন্তান, ছোবল, সত্য মিথ্যা, বলবান, অপেক্ষা, রাঙ্গা ভাবী, রক্তাক্ত বাংলা, ত্যাজ্যপুত্র, গরিবের অহংকার, আত্ম অহংকার, ভাইজান, আশা ভালোবাসা, মা ও ছেলে, আখেরি নিশান, পদ্মানদীর মাঝি, মর্জিনা, ব্যথার দান, অন্যায় অবিচার, দীপু নাম্বার টু।

KUcg0ql.jpg


বংশ মর্যাদার গৌরবে তাঁর উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি – আত্ম অহংকার, ভাইজান, রাঙ্গা ভাবী, ত্যাজ্যপুত্র। 'আত্ম অহংকার' ছবিতে তাঁর জামাতা হুমায়ুন ফরীদির সাথে টক্কর চলে শেষে গিয়ে। দেখা যায় মুস্তাফার বংশ মর্যাদার অহংকারের কারণে অতীতে ফরীদির মা মারা যায়। তাই ফরীদি মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খোঁজে। পিঠে পা দিয়ে পদ্মাসন খাটিয়ায় চড়ার যে রীতি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন সেই রীতিই ফরীদি মুস্তাফার উপর কাজে লাগায়। জামাই শ্বশুরের পিঠে পা দিয়ে পদ্মাসন খাটিয়ায় উঠছে। অভিনয় এমন একটি শিল্প যে এ ছবিতে এই কঠিন সিকোয়েন্সটিতে তাঁরা দুজন সহজেই মানিয়ে নিয়েছিলেন। পজেটিভ চরিত্রে ছিলেন এমন কিছু ছবি – রাক্ষস, আশা ভালোবাসা, বিশ্বপ্রেমিক। আর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর অনেক ছবি আছে।

Xh0RToM.jpg


চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য জাতীয় পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, একুশে পদক সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

জাতীয় পুরস্কার :

শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা – এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী (১৯৮০)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – শুভদা (১৯৮৬)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা – ছুটির ফাঁদে (১৯৯০) প্রত্যাখ্যান করেছেন এটি।

টেলিভিশন প্রোডাকশনেও দাপিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক – নয়ন জোড়ের জমিদার, গুপ্তধন, হিতঙ্কর, পাথরে ফোটাব ফুল, অস্তরাগে, যুবরাজ, বেলা শেষে, পঞ্চমী, পিতাপুত্রের গল্প, শিল্পী, মাতৃকোষে, শুধু তোমার জন্য ইত্যাদি। তাঁর 'নয়ন জোড়ের জমিদার' নাটকটিতে তিনি ছিলেন প্রধান চরিত্র। তখনকার সময়ের নাটকে প্রবীণ অভিনেতাদের গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রেখে নাটক হত যা আজকের দিনে নেই।

গোলাম মুস্তাফা নামকরা আবৃত্তিকার ও অনুবাদক। বিদেশি ইংরেজি বইয়ের অনুবাদ করতেন। তাঁর জনপ্রিয় একটি অনুবাদগ্রন্থ 'নতুন যুগের ভোরে।'

২০০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছিল।

গোলাম মুস্তাফা একজন কিংবদন্তি সব্যসাচী শিল্পী। বহুমুখী প্রতিভার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন আমাদের বিনোদন জগতকে। তাঁর রেখে যাওয়া বহুমুখী কাজের মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন, থাকবেন প্রেরণা হয়ে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top