What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হাওরাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা (1 Viewer)

Status
Not open for further replies.

Nirjonmela

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 1, 2018
Threads
2,762
Messages
23,231
Credits
813,578
Pistol
Crown
Thread Title Style (One)
Profile Music
Untitled-1-24.gif


কৃষকের বুক ভরা আশা। চোখে সোনালি স্বপ্নের ঝিলিক। ফসল উঠবে ঘরে, সংসারে আসবে সচ্ছলতা। বিস্তীর্ণ মাঠে যত দূর চোখ যায়, বাতাসে দোল খায় সোনারং ধান গাছ। আর দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ে পাকা ধানের সোঁদা গন্ধ। বোরোর এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরে ধুম লেগেছে ধান কাটার। এরই মধ্যে প্রকৃতির বাগড়া। আকাশের কালো মেঘ শঙ্কা বাড়ায় কৃষকের মনে এই বুঝি এলো বন্যা অথবা শিলাবৃষ্টি। শিলা এক দফা আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে। এবার বন্যার পালা। আসি আসি করছে। এ সপ্তাহেই হাওরাঞ্চলে বন্যা হতে পারে, এমন সতর্কতা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

সচিবালয়ে গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ দেশে বন্যার সতর্কবার্তা দেন। সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়াও উপস্থিত ছিলেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে ৪ থেকে ৭ মে পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি হতে পারে। তার আশঙ্কা, ভারি বর্ষণে হাওরাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে। গেল বছর এপ্রিল মাসে আগাম বন্যায় হাওরে ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়। সে জন্য এবার বিষয়টি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এদিকে সুনামগঞ্জের হাওরে এখনো কাটার বাকি রয়েছে প্রায় অর্ধেক পাকা ধান। বিলম্বে পানি নামার কারণে এবার হাওরে ধানও পেকেছে বিলম্বে। এখন বজ্রপাতের আতঙ্কসহ নানা কারণে হাওরে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এত ফসল কাটায় বিঘন্ন হচ্ছে। এরই মধ্যে এলো শিলাসহ ভারি বর্ষণের আভাস। অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা ভর করেছে কৃষকের মনে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।

ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে চিন্তিত কৃষক : জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ থেকে জানান, হাওরাঞ্চলে ৪ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত আগাম বন্যা ও ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব বোরো জমির ধান কাটতে সুনামগঞ্জের সব কটি উপজেলায় মাইকিং করে কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে প্রতিদিনই সকাল-সন্ধ্যা বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে। ফলে জমি থেকে এনে ধানের যে স্ত'প করা হয়েছে সেসব ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অন্যদিকে আগামী ৪ দিনে আগাম বন্যা ও ভারি বৃষ্টি হলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না, বলছে কৃষি অফিস। এর মধ্যেই ধান কর্তন শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে সুনামগঞ্জের হাওরে এখনো পড়ে আছে প্রায় অর্ধেক পাকা ধান। বিলম্বে পানি নামার কারণে এবার হাওরে ধানও পেকেছে বিলম্বে। এখন বজ্রপাতের আতঙ্কসহ নানা কারণে হাওরে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে সুনামগঞ্জে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদনদী, খাল-বিল ছাপিয়ে পানি হাওরে প্রবেশ করে পাকা ধান তলিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। অন্যদিকে বৃষ্টি ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দিতে পারেন। এ আশঙ্কায় তিন উপজেলায় সাধারণ ডায়েরি করেছে উপজেলা ফসল রক্ষা বাঁধ তদারক কমিটি।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, জেলায় এবার ২ লাখ ২২ হাজার ২৯৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এ থেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫৯ টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা। কৃষি বিভাগের মতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। বিআর-২৯ ধান পাকতে বিলম্ব হওয়ায় হাওরে এ ধানই পড়ে আছে। তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তারা অর্ধেক জমির ধান কেটেছেন। ধান বিলম্বে পাকায় এবং যথাসময়ে শ্রমিক না পাওয়ায় অর্ধেক পাকা ধান ক্ষেতে পড়ে আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে এখন শঙ্কিত কৃষকরা।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঝাওয়ার হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ধান কাটছেন কৃষকরা। তবে আবহাওয়া বিরূপ থাকায় বজ্রপাতের ভয়ে অনেক শ্রমিকই ধান কাটতে আগ্রহী নন। বৃষ্টি শুরু হলে শ্রমিকদের দৌড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে দেখা গেছে। ঝাওয়ার হাওরের কৃষক মাহতাব আলী বলেন, আমার অর্ধেক জমি ১৫ দিন আগেই বøাস্ট রোগে নষ্ট হয়েছে। বাকি জমির ধান এখন পেকেছে। কিছু কাটতে পেরেছি। বেশিরভাগ জমির ধানই

এখনো ক্ষেতে পড়ে আছে। বজ্রপাতের ভয়ে এখন শ্রমিকরা ধান কাটতে চান না বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কৃষক সুন্দর আলী বলেন, জমি থেকে ঠিকই ধান কেটে এনে মাঠে রেখেছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ধান মাড়াই করতে পারছি না। মাড়াই করতে না পারলে ধান পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কৃষকরা বলছেন, এখন যদি ভারি বৃষ্টিপাত হয়, তাহলে এখনো যেসব জমিতে আধা পাকা অবস্থায় ধান রয়েছে সেগুলো তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টির কারণে মাঠে রাখা ধান শুকাতে পারছেন না কৃষকরা। আরো যদি বৃষ্টিপাত হয় তাহলে এগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে বলে শঙ্কা কৃষকদের। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু জানান, এ পর্যন্ত ৬০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে হাওরে। আবাদকৃত প্রায় অর্ধেক জমির পাকা ধান এখনো ক্ষেতে রয়ে গেছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, পানি বৃদ্ধি এবং বৃষ্টির কারণে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দুর্বৃত্তরা মাছ ধরার সুযোগ নিতে পারে এ আশঙ্কায় আমরা প্রতিটি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রাখার পরামর্শ দিয়েছি সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ৪ মে থেকে যে সতর্কতা জারি করেছে তাতে ফসল রক্ষা বাঁধের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, সরকার যে চিন্তা করে এ বছর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে তা সফল হবে। কৃষকরা এ বছর ফসল ঘরে তুলতে পারবে। তবে অবিলম্বে কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তোলার আহবান জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন, ইতোমধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়ে গেছে। ভারি বৃষ্টিপাত হলেও কোনো ক্ষতি হবে না বলে তার দাবি।

হাওরে শ্রমিক সংকট : হোসাইন আহমদ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থেকে জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ছোট-বড় ২৩টি হাওরের ফসলের মাঠ এখন ঢাকা পড়েছে বোরো ধানের সোনালি চাদরে। ছড়ায় ছড়ায় দুলছে কাঁচা-পাকা ধান। নতুন ধানের মিষ্টি ঘ্রাণে এখন ম-ম করছে হাওর। উপজেলার বিভিন্ন হাওরে কোথাও কোথাও আগাম জাতের ধান কাটা মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। তবে পুরোপুরি ধান কাটা শেষ করতে আরো দুই সপ্তাহ লাগবে। বর্তমানে হাওরে প্রতি বছরের মতো এবারো দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিকের সংকট। কৃষকদের আশঙ্কা, সময় মতো শ্রমিক পাওয়া না গেলে মাঠেই পড়ে থাকবে তাদের সোনালি ফসল। পাশাপাশি যে কোনো মুহূর্তে শুরু হয় কালবৈশাখী এবং প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত। এতে সুনামগঞ্জ জেলাসহ অন্যান্য জেলা থেকে আসা ধান কাটার শ্রমিকরা ভয়ে থাকেন। তাই বাধ্য হয়েই দিনের অনেকটা সময় ঘরে বসেই অনুক'লের আবহাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন তারা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে আর কয়েকটি দিন রক্ষা পেলে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. শওকত উসমান মজুমদার বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে সার, বীজ, ডিজেল ও বিদ্যুৎ সংকট না থাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হবে।

বৃষ্টিতে নাকাল কৃষক : সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে জানান, চলতি মৌসুমে হাওরে বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ার পরও শ্রমিক সংকট এবং সকাল-সন্ধ্যা ঝড়সহ মুষলধারে বৃষ্টি হাওরবাসীর স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিককে চড়া মজুরি দিয়ে পাকা ধান কেটে এনে শুকাতে না পারায় ঘরের ভেতর পচে নষ্ট হতে বসেছে সোনালি ধান।

চড়া মজুরি দিয়ে ধান কাটানোর পরও ঝড়-বৃষ্টির কারণে শুকানো যাচ্ছে না। রোদের অভাবে ঘরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা বলেন, জেলার সার্বিক ৬৫ ভাগ এবং হাওরের প্রায় ৭৮ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। বর্তমানে রাতে এবং সকালে দুয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়। এতে তেমন কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। হয়তোবা আজকের কাটা ধান আগামীকাল শুকাতে হচ্ছে।
 
Status
Not open for further replies.

Users who are viewing this thread

Back
Top