What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other বাংলা সিনেমার মাতৃমূর্তি : শাবানা (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
HaN2lhX.jpg


বাস্তবের মায়েদের সাথে চলচ্চিত্রের মায়েদের তেমন কোনো তফাত নেই। মায়েরা বাস্তবে যেমন ভালোবাসা, মমতা, দায়িত্ববোধ দিয়ে পরিবার-স্বামী-সন্তানদের আগলে রাখে চলচ্চিত্রেও তাই দেখানো হয়। মমতাময়ী মায়েদের ভূমিকায় অভিনয় করা অভিনেত্রীদের মধ্যে আমাদের চলচ্চিত্রে অন্যতম সেরা শাবানা। কুসুমকোমল থেকে কঠোর দুই ভূমিকাতেই তাঁর মাতৃরূপ পর্দায় ফুটে উঠেছে।

শাবানা-র মাতৃমূর্তিতে জীবনের প্রয়োজনে পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন ভূমিকা রয়েছে। ত্যাগ স্বীকার করা কিংবা অধিকার আদায়ে অটল থাকার মতো শক্তিশালী দেখা গেছে। তিনি মায়ের অনেক রকম চরিত্রায়ণ করে গেছেন। বলতে বলতে জানা যাবে।

ডাক্তার জানিয়েছে শাবানা আর বেশিদিন নেই। তাঁকে সুন্দর সংসার ছেড়ে চলে যেতে হবে। সন্তানদের কি হবে! স্বামী আলমগীরও ততদিনে পঙ্গু। তিনি আলমগীরের সাথে কথা বললেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ চিন্তার জন্য। কথা বলে যে সিদ্ধান্ত আসল তিনি সন্তানদের দত্তক দেবেন একে একে। এতে করে ওরা আশ্রয় পাবে তাঁর মৃত্যুর পর। বুকে পাথর বেঁধে মা শাবানা তাই করতে লাগলেন। বলছিলাম 'মরণের পরে' নামের পাষাণ এক গল্পের ছবির কথা। মা শাবানা দর্শককে এক অসহ্য বাস্তবতার সামনে দাঁড় করান।

o322Yns.jpg


'স্বামীর আদেশ' ছবিতে মা শাবানা দেবর জসিমের ছেলেকে বাঁচাতে নিজের শরীরের রক্ত দেন যখন তাঁর নিজের মেয়েকেই রক্ত দেয়া প্রয়োজন ছিল কারণ সেও মৃত্যুশয্যায়। মেয়ে মারা যায়। নিজের মেয়েকে বিসর্জন দিয়ে দেবরের ছেলেকে বাঁচিয়ে দেন শাবানা সাথে নিজেও পরে জীবন দিয়ে দেন।

C3rcQXP.jpg


'ঘর দুয়ার' ছবিতে মা শাবানা জানেন না কতদিন তিনি বাঁচবেন। স্বামী আলমগীর ডাক্তারের কাছে সব জেনে এসেছেন। ডাক্তার বলে দিয়েছেন কি কি হবে সামনের দিনগুলোতে। স্মরণশক্তি কমে আসবে, চোখে কম দেখবে, গলা শুকিয়ে আসবে। ধীরে ধীরে সেসব ঘটতে থাকে। আলমগীর ডাক্তারের কথা মনে করেন আর ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হন। মা শাবানা সন্তানদের জন্য চিন্তা করেন যদিও সন্তানরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। মিরাকল ঘটিয়ে মা শাবানা শেষে মৃত্যু থেকে ফিরে আসেন সন্তানদের হাসিমুখ নিয়ে।

'মাগো তুমি একবার খোকা বলে ডাকো' গানে গানে নায়ক ইমরান বোবা, অথর্ব হয়ে বিছানায় পড়ে থাকা মাকে জাগানোর চেষ্টা করে যায়। গান শেষ হয়ে যায় মা ছেলের মাথায় হাত রাখে না। ইমরান অভিমানে বলতে থাকে সেটাই তার শেষ দেখা মায়ের সাথে। চলে যাবার সময় মা জেগে ওঠেন 'খোকা যাসনে' বলে ডাক দেন। ইমরান ছুটে আসে আর মা শাবানা পরম মমতায় ছেলেকে বুকে টেনে নেন।

সন্তানের শ্রেষ্ঠ আশ্রয় তো মা-ই। কত অকৃতজ্ঞতা সহ্য করেও মা শেষ পর্যন্ত মহান থেকে যান। সন্তান, শ্বাশুড়ি, অন্য মানুষ সবাই ছবি শেষে ক্ষমা চাইলে মা শাবানা ক্ষমা করেন। তখন বলা হয়-'দেখো, এই হচ্ছে বাংলার মা। বাংলার মা সব ভুলে সবাইকে ক্ষমা করতে পারে।'

cVGPYSM.jpg


'নিজের সন্তানকে পরের ঘর আলোকিত করতে দিয়ে দেয় কোল শূন্য করে। সেই সন্তান মৌসুমীর জন্মদিনে তাঁতের শাড়ি মেয়েকে দেবে বলে আনলে মেয়ের কাছে অপমানিত হতে হয়। মা গানে গানে স্মরণ করিয়ে দেন জীবনের শিক্ষা-'কেউ তো জানে না কখন যে কার কি হয়!/জীবন তো বদলায় না শুধু বদলে যায় সময়।' মেয়ে শেষ পর্যন্ত জানতে পারে মায়ের পরিচয় তখন রক্তের টানে নিজেই ছুটে যায়। অন্যদিকে নিজের সন্তানকে পরের ঘরে দিয়ে নিজেও মা হারা এক ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে মানুষ করে। সে ছবির নাম 'স্নেহের বাঁধন।'

CRfNaLd.jpg


অন্যের সন্তানকে মা না হয়েও মাতৃস্নেহে আপন করে নেন 'সমর' ছবিতে। 'তোর আঁচলে মমতারই ছায়া/চোখে সজল ঐ মেঘ কাজল মায়া' এই গানের মা-হারা ছেলেটিও বিধবা সন্তানহারা মায়ের কাছে মাতৃস্নেহ পায় 'বিরোধ' ছবিতে। 'সান্ত্বনা' ছবিতে মা-পাগল ছেলের জীবন থেকে হঠাৎ তিনি চলে যান দুর্ঘটনায়। ছেলে মায়ের আশায় বসে থাকে। বেলুন, চিঠি উড়িয়ে দেয় মায়ের উদ্দেশে। মা চলে যাবার পরেও যেন ছেলের সাথে তার সখ্য জীবন্ত থাকে। এ অসাধারণ এক রসায়ন। কেমন হয় 'মা যখন বিচারক' হয়। বিচারক মা কি মমতার জন্য অপরাধী সন্তানকে ছাড় দেবে! না, দেবে না। তিনি সন্তানকে তার অপরাধের শাস্তি দিয়ে তাকে নতুন মানুষ হিসেবে গড়ার সুযোগ দেন। সত্যের জয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেন না আবার প্রকৃত অপরাধী জানার পরে সন্তানকে মিথ্যা থেকে মুক্ত করতেও তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সে ছবির নাম 'সত্যের মৃত্যু নেই।'

uk4QDic.jpg


'শাসন' ছবিতে অতিরিক্ত শাসনে সন্তান ভয় পেয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে মা শাবানা সন্তান হারিয়ে কেঁদে বুক ভাসান। একইভাবে হারানো পুতুল ফিরিয়ে আনতে গিয়ে মেয়েকে হারিয়ে ফেলেও তিনি মেয়ের শোকে পাথর হন 'জজ ব্যারিস্টার' ছবিতে। বউদি, ভাবী মায়ের মতো হয়ে ওঠে দায়িত্ববোধে। বাপ্পারাজকে ছোটবেলায় তুলে দেয় শাবানার হাতে। প্রচলিত সমাজ কলঙ্ক দিতে ছাড়ে না। ডুবে মরতে যায় শাবানা। দেবর বাপ্পারাজ তখন বলতে থাকে-'আজ আমাকে আদর করলে তোমার পাপ হবে বড় বউ? তাহলে কেন সেদিন আমাকে মায়ের কথায় বুকে টেনে নিয়েছিলে? তুমি তো শুধু আমার বউদি না তুমি যে আমার মা।'

rmQ3lkp.jpg


'চাঁপা ডাঙ্গার বউ' ছবির সে মা ভাবী হয়েও মাতৃমূর্তিতে ভাস্বর। বাপ্পারাজ তাঁকে দেবীর মতো পূজা করে। ঠিক একইভাবে মা হারা ছোট্ট দেবর যে তার সৎ ভাই আলমগীরের হাতে নির্যাতিত সেই দেবরকে মাতৃস্নেহে বুকে টেনে নেয় 'রাঙ্গা ভাবী।' বাড়ির মাঝে প্রাচীর তুলে দিলেও প্রাচীরের ওপার থেকে সে ভাবীকে দেখে আর ভাবীও মায়ের স্নেহে তাকে আদর করে। অসাধারণ টাচি সে মাতৃমূর্তি। বন্ধ্যা নারীর জীবনে মা হবার চিরন্তন আশা এবং অপ্রত্যাশিতভাবে অন্যের সন্তানের দায়িত্ব নিলে মা হয়ে সন্তানের কাছে প্রিয় হওয়ার পরে যখন প্রকৃত মা মালিকানার জোরে সেই সন্তানকে নিয়ে যায় তখন কি হতে পারে! ডাক্তার শাবানা যে বন্ধ্যা সে নিজেই সন্তানের শোকে পাগল হয়ে যায় আর সে সন্তানের প্রকৃত মা যে মূলত পাগল ছিল সে সুস্থ হয়ে যায়। এটা ছিল আলাদা রকমের মাতৃত্বের টান।

9acdQ74.jpg


অন্যের সন্তানকে বন্ধ্যা নারীর মাতৃস্নেহে বড় করার পর তাকে নিয়ে গেলে সে মা-ই আর সুস্থ থাকছে না। এই শাবানা অন্যরকম মা 'কন্যাদান' নামের সে ছবিতে। করুণ বাস্তবতায় পড়ে স্বামী থাকতেও মা শাবানাকে বিধবার শাড়ি পরতে বাধ্য করা হয় 'ঘরে ঘরে যুদ্ধ' ছবিতে। এই নজির সম্ভবত আজকের বাংলাদেশেও কম না যে মায়েদের অনেক নির্মম বাস্তবতা মেনে নিতে হয় সন্তানদের ভালো রাখার জন্য। মমতাময়ী মা যখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তখন কি হতে পারে! মেয়ে মৌসুমীর বিয়ের পর তার উপর অকথ্য নির্যাতনের পর তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয় শ্বশুরবাড়িতে। মৌসুমী বেঁচে গেলে অপরাধীদের নিজে শাস্তি দিতে থাকে। কিন্তু মেয়ের সাথে আড়াল থেকে মা-ও যুক্ত হয় প্রতিশোধের পালায়। মা শাবানা-র সে রুদ্রমূর্তির ছবি 'বিদ্রোহী বধূ।'

মা শাবানা-র এ গল্প চাইলে আরো বলা যাবে। একজন শাবানা অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তার মধ্যে মা শাবানা আমাদের আবেগ, অনুভূতি, যুক্তি, শ্রদ্ধা, নীতি-নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ, মানবিকতা, করুণ বাস্তবতা সবকিছুর শিক্ষা দিয়ে যান। মাতৃমূর্তির শাবানা পরিপূর্ণ হয়ে আসেন আমাদের মাঝে। তাঁকে দেখে আমাদের মায়ের প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধায় মন জেগে ওঠে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top