What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review সালমান-মৌসুমীর শেষ ছবির সাফল্যের নেপথ্যে (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
kAHqxAT.jpg


শফি বিক্রমপুরী আমাদের দেশের প্রবীণ প্রযোজক, পরিবেশক, পরিচালক ও সিনেমা হল মালিকদের একজন। যিনি বাণিজ্যিক ছবির একজন সফল প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে পরিচিত বেশি।

তার প্রযোজনা সংস্থা যমুনা ফিল্মস ছিল ঢাকার বড় প্রযোজনা সংস্থাগুলোর একটি যেখান থেকে নির্মিত হয়েছিলো 'বন্দুক', 'আলাদীন আলীবাবা সিন্দবাদ', 'রাজদুলারী', 'সবুজ সাথী', 'বাগদাদের চোর', 'লেডি স্মাগলার', 'লেডি কমান্ডো', লেডি ইন্সপেকটার' 'আজকের হাঙ্গামা' নামক একাধিক সফল সিনেমা।

মাল্টিস্টারস ও বিগ বাজেটের সিনেমা নির্মাণে পরিচালকের পূর্বের ছবিগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে অনুমান করেছিলাম ছবিটা বোধ হয় 'দেনমোহর' নামক রীতিনীতির বিরুদ্ধে মৌসুমীর প্রতিবাদী লেডি অ্যাকশন ছবি হবে।

১৯৯৫ সালের রোজার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্য অন্যতম ছিল শফি বিক্রম্পুরি পরিচালিত 'দেনমোহর'। যে ছবিতে তৃতীয়বার পর্দায় আগমন ঘটে জনপ্রিয় সালমান-মৌসুমী জুটির। ঈদের তৃতীয় দিন ছবিটি সিলেটের 'মনিকা' সিনেমা হলে দেখতে বন্ধুরাসহ ভিড় জমাই। যথারীতি চির পরিচিত দৃশ্য। সালমান-মৌসুমীর ছবি দেখতে সব শ্রেণীর দর্শকদের ভিড়।

যাই হোক ছবি শুরু হওয়ার সাথে সাথে জেনে গেলাম এটি একটি বিদেশী ছায়াছবির নকল কিন্তু সেটা কোন দেশের ও কোন ছবির তা পরিচালক উল্লেখ করেননি। ছবি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে বুঝলাম এটি বলিউডের সালমান খান অভিনীত নব্বই দশকের শুরুর একটি ব্যবসাসফল হিন্দি ছবির নকল। বুঝে গেলাম যা ভেবে ঢুকেছিলাম সেটা নয়।

ছবির শুরুতেই মনোয়ার নামক জমিদার পুত্র সালমানকে দেখার সাথেই সাথেই দর্শকের হাততালি, যেখানে তরুণ সালমান তার চাচা ড্যানি সিডাককে সাথে নিয়ে 'বাহাদুর' নামক এক তেজী ঘোড়াকে পোষ মানাতে ব্যস্ত। যথারীতি স্মার্ট সালমানের চেষ্টা অনেক কষ্টে সফল এবং ঘোড়া সালমানকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্য ছুটতে থাকে। এর সাথেই সাথেই নায়িকা মৌসুমীর পর্দায় আগমন যেখানে সিলেটের জাফলং এলাকায় তিনি সখীদের সাথে নাচ ও গানে ব্যস্ত। বুঝে গেলাম যে পাগলা ঘোড়া সালমানকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে জাফলং এসে গেছে।

আমার লেখা পড়ে অনেকে ভাবতে পারেন আমি রিভিউ লিখতে বসেছি আসলে তা নয়। আমি শুধু পর্দায় কিভাবে সালমানকে উপস্থাপন করেছিল শুরুতেই প্রবীণ পরিচালক শফি বিক্রমপুরি সেটাই একটু তুলে ধরলাম। যার উদ্দেশ্য ছিল যে দর্শকদের কাছে সালমানকে পরিচালকরা সবসময় একটু অন্যভাবে স্মার্টলি তুলে ধরতেন যেটা অন্য সব নায়কদের ক্ষেত্রে খুব কম ঘটতো। সাধারণত পর্দায় নায়কদের চিরচেনা আগমন দৃশ্য ছিল নায়িকার চিৎকারে আকাশ থেকে উড়ে এসে পর্দায় হাজির হতো, অথবা কোন বস্তিতে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের আক্রমন আর সেখানে অসহায় বস্তিবাসীর দোয়া "হ্যাঁ আল্লাহ আমাদের এই জালিমদের হাত থেকে বাঁচাও" কবুল করতেই আকাশ থেকে উড়ে এসে নায়ক বস্তিবাসীকে রক্ষা করে নিজের আগমনী বার্তা দর্শকদের জানাতো। সেখানে সব পরিচালকরাই সালমানকে এসব চিরচেনা দৃশ্য দিয়ে পর্দায় দর্শকদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতেন না। সেখানে সালমান একটু ভিন্ন। হতে পারে তার ছবিগুলো হয়তো অ্যাকশনধর্মী ছিল না বলেই এইভাবে পরিচালকরা সালমানকে পর্দায় আনতেন অথবা হতে পারে সালমানের স্মার্ট ক্রেজকে কাজে লাগিয়ে একটু ভিন্ন ভাবে পর্দায় আনতেন।

শফি বিক্রমপুরীর আগের ছবিগুলো ছিল অ্যাকশনে ঠাসা সেখানে 'দেনমোহর' পুরোই বিপরীত। দুই জমিদার পুত্র কন্যার প্রেম ভালোবাসা, বিয়ে ও বিয়ের কাবীন নিয়ে দুই জমিদারের জেদ ও অহংকারের লড়াইয়ে সম্পর্কে ফাটল/ বিরহ এবং পরিশেষে ভুলবুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দুই পরিবারের মিলন এই হলো 'দেনমোহর' ছবির কাহিনী সংক্ষেপ।

আসলে ছবিটি ব্যবসাসফল হওয়ার পেছনে দুটি কারণ – ১) সালমান -মৌসুমী জুটির প্রেম ও রাজীব-আহমেদ শরীফের শত্রুতা যেন 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির মতো একটি রসায়নের ভ্রান্ত ধারণা ২) খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর সুরে গানগুলো। এই দুটি জিনিসকে পুজি করেই ছবিটি ঈদে মুক্তি পাওয়ায় সুপারহিট তকমা লাগিয়ে নেয়।

উল্লেখ্য যে সালমান-মৌসুমীর প্রথম ছবি যেটি ৯৩ সালের রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছিল এবং যেখানে রাজীব-আহমেদ শরীফের শত্রুতার প্রতিশোধের জেদ ছিল ঠিক ২ বছর পর একই সময়ে একই মুক্তি পাওয়া ও মুল চরিত্রগুলো একই ধরনের হওয়াতে দর্শক ভেবেছিল হয়তো 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবির মতোই কোন বিয়োগাত্মক প্রেম কাহিনী নির্ভর ছবি 'দেনমোহর'। এখানে গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে পরিচালকের কৌশলের প্রশংসা করতেই হয়। ছবির কাহিনীর ধরন, পাত্রপাত্রী নির্বাচন, মৌলিক গান, মুক্তির সময় ও বিজ্ঞাপনের ধরন মিলিয়ে পরিচালক একটি কৌশল অবলম্বন করেছেন। বাংলাদেশ বেতারে ছবির নিয়মিত ১০ মিনিটের বিজ্ঞাপনে পরিচালক বারবার সালমান-মৌসুমীর প্রেম ও পারিবারিক দ্বন্দ্বকে উপস্থাপন এবং কাহিনীর সমাপ্তি সম্পর্কে দর্শকদের অন্ধকারে রাখার চেষ্টা পুরোটাই সফল।

এখানে সালমান জমিদারের পুত্র হিসেবে বেশ ভালো অভিনয় করেছেন যিনি জিদি, রাগী ও অহংকারী পিতার সন্তান হিসেবে পুরোটাই সফল। যে একদিকে পিতার দুটি গুণ জিদ ও রাগ পেলেও অহংকারী স্বভাবটা পায়নি। সব কিছুতেই সফল হওয়ার জিদ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাথে সাথে গর্জে উঠা এবং মানুষকে সমানভাবে বিচার করে নিরহংকার ভাবে মেশা ব্যক্তিত্বসম্পূর্ণ এক বলিষ্ঠ যুবক। যার কারণে দর্শক ছবিটি পুরো শেষ করেই হল থেকে বেরিয়েছিল।

ছবিটির গানগুলো ছিল সেই সময়ে খুবই জনপ্রিয় গান । বিশেষ করে খালিদ হাসান মিলু ও সাবিনা ইয়াসমিন এর কণ্ঠের শুধু একবার শুধু একবার বলো ভালোবাসি' গানটি ছিল চরম। এছাড়া মৌসুমী ও তাঁর সখিদের নিয়ে প্রথম গান, মৌসুমীকে দেখার পর প্রেম নিবেদনের গানটি ছিল অন্যতম।

ছবিটি ছিল যমুনা ফিল্মসের প্রযোজনায় ও বন্ধন বানীচিত্রের পরিবেশনায় নির্মিত। যার ব্যবসার দরুন পরপর একটানা তিনটি সুপারহিট ছবি উপহার দিলো 'সালমান-মৌসুমী' জুটি যা চলচ্চিত্রে তাদের আসন আরও সুসংগঠিত করে। ছবিতে কিছু সামান্য অসংগতি ও ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও পরিচালক শফি বিক্রমপুরী বেশ ভালোভাবেই সফল ও সার্থক হয়েছেন এই কথা বিনা বাক্য মেনে নেয়া যায়।

এই ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি কারণে চিরকাল লিপিবদ্ধ থাকবে তা হলো এই ছবিটি হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল জুটি সালমান-মৌসুমীর মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ ছবি। এরপর এই জুটির আর কোন ছবি আমরা পাইনি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top