What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other হুমায়ুনের গানে জল-জোছনার মাতম (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
rHWestf.jpg


একবার হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে অভিমান করে স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন চলে গিয়েছিলেন বাপের বাড়ি। কেননা শাওনকে নিয়ে তিনি সাগর-পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার সময়-সুযোগ বের করতে পারছিলেন না। বউ বাপের বাড়ি চলে গেলে কী হয়? স্বামী তাকে সরি টরি বলে ফেরত নিয়ে আসে। অন্য স্বামীরা যা করে, হুমায়ুন হাঁটলেন না সে পথে। একটু কৌশল অবলম্বন করলেন এই তারকা। কী সেটা?

সংগীতশিল্পী এস আই টুটুল ততদিনে হুমায়ুন আহমেদের কাছের মানুষ। টুটুলকে ডেকে পাঠালেন হুমায়ুন। টুটুলকে বললেন, 'শাওনকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তুমিই তাকে ফিরিয়ে আনবে'। তারপর কী উপায়ে শাওনকে ফেরানো হবে, সেটি বিস্তারিত বর্ণনা করলেন হুমায়ুন। আইডিয়াটি ইউনিক লাগলো টুটুলের কাছে।

এর পরের ঘটনা— টুটুল হুমায়ুনপত্নীকে জানালেন যে, তিনি তাকে একটি গান শোনাতে চান। এ কারণে শাওনকে দখিন হাওয়ায় আসতে হবে। শাওন রাজি নন। টুটুল বলেছিলেন, গান শুনে ফিরে যেতে চাইলে কেউ তাকে আটকাবে না। অতঃপর এলেন শাওন।

তিনি এসে দেখলেন টুটুল ছাড়াও হুমায়ুনের কাছের অনেক মানুষ বাসায় এসেছেন। বসলো গানের আসর। টুটুল গাইলেন 'নদীর নাম ময়ুরাক্ষী কাক কালো তার জল/কেউ কোনোদিন সেই নদীটির পায়নি খুঁজে তল/তুমি যাবে কি সেই ময়ূরাক্ষীতে/হাতে হাত রেখে জলে নাওয়া/ যে ভালোবাসার রং জ্বলে গেছে/সেই রংটুকু খুঁজে পাওয়া'।

হুমায়ুন আহমেদ (ছবি: সংগৃহীত) অভিমান করে ঘর ছেড়ে যাওয়ার পরপরই প্রিয়তমা স্ত্রী শাওনকে উৎসর্গ করে গানটি (মূল গানের ভেতরে শাওনের নামও ছিলো) লিখেছিলেন কিংবদন্তি হুমায়ুন। টুটুলও অল্প সময়ের মধ্যে এর সুর করেছিলেন। সঙ্গত কারণেই গান শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শাওন। মূহুর্তের মধ্যে সাগর বা পাহাড়ের টানে বেড়াতে যাওয়ার কথা ভুলেই গেলেন তিনি! এই হলেন হুমায়ুন আহমেদ, এই হলো তার গানের কারিশমা।

হুমায়ুন আহমেদ পেশাদার গীতিকার ছিলেন না। তাই আইটেম নাম্বার লেখার ফরমায়েশ আসেনি তার কাছে, সুরকারের নির্দেশনা বা প্রযোজকের চাহিদাও পূরণ করতে হয়নি লেখকের এই বাদশাকে। যেমন ইচ্ছে শব্দ-ভাবনা নিয়ে খেলেছেন গানের খাতায়। স্ত্রীর মান ভাঙাতে হোক, খেয়ালের বশে কিংবা নিজের নাটক-চলচ্চিত্রের প্রয়োজনেই হোক, কিছু অবিস্মরণীয় গান লিখেছেন হুমায়ুন। নিজেও কী জানতেন গানগুলোর অধিকাংশই লুফে নেবে শ্রোতারা?

গীতিকার হুমায়ুনের ভাণ্ডারে যেমন বিপুল শ্রোতাপ্রিয় গান আছে, তেমনই আছে সমাদৃত গানও। গানে শ্রেনি বিভাজনের রেখা মুছে দিয়েছিলেন তিনি। গানের ভাষা ব্যবহারেও সহজতার পক্ষে ছিলেন তিনি, ছিলেন আঞ্চলিকতা বা গ্রামীণ শব্দাবলীর নান্দনিক উপস্থাপক। অব্যবহৃত বা গানে ব্যবহার অযোগ্য অনেক শব্দকে তিনি প্রাণ দিয়েছেন। উল্লিখিত গানটিতে 'কাক কালো তার জল'-এর ব্যবহার সেটিই মনে করিয়ে দেয়।

ভক্ত মাত্রই জানেন, জনপ্রিয় এই লেখক কিছু বিষয়ের প্রতি আজীবন দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন, পক্ষপাতিত্ব করেছেন, এমনকি এসব নিয়ে বাড়াবাড়িও করেছেন। এর মধ্যে চাঁদ, জোছনা, বৃষ্টি, সাগর, জল, নদী, পাখি প্রভৃতি অনুষঙ্গ অন্যতম। গল্প-উপন্যাসের বাইরে তার লিরিকে এসব উপাদান এসেছে ঘুরে ফিরে। হুমায়ুন আহমেদের লেখা অধিকাংশ গানই জোছনা, চাঁদ, বৃষ্টি কিংবা জলে ঠাসা। চাঁদ শুধু চাঁদ নয়, বৃষ্টিও বৃষ্টি নয়, এগুলো ভিন্ন ভিন্ন ব্যাঞ্জনার স্মারক হিসেবে হাজির হয়েছে। আর এসব তিনি ঘিরে রেখেছেন বিষণ্নতার প্রলেপ আর সুরের কারসাজি দিয়ে।

'যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়' কথাগুলো রোমান্টিক ভাবনায় লিখিত হলেও গানটির পরতে পরতে জুড়ে আছে বিষণ্নতা, হাহাকার ও আবেদন। হুমায়ুন মৃত্যুচিন্তাকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন জোছনা বা চান্নি পসর দিয়ে। এবং অমোঘ নিয়তির মৃত্যু যেন সুন্দর মূহুর্তে হয়, তারই প্রার্থণাসংগীত রচেছেন হুমায়ুন। 'ও কারিগর দয়ার সাগর ওগো দয়াময়/চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়'। টুটুলের কণ্ঠে আধ্যাত্ম চিন্তার এই গান শোনেননি, শুনে চিন্তিত বোধ করেননি, বিচলিত হননি- এমন শ্রোতা আছেন বলে মনে হয় না। এখানে 'চান্নি পসর' শব্দ দুটির ব্যবহার 'হুমায়ুনীয় কায়দা'রই প্রমাণ। জীবনের বিষণ্নতা বা বিপন্নতাকে মেলে ধরার জন্য তিনি জোছনাকে গ্রহণ করেছেন, যে জোছনা বড় গগণবিদারী ও অনন্ত শুন্যতার এক চরাচর বলে বোধ হয়। সেলিম চৌধুরীর গাওয়া 'চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করে/ কে আইসা দাঁড়াইছে গো আমার দুয়ারে' কিংবা সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে 'আমার ভাঙা ঘরের ভাঙা চালা ভাঙা বেড়ার ফাঁকে/অবাক জোছনা ঢুইক্যা পরে হাত বাড়াইয়া ডাকে' গানগুলো শুনে এমনটি মনে হয় না?

জোছনার মতো পানি বা জলও হুমায়ুনের আরেক প্রিয় আশ্রয়। সেই জল হতে পারে বৃষ্টির, হতে পারে চোখের কিংবা পদ্মপুকুরের। ঘুরে ফিরেই জলের কাছে দুঃখ লুকোতেন তিনি, দেখতেন জলের আয়নায় নিজেকেই। এ কারণে হুমায়ুনের সৃষ্টি করা চরিত্রেরা কখনো কখনো কারণে-অকারণে ভিজেছে বাদল কিংবা চোখের বৃষ্টিতে।

শাওনের কণ্ঠে 'যে থাকে আঁখি পল্লবে/তার সাথে কেন দেখা হবে/নয়নের জলে যার বাস/সে তো রবে নয়নে নয়নে' কিংবা সাবিনা ইয়াসমিনের (হাবিব ওয়াহিদও গেয়েছেন) গলায় 'যদি ডেকে বলি এসো হাত ধরো/ চলো ভিজি আজ বৃষ্টিতে/ এসো গান করি মেঘমল্লারে/করুণাধারার ‍দৃষ্টিতে' গান দুটি একই সঙ্গে রোমান্টিকতার কথা বলে আবার বিরহও জাগিয়ে দেয়। এই দ্বিচারিতার দেখা মেলে হুমায়ুনের আরও আরও গানে।

অবশ্য এই বৈশিষ্ট্যের কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে শাওনের 'আমার আছে জল' গানটিতে। একাকী উচ্ছ্বল কিশোরীর মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে হুমায়ুন গানটির শুরুর অংশে লিখেছেন, '…সেই জল যেন পদ্মপুকুর/মেঘলা আকাশে মধ্য দুপুর/অচেনা এক বনবাসী সুর বিষাদে কোমল'। বিষাদও কখনো কখনো কোমল হয়, জানালেন হুমায়ুন।

প্রকৃতির কাছে কতোখানিক সমর্পিত হলে, জলের প্রতি কতোটা আকর্ষণ বোধ করলে কেউ বলতে পারে 'আমি আজ ভেজাবো চোখ সমুদ্র জলে/ও সমুদ্র কাছে আসো/আমাকে ভালোবাসো/আদরে লুকায়ে রাখো তোমার ওই অঞ্চলে'? আবার একই লিরিকে জোছনা ও বরষার সম্মিলন ঘটিয়েছেন এমন গানও আছে। সাবিনার 'বরষার প্রথম দিনে' এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আরেকবার শুনে দেখুন।

হুমায়ুন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওন (ছবি: সংগৃহীত)জোছনা-বৃষ্টি-জল-বিষণ্নতা দিয়ে হুমায়ুন তার গানের এমন একটি জগৎ প্রতিষ্ঠিত করেছেন যেটি তারই নিজস্ব, তার স্টাইলেরই অংশ। এর সঙ্গে আর কাউকে মেলানো যায় না। এর বাইরে, হুমায়ুনের গানে আরও কিছু ব্যাপার লক্ষণীয়। এর মধ্যে আছে তার সরস মনের পরিচয়, গল্প বলার প্রবণতা, অদ্ভুত ও গ্রামীণ শব্দ প্রয়োগ, অন্ত্যমিলে মুনশিয়ানা আর চমকের ব্যবহার। তবে সবই সহজাতভাবে রচনা করেছেন তিনি। আর এসবের ভিজ্যুয়ালাইজেশনও হয়েছে লেখকের মনের মতো করে। এমন স্বাধীনতা নিয়ে জন্মায় কোন সে গীতিকার?

'চলো না যাই বসি নিরিবিলি' গানে হুমায়ুন বলছেন, '…আমাদের কথা সংসদে গেছে, দুই নেত্রী রাজি/তারা বলেছেন, আর দেরি কেন, এখনই ডাকুন কাজী'। ঠিক গানের কথার মতো নয় লাইনগুলো, তবু এটি গান। কিংবা 'ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে/নোটবুক নেই কাছে/তিন নম্বর ভূতের গলি এটুকুই মনে আছে' পাগল প্রেমিকের মনের ভাব প্রকাশ করছে গল্পের ছলে, একটু এনার্কি আর হেয়ালিপূর্ণ যেন কথাগুলো, কিন্তু নতুনত্ব বেশ ধরা পড়ে।

ভাবনায় ফেলে দেওয়ার মতো একটি লিরিক হলো— 'মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ/হাতে আছে অচেনা এক শহরের ম্যাপ/ব্যাগ ঝুলিয়েছি কাঁধে/নামবো রাজপথে/চারিদিকে ঝলমলে রোদ/কেটে যাবে আঁধারেরই ছায়া অবরোধ/চারিদিকে কী আনন্দ/অতি তুচ্ছ পতঙ্গের অপূর্ব জীবন/হয়তো শিশিরকনারও আছে শুধু তার একান্ত একা আনন্দেরই ক্ষণ'। গল্প বলা গানগুলোর মধ্যে সুপারহিট 'একটা ছিলো সোনার কন্যা'। হুমায়ুন আহমেদের সরস মনের পরিচয় পাওয়া যায় 'তোমার ঘরের সামনে ছোট্ট ঘর বানাবো গো'সহ আরও কিছু গানে।

গান দিয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন বাউল মনের মানুষ হুমায়ুন। সেই হুমায়ুন কবিগুরুর ভীষণ ভক্ত। লালন, হাসন রাজা, শাহ আবদুল করিম, উকিল মুনশী, রাধা রমন, রশীদ উদ্দিন— সবার গান টানতো তাকে। ঘরোয়াভাবে প্রায়ই গানের আসর বসাতেন হুমায়ুন। গাইতেন অনেকেই। সূচনা সংগীতে থাকতেন হাসন রাজা, শেষ হতো 'মরণসংগীত' দিয়ে। বাউল গিয়াস উদ্দিনের লেখা 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়' হলো সেই মরণসংগীত। আর আসরের মাঝখানে থাকতো রবীন্দ্রনাথের গান। শিল্পী তালিকায় থাকতেন শাওন, সেলিম চৌধুরী। হুমায়ুন বিভিন্ন মনীষির গান শুনে শুনে চোখের জল ফেলতেন, এসবই কিংবদন্তি হয়ে আছে সতীর্থদের মনে, স্মৃতিতে। শাওনের সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই তার কণ্ঠে হুমায়ুন বিভিন্ন রকম গান শুনতে পছন্দ করতেন। শাওনের কণ্ঠে হুমায়ুনের সবচেয়ে প্রিয় গান কোনটি জানেন? নিজের গান তো অবশ্যই নয়, সেটির গীতিকার স্বয়ং রবি বাবু। গানটি হলো, 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না'।

হুমায়ুন আহমেদ (ছবি: সংগৃহীত)হুমায়ুনের গানের মানুষেরাও সমৃদ্ধ হয়েছেন তার সংস্পর্শে এসে। নিজের সহধর্মিনীর কথা বাদ দিলে এই তালিকায় আছেন এস আই টুটুল, সেলিম চৌধুরী, মকসুদ জামিল মিন্টু। হুমায়ুনের হাত ধরে গানে আত্মপ্রকাশ অনেকের। কুদ্দুস বয়াতি বা বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী তাদের মধ্যে অন্যতম। এর বাইরে হুমায়ুনের সঙ্গে কাজ করেছেন সুবীর নন্দী, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, হাবিব ওয়াহিদ, কনা প্রমুখ।

গানের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছিলো ছোটবেলায় কাজল তথা হুমায়ুনের। পণ করলেন গান শিখবেন। বাবাকে অনুরোধও করেছিলেন গানের শিক্ষক রেখে দেওয়ার জন্য। শিক্ষক এলেন, কিন্তু কিছুই শিখতে পারলেন না হুমায়ুন!

কয়েকদিন প্র্যাকটিস চলার পর গানের শিক্ষক হতাশ হয়ে হুমায়ুনকে বললেন, 'তোমার গলায় সুর নেই এবং সুরবোধ নেই, তুমি বরং তবলা শেখো'। কিন্তু তবলাতেও বিপুল নম্বরে ফেলটুস হুমায়ুন। 'তেরে কেটে ধিনতা' পর্যন্ত যাবার পর তবলা শিক্ষক নাকি পালিয়ে গেলেন! 'ছবি বানানো গল্প' গ্রন্থে এসব কথা লিখেছেন জনপ্রিয় গীতিকার হুমায়ুন আহমেদ। মহাকাল তার জন্য কী জমা রেখেছে, সেই হিসেব হবে পরে, সমকালকে জয় করা হুমায়ুনের গান দিনে দিনে যে আরও আধুনিক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে, সেটি লক্ষ্য করেছেন?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top