What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ঢাকা টু বোম্বে: বাংলাদেশী দর্শকদের লাখো সালাম (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
fffqFie.jpg


আজকে দেখে এলাম উত্তম আকাশ পরিচালিত সিনেমা 'ঢাকা টু বোম্বে'। আমার মতামতগুলি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে জানালাম।

কাহিনীঃ
সুন্দর দুটি বিষয়ের অবতারনা দিয়ে শুরু হয়েছে – শিশু পাচার ও নারী নির্যাতন। এই দুইটি বিষয়ের উপর জোর দিলে আমরা একটি দারুন কাহিনী পেতে পারতাম। গল্পে দেখা যায় একটা বাচ্চা ছেলে অন্য আরো শিশুদের সাথে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাধা দিতে গিয়ে তার মামা হাত হারায় আর তার মা শুধু সংলাপই বলে ক্ষ্যান্ত। কোন মায়ের সামনে এটা সম্ভব কিনা জানিনা। ঘটনা চক্রে সে মাঝপথ বোম্বে (মুম্বাই) থেকে পালায় এবং পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে ঠাঁই হয় একজনের কাছে। একসময় বড় হয়ে সে হয় বোম্বের মাস্তান। একদিন রাস্তার পাশে সিনেমার শুটিং দেখতে যেয়ে পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষন করে পরবর্তীতে সে ঐ সিনেমার নায়ক হয়ে যায়। কাহিনীতে দেখা যায় দেশের প্রতি নায়কের অদম্য টান। বাংলাদেশী মানুষ দেখলেই সে তাদের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করে। তাই সে নায়িকাকে উদ্ধার করে (যে কিনা প্রেমিকের দ্বারা প্রতারিত হয়ে দালালের কাছে বিক্রি হয়ে যায়). যে ছেলে বোম্বেতে মুক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নিজের পরিবারকে ফিরে পেতে উৎগ্রীব সে কেন এত বছর বোম্বে পড়ে রইল? তবে কি হিরো হওয়ার জন্য, নাকি নায়িকাকে উদ্ধারের জন্য। এভাবে কে বোম্বেতে কবে নায়ক হয়েছে? কাহিনীকার কি তার কোন উদাহরন দিতে পারবেন ? তারপর দেখা যায় সে ভিলেনের তাড়া খেয়ে দৌড়ে চলে আসে বাংলাদেশে। হেটে বা দৌড়ে কি প্রায় আড়াই হাজার কি.মি. পাড়ি দিয়ে দেশে আসা সম্ভব? যাহোক দেশে এসে সে পরিবারের সন্ধান করতে যেয়ে প্রথমেই খুঁজে পায় ভিলেনকে এবং তার অনেক পরে নিজের পরিবারকে। অবাক হলাম পাচার হওয়া ছেলেটি পাচারকারীর নাম মনে রেখেছে অথচ নিজ পরিবারের কারোর নাম মনে রাখেনি (ঘটনাক্রমে পাচারকারী ও তার পরিবার একই এলাকা বাড্ডার বাসিন্দা) এরপর শুরু হয় নায়ক ও ভিলেনের দ্বন্দ। শেষের দিকে দেখা গেলো নায়ককে ভিলেনরা গুলি করে মেরে ফেলে অথচ সে আবার ফিরে আসে। দেখানো হলো একটি পুতুলকে ভিলেনরা মেরেছে। অবাক ব্যপার ! দেখলাম নায়ক হেটে হেটে ভিলেনদের কাছে গেলে ভিলেনরা তাকে গুলি করে হত্যা করলো! আর এভাবেই নানা রকম ফন্দি ফিকির ও অসংলগ্ন কাহিনী জোড়াতালি দিয়ে একসময় তা শেষ হলো "ঢাকা টু বোম্বে"।

সংলাপঃ
বাংলাদেশ অংশের সংলাপ তবুও মেনে নেয়া যায় কিন্তু বোম্বে অংশের সংলাপ গ্রহনযোগ্য নয়। পরিচালক ইচ্ছে করলে কোন এক্সপার্টকে (কেলকাতা বা মুম্বাই থেকে) দিয়ে হিন্দি ডায়লগগুলি সংশোধন করে নিতে পারতেন। তা না করায় হিন্দি সংলাপগুলি খুবই বাজে লেগেছে ভুল উচ্চারন ও ভুল শব্দচয়নের জন্য। নায়কের মুখে সৃষ্টিকর্তাকে 'বস' সম্বোধন করা আমি মেনে নিতে পারিনি।

চিত্রনাট্যঃ
একটি দৃশ্যের সাথে অপর দৃশ্যের লিংক মিস ছিল। বারবার সিনেমার গতি হারিয়ে যাচ্ছিল। অযাচিত অনেক বিষয়ের অবতারনা করে জগাখিচুরী হয়ে গেছে।

অভিনয়ঃ
এত দুর্বল কাহিনী ও চিত্রনাট্যেও শাকিব খান ও সাহারা যথেষ্ট সাবলীল ছিলেন। মেধাবী পরিচালক পেলে শাকিব নিজেকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যেতে পারতেন। কাবিলার অভিনয় বরাবরের মতো সাবলীল। তার ক্ষেত্রেও আগের কথাচি প্রযোজ্য। হতাশ হয়েছি সাদেক বাচ্চু আর সুচরিতার অভিনয় দেখে। তার সিনিয়র আর্টিষ্ট অথচ অভিনয়ে তার কোন ছাপ নেই। অন্যরা হিসেবের বাইরে রইলেন।

oPZgNwn.jpg


চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় গান "কইলজার ভিতর গাঁথি রাইকখুম তোয়াঁরে" এর জগাখিচুরী ভার্সন ও পুরোনো জনপ্রিয় গান "তুমি যে ক্ষতি করলে…আমার আলাহ করবে তোমার বিচার" নতুনভাবে পরিবেশন করা হয়েছে যা কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছে।

গানঃ
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় গান "কইলজার ভিতর গাঁথি রাইকখুম তোয়াঁরে" এর জগাখিচুরী ভার্সন ও পুরোনো জনপ্রিয় গান "তুমি যে ক্ষতি করলে…আমার আলাহ করবে তোমার বিচার" নতুনভাবে পরিবেশন করা হয়েছে যা কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছে। অন্য গানগুলি তেমন ভাল লাগেনি।

ফাইটঃ
শাকিব বরাবরই ফাইটে ভাল। তবে নতুন কিছু দেখা যায়নি এতে। বরং কয়েকটি 'কেবল শট' এর কেবল স্পষ্ট বুঝা গিয়েছে। শেষের দিকে জাহাজের ভিতর ভিলেনদের সাথে শাকিবের ফাইট হল। চাপাতি দিয়ে শাকিব সবার হাত কাটা শুরু করলেন। হাত কাটার পর সবার অনুভূতিতে বুঝাই যাচ্ছিলনা তাদের হাত কাটা পড়েছে ! হাত কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হল অথচ মাটিতে এক ফোটা রক্তও পড়তে দেখা গেল না। আরো মজার ব্যপার হাত কাটার পর পরই শরীরের ডান কিংবা বাম পাশটা ত্রিভুজের মত ফুলে উঠেছে। জামার ভিতরে হাত গুটিয়ে রাখা এতো স্পষ্ট যে তা দৃষ্টিকটু লাগছিল।

শিল্প নির্দেশনাঃ
বর্তমানের অধিকাংশ বাংলাদেশী কাহিনীচিত্রে শিল্পনির্দেশনা খুবই উপেক্ষিত। যা অযোগ্য লোকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এই সিনেমাতেও তা প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে। বোম্বের দৃশ্যের (প্রযোজকের অফিস, ড্যান্স ফ্লোর, রাস্তা বা গলি) জন্য যে সেট ফেলা হয়েছে বা জাহাজের দৃশ্যের যে সেট ফেলা হয়েছে তা রীতিমতো হাস্যকর।

পোষাক, অঙ্গসজ্জা ও মেকাপঃ
প্রায় প্রতিটি সিনেমাতেই শাকিবের কস্টিউম প্রায় একই থাকে। তাই সে কখনো ঐ চরিত্রের অভিনেতা না হয়ে বরাবর শাকিবই থেকে যান। এর ব্যর্থতা কস্টিউম ডিজাইনার, শিল্প নির্দেশক ও পরিচালকের। সুচরিতাাকে একদৃশ্যে দেখলাম কড়া লিপষ্টীক লাগিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। আমাদের সিনেমাতে কে যে বাড়ির ভেতর ও বাহিরে উভয়ক্ষেত্রে একই ধরনের মেকাপ করেন ! লিপষ্টীক যেন খুবই জরুরী বিষয় ! তারপর যেটা দৃষ্টিকটু লেগেছে, নায়ক ছোট থেকে বড় হয়ে গেল কিন্তু তার মা কিন্বা ভিলেনদের চেহারায় একটুও বয়সের ছাপ নেই। কাহিনী মতে ১৬ বছর আগেও যেমন ছিল ১৬ বছর পরও তাই ! আসলেই কি তা কখনো হয় ?

চিত্রগ্রহনঃ
বেশ কয়েক ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়েছে। পুরো সিনেমাটি অসংখ্য ভুল, অপ্রয়োজনীয় শটে ভরা। পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক দু'জনেই দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা বানাচ্ছেন, অথচ তাদের অভিজ্ঞতার কোন ছাপ দেখতে পেলাম না। ক্রোমা শটগুলি একবারেই আনাড়ীভাবে করা হয়েছে। যখনই চিত্রগ্রাহক হিসেবে মজিবুল হক ভুইয়াঁ এর নাম দেখেছি তখনই ধরে নিয়েছিলাম ভাল কিছু পাবনা। চিত্রগ্রাহক হিসেবে সে একবারেই অযোগ্য। অনেক নতুন পরিচালকই ক্যামেরা সম্পর্কে (শট, এঙ্গেল, হাইট, ডিসট্যান্স, ফোকাস ইত্যাদি) দুর্বল থাকতে পারেন কিন্তু একজন দক্ষ চিত্রগ্রাহক (যেমন- আফজাল চৌদুরী, বেবীজামান, আনোয়ার হোসেন, মাহফুজুল হক খান) পরিচালকের মনের ভাবটা বুঝে তা সঠিকভাবে চিত্রায়ন করতে পারেন। এমন অযোগ্যলোক কি করে বছরের পর বছর টিকে আছে অবাক লাগে।

আলোকসম্পাতঃ
লাইট ইঞ্জিনিয়ার শব্দটি আমাদের সিনেমাতে নেই। কারন সত্যিকার অর্থেই আমাদের লাইট ইঞ্জিনিয়ার নেই আছে লাইটম্যান। তাদের ও শিল্পনির্দেশকের কারনে আমরা লাইটং যাদু দেখতে পাইনা। এ সিনেমাতে তার ব্যত্যয় ঘটেনি। অপর্যাপ্ত ও ভুল লাইটং এর ছড়াছড়ি।

সম্পাদনাঃ
সম্পদক মহাশয় প্রযোজকের খরচ বাঁচাতে বোম্বের কাহিনী জন্য প্রচুর কাটপিস জুড়ে দিয়েছেন যা দৃষ্টিকটু লেগেছে। অপর্যাপ্ত ট্রানজিশন ও জাম্পকাট দেখা গেছে। তুলনা মুলকভাবে টাইটেলটা ভাল হয়েছে।

পোষ্ট প্রডাকশনঃ
আফটার ইফেক্টস ও কালার কারেকশন ঠিক ছিলনা। ফলে ঝাপসা ও বহু বর্ণের ছড়াছড়ি দেখা গেছে।

পরিচালনাঃ
ফিল্মে এতগুলি বছর পার করার পরও পরিচালক উত্তম আকাশ নিজের কোন কারিশমা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিটি বিভাগই ছিল দুর্বল ও আনাড়ী হাতের ছোয়া।

ডিজিটাল সমাচারঃ
আজকাল ডিজিটাল নাম দিয়ে ভালই প্রতারনা শুরু হয়েছে। না পাচ্ছি সুন্দর পরিষ্কার চিত্র, না পাচ্ছি সামঞ্জস্যপূর্ণ শব্দের সমাহার। আর কতকাল এই প্রতারনা চলবে জানিনা।

দর্শকঃ
আমাদের দেশের দর্শকদের আমি লাখো সালাম জানাই। তাদের চাহিদা এত কম যে অবাক হয়ে যাই। এতসব দুর্বল সিনেমাগুলি তারা তেমন কোন প্রকার অভিযোগ না করেই হজম করছে। আবার কেউ কেউ তার প্রশংসা করছে। আমরা আরেকটু সচেতন হলে সিনেমার নামে অখাদ্য পরিবেশন করা বন্ধ হতো।

পরিশিষ্টঃ

এত কষ্ট করে যে রিভিউ লিখলাম বা আপনি পড়লেন তাতে এই সিনেমার পরিচালক, প্রযোজক বা অন্যদের কিচ্ছু আসে যায়না। কারন তারা শাকিবের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে পয়সা তুলে নেবেন আর আত্মতৃপ্তিতে ভোগবেন ….দারুন একটা সিনেমা বানিয়েছি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top