What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review জালালের গল্প- একটি খাঁটি বাংলাদেশী সিনেমা (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
IFFZhib.jpg


বাংলা সিনেমায় পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বটে। কিন্তু বছরে ২০টা সিনেমা বাছাই করলে তার মধ্যে ১টি কিংবা ২টিকে বলা যাবে 'ভালো সিনেমা'। এই ভালো সিনেমাগুলোরও আবার নানা রকম আছে। কলকাতার রকম, বলিউডের রকম, তামিল-বলিউড মিশ্রণের রকম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এইসব রকমকে বলা হয়, 'ব্যবসায়ীক চলচ্চিত্র'।

মানে নাচে-গানে ভরপুর, রঙে রঙিন নায়ক-নায়িকা মাত্রই তা ব্যবসায়ীক চলচ্চিত্র। এই সব ব্যবসানির্ভর ছবির সঙ্গে একটু ভিন্ন ধরনের গল্প দর্শকের হৃদয়ে কতটা স্থান পায় তা বোঝার জন্য অবশ্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। কারণ দীর্ঘ সময় পরও যে ছবি মানুষের আলোচনায় স্থায় পায় সেই ছবিই আসলে 'সফল ছবি' হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন সফল ছবি কি তথাকথিত ব্যবসায়ী ছবি নাকি সবার ভাষ্যমতে ভিন্নধরনের ছবি? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েও আছে তীব্র বিতর্ক। আবার ভিন্নধরনের ছবি বলে কি তাকে ব্যবসায়ীক ছবি বলা যাবে না? সত্যি কথা হলো- সব ছবিই আসলে ব্যবসানির্ভর। কোনও প্রযোজক কিংবা পরিচালক গাটের পয়সা খরচ করে আর্থিক ক্ষতি হয় এমন ছবি নিশ্চয়ই নির্মাণ করতে চাবেন না। সবাই শেষ পর্যন্ত অর্থিক লাভের কথাই চিন্তা করে। তার মানে ব্যবসার দিকটি তো সবাইকেই দেখতে হচ্ছে।

যাইহোক, সম্প্রতি ভিন্নধরনের গল্পের ছবি হিসেবে আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে 'জালালের গল্প' নামে চলচ্চিত্র। মুক্তি পাওয়ার আগে থেকেই পরিচালক আবু শাহেদ ইমন বলে আসছিলেন একটি টিকিটে তিন ছবি। সত্যিই কিন্তু তাই। ইমনের দাবিকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। সিনেমাহলে ঢোকামাত্র জালালের ৩টি বয়সের গল্প দেখে ইমনের সঙ্গে আমিও একমত।

তবে পুরো ছবি দেখার পর চোখের পানি যখন মুছে নিচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে কয়েক যুবক উচ্চকণ্ঠে বলছিল, 'ফাউল ছবি দেখে টাইম নষ্ট, শালার টাকাও নষ্ট'। ইমন হয়তো এমন দর্শকের মন্তব্যে কষ্ট পাবেন। কিংবা আমি বলে দিলাম বলেও কষ্ট পাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এরই নাম 'সিনেমা'। কারও বিবেচনায় জগৎ শ্রেষ্ঠ আবার কারও বিবেচনায় তা একদম জঘন্য। এই বিবেচনার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে সিনেমা। বলতে হয়, এই নানান মতই আসলে চলচ্চিত্রের সৌন্দর্য।

S6rCMsr.jpg


জালালের গল্পপাঠ:

(স্পয়লার অ্যালার্টঃ লেখক এখানে রিভিউর প্রয়োজনেই কাহিনী বর্ণনা করেছেন। সচেতন পাঠক এড়িয়ে যেতে পারেন – মডারেটর)

১. জালালের গল্প নিয়ে বহুমাত্রায় আলোচনা চলছে। সবাই বলে দিয়েছেন জালালের গল্পের তিন দিক আছে। শিশু, কিশোর, তরুণ। ছবির শুরুটা খুব চমৎকার। ডেগে ভেসে পাড়ে এসে ভিড়ে এক শিশু। তাকে নিয়েই শুরু হয় এক গ্রামের গল্প। সেখানেই ভেসে আসা শিশুটি নাম পায়। নাম হয় জালাল। আল্লাহর রহমতের জালালকে ঘিরে গ্রামে অলৌকিক বিদ্যার চর্চা শুরু হয়। তার পা ধোয়া পানি খেলেই রোগের মুক্তি। এই প্রচারে ধর্মীয় অজ্ঞতাকে পুঁজি করে জালালের প্রথম দত্তক পিতা।

গ্রামের মানুষের অজ্ঞতা, রাজনীতি সব কিছুই চমৎকার করে উঠে আসে চলচ্চিত্রে। কিন্তু গল্প এগোয় খুব দ্রুততায়। এই দ্রুততার মধ্যে মনে হয় হয়তো জালালের আসল গল্প শুরু হবে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। কিন্তু তার আগে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। যখন গ্রামের সালিশে জালালকে আবারও ডেগে করে ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

yt3VvkB.jpg


জালাল তো আমার পোলা। ওরে ভাসাইয়া দিয়েন না

জালালের প্রথম দত্তক পিতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নূরে আলম নয়ন। জালালকে বুকে চেপে ধরে তার শেষ আর্জি, 'জালাল তো আমার পোলা'। তার এই আর্জিতে দর্শকের চোখে পানি আসার কথা। বাদ বাকি তো জানা নেই, অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে জালালকে যখন ভাসিয়ে দেওয়া হয় তখন চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। নূরে আলমের মতো আমারও বলতে ইচ্ছা করে, 'জালাল তো আমার পোলা। ওরে ভাসাইয়া দিয়েন না'। কিন্তু বাস্তব কঠিন, বাস্তব মর্মান্তিক। জালাল ভেসে যায় তার পরবর্তী ঠিকানায়। জালালের প্রথম গল্পে প্রত্যেকের অভিনয় ছিল অত্যন্ত বাজে। তাদের অভিনয়ের পারদর্শীহীনতার দায় পরিচালকের ওপর তো বর্তাবেই। তবে প্রথম গল্পে পার পাবে গল্পের প্লটের জন্যই। কারণ দর্শক তখনও জালালের গল্পই দেখতে চায়।

২. জালাল দ্বিতীয় গল্পে ভেসে আসে। ওই সময় সে কিশোর হয়ে উঠেছে। থাকে গ্রামের ক্ষমতাধর ব্যক্তির ঘরে। ক্ষমতাবানরা ঘরে কিছু মানুষ আশ্রয় দিয়ে থাকেন। ওই আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তিরা হয়ে থাকে নগন্য। তাদের কোনও মূল্য নেই।

এই মূল্যহীন জীবনের মাধ্যমে ক্ষমতাবানরা অনেক দয়াবান হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকেন। দ্বিতীয় গল্পে জালাল তেমনই মূল্যহীন জীবনের অধিকারী। এই গল্পের মধ্যে পরিচালকের সৃষ্টিশীলতার প্রকাশ ঘটতে দেখা যায়। প্রকৃতির সঙ্গে, পশু-পাখির সঙ্গে মনুষ্যের সম্পর্ক বোঝাতে পরিচালক বিন্দুমাত্র কার্পন্য করেনি। জালালের সঙ্গে প্রকৃতির নিরব দর্শকের ভূমিকা মিলিয়ে এক অসাধারণ বক্তব্য পেশ করেছেন পরিচালক।

X7Ed7eD.jpg


আমরা যেসব ছবিকে আমরা ভালো বলতে চাই সেখানে যৌনতা দেখানো নিষিদ্ধ (দেশিয় প্রেক্ষাপট)। সুতরাং ওই সব যৌনতা দর্শক দেখতে পায়নি। শুধু দেখতে পেয়েছে জালাল।

এই গল্পে ক্ষমতাধর ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তৌকির। তারই ঘরে আশ্রয় পেয়েছে জালাল। তৌকির আঁটকুড়ে। ইতোমধ্যে দুই বিয়ে করেছেন কোনও সন্তান জন্ম দিতে পারেনি। আর এই সন্তান না হাওয়ায় তার চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু তৌকির আশাবাদি। তাই তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে হাজির হয় গ্রামে। তৃতীয় স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মীমালা। পুরো ছবিতে যতগুলো নারী চরিত্র ছিল তার মধ্যে শর্মীমালা ছিল বারুদ। শুধু অসহায় জালালের জন্য ভালোবাসা নয়, ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্ত্রী হিসেবে তার যে প্রতিবাদের ভাষা ছিল তা পুরো ছবিতে ছিল অনন্য। দ্বিতীয় গল্পে যৌনতা ছিল। সন্তান জন্মলাভের জন্য প্রয়োজন যৌনতা। আমরা যেসব ছবিকে আমরা ভালো বলতে চাই সেখানে যৌনতা দেখানো নিষিদ্ধ (দেশিয় প্রেক্ষাপট)। সুতরাং ওই সব যৌনতা দর্শক দেখতে পায়নি। শুধু দেখতে পেয়েছে জালাল। জানালের ফাঁক দিয়ে যৌনতা দেখার মধ্যে পরিচালক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।

তৌকিরের সঙ্গে শর্মীমালা যৌনতা করেছে। তবুও সন্তানের দেখা মেলে না। তাই সিনেমায় প্রবেশ করে কবিরাজ। তার হাসপড়া দিয়ে শর্মীমালার গর্ভে সন্তান আসবে না। তাই সুযোগের সন্ধানে কবিরাজ শর্মীমালার সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়। সে যৌনতার খবর তৌকির জানে কিনা দর্শক জানে না। তবে জালাল জানে হয়তো। কারণ জালাল দেখে। জালালের এই দেখাও অন্যায় হয়।

এই কবিরাজের নানান তেলেসমাতি চলচ্চিত্রে উঠে আসে। একসময় বিরক্তও লাগে। কবিরাজের এতো তেলেসমাতি দেখানোর প্রয়োজন কী? মনে হয়েছে সময়ক্ষেপন।

তবে কবিরাজের দুর্দান্ত অভিনয় সবাইকেই মুগ্ধ করবে। কবিরাজের তেলেসমাতি বেশিসময় ক্ষেপণ করলেও অভিনয়ের পারদর্শীতা দর্শককে মুগ্ধ করতে বাধ্যই হবে। অন্যদিকে জালালের বিরুদ্ধে সে ষড়যন্ত্র আটে। বলা হয়, যেই ডেগে করে জালাল ভেসে এসেছিল সেই ডেগে এক জিনও ছিল। সেই জিনই বন্ধাত্ব তৈরি করে রেখেছে। তখন জালাল এবং ডেগকে আবারও ভাসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

শরীরিক নির্যাতনও করা হয় জালালের ওপর। তখন তৌকির হৃদয়ে কেন যেন পিতৃস্নেহ জেগে ওঠে। বাচ্চা মানুষের বেশি মারলে মরে যাবে এমন আশঙ্কা তার ভেতর আসে। কবিরাজ সব কিছুকে ভুলিয়ে দিয়ে তৌকিরের নিজের স্বার্থের দিকেই নজর দেওয়ার কথা বলে। তৌকির মানে। কারণ তার সন্তান দরকার। সন্তান না হলে ক্ষমতার গদিতে তার বসা হবে না। সকল অমঙ্গলকে জয় করার লক্ষ্যে জালালকে বস্তায় ভরে কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। জালালের আর্তচিৎকারে শর্মীমালার প্রতিবাদ কাজে দেয়নি। তৌকিরের চোখেমুখে জালালের প্রতি মায়া দেখা গেলেও ক্ষমতার স্বার্থ তাকে পরাজিত করে। ওই পরাজয়ে আবারও দর্শকের চোখ দিয়ে জল গড়াবে। এই গল্পে জালালের সংলাপ বলতে গেলে নেই। অথবা গুণে গুণে বলা যাবে জালাল ঠিক কয়বার কথা বলেছে। জালাল খুব কম কথা বলে। তবে জালাল শুধু দেখে। তার কাজ দেখে যাওয়া। ওই দেখে যাওয়ার মধ্যেই জালালদের গল্প ফুটে ওঠে।

৩. জালাল তৃতীয়বার ভেসে যায় আরেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছে। তবে এবার সে তরুণ জালাল। এখানেও সে অসহায়। নিজের মনের জোরে কিছুই করার ক্ষমতা নেই জালালের। এখানে তার আশ্রয়দাতা ক্ষমতাধর হলেও সে আসলে সন্ত্রাসী। খুন করাই যার পেশা। ওই পেশাদার খুনির দরবারেই জালালের বসতবাড়ি। তার মনের খোরাক জোগাতে শিলা নামে যাত্রাপালা থেকে এক নারীকে তুলে নিয়ে আসে জালাল।

জালালের আশ্রয়দাতা চরিত্রে মোশাররফ করিম, শিলা চরিত্রে রয়েছে মৌসুমি হামিদ। ফাঁদে পড়া নারীর ভূমিকায় মৌসুমি অনবদ্য। তার কান্নার দৃশ্যগুলোয় পারদর্শীতা লক্ষ্য করা গেছে। তার সংলাপের ভেতর যে শিলাকে পরিচালক তুলে ধরতে চেয়েছেন তার ষোলআনাই সফল। তবে বাগড়া বেধেছে মোশাররফ করিম। এক ঘেয়ে, এক ধাচের অভিনয় দিয়ে আর কতকাল চালাবেন জানা নাই। তবুও তার মতো দক্ষ অভিনয় শিল্পীর বড় অভাব এ জগতে।

keX6z6E.jpg


যাইহোক, শিলার সঙ্গে সঙ্গম দিয়েই শেষ গল্প এগোয়। সঙ্গে আছে মোশাররফ করিমের নানান ছলচাতুরি। এক বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ শিলার সঙ্গে যখন মোশাররফ করিমের যৌনতা এগোয় ঠিক তখন আবারও জালাল ফাঁক দিয়ে সে দৃশ্য দেখতে চায়। এবারও দর্শক যৌনতা দেখতে পায় না। দেখতে পায় শুধু জালাল।

এসবের মধ্যেই শিলার গর্ভে চলে আসে সন্তান। এরপর সন্তান সম্ভবা শিলাকে দূরে পাঠিয়ে দেয় মোশাররফ করিম। দেখভালের জন্য যায় জালাল। সেখানে শিলাকে জড়িয়ে ধরা, নিজের কোলে শিলার মাথা রেখে চুল আচড়ে দেওয়ার মধ্যে এক অন্যরকম প্রেম দর্শক অনুভব করে। এটা কি প্রেমের দোলা ছিল? দর্শক যা বোঝার বুঝে নেবে। সেটাও তো আর পরিচালক বলে দেবে না।

তো, শিলা সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মারা যায়। কিন্তু নব্য রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া মোশাররফ করিম নির্বাচনে জিততে মরিয়া। এ অবস্থায় যাত্রা পালার নর্তকির সন্তান তার পরাজয়ের কারণ হবে। আর ক্ষমতার লড়াইয়ে পরাজয় কে চায়? সবাই তো জয় চায়। মোশাররফ করিমও জয় চেয়েছে। তাই নতুন আরেক জালালের জন্ম দিয়েছে।

শিলার সন্তানকে ডেগে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো। জালাল তাকে বাঁচানোর জন্য ঝাপ দিল। অথচ বাস্তবতা বড় কঠিন। জালালদের কাজ ভেসে যাওয়া। অথচ এই জালালরাই সাতরাতে পারে না। তারা ডুবে যায়। ডুবে হারিয়ে যায়। কিন্তু জালালদের গল্প শেষ হয় না। এক জালাল থেকে আরেক জালালের গল্প চলতে থাকে। কারণ বাস্তব কঠিন হলেও তা থমকে যায় না, সে প্রবাহমান নদীর মতই বহমান।

জালালের গল্পের বিতর্ক:

যৌনতা নির্ভর সিনেমা:

জালালের গল্পের এদিক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বিতর্কিত অনেক কিছু আছে, তা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না। তবে হওয়া কি দোষের?

জালালের গল্পের মূল উপজীব্য কি? মূল উপজীব্য তো অনেক কিছুই কিন্তু পুরো সিনেমায় বড় অংশ আসলে জায়গা করে আছে- যৌনতা! তাহলেই কি এই ছবিকে যৌনতা নির্ভর বলা যায়? পুরোপুরি না বলা গেলেও গল্পের প্লটের মধ্যে যৌনতা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। প্রথম গল্পে নেই, দ্বিতীয় গল্পে তৌকিরের সঙ্গে শর্মীমালার যৌনতা, শর্মীমালার সঙ্গে কবিরাজের যৌনতা, তৃতীয় গল্পে মোশাররফ করিমের সঙ্গে মৌসুমি হামিদের যৌনতা। তবে তো যৌনতাই জায়গা করে আছে। তবে যৌনতাকে অশ্লিল রূপ দেয়নি পরিচালক। তার দক্ষতা এখানেই।

ছবিতে কখনও কখনও সুক্ষ্মভাবে হিউমার ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। কিংবা আমার কাছে মনে হয়েছে হিউমার। আবার কারও কাছে মনে হয়েছে ইরোটিক। যেমন, তৌকিরের সহযোগি গ্লাসে দুধ নিয়ে শর্মীমালার সামনে হাজির হয়। সে এসে বলে, 'ভাবি আপনার দুধ'। তখন শর্মীমালা এক দুষ্টু হাসি দেয়। এ দুষ্টু হাসি দিয়েই ইরোটিক হিউমার তৈরি হয়।

জালালের গল্পের নারীরা অসহায়:

জালালের গল্পের সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক হলো 'নারী'র । বাংলার নারীরা সংগ্রাম, প্রতিবাদ করতে জানে না। প্রথম গল্পের জালালের মায়ের ভূমিকা নেই। জালালকে নদীতে ভাসিয়ে দেবে তখনও প্রথম মাতার কোনও সংলাপ নেই, দৃশ্য নেই। অর্থাৎ নারী অবহেলিত।

দ্বিতীয় গল্পে শর্মীমালা ছিল বারুদ। সে চরম প্রতিবাদি ছিল। কিন্তু বন্ধাত্বের খোটায় তার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ পরাজিত হয়। তৃতীয় গল্পেও মৌসুমি হামিদের প্রতিবাদ নেই। অসহায় নারীকে চলচ্চিত্র যেন আরও অসহায় বানিয়ে রাখে। নারী কি শুধু ভোগের জন্য, সন্তান উৎপাদনের জন্য? তার কাজ কি যৌনতায় পুরুষের সঙ্গ দেয়া? এর চেয়ে বেশি নারীকে তুলে ধরার প্রয়াস হয়নি। হয়তো বাঙলার নারীর এ-ই হাল। তাই তাকে চলচ্চিত্রের গল্পেও ঘুরে দাঁড়ানো মানা।

সংগীত নাই:

সংগীতহীন সিনেমা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে জালালের গল্পে গান থাকলে বড় বেমানান হতো। পরিচালক ইমনকে ধন্যবাদ। তবে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে ভরপুর ছিল সিনেমা। চিরকুট ব্যান্ডের করা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সুন্দর ছিল। অন্যদিকে সিনেমেটোগ্রাফির জন্য প্রশংসাযোগ্য সিনেমা জালালের গল্প। প্রকৃতির দৃশ্যগুলোর ক্লোজ শট, কখনও লং শট মহনিয় ছিল। পশু, পাখি, নদীর দৃশ্য সবকিছুই ছিল উচ্চমানের।

মন্তাজ তৈরি:

বাংলা ছবিতে মন্তাজের ব্যবহার খুব কম হয়। জালালের গল্পে মন্তাজ তৈরি করা হয়েছে। দুই কুকুরের ঝগড়া জালাল পাশে বসে দেখে। এ এক অসাধারণ শট ছিল। এটি সত্যিকার অর্থেই অন্যরকম মন্তাজ তৈরি করে ফেলেছিল।

উপসংহার:

সত্যিকার অর্থে জালালের গল্পে অনেক কিছু আছে। সিনেমার মূল বিষয় হলো দর্শকের হৃদয়কে আচড় কাটতে পারা। জালালের গল্প দেখতে গিয়ে আমি নিশ্চিত কিছু বিরক্ত মুখ বাদ দিলে অধিকাংশের চেহারাতেই জালাল ফুটে উঠবে। সবাই বলে উঠবে, এতো আমাদেরই গল্প। আমাদেরই জালালের গল্প…
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top