What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review রিভিউ : রিজওয়ান (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
U1y2NKr.jpg


ঢাকার নাটকপাড়ায় এখন আলোচনার একটাই বিষয়— 'রিজওয়ান'। 'নাটবাঙলা নাট্যোৎসব'- এ উৎসবে নাটকটির ১৯টি প্রদর্শনী হচ্ছে। ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টা ও রাত ৮টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে চলবে প্রদর্শনী।

'রিজওয়ান'-এর পরিকল্পনা-নির্দেশনায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। উর্দু কবি আগা শহীদ আলীর কাব্যগ্রন্থ 'আ কান্ট্রি উইদাউট আ পোস্ট অফিস' অবলম্বনে ভারতের অভিষেক মজুমদার লিখেছেন নাটক 'রিজওয়ান'।

এ নাটক নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত নাটকপ্রেমীরা। সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই প্রশংসাসূচক মন্তব্য করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা তিনটি রিভিউ পড়ে নিন—

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লেখেন, 'আগেই জানা ছিলো জামিল আহমেদ চেনা কোনো জগৎ নির্মাণ করবেন না। প্রতিদিনের ডাল-ভাত উনি সার্ভ করবেন না।

এটা এক ডেভেস্টেটিং এক্সপেরিয়েন্স, রিভেটিং জার্নি। যে জার্নির শুরুর দশ-বিশ মিনিট পর্যন্ত আমি নিশ্চিত ছিলাম না আমি কি এটা পছন্দ করছি নাকি না। কিন্তু এক পর্যায়ে পছন্দ-অপছন্দের ভাবনা ছাড়ায়ে আমি নিজেরে আবিষ্কার করলাম কাশ্মীরের ঐ মানুষগুলার সাথে একই কাতারে যেখানে জীবন আর মৃত্যু গুলিয়ে গেছে কবিতার মতো।

আমার এই লেখা কোনো প্রচলিত অর্থে রিভিউ না। কিন্তু "রিজওয়ান" দেখে আসার পর কিছু কথা না বলে থাকতে পারতেছিনা।

আগেও বলছি, নব্বই দশকের শুরুতে করা "বিষাদ সিন্ধু" দিয়ে জামিল আহমেদ বাংলাদেশের থিয়েটারের নতুন চোখ খুলে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে বাংলাদেশে হওয়া আমাদের বেশির ভাগ থিয়েটার প্রযোজনাই মোটামুটি কোনো না কোনো ভাবে বিষাদ- সিন্ধু দ্বারা ইন্সপায়ার্ড। হয় সেটে, নয় আলোতে, নয় কোরিওগ্রাফি, নয় পোষাক। কিন্তু আপনি এটা খুব বেশি শুনবেন না, কারণ যে যে সব রাজনীতির মধ্যে থাকলে ইতিহাস বা মিডিয়া এগুলারে লিপিবদ্ধ করে, জামিল আহমেদের বসবাস এসবের বাইরে।

"রিজওয়ান"-য়ে জামিল আহমেদ এক বিমূর্ত রাজনৈতিক কবিতা রচনা করেছেন যেখানে দেখানো হয় রাষ্ট্রশক্তি কিভাবে দূর্বল নাগরিককে ধ্বংস করে দেয়।

গল্পটা কাশ্মীরের। রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকের জান কবচ করে। রিজওয়ানের বাবাকে হত্যা করে, বোন কে ধর্ষনের পর হত্যা করে, সব শেষে রাষ্ট্র তার তামাশার চুড়ান্ত রুপ দেখায় এই বলে যে, তুমি নিজেই তোমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছো। সুতরাং তোমাকে শাস্তি স্বরুপ মেরে ফেলা হবে।

এবং রাষ্ট্র ন্যায়ের প্রতীক হয়ে রিজওয়ানকে হত্যা করে।

কেউ মারা গেলে ছোটবেলায় আমার আম্মা আকাশের দিকে নির্দেশ করে বলতো, "আল্লায় নিয়া গেছে"! ফলে আমাদের শিশুমনে মৃত্যূর সাথে আকাশের একটা যোগসুত্র তৈরি হয়ে গেছিলো। আমার মনে হয় বেশীর ভাগ বাঙালী শিশুই এই ইমেজ নিয়ে বড় হয়েছে। আমি জানিনা জামিল আহমেদ তার শিশুবেলায় এই গল্প শুনেছেন কিনা। কিন্তু আমার বিশ্বাস শুনেছেন এবং সেই ইমেজ এখনো তার মনে গেঁথে আছে।

সেই কারনেই কিনা জানিনা "বিরাট শিশু" জামিল আহমেদ মৃতদের জগত বানিয়েছেন আকাশে। মৃত্যুর পর রিজওয়ান যখন আকাশের দিকে উঠে যায়, সপ্ত আকাশের প্রথম আকাশে দেখা হয় বোনের সঙ্গে। রিজওয়ান ছিলো পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য যে পৃথিবীতে অপেক্ষায় ছিলো এই আশায় যে তার বাবা একদিন ফিরে আসবে।

মৃত বোনের সাথে সাক্ষাতে রিজওয়ান যখন বলে উঠে "বোন, বাবাকে বলো না আমি মারা গেছি, আমাকেও বলো না বাবা মারা গেছে", তখন আমার গলা পর্যন্ত কান্না এসে ভর করে, আমি অসহায় হয়ে যাই।

এই অসহায়ত্বের ভার নিতে চাইলে শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে থিয়েটারটা দেখে আসেন। টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কিছু বললাম না। শুধু বলবো আপনার জন্য ম্যাজিক অপেক্ষা করছে।

দেখে আসুন। ডুবে যান, ঝিলের জলে, কবিতার ঝিলে।"

rarYmaw.jpg


……………..

শিক্ষক ও নির্দেশক সামিনা লুৎফা লেখেন, "রিজওয়ান আলোচনার শীর্ষে – আমি মহা খুশী। গত কয়েক বছরে কোন নাটক নিয়ে আমি এত এক্সাইটেড হই নাই। নাটকের জয় হোক । মঞ্চে নাটক দেখুন – বাংলাদেশে বিশ্বমানবের নাটক দেখুন ।

ধর্ষিত যখন ধর্ষক হয় বা যখন আমি মরে যাই তখন কেবল দেহটাই শেষ হয় কিন্তু বেঁচে থাকলে অন্য কিছু হওয়া যায় বা আমি প্রাকৃতিক কারণে মারা গিয়েছি – আহ কী সব ভাবনায় আমাদের জারিত করলেন আপনি, সৈয়দ জামিল আহমেদ !!! আপনার বশংবদদের থেকে আপনি যে কত ভিন্ন – কত অসাধারণ ভাবনার মানুষ !! আপনি আমাকে যে কী ভাবে প্রণোদিত করেন আপনাকে কোনদিন বোঝাতে যাব না আমি। কিন্তু আমি জানি আপনি অনন্য । একটা নাটক আমাকে কাল সন্ধ্যা থেকে আজ অবধি অস্থির করে রেখেছে । আমি জানি এটাই বিরাট ব্যাপার। আমার কাছে নাটকের কন্টেন্ট অনেক গুরুভার বহন করে। আমি নতমস্তকে স্বীকার করছি – অনেক কিছুই এভাবে ভাবি নি আমি । তাতে কারো কিছু যায় বা আসে না নিশ্চয়ই – কিন্তু আমার আসে যায় – ভালবাসা জানবেন। আবারও স্যালুট, আপনাকে।

সবাই আসুন নাটবাঙলা'র এই আয়োজনে। এই নাটক দেখতেই হবে। দেখুন – রিজওয়ান। শিল্পকলায় প্রতিদিন বিকাল ৪টা আর রাত ৮টায়।"

……………….

নির্দেশক মোহাম্মদ আলী হায়দার লেখেন, "অধ্যাপক জামিল আহমেদ এর থিয়েটার ক্র্যাফটিং :

গত এক দশকের চিরচেনা এক্সপেরিমেন্টাল হলটি এই প্রথম নিরীক্ষার আবর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। এই হলটির এত অলিগলি আমরা গত এক দশকের বেশি সময়ে আবিষ্কার করতে পারলাম না। জামিল ভাই বিভিন্ন সময় বলতেন " এক্সপেরিমেন্টাল হলটাকে আপনারা ব্যাবহার করতে পারলেন না" আমরা অধম বুঝতেই পারতাম না উনি কি বলতে চান। তাই উনি নিজেই রাস্তা মাতাও এর মত পথ বাতলে দিলেন। আমরা মহা ঘোর-বিস্ময় নিয়ে উপভোগ করলাম তাঁর নয়া পথ নির্মাণ, থিয়েটারের বাংলাদেশের স্পর্ধা দেখালেন আমাদের, "রিজওয়ান" আমাদের কাছে দেখা দিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ থিয়েটারের পাশে বাংলাদেশের একমাত্র থিয়েটার এর শক্ত অবস্থান। বাংলাদেশের থিয়েটার অনেক নিরিক্ষা করেছে কিন্তু এই নিরীক্ষার মুল জামিল আহমেদ, উনি আমাদের রাস্তা দেখান, আমরা সেই রাস্তায় হাটি, নষ্ট করি, উনি নতুন রাস্তা দেখান আবার ঘটে আমাদের অনুকরণ ও অন্ধ অনুসরন, আমরা পথ খুঁজে পাইনা, থিয়েটার ব্যর্থ হয়, আমরা হতাশ হই। কিছুই হচ্ছেনা বলে মুখ ঘুড়িয়ে নেই কিন্তু তিনি (জামিল ভাই) আমাদের আবার পথ বলে দেন। কারন বাংলাদেশে থিয়েটার নিয়ে তাঁর বোঝাপড়াই একমাত্র, আর সব ফিকে।

"নির্দেশক" শব্দটা যত হাল্কা হয়ে গেছে আমাদের দেশের সব শাখায়, অধ্যাপক জামিল আহমেদ আবার আমাদের নতুন করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে রিজওয়ান-এ দেখালেন " এঁকেই বলে নির্দেশনা, পারলে কর, নাহলে বাড়ি যা , মুড়ি খা"

রিজওয়ান এ আমরা দেখলাম থিয়েটার এর সুপার মাস্টার ক্র্যাফটিং, ত্রিমাত্রিক- স্পেস এর ব্যাবহার, আলোর প্রয়োজনীয় কিন্তু ধুন্ধুমার জলন , এল ই ডি, শারফি বিভিন্ন ডিসটরটেড লাইটের ঠিক ঠিক প্রক্ষালন, স্মোক এর নান্দনিক ব্যাবহার ( সব নাটকেই এখন স্মোক ব্যাবহার হয়, কিন্তু পরিপূর্ণ স্মোক এর ব্যাবহার এই প্রথম মঞ্চে দেখলাম) কনটেন্ট এর নয়া রাজনৈতিক আখ্যান, নন-লিনিয়ার থিয়েটার গল্পের প্রপার ট্রিটমেন্ট ( বার বার মনে হচ্ছিল জামিল ভাই সিনেমা নির্মাণ কেন করেন না), করিওগ্রাফীর অতিবাস্তব উপস্থাপনা, পোশাকের সাবলীল আহরন, কুশীলবদের আত্মবিশ্বাসী পদচারনা ( রেজওয়ান ও তার বোন বাদে), মিউজিক এর সাথে কথা-শরীরের ছন্দবদ্ধতা, প্রত্যেকটি প্রস্পস এর আত্মিক সমাবেশ, কি দেখলাম না! সব সব দেখা হল, কিন্তু ঘোর কাটল না। এই ঘোর কোনদিন কাটবে না।

ব্যাক স্টেজ বলতে আমরা থিয়েটার এ বুঝি লোক বসানো, কিন্তু আসলে তা নয়। ব্যাক স্টেজ মানে অভিনেতাদের সমপরিমান একাগ্রতা নিয়ে যারা পেছন থেকে মঞ্চটাকে নির্মাণ করতে থাকেন, যাদের এক ছোট্ট ভুলে ঘটে যাবে মৃত্যুর মত কারন। অধ্যাপক জামিল আহমেদ দেখালেন ব্যাক স্টেজ এর লোকজন কিভাবে অসম্ভব কে সম্ভব করাতে পারেন। অর্থাৎ সবার ১০০% একাত্মতা, একাগ্রতা ও মন সংযোগ। এটাকেই বলে প্রফেশনাল থিয়েটার। এইবার বোঝা গেল, প্রফেশনাল থিয়েটার কাকে বলে? হ্যাঁ , অধ্যাপক জামিল আহমেদ এর থিয়েটারই প্রফেশনাল থিয়েটার আর সব ফাঁকাবুলি, মিথ্যা আড়ম্বর।

আমার বন্ধুরা, থিয়েটার দর্শক, থিয়েটার কর্মী আপনারা অবশ্যই "রিজওয়ান" দেখুন শিল্পকলার এক্সপেরিমেন্টাল হলে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৪ টা ও রাত ৮ টায়- বিশ্বমানের বাংলাদেশের থিয়েটার রুপ। এই ঘটনা অনেক অনেক বছর পর একবারই ঘটে যদি অধ্যাপক জামিল আহমেদ হাল ধরেন।

আমার আক্ষেপ অধ্যাপক জামিল আহমেদ যদি আর কিছু না করে শুধু থিয়েটার নির্মাণ করতেন প্রতিবছর একটি করে, তাহলে সারা পৃথিবীর মানুষ বাংলাদেশকে চিনত থিয়েটার দেখার স্থান হিসাবে, এদেশে মানুষ বেড়াতে আসত থিয়েটার দেখতে। আপনি অনেক দীর্ঘায়ু হন এই কামনা করছি আমার প্রিয় থিয়েটারের মানুষ, প্রিয় জামিল ভাই।

নাটবাঙলাকে ধন্যবাদ এ অভিনব আয়োজনের জন্য।"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top