What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ঋণ শোধ না হওয়ার মতো সিনেমা ‘কাল সকালে’ (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
IpZQSv5.jpg


মেয়েটি হাসলো শুধু কাঁদলো না, মেয়েটির নাম তোমাদের বলবো না। আমাদের সমাজে নারীদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো তাদের একাকীত্বতা। একজন নারী যখন সমাজে একা বসবাস করছেন তখন তাঁর মতো অসহায় মানুষ দুনিয়াতে আর একটিও থাকবে না, আর যদি সে হয় সুন্দরী নারী তাহলে তো সোনায় সোহাগা!

আসলে নারী শব্দ দ্বারা কি সব সময় ভোগের বস্তুই উল্লেখ করা হয়! নাকি নারী শব্দ এক পবিত্র শব্দ? একটু ভেবে দেখুন আমাদের সমাজে এই নারী কখনোবা বিলাসের বস্তু কখনোবা আবার সম্মানের বস্তু। শুধু মাত্র এই নারী শব্দের মাঝে অনেক অনেক বিশেষণ জুড়ে দিয়েছেন বিভিন্ন সময় জন্ম নেওয়া বিভিন্ন খ্যাতিমান কবি-মনীষীরা।

কেন এতো নারী শব্দ নিয়ে টানছি জানেন? কেননা এই ফিল্মটি এমন এক নারীকে নিয়ে যিনি কিনা এক সমাজের লালসার শিকার, যিনি কিনা এক সমাজের কু-দৃষ্টির সামগ্রী, যিনি কিনা এক সমাজের হেরে যাওয়া এক নারী..!

আমরা অনেকেই বাংলা সিনেমা দেখা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করি, কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখেন যারা করছে তারা আদো কোনো ভালো বাংলা সিনেমা দেখে নাই। ঐ দু'চার ইংলিশ ছবি দেখে কুল পিপলদের মতো ঢেকুর তুলছে এবং এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য! তাই সেসব কুল পিপলদের বলছি যারা লেখার এই পর্যন্ত চলে এসেছেন এবার তারা চলে যান, উপরের লেখাটি সকলের পড়া উচিৎ ছিলো তাই আগেই লিখেছি! এবার চলে যাবো কেমন লাগলো সিনেমাটি সে বিষয়ে।

পরিচালনা এবং বাদবাকি : যেকোনো ইন্ডাস্ট্রির কিছু লোক থাকে যাদের কাছে ইন্ডাস্ট্রি আজীবন ঋণী থাকে। তেমনই আমাদের বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি প্রখ্যাত লেখক এবং পরিচালক "আমজাদ হোসেনের" কাছে আজীবন ঋণী থাকবে। তাঁর কারণেই আমরা পেয়েছি ববিতা,সুচন্দার মতো বিখ্যাত অভিনেত্রীকে। ঋণ শোধ না হবার মতো এমন আরেকটি সিনেমা হলো "কাল সকালে"। গ্রাম বাংলার বেশ পরিচিত হয়ে ওঠা এক গল্প এই ফিল্মের মাধ্যমে তিনি প্রকাশ করেছেন। সাথে ছিলো তাঁর অসাধারণ পরিচালনা, মন ছুঁয়ে যাবার মতো ডায়লগ এবং দৃষ্টিনন্দন লোকেশন। এছাড়া ফিল্মে আবহসঙ্গীতের মাঝে গ্রামের কেমন একটা জানি অনুভূতি রয়েছে, কেনো জানি মনে হলো এই আবহসঙ্গীত গুলো এই ফিল্ম ছাড়া অন্য কোথাও মানাতোই না। অন্যদিকে ২০০৪ সাল অনুযায়ী ক্যামেরা ওয়ার্ক ছিলো মাইন্ডব্লোয়িং, শত হলেও আমজাদ হোসেন বলে কথা। যারা ভিন্টেজ জিনিস দেখতে পছন্দ করেন তাদের কাছে এই ফিল্মের মেকিং অবশ্যই ভালো লাগবে।

চলুন পরিচিত হই এই ফিল্মের উল্লেখিত কিছু চরিত্রের সাথে—

অপু বিশ্বাস (বাসন্তী) : আমি কখনোই অপু বিশ্বাসের ছবি দেখি নাই, এই ফিল্মের মাধ্যমেই তাকে সিনেমায় দেখলাম। ওয়াও নিজের প্রথম সিনেমা হিসেবে স্বল্প সময়ের জন্য স্ক্রিনেত্রী একদম বেশি দারুণ করেছিলেন। তাঁর সিনেমার বিভিন্ন ক্লিপ কিংবা মিউজিক ভিডিও দেখে তাঁর প্রতি আমার যে বাজে ধারণা হয়েছিলো তা কেনো জানি এই এক বাসন্তী চরিত্র দেখে উবে গেলো! আচ্ছা বলবেন কেউ উনার সেরা কয়েকটা সিনেমার নাম?

EkCjsgi.gif


চ্যালেঞ্জার (গ্রামের মাতবর) : উনার মতো একজন ভার্সেটাইল অভিনেতাকে যে কোনো চরিত্রেই অনায়াসে প্রতিস্থাপন করা যায়। এবং এহেন সুনামের মান রক্ষা করেছেন তিনি। নেগেটিভ রোলটা এমন ভাবে ফুটিয়েছেন যে, এখন খুব রাগ হচ্ছে স্বৈরাচার গ্রামের মাতবর গুলোর উপরে।

দিতি (শহরবানু বুবু) : গ্রামের এক প্রতিষ্ঠিত সাহসী নারীর ভূমিকায় থাকবেন এক সময়ের জনপ্রিয় এই প্রয়াত অভিনেত্রী। স্বল্প সময় স্ক্রিণ টাইম পেলেও নিজের নামের একদম অসাধারণ ব্যাবহার করেছেন তিনি।

ফেরদৌস (তাজু) : তিনি আমাদের দেশের বেশ স্মার্ট একজন অভিনেতা। তার সময়কালে তাঁর ফিল্ম ভালো লাগে নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তাজু গ্রামের এক খেটে খাওয়া সৎ যুবক চরিত্রেই এই ফিল্মে আত্মপ্রকাশ করবেন। বাস্তবতার দারুণ প্রকাশ ছিলো তাঁর এক্সপ্রেশনে এবং ডায়লগ ডেলিভারিতে ছিলো প্রাঞ্জলতার বাহার।

শাবনূর (মালতী) : বাংলা সিনেমার এক ক্রান্তিকালের নাম ছিলেন শাবনূর। যাকে তার ভক্তরা আদর করে ঢালিউড সম্রাজ্ঞী বলে থাকেন। একজন শাবনূর জন্ম একবারই হয়। যদি আপনি হেটারবিহীন অভিনেত্রীর তালিকা করেন তাহলে সবার আগে চলে আসবে এই ভালোবাসার নাম। এই ফিল্মের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং রোল ছিলো মালতী চরিত্রটি। কিন্তু এইসব চরিত্র অন্তত শাবনূরের কাছে কিছুই না। একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ হিসেবে উনি আপনার সামনে যেভাবে আসবেন আপনি ভাঙচুর ধরণের ক্রাশ খেয়ে যাবেন নিশ্চিত থাকুন।

কাহিনী সংক্ষেপ : সবুজে ঘেরা এক গ্রাম। একদম আমাদের চিরাচরিত সে গ্রাম। সে গ্রামেই বাস করে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এক মেয়ে মালতী। কিন্তু মানসিক বিকারগ্রস্ত হলেও তিনি দেখতে বেশ সুশ্রী। তো এমন এক সুন্দরী মানসিক রোগীর চলাফেরা ছিলো বেশ অদ্ভুত, আর এটাই স্বাভাবিক। তবে গ্রামের মানুষ সব সময় মেয়েটির সব কাজে ভুল বা অসঙ্গতি খুঁজেই যেতো। এদিকে মালতীর মা বেশ অসুস্থ, তিন কুলে তাদের দেখার মতো কেউ নেই। ঐ গ্রামের সহজ সরল তাজু ছেলেটাই তাদের একটু খোঁজ খবর নেয়। একদিন অসুস্থতা চরম মাত্রায় চলে যাওয়ার কারণে মারা যায় মালতীর মা! একা হয়ে যায় মালতী! এবার থেকেই শুরু মালতী জীবন সংগ্রাম! এছাড়া ফিল্মে থাকবে শ্রুতিমধুর কিছু গান এবং মালতী-তাজুর কুসুম কুসুম প্রেমালাপন। সবশেষে মালতীর জীবনের অধ্যায় সুখকর নাকি দুঃখ দুর্দশায় ভরা সেটা জানার জন্য অবশ্যই দেখতে হবে দেশ সেরা নির্মাতা আমজাদ হোসেন পরিচালিত এই সিনেমাটি।

একটি সিনেমা কিংবা একটি গল্প অনেক সময় সামাজিক বাস্তবতার উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়, তেমন'ই একটি সিনেমা "কাল সকালে"। পরিচালক তাঁর গল্পের মাঝে বুঝিয়ে দিয়েছেন আমাদের সমাজে মেয়েদেরকে বেশিরভাগ মানুষ ভোগ্যপণ্য হিসেবেই ভাবে। প্রতিটা পুরুষ চায় তাঁর নিজ স্বার্থ হাসিল করার জন্য। সব মিলিয়ে গ্রামের এক চিরন্তন বৈষম্যের চিত্রই এই ফিল্মের মাধ্যমে তুলে এনেছেন গুণী এই নির্মাতা।

এক নজরে "কাল সকালে"

পরিচালক : আমজাদ হোসেন

রচয়িতা : আমজাদ হোসেন

শ্রেষ্ঠাংশে : শাবনূর,ফেরদৌস,দিতি,চ্যালেঞ্জার,অপু বিশ্বাস আরো অনেকে।

ধরণ : ড্রামা

ব্যাপ্তিকাল : ১২৩ মিনিট

মুক্তির সাল : ২০০৪ইং

ব্যক্তিগত মতামত : ৯/১০
 

Users who are viewing this thread

Back
Top