What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review সাপলুডু: আড়াল থেকে খেলে সবাইকে নিয়ে (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
pnucGjz.jpg


সাপলুডু – The Game (২০১৯)

ধরন: সাসপেন্স-থ্রিলার
গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: গোলাম সোহরাব দোদুল
প্রযোজনা: বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড
অভিনয়: আরিফিন শুভ (আরমান), বিদ্যা সিনহা মীম (পুষ্প), তারিক আনাম খান (আহসানউল্লাহ), জাহিদ হাসান (ইরফান), সালাউদ্দিন লাভলু (এ.ডি.সি নজরুল ইসলাম), সুষমা সরকার (ফ্লোরা), শাহরিয়ার মাহমুদ সজীব (মজনু), আরিফিন জিলানী (কালাচাঁন), শাহেদ আলী (রুস্তম), রুনা খান (সালমা বেগম), শতাব্দী ওয়াদুদ (জুনায়েদ) মারজুক রাসেল (কিবরিয়া), ইন্তেখাব দিনার (সাকলাইন মুর্শেদী), মৌসুমী হামিদ, শিল্পী সরকার অপু প্রমুখ।
শুভমুক্তি: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

🐍নামকরণ: সাপলুডু মূলত একটি ঘরোয়া খেলার নাম। এটি এমন একটি খেলা যার সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত, আমরা প্রত্যেকেই ছোটকালের কোনো এক সময় থেকে এই খেলা খেলতে খেলতে বড় হয়েছি। ইনফ্যাক্ট, এখনো গৃহিণীরা অবসর সময়ে ঘরলুডু কিংবা সাপলুডু খেলে তাদের সময়টুকু আনন্দে কাটায়। ঘরে ঘরে এ খেলার বিপুল জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো, এ খেলাটির নিয়মকানুন খুবই সহজ। একইসাথে, শুরু থেকে শেষ অব্দি অন্যরকম একটি উত্তেজনার মধ্য দিয়ে এই খেলাটি অতিবাহিত হয়। সাপলুডুতে গুটি চালতে চালতে একসময় কেউকেউ মই বেয়ে তরতর করে উপরে উঠে যায়, আবার কোনো একসময় সাপের ছোবল খেয়ে পা পিছলে নিচে পড়ে যায়। তবে যতই সাপের ভয় থাকুক, সবাই অনবরত চেষ্টা চালাতে থাকে শেষ গন্তব্যে পৌছানোর।

এ সিনেমার গল্পের ক্ষেত্রেও তাই। সিনেমার প্রধান চরিত্রগুলি গল্পে প্রবেশের পর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সামনে এগোতে থাকে। কেউ হয়তো মই বেয়ে অর্থাৎ সুযোগ পেয়ে পার হয়ে যায়, আর কেউ হয়তো সাপের ছোবল খেয়ে বিপদে পড়ে যায়। তবে এখানে খেলা সবাইকে চালিয়ে যেতে হয়, নাহলে হবে নিশ্চিত মৃত্যু!

এরকম একটি খেলা থেকে গল্পের মূল আইডিয়াটি আসায় নামকরণ আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। এছবির ক্ষেত্রে এর থেকে পারফেক্ট নাম হয়তো রাখা সম্ভব হতো না…

🐍কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ: প্রথমত যার মস্তিষ্ক থেকে এরকম ইউনিক একটি আইডিয়া বের হয়েছে, তার সৃজনশীলতার প্রশংসা করতেই হয়। গত বছর তামিল "ভিক্রম ভেদা" দেখে কিছুটা আফসোসে ছিলাম; আমরা কেন এরকম ইউনিক আইডিয়ার সিনেমা বানাতে পারি না, যেখানে আইডিয়াটি নেওয়া হবে আমাদেরই পরিচিত কোনো বিষয় থেকে। তবে এবার সেই আফসোসের তৃষ্ণা মিটলো, এরকম একটি খেলার মূল আইডিয়া নিয়ে যে একটি সিনেমা তৈরী করে ফেলা যায়, গল্পকার গোলাম সোহরাব দোদুল সেটাই করে দেখালেন।

পরোক্ষভাবে যদি গল্পটিকে দুই-এক লাইন বলি তাহলে দেখা যায়, সিনেমার মূল চরিত্র আরমান (আরিফিন শুভ) বেশকিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে নিজের পরিবার ও এক অসহায়কে সাহায্য করতে গিয়ে একটি ষড়যন্ত্রে বাজেভাবে ফেঁসে যান। এখন এর পেছনে কে বা কারা আছে, তাদের উদ্দেশ্যটাই বা কী; এই রহস্য উন্মোচন করতে সে নেমে পড়ে এক মিশনে, যা দেখা যায় সিনেমার পরবর্তী অংশে।

Eryvt6n.jpg


যেহেতু এটি একটি সাসপেন্স থ্রিলার ঘরানার সিনেমা, সুতরাং গল্পের ব্যাপারে এর থেকে বেশি কিছু বললে সিনেমায় সাসপেন্স কিংবা থ্রিলার বলতে বেশি কিছু আর বাকি থাকবে না। তাই সে প্রসঙ্গে না আর যাওয়াই ভালো।

সিনেমার গল্পটি বেশ সিম্পল, হয়তো কেউ কেউ ছবির প্রথমার্ধেই ভালোভাবে গল্পে প্রবেশ করলে বুঝে যাবেন আসল অপরাধী কে। আবার কারো ক্ষেত্রে আসল অপরাধীকে খুজেঁ বের করতে সময় লাগতে পারে। তবে সিনেমার চিত্রনাট্যে নানারকম টুইস্ট ও একের পর এক সাসপেন্স রেখে গল্প নিয়ে খেলা করা হয়েছে, তাই গল্প কখনোই সমতল হয়ে যায়নি। টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে; মাঝে চড়াই হয়েছে, উতরাই হয়েছে।

তবে চিত্রনাট্যে কিছু বিষয় ছিল যেগুলো পরিষ্কারভাবে দেখানো হয়নি। কিছু বিষয় অবশ্য সাসপেন্সের খাতিরেই হয়তো দেখানো হয়নি, আবার কিছু বিষয় কেন ক্লিয়ার করা হলো না সেটাও ভাববার বিষয়। একইসাথে গল্প বলার ধরণে কিছু ছোটখাটো ভুলভ্রান্তি ছিল এছবিতে। যেমন ধরুণ, তিতলি নামে যে কিউট বাচ্চা মেয়েটিকে দেখানো হলো, তার ও পুষ্পের মধ্যকার সম্পর্ক পরিষ্কার বুঝিনি। এরপর পাশের গ্রামে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার প্রকৃত কারণ টা কি, সেটার কোনো সঠিক উত্তর পাইনি। এছাড়া ছবিটির গল্প যতটা জটিল পথে এগোচ্ছিল, এর শেষটা অর্থাৎ, ক্লাইম্যাক্সটি বড্ড সরল হয়ে গেলো। এর পাশাপাশি প্রকৃত অপরাধীকে যে প্রমাণের সাপেক্ষে দোষী দেখানো হলো, সেগুলোও ততটা পোক্ত মনে হলো না। সেগুলো যদি শক্তপোক্ত প্রমাণিত তথ্য হয়, তবে সিনেমার প্রথমার্ধেই সে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যায়।

তবে এছবির সমাপ্তি অন্য যেকোনো গতানুগতিক ছবি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, ছবিটির শেষ অসম্পূর্ণ, অনেকটা শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার মতো। এজন্যে অবশ্যই খেয়াল করে সিনেমাটির পোস্ট ক্রেডিট সিন দেখতে হবে। তাহলেই প্রকৃত অপরাধীকে খুজেঁ পাওয়া যায়। অনেকেই বাংলা ছবিতে পোস্ট ক্রেডিট সিন দেখতে ততটা অভ্যস্ত না, সেজন্যেই একথাগুলো বলা।

সিনেমায় সংলাপ কিছুটা কম, তবে শাহাজাহান সৌরভ ও পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুল বেশ ভালো ভালো কিছু সংলাপ তৈরী করেছেন পুরো গল্প কে ঘিরে। তারিক আনাম খানের মুখে একটি সংলাপ শোনা যায়; "যুদ্ধের ময়দানে রাজার সামনে সেনাপতি দাঁড়ায়, সৈন্যরাও দাঁড়ায়। কিন্তু তার মানে এই না যে সেনাপতির কথা রাজা শুনে চলে"। এছবিতে থাকা সবগুলি ভালো ভালো সংলাপের মধ্যে এই সংলাপটি মনে বিশেষভাবে দাগ কেটেছে।
এ অংশ পাবে ১০০ তে ৬০।

🐍পরিচালনা এবং অভিনয়: টিভি নির্মাতা হিসেবে গোলাম সোহরাব দোদুল বেশ খ্যাতিমান এক ব্যক্তিত্ব হলেও, পরিচালক হিসেবে এটি তার প্রথম ছবি। চিত্রনাট্যকার দোদুল আমার দৃষ্টিতে সন্তোষজনক না হলেও, পরিচালক দোদুল একদম টপ ক্লাস! দেখে একদমই মনে হবে না এটি তার প্রথম বড়পর্দার প্রজেক্ট! অনভিজ্ঞ হোক কিংবা অভিজ্ঞ হোক, সবার কাছ থেকে অভিনয় আদায় করে নিতে পেরেছেন। আর পুরো ছবিটি দেখে মনে হয়েছে এর এরেঞ্জমেন্টের পেছনে একটা সুন্দর পরিকল্পনার অবদান আছে। গল্প, চিত্রনাট্য যেমনই হোক; পরিচালক গোলাম সোহরাব দোদুলের পরিচালনা আশা জাগানোর মতো। ভবিষ্যতে তার কাছ থেকে এর চেয়েও ভালো কাজ চাইবো।

SlucJJK.jpg


ঘরলুডু কিংবা সাপলুডু তে যেমন গুটি থাকে ৪ টি, ঠিক এগল্পেও প্রধান চরিত্র ৪ টি। এর সাথে রয়েছে একঝাঁক তারকা অভিনয়শিল্পীদের অতিথি চরিত্র। গুণে দেখলাম… শতাব্দী ওয়াদুদ, রুনা খান, শাহেদ আলী, আরিফিন জিলানী, ইন্তেখাব দিনার, মারজুক রাসেল, মৌসুমৗ হামিদদের মতো প্রায় ১০-১১ টি অতিথি চরিত্র আছে এছবিতে! যদিও এদের সবার স্ক্রীনটাইম কেবল কয়েক মিনিটের মতো, তবে সবাই ছিলেন গল্পের অংশ। এদের উপস্থিতি পর্দার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।

অভিনয়ের দিক থেকে আমার দুজনের অভিনয় সবথেকে ভালো লেগেছে। প্রথমজন হলেন জাহিদ হাসান, প্রায় দু'বছর পর বড়পর্দায় কামব্যাক করলেন। বড্ড আফসোস লাগে এরকম একজন দূর্দান্ত স্ক্রীনপ্রেজেন্সধারী অভিনেতা আমাদের এই ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রিতে আন্ডাররেটেড রয়ে গেলেন। সময় থাকতে আমরা তাকে ব্যবহার করতে পারলাম না। হয়তো বা ভবিষ্যতে পারবো, তবে সেজন্যে তাকে ইরফান ভাইয়ের মতো এরকম কিছু ব্যতিক্রমী চরিত্র দিতে হবে। তবেই না তার প্রতি আমরা সুবিচার করতে পারবো।

দ্বিতৗয়জন হলেন সালাউদ্দীন লাভলু,এ গল্পে একজন তদন্তকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ইনি জাহিদ হাসানের থেকেও বেশি আন্ডাররেটেড, কালেভদ্রে এনাকে বড়পর্দায় পাওয়া যায়। তার চরিত্রে রয়েছে সিরিয়াসের সাথে স্যাটায়ারের দারুণ মিশেল, আর তিনি একাজটি খুব দারুণভাবে করে দেখিয়েছেন। সিরিয়াস মোমেন্টে তার করা সার্কাজম যেকোনো দর্শকের মুখে মুচকি হাসি এনে দিবে।

এরপর বলা যায় আরিফিন শুভ'র কথা। শুভ এছবিতে তার চরিত্রকে তথাকথিত হিরোয়িজম থেকে সরিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপনা করেছেন। বেহুদা হিরোয়িজম টেনে এনে ওভার দ্য টপ কিছু করে দেখানোর চেষ্টা, এছবিতে বিন্দুমাত্র পাইনি। নিঃসন্দেহে এরকম একটি গল্পের জন্য এটি বড় স্বস্তির বিষয়। অন্যদিকে অভিনয়ে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছেন দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠার। এছবিতে যে তার সেরা অভিনয় পেয়েছি তা বলবো না, তবে চরিত্রের প্রতি তার একটা ডেডিকেশনের প্রভাব ছিল, সেটা পর্দায় খুব ভালভাবে ফুটে ওঠে। বলাবাহুল্য, সিনেমায় প্রথমার্ধে থাকা আরমানের অপেক্ষা দ্বিতৗয়ার্ধে থাকা কালাচাঁন পর্দায় উপস্থাপনের দিক থেকে তুলনামূলক ভালো।

তবে তার শব্দচয়নে আমার ঝামেলা মনে হয়েছে, শুদ্ধ ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার মিক্সড করে ফেলছিলেন বারবার। এক্ষেত্রে গল্পটি যেহেতু প্রত্যন্ত অঞ্চলের, আরমান নামক চরিত্রটি যদি সম্পূর্ণ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতো, তবেই এক্ষেত্রে ভালো হতো।

তারিক আনাম খানের স্ক্রীনটাইম এছবিতে আমার যথেষ্ট মনে হয়নি। গল্পে ওনার চরিত্রে যা ব্যপ্তি তাতে উনি আরো সময় পাওয়ার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে তার ও জাহিদ হাসান কিংবা তার ও আরিফিন শুভ'র মধ্যকার সম্পর্ক আরেকটু বিস্তারিত তুলে ধরলে ভালো হতো।

বিদ্যা সিনহা মীমের চরিত্রটি আদতে এছবির পাঁচ নম্বর চরিত্র। পুষ্প নামক চরিত্রটি অন্যান্য চরিত্রগুলির সাথে মেলবন্ধনে সাহায্য করেছে। যদিও গল্পের শুরুটা তাকে ঘিরেই, কিন্তু যদি অন্য চারটি চরিত্রের সাথে পুষ্প চরিত্রের তুলনা করি, তবে এচরিত্রের গুরুত্ব গল্পে কিছুটা কম। তবে মীম অভিনয় অনেক ভালো করেছেন। ইমোশনাল সিনগুলোতে মীমের অভিনয় দেখার মতো। সুন্দরী এই নায়িকাকে আটা-ময়দার প্রভাব থেকে মেকআপ আর্টিস্ট কিছুটা দুরে রাখায়, সৌন্দর্যের দেবীকে আরো বেশি সুন্দর লেগেছে!

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০।

🐍কারিগরি: রাজু রাজ ও রিপন নাথ, এ সিনেমার টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টের নেতৃত্ব দেওয়া সাহসী সেনাপতি। সেনাপতিরা মুগ্ধতা ছড়ানোর মতো কারুকার্য দেখিয়েছেন পুরো সিনেমায়। সিনেমার একদম শুরুর সিনে দেখানো স্পিডি ক্যামেরাওয়ার্ক ও শিহরণ জাগানো সাউন্ড ডিজাইন স্পে

শাল কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল, এর পুরো রেশ ছিল পুরো সিনেমা জুড়ে। কিছু কিছু জায়গায় শব্দের ব্যবহার এতোটাই প্রভাব বিস্তার করেছে, সেগুলো শুনে অজান্তেই কেঁপে উঠেছি! লং শট, ড্রোন শটের মাধ্যমে এমন কিছু লোকেশন দেখানো হয়েছে, বাংলা সিনেমায় অতীতে এমন কোনো লোকেশন হয়তো দেখা যায়নি। বলে রাখা ভালো, পুরো ছবিটি দেশেই শ্যুট করা হয়েছে। টেকনাফ, বান্দরবান, কক্সবাজার, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুরের কিছু লোকেশন ব্যবহার করা হয়েছে এছবিতে।

সিনেমার কালার গ্রেডিং একটু ডার্ক ঘরানার, অনুজ্জ্বল। অবশ্য এরকম গল্প ডার্ক কালার গ্রেডিং এর দাবি রাখে। তাই রঙের সংমিশ্রণ মন্দ লাগেনি। এ অংশে নেগেটিভ দিক একটাই লেগেছে। সিনেমায় থাকা জন্মদিনের সিক্যুয়েন্স ও তার সাথে থাকা গানটি সম্পাদনার সময় বাদ দিয়ে ছবির দৈর্ঘ্য ৬-৭ মিনিট কমানো যেতো। ঐ সিক্যুয়েন্সটি পর্দায় তেমন গুরুত্ব বা প্রভাব রেখে যেতে পারেনি। এই জায়গায় তারিক আনাম খানের চরিত্রের সময় আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া যেতো, যে ব্যাপারে আগেই আলোচনা করেছি। সিনেমায় ফাইট সিক্যুয়েন্স আছে মাত্র দুটি, কিন্তু যা আছে যথেষ্ট। এবার ফাইট কোরিওগ্রাফি তে ক্যামেরাওয়ার্ক মোটামুটি পেলেও, এখানে সাউন্ড ডিজাইন ততটা ভালো পাইনি। রিপন নাথ হয়তো তার সেরা কাজ ও তার দূর্বলতা একই ছবিতে দেখিয়ে দিলেন!

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০।

🐍বিনোদন ও সামাজিক বার্তা: সাসপেন্স থ্রিলার জনরায় সাসপেন্স ও থ্রিলার দুটোই থাকাটা খুব জরুরী। এছবিতে সাসপেন্সের প্রভাব কিছুসময় ছিল উর্ধ্বগামী, আবার কিছুসময় ছিল নিম্নগামী। কিন্তু থ্রিল আছে ভরপুর! উত্তেজনার পারদ মাঝেমধ্যে ঠাসাঠাসি করে পূর্ণ করে উঠবে, পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারবেন না। পরিশেষে সিনেমা অসম্পূর্ণ অবস্থায় শেষ হয়ে আপনাকে একটা ক্লু দিয়ে যাবে প্রকৃত অপরাধীকে খুজেঁ বের করার। দর্শকই হয়ে উঠে তখন এগল্পের ইতি টানার কারিগর।

সিনেমায় গান আছে মোট ৪ টি। যদিও সচরাচর থ্রিলারধর্মী ছবিগুলোতে গান ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। এছবিতেও পারেনি, অথচ গানগুলো তৈরির পেছনে হৃদয় খান, বাপ্পা মজুমদারের মতো বড় বড় নাম জড়িয়ে ছিল। তবে এর মধ্যে ইমন সাহার সুর দেওয়া "মওলা" গানটি সিচ্যুয়েশনের সাথে খুব সুন্দর ফিট বসেছে, গানটি শুনতে ভালো লেগেছে। এছাড়া হৃদয় গানের সুর দেওয়া "কিছু স্বপ্ন" গানটিও বেশ সুন্দর ছিল। হৃদয় খান ও পড়শীর গাওয়া গানটির লিরিক্স লিখেছেন মোঃ রাজু আহমেদ। এছাড়া সিনেমায় "ময়না ধুম" নামে একটি পুরোনো পাহাড়ী অঞ্চলের গানকে পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছে, যাকে সাধারণত রিমেক বলা হয়। গানটি গেয়েছেন তানভীর আলম সজীব ও দিলশাদ নাহার কণা। নতুন করে গানটির মিউজিক দিয়েছেন সজীব নিজে। গানটি বেশ ভালো লেগেছে, তবে কেন জানি এ গানটি পর্দায় ততটা প্রভাব রাখতে পারেনি। খুবই তাড়াতাড়ি গানটি শুরু হয়ে আবার হুট করেই বিলীন হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে বাপ্পা মজুমদারের গাওয়া ও সুর দেওয়া "শুভ জন্মদিন" গানটি আমার কাছে ততটা ভালো লাগেনি।

যদিও থ্রিলার ফিল্ম থেকে বেশিকিছু শেখার আশা করতে হয় না, তাও এছবি পরোক্ষভাবে বেশ কয়েকটি সামাজিক বার্তা প্রদান করে। যেমনঃ এছবি দেখায় ছোট ছোট অবহেলাগুলো একটা সময়ের পর জড়ো হয়ে কীভাবে কাছের মানুষদের প্রতি ঘৃণার জন্ম দেয়। এজন্যে রক্তের সম্পর্ক, আত্মার সম্পর্ক যাদের সাথে আছে, তাদের কখনো অবহেলা করতে হয়না। আবার সেইসাথে ভালোবাসার পরিমাণ যেনো অতিরিক্ত না হয়ে যায়, সেব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হয়। নাহলে দেখা যায় দুধ কলা দিয়ে যাকে পোষা হচ্ছে, একসময় সে কালসাপের রূপ ধরে আপনাকে ছোবল দিবে।

এ অংশ পাবে ১০০ তে ৮০।

🐍ব্যক্তিগত: সিনেমার প্রচারণা করা হয়েছে বেশ রাখ-ঢাক করে। এর পেছনে হয়তো কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছিল। তবে সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশে সিনেমা তখনই ভালো ওপেনিং পায় যখন এর হাইপ ভালো থাকে। এসিনেমা প্রচারণায় মার খেয়েছে, স্বভাবতই আমি যেখানে দেখেছি সেখানে প্রত্যাশামাফিক দর্শক পাইনি।

এর ওপর আবার এসিনেমাটিকে একরকম পরীক্ষা-নিরিক্ষার অংশ বলা চলে। বাংলা বাণিজ্যিক ঘরানার ইতিহাসে যদি আপনি এরকম থ্রিলার ছবি খুজঁতে যান, আমার মনে হয় না "ক্ষতিপূরণ" ব্যতীত আর দ্বিতীয় কোনো ছবি পাবেন। সেটি ছিল আবার ধার করা গল্পের ছবি, তাও আজ থেকে তিন দশক আগের! এখনকার যুগে ধার করা গল্পকে বেশিরভাগ দর্শক বাঁকা চোখে দেখে। তাই মৌলিক গল্পের সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ঘরানায় বানানো সিনেমাকে এক্সপেরিমেন্টাল ওয়ার্ক বলাই শ্রেয়। এখন যখন কাজটি নীরিক্ষাধর্মী, অবশ্যই এখানে কিছু নতুনত্ব পাওয়া যাবে; সেটি উপস্থাপনের দিক থেকে হোক, কিংবা কারিগরি দিক থেকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি একেকজনের কাছে একেকরকম লাগবে। পজেটিভ-নেগেটিভ দুই ধরনের রেসপন্সই পাওয়া যাবে। এই লেখা প্রকাশ হতে হতে হয়তো হরেক রকমের রেসপন্স দেখা হয়েও যাবে।

তবে সবমিলিয়ে বলবো, ছবির চিত্রনাট্যে কিছু সমস্যা আছে। এছাড়া তেমন বড় কোনো দূর্বলতা নেই। এছবি মোটেও বিরক্তিকর না, গল্প যথেষ্ট গতিশীল। তাই আপনি চাইলে ভুলগুলি পাশ কাটিয়ে সোয়া দুই ঘণ্টা উপভোগের সহিত কাটাতে পারবেন। এখন অব্দি আমার দেখা এবছরের অন্যতম সেরা কমার্শিয়াল ছবি এটি।

রেটিং: ৭.৫/১০

🐍ছবিটি কেন দেখবেন: থ্রিলারপ্রেমীদের জন্য এটি একটি মাস্টওয়াচ ছবি। আমাদের এই ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রিতে থ্রিলার হয়-ই হাতেগোনা কয়েকটি, তাই আশাকরি কোনো বাংলা মুভিপ্রেমী এছবিটি মিস করতে চাইবেন না। এই কারণও যদি বাদ দেই, তবে গল্পের ইউনিক আইডিয়ার জন্য হলেও ছবিটি সবার দেখা উচিত। "সাপলুডু" খেলাটি কীভাবে গল্পে ব্যবহার করা হলো, সেটি ভালো উপভোগ করতে পারবেন। আর শুভ ফ্যানদের জন্য এটি এক‌টি শারদীয় উৎসবের উপহার, দেড় বছর পর তাদের প্রিয় নায়কের নতুন ছবি এলো। সিনেমাহলে গিয়ে উপভোগ করুন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top