What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review নিউটন, এই ছবি শেষ হয়, ফুরিয়ে যায় না (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
oshMw2E.png


সিনেমা: নিউটন

অভিনয়: রাজকুমার রাও, পঙ্কজ ত্রিপাঠি, অঞ্জলি পাতিল

পরিচালক: অমিত ভি মসুরকর

নিউটন এমনই এক ছবি যা শেষ হয়েও শেষ হয় না! আপনার ভাবনায় গেঁথে বসে। চিন্তার দোরগোড়ায় কড়া নাড়ে। আপনার মননে বাসা বাঁধে। আপনার সঙ্গে চলতে থাকে এই ছবি থেকে উঠে আসা কিছু তিতকুটে রুঢ় বাস্তবতা।

কোন রুঢ় বাস্তবতার সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিলেন পরিচালক অমিত মাসুরকর? আমাদের দেশ নাকি লারজেস্ট ডেমোক্র্যাটিক কান্ট্রি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড! কিন্তু সত্যি কি এই দেশের সব মানুষের নিজের মতো করে 'গণতান্ত্রিক' হওয়ার অধিকার আছে? মোক্ষম প্রশ্ন তুলেছেন অমিত। আর এখানেই 'নিউটন' শুধুমাত্র একটা সিনেমা হয়ে বড় পর্দার চৌহদ্দিতে আটকে থাকছে না। বরং তার সমস্ত সিনেম্যাটিক আবেদনকে ছাপিয়ে হয়ে উঠছে বাস্তবতার এক দলিল।

XSFq0lr.jpg


অমিত বড় যত্ন করে, খেটেখুটে নিউটন বানিয়েছেন। অমিত আপাত নিরীহ একটা গল্প ফাঁদলেও এই ছবির পরতে পরতে আঙুল তুলেছেন আমাদের চলতি 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার' প্রতি। এই যে আমরা ঘটা করে ভোট দিচ্ছি,যাকে ভোট দিয়ে আনছি, সে নাকি আমাদের ভালমন্দর দায়িত্ব নেবে! কিন্তু তা যে কেউই নেয় না এ তো আমরা হাড়ে হাড়ে জানি। ভোট যে আমাদের দেশে একটা বিশাল বড় প্রহসন, আমাদের মতো ভুক্তভোগীর চেয়ে ভাল আর কে জানে! তবু আমরা ভোট দিই। গোটা একটা দেশ চলে। আমরা সবাই জানি ভোট এখন একটা বোতাম টেপার খেলা। তবু আমরা খেলতে নামি। কারণ, এই খেলাটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ঠিক এখানেই প্রতিবাদ করে ওঠে নিউটন। যা আমাদের বেঁচে থাকার রসদ যোগাবে, অস্তিত্বের নির্মাণ ঘটাবে, সেটাই যদি পাকেচক্রে স্রেফ নিয়মরক্ষের খেলা হয়ে দাঁড়ায় তা হলে তো বড় বিপদ। নিউটন এরই বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। গর্জে ওঠে। গণতন্ত্রের গোড়া ধরে টান মারে।

46kA9uo.jpg


'নিউটন' ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: ইউটিউবের সৌজন্যে।

নিউটন, মানে রাজকুমার রাও নেহাতই এক ছাপোষা সরকারি কর্মচারী। ছত্তীসগঢ়ের এক মাওবাদী এলাকায় ভোট করানোর দায়িত্ব পড়ে তার। প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে দণ্ডকারণ্যে আসে সে। মোটে ছিয়াত্তর জন আদিবাসীর বাস এখানে। যখন-তখন মাওবাদীরা হামলা করতে পারে। যদিও মিলিটারিদের কথায়, এলাকা তাদের কন্ট্রোলে আছে। তবু তারা বারণ করে 'ভোট করাতে যেতে হবে না। ভোট এমনিই পড়ে যাবে!' নিউটন শোনে না সে কথা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোট করাতে আসে। কিন্তু আদিবাসীরা কেউই আসে না ভোট দিতে। এ দিকে ভোট না পড়লে মিডিয়ায় যে 'খবর' হয়ে যাবে। গণতন্ত্রের মাথাকাটা যাবে! গণতন্ত্রে ভোট দেওয়াটাই যে দস্তুর! নিয়ম! তাই ধরেবেঁধে আদিবাসীদের নিয়ে আসা হয় ভোট দিতে। কিন্তু কাকে ভোট দেবে তারা? কী-ই বা এমন হাতি-ঘোড়া হয়ে যাবে একটা ভোট দিলে? এক আদিবাসী অম্লানবদনে প্রশ্ন তোলে, 'আচ্ছা, ভোট দিলে কি টাকা পাব?' ভোট কেন দেব? কাকে দেব? তারা কিচ্ছুটি জানে না। এই কি তবে গণতন্ত্র? মিলিটারি অফিসার তাদের বোঝচ্ছে, 'নিউটন স্যার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তোমাদের এখানে ভোট করাতে এসেছে, তাই তোমরা ভোট দেবে। ভোট দেওয়াটা খুব একটা কঠিন নয়। এই যন্ত্রটা একটা খেলার জিনিসের মতো। তুমি যে কোনও একটা বোতাম টিপে দিলেই তোমার ভোট পড়ে যাবে।' আর নিতে পারে না নিউটন। কী শেখাচ্ছে মিলিটারি অফিসার এ সব! প্রতিবাদ করে ওঠে নিউটন।

এর পর নিউটন কী ভাবে ভোট করবে, সে তো সিনেমার বিষয়। সিনেমা হলে গিয়ে সেই গল্প দেখুন। কিন্তু আগেই বলেছি, নিউটন শুধুমাত্র একটা সিনেমা হয়ে থাকেনি। অথচ, নিউটন মামুলি একটা ছবি হয়ে থেকে যেতেই পারত। কিন্তু নিউটন তা হয়নি।অমিত তা হতে দেননি। এই ছবি অনায়াসে মাওবাদীদের হামলা নিয়ে রগরগে গোদা একটা ছবি হতে পারত। প্রতি পদে পদে মনে হবে এই বুঝি মাওবাদীরা হামলা করল! কিন্তু এক বারের জন্যও অমিত সেই দিকে নিয়ে যাননি। অমিত সংযমী থেকেছেন বার বার। বক্তব্য থেকে এক চুলও সরেননি। পলিটিক্যাল লিডারদের ভাঁওতাজির দিকেও চলে যেতে পারত এই ছবি। যে সব ছবি দেখে আমরা হেদিয়ে গেছি। বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রচুর। কিন্তু নিউটন নিজের লক্ষ্যে স্থির থেকেছে। আর থেকেছে বলেই নিউটন আর পাঁচটা ছবির মতো স্রেফ 'ছবি' হয়ে থাকেনি। উস্কে দিয়েছে মূল্যবোধ। বলিউড আমাদের এত দিন কী দেখিয়ে এসেছে? আমরা যাদের ভোট দিয়ে নিয়ে আসছি তারা সবাই ভণ্ড। কিন্ত নিউটন প্রথম ছবি, যে একেবারে গোড়া ধরে টান মেরেছে। ভোট যে প্রহসন নয়, নিয়মরক্ষের বোতামটেপা নয়, এই বোধোদয়ের গোড়ায় তা দিয়েছে নিউটন, আর দিতে পেরেছে বলেই এই ছবি মনে গভীর ভাবে আঁচড় কাটে।

4d1btiQ.jpg


এত দিন কী দেখে এসেছি আমরা? ছাপ্পা ভোট দেওয়ার জন্য প্রশাসন বন্দুক উঁচিয়েছে সাধারণ মানুষের দিকে। আর এই ছবিতে ভোট দেওয়ার অধিকারের জন্য নিউটন (সাধারণ মানুষ) বন্দুক তুলেছে প্রশাসনের দিকে! নিউটন দেখতে এই জন্যই ভাল লাগে।

রাজকুমার এই ছবির সম্পদ। বাকিরাও দারুণ। এখানে কেউ যেন অভিনয় করে না, সবাই রিয়্যাক্ট করে! এতটাই সাবলীল সবাই।

rgzPiWQ.jpg


অমিত 'নিউটন' নামের অন্য একটা ব্যাখ্যা করেছেন। বিজ্ঞানের কচকচি বাদ দিয়ে সাদাসিধে ভাবে বলেছেন, নিউটন সেই মানুষ যিনি আসমান-জমিনের ফারাক মুছে দিয়েছেন। কেমন করে? খাদের ধারে দাঁড়ালে একটা গরিব লোক যে ভাবে পড়বে একটা বড়লোকও সেই ভাবেই পড়বে। প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান। আমরা শিক্ষিত শহুরে লোক সব জেনেও না জানার ভান করি। ক্যাঁচাকলে পড়ে ভোট দিই। নিউটন দণ্ডকারণ্যে কতগুলো নির্বোধ অশিক্ষিত লোক নিয়ে সেই বিভেদ মেটাবার একটা অভিযান শুরু করেছিল। কিন্তু ওই যে, কোনও বড় কাজ যে একদিনে সম্ভব নয়!

নিউ টনের মতো একটা ছবিও হয়তো রাতারাতি কিছু পাল্টে দেবে না। কিন্তু পাঁচটা নিউটন তৈরি হলে এক দিন তো কিছুটা হলেও বদলাবে। আশায় রইলাম।

আর এখানেই এই ছবির সার্থকতা।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top