What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আরও একটা ‘বিগ বাজেট’, আরও একটা ‘ম্যাগনাম ওপাস’ (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
20PhoYS.jpg


বঙ্কিমচন্দ্র প্রশ্ন করেছিলেন, এ জীবন লইয়া কী করিব?
সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সামনেও একটা প্রশ্ন ছিল— এ বাজেট লইয়া কী করিব?

লাইট, সাউন্ড আর ক্যামেরা নিয়ে দুশো কোটির যে পর্বতচূড়ায় তিনি উঠে পড়েছেন, সেই পর্বত কী প্রসব করতে চলেছে, তা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে দেশ জুড়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। একটি ছবির ধাক্কায় গোটা রাজপুত জাতির গরিমা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কায় ছিলেন অনেকে। আন্দোলন, হুমকি, মামলা— বিতর্কের কোনও উপাদানই কম ছিল না। যার জেরে হইচইও বড় একটা কম হয়নি। শেষে নাম থেকে 'আই' বাদ দিয়ে মুক্তির মাত্র দিন কয়েক আগে 'পদ্মাবতী' হয়ে যায় 'পদ্মাবত'।
বিতর্কের মতো প্রচার যে আর কোনও কিছুতে হয় না, এ ছবির নির্মাতারা তা ভাল ভাবেই জানেন। সম্ভবত সেই কারণেই মুক্তির তারিখ বিনা বাক্যব্যয়ে পিছিয়ে দেন তাঁরা। শেষমেশ সেই বিতর্কের হাওয়ায় ভর করে ভন্সালী যে ফানুসটি আকাশে ওড়ালেন, তার প্রভাবে কোনও মতেই কোনও জাতির মর্যাদাহানির আশঙ্কা নেই। কারণ, এ ছবি শুধুই যুদ্ধবাজ ও তলোয়ারপ্রিয় দুই রাজা ও এক সুন্দরী রানির গল্প। সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব সেখানে খড়ের গাদায় হারিয়ে যাওয়া ছুচের মতোই।

15di02F.png


মূল কাহিনিটি কয়েকশো বছরের পুরনো এবং প্রায় সবারই জানা। মালিক মহম্মদ জায়সি যখন 'পদ্মাবত' রচনা করছেন, তারও প্রায় চারশো বছর আগে চিতোর দুর্গের দরজা ভেঙে দিয়েছিল আলাউদ্দিন খিলজির সেনা। রাওয়াল রতল সিংহ যে পরাভূত হয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। কিন্তু পদ্মিনী বা পদ্মাবতী নামে আদৌ তাঁর কোনও রানি ছিল কি না, থাকলেও আলাউদ্দিন তাঁর জন্য পাগল হয়ে উঠেছিলেন কি না, তা নিয়ে ইতিহাসবিদেরাই যথেষ্ট সন্দিহান। তাঁদের অধিকাংশই মোটামুটি একমত যে, জায়সির সাহিত্যের বাইরে ওই ভদ্রমহিলার কোনও অস্তিত্ব নেই।
পরিচালক অবশ্য ছবির প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছেন, কাহিনির সঙ্গে বাস্তবের মিল খোঁজার চেষ্টা অবান্তর। জায়সির 'পদ্মাবত'-ই যে এই গল্পের আধার, তা-ও ঘোষণা করে দেওয়া হয়। অতএব, প্রথম দৃশ্যে সিংহলী রাজকন্যে হিসেবে দীপিকা পাড়ুকোনের আবির্ভাবের আগেই আমরা জেনে যাই, শেষ জানুয়ারির এই হাল্কা শীতে ইতিহাসের যাবতীয় তত্ত্ব আপাতত কাঁথামুড়ি দিয়ে দিবানিদ্রায় যেতে পারে। সঞ্জয় যা বলেছেন, তা কিছুটা জায়সির গল্প, বাকিটা তাঁর নিজের কল্পনা।

Fx6m9CL.jpg


সিংহলে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার রাজকন্যে পদ্মাবতীকে (দীপিকা পাড়ুকোন) বিয়ে করে নিয়ে এলেন মেওয়ারের রাজা রাওয়াল রতন সিংহ (শাহিদ কপূর)। এক দিন রাজা-রানির একান্ত প্রেমের মুহূর্ত লুকিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে যান চিতোরগড়ের রাজপণ্ডিত রাঘব চেতন। তাঁকে কারাবন্দি করতে গিয়েও রানির পরামর্শে শেষমেশ রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেন রতন সিংহ। এর পরে সেই ব্রাহ্মণ দিল্লি গিয়ে আলাউদ্দিন খিলজির (রণবীর সিংহ) সঙ্গে ভাব জমান। খিলজিকে তিনিই পদ্মাবতীর রূপের বর্ণনা দেন। কাকা জালালউদ্দিনকে হত্যা করে সদ্য সিংহাসনে বসা আলাউদ্দিন আর দেরি করেননি। তখনই সিদ্ধান্ত নেন, পদ্মাবতীকে পেতে চিতোর আক্রমণ করবেন তিনি। চিতোরে পৌঁছে দুর্গের সামনে আলাউদ্দিন শিবির গেড়ে বসেন। এবং যেন তেন প্রকারে চেষ্টা করেন পদ্মাবতীকে এক বার সামনাসামনি দেখার। দুই রাজার মধ্যে দৌত্য চলতে থাকে। রতন সিংহ রাজপুত। ভাঙবেন, কিন্তু মচকাবেন না। আর আলাউদ্দিন একেবারে খলতার প্রতিমূর্তি। যা চান, ছলে-বলে হোক বা কৌশলে, সেটা হাসিল করে তবেই ছাড়বেন। সেই ছলের মাধ্যমেই রতন সিংহকে বন্দি করে একেবারে দিল্লি নিয়ে গেলেন তিনি। দাবি একটাই, রাজাকে ছাড়াতে গেলে খোদ রানিকে দিল্লি আসতে হবে।

DCy28Kr.jpg


'পদ্মাবত'-এর দৃশ্যে রণবীর সিংহ।

পদ্মাবতী দিল্লি যেতে রাজি। তবে কয়েকটি শর্তের বিনিময়ে। সেই বার্তা পাঠানো হল আলাউদ্দিনকে। তিনিও শর্ত মানতে রাজি। অতঃপর প্রায় আটশো সেনাকে দাসী সাজিয়ে পাল্কিতে নিয়ে পদ্মাবতী গেলেন দিল্লি এবং আলাউদ্দিনের বেগমের সাহায্যে রতন সিংহকে ছাড়িয়ে চিতোরে ফিরে এলেন। রাগে অগ্নিশর্মা আলাউদ্দিন দ্বিতীয় বার চিতোর আক্রমণ করলেন। এ বার দ্বিগুণ সেনা নিয়ে। এর পরেই গল্পের ক্লাইম্যাক্স, যা অতিনাটকীয়তার বহু রেকর্ডকে চুরমার করে দেবে।
যে কাহিনিকে অনায়াসে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে বলে দেওয়া যায়, ভন্সালী তাকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছেন। তবু তেমন কোনও মুহূর্ত তৈরি করতে পারেননি, ছবি শেষ হওয়ার পরেও যা মনে থেকে যায়। রণবীর সিংহ ছাড়া কাউকে অভিনয়েরও তেমন সুযোগ দেননি। শাহিদ কপূরের মতো ভাল অভিনেতাকে গোটা ছবিতে রাজস্থানি পুতুল করেই রাখা হল। তাঁর মুখে হয় প্রেমের কথা, নয়তো রাজপুত বীরত্ব নিয়ে গরমাগরম সংলাপ। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুখভঙ্গি প্রায় এক। ছবির নামভূমিকায় যিনি, সেই দীপিকা পাড়ুকোনেরও বিশেষ কিছু করার ছিল না। কয়েক কেজি গয়না আর অতিকায় এক নাকছাবি পরে তিনিও হাসি হাসি মুখ করেই গোটা ছবি কাটিয়ে দিলেন। তবে রণবীর সিংহের কথা না বললে অন্যায় হবে। তিনি যে ভাল অভিনেতা, এ ছবিতে আরও এক বার সেটা প্রমাণ করার সুযোগ ছিল। রণবীর সাধ্যমতো চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু ভন্সালীর দাবি মেটাতে গিয়েই সম্ভবত তাঁর অভিনয় মাঝেমধ্যেই অতি অভিনয়ের বেড়া টপকে গিয়েছে। আলাউদ্দিন খিলজি বলিউডি হিরোদের মতো গান গাইতে গাইতে কোমর দুলিয়ে নাচছেন, এমন বাড়াবাড়ি বোধহয় এড়িয়ে গেলে ছবিটির কোনও ক্ষতি হত না।

ZcaHhPL.jpg


'পদ্মাবত'-এর একটি দৃশ্যে শাহিদ এবং দীপিকা। ছবি: ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।

প্রযোজকেরা যে জলের মতো টাকা ঢেলেছেন, ছবির প্রতিটি দৃশ্যই সেই সাক্ষ্য দিয়ে চলে। চিতোর দুর্গের যে সেট তৈরি করা হয়েছে, তা দেখলে তাক না লেগে উপায় নেই। সাজপোশাক থেকে মেক-আপ, দৃশ্যায়ন থেকে লোকেশন— এ সব দিকে খামতি খোঁজার চেষ্টা বৃথা। যুদ্ধের কয়েকটি দৃশ্যও অসাধারণ। বিশেষ করে, ছবির শেষ দিকে আলাউদ্দিন খিলজির সঙ্গে রতন সিংহের যে তলোয়ারের লড়াই দেখা যায়, তা এককথায় অনবদ্য। সেই সঙ্গে 'স্পেশাল এফেক্টস' তো আছেই, যা একেবারে আন্তর্জাতিক মানের। প্রযুক্তির রকমসকম দেখে বিস্ময় জাগে।
এ ছবিতে আয়োজন বা আড়ম্বর সবই আছে। যা নেই, তা হল বাস্তবমুখিতা। এ গল্প কোনও ভাবেই ওই সময়ের কোনও কথা বলে না। এক বারের জন্য তুলে ধরে না তখনকার মানুষের কথা। গল্প আবর্তিত হয় শুধুই চার-পাঁচটি চরিত্রকে ঘিরে। তার বাইরে বেরোতে পারে না। বেরোনোর চেষ্টাও করে না। সঞ্জয় লীলা ভন্সালী ঠিক যেমনটি করে থাকেন, এ ছবিও ঠিক তা-ই। আরও একটা 'বিগ বাজেট'। আরও একটা 'ম্যাগনাম ওপাস'।

ব্যস, ওইটুকুই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top