What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected নদীর বুকে রূপকথা (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,244
Messages
15,924
Credits
1,440,354
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
IiAwetG.jpg


নদীর বুকে রূপকথা - আরিফুল হক বিজয়

তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। বয়স সম্ভবত পাঁচ। গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে তখনকার সময়ে শিশুশ্রেনী বলতে কোনো ক্লাস ছিলো না। আর থাকলেও অন্তত আমাদের স্কুলে ছিলো না। গ্রাম ছেড়ে একটু দূরে 'খুন্না বন্দর' নামক জায়গায় তখনকার সময়ে 'কেজি স্কুল' ছিলো। যদিও তখন বুঝতাম না কেজি স্কুলটা আসলে কি! আম্মা আমাকে ঐ কেজি স্কুলে ভর্তি করানোর পণ করলেও চিরকাল ধরে একরোখা আমার আব্বা তার মত থেকে একবিন্দু পরিমাণও নড়লেন না। ফলাফল, যথাসময়ে ভর্তির দিনক্ষণ চলে আসলো এবং আমি তৎকালীন সময়ে আমার বিখ্যাত 'পুলিশ্যা শার্ট'র সাথে কেডস পড়ে একেবারে হেডমাস্টারের রুমে গিয়ে হাজির হলাম। সাথে যথারীতি আমার আব্বা!

হেডস্যার তার নাকের ডগায় ঝুলে থাকা চশমার ভিতর দিয়ে আমার দিকে সেকেন্ডখানেক তাকিয়ে থেকে অতঃপর প্রশ্ন হাঁকালেন "নাম কি খোকা?" আমিও আত্মবিশ্বাস সহকারে সজোরে উত্তর ছুড়লাম "সৈয়দ আরিফুল হক বিজয়"। এরপর তিনি প্রাথমিক পাঠ থেকে যা ই ধরলেন আমি তা ই হাসিমুখে উত্তর দিয়া যাচ্ছিলাম। পাশ ফিরে আব্বার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম তার মুখে হাসি। তখনই আমি ধরে নিলাম বোধহয় বিশ্বটিশ্ব জয় করে ফেলছি!

অতঃপর দারোয়ান আমাকে ক্লাসে নিয়ে গেলেন। ও মা! আমাকে দরজায় দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। নিজেকে কিছুটা ভিআইপি লেভেলের মনে করে ধুপধাপ কেডসের আওয়াজ তুলে বেঞ্চিতে গিয়ে বসলাম। অতঃপর রোল ডাকা হলো, আমার রোল হলো ১৯! মনে মনে একটু খুশিই হলাম। কারন, ১৮ জনের উপরের ছাত্র আমি। সুতরাং আমাকে সবাই ওস্তাদ ডাকবে। কিন্তু কিসের কি! পরে যখন সব বুঝলাম তখন আমার অবস্থাটা হলো লঞ্চ কমিউনিটির বিখ্যাত ব্ল্যাকার, থার্ডক্লাসের যাত্রীদের সুখ দুঃখের সঙ্গী, মীরগঞ্জের ভিআইপি, মিলিয়ন ডলারের ক্যামেরাওয়ালা, লেখক-এ-সুলতান খ্যাত এক ভাইয়ের মতো! মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। প্রচন্ড রাগে ক – তে কাকাতুয়ার জায়গায় বলে ফেললাম ক – তে কাউয়া!

কিন্তু ঐ যে হাল ছাড়ার পাত্র আমি নই! দ্বিতীয় শ্রেনীতে সবাইকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে, ক্লাস ক্যাপ্টেনের নাকের জল চোখের জল এক করে, হেড স্যারের চশমাটা নাকের আরেকটু নিচে নামিয়ে ভ্রু জোড়া কুচকাতে বাধ্য করে আমিই হলাম রোল নম্বর এক। শুধু কি তাই? কেজি অর্থ যে কিন্ডার গার্ডেন সেটার রহস্যও ভেদ করে ফেলে রাতারাতি ভিআইপি বনে গেলাম। গ্রাম জুড়ে হৈ চৈ পড়ে গেলো "তালুকদার বাড়ীর দম্ভ চূর্নবিচূর্ন করে দিলেন সৈয়দ হকের ছোট ছেলে"। এবার আর আমাকে পায় কে? আলুর মতো চেহারা আর বড় বড় চুল ঝাঁকিয়ে বাড়ি ফিরে যেই না আব্বাকে এই খুশির খবর দিলাম। উনি সেই খুশিতে বললেন " বাপধন! ল ঢাহার তোন ঘুইরা আহি গা"। এই কথা শুনে আমি খুশি হবো কি! দুঃখের ঠেলায় নিজেকে ভিআইপির বদলে আবার সেই মীরগঞ্জের ব্ল্যাকার ভাইয়ের মতো মনে হতে লাগলো। রাজত্ব হারাবার ভয়ে, দুঃখে, ক্ষোভে মাথা এতই চুলকাচ্ছিলাম যে নিজেকে এখনকার দিনের কায়েস কাকা মনে হতে লাগলো। ভাগ্যিস চুলগুলো এখনো রয়ে গেছে!

অতঃপর যথারীতি ঘাটে আসলাম সন্ধ্যা ৭ টার দিকে। কিন্তু লঞ্চ কোথায়? ঘাটই বা কোথায়? সামনে বিশাল মেঘনা! শোঁ শোঁ বাতাস আর ছলছল কলকল পানির আর্তনাদ! খানিকবাদে সেই ছলছল কলকল শব্দ বিশাল অদ্ভুত শব্দে পরিণত হয়ে আছড়ে পড়ছে নদীর তীরে। যেন তীরের সাথে অদৃশ্য লড়াই! আমি কিছুটা আনমনা হলেও খুব খেয়ালী আর অদ্ভুত কিনা। ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিক্ষেপ করতে লাগলাম চারদিকে। রাস্তার দুই পাশে খান পাঁচেক চায়ের দোকান। কুঁপি জ্বালিয়ে হরদম বিক্রিবাট্টা হচ্ছে। রাস্তার দু'পাশে বিশাল জমি। সেখানে বসে অনেকেই এই সন্ধ্যার শীতল বাতাসে নিজেকে সমর্পণ করছে। বিশাল মেঘনার অশান্ত দাপটের শান্তময় তীরে!

দৃষ্টি গেলো আরেকটু দূরে ; একটা ইট ভাটা! আর কিছুই চোখে পড়ছে না। আব্বার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু দূরে চলে আসতেই চোখে পড়লো একটা কবরস্থান! কিছুটা ভয়ে শরীরটা শিউরে উঠলেও নেমপ্লেট দেখে তব্দা খেয়ে গেলাম। সেই তব্দার ভ্রম এতটাই যে কখন আব্বা পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেও সেটাও টের পেলাম না। তাকিয়ে দেখি বিশাল বাহুর অধিকারী ভয়ডরহীন লোকটার চোখে জল! কি হলো? ক্ষনিকবাদে আব্বার কন্ঠস্বর থেকে অস্বাভাবিক একটা বাক্য বেরিয়ে এলো "নদীর তীরে এই কবরস্থান হবার পর সমুদ্রের মতো বিশাল এই নদী আমাকে আর ডাকে না বাবা"!

আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে তখন এর অর্থ অনুধাবন করার ক্ষমতা না থাকলেও আব্বার মুখ থেকে সব শুনে তখনই পণ করেছিলাম; শৈশবের এই মেঘনা এই লোকটাকে কেন ডাকে না, কিসের দুর্বিষহ স্মৃতির টানে ডাকে না সেই গল্প বড় হয়ে কাউকে শোনাবো। অবশেষে শোনানোর মতো যথাযোগ্য লোক এবং জায়গাও পাওয়া গেলো। তবে অন্য কোনো একদিন শুনাবো হিজলা উপজেলার ইতিহাসে প্রথম কোনো লঞ্চ ট্র্যাজেডির গল্প, আপনজন হারানোর আর্তচিৎকারে মেঘনাপাড়ের আকাশ বাতাস ভারী হবার গল্প, অগুনতি বেওয়ারিশ লাশের গল্প!

আব্বার দিকে ভ্রম নিয়েই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি আর শুনছি লাশের মিছিলের গল্প। হঠাৎ কানে এসে শব্দতরঙ্গের ধাক্কা লাগলো "আয়া পড়ছে কোকো..ডায়রেক্ট ঢাকা..সবার শেষে ছাইড়া যায়া সবার আগে..কোকো..কোকো.."! শব্দতরঙ্গের সাথে হাতেও টান লাগলো। ভ্রমহীন হলো আমার চিন্তাশক্তি। আব্বার সাথে ঘাটের দিকে হাঁটছি আমি। দূর থেকে শুনতে পেলাম বাঁশির শব্দ অথচ একটু তীব্রতর। তবে কেন জানি শব্দটা খুব ভালো লাগলো। আমার জীবনে সেই প্রথম কোনো লঞ্চের হুইসেল শোনা। অদ্ভুত সেই শব্দটার সাথে দূরে উদয় হলো ক্ষুদ্রতর একটা আলো। ধীরে ধীরে যতই কাছে আসতে লাগলো ততই আলোটা বৃহত্তর হতে লাগলো অতঃপর চোখের সামনে উদয় হলো বিশাল মেঘনার বুকে ভেসে থাকা ছোট্ট এক অট্টালিকা। নাম "এম. ভি. যুবরাজ – ১"!

নদীর তীরে মাটির সাথে ঘাট করলো যুবরাজ। ঘাট করার সাথে সাথে অদ্ভুত এক দৃশ্য চোখে পড়লো আমার। সিড়ি নামানো বাকি অথচ ভীড় জমানো মানুষগুলোর উঠতে বাকি নেই! হুমমুড় করে উঠছে লোকজন। কেউ বা সিড়ির অপেক্ষা না করে লাফিয়ে লাফিয়ে পাশ দিয়েও উঠছে। বিষয়টা আমার মাথা ঠিক বুঝে উঠলো না "কতদিনের টান তাদের ঐ শহরের সাথে?"। আমি মন দিয়ে এই দৃশ্য দেখছি তো দেখছি। হঠাৎ পিছনে দেখলাম আরেকটা আলোর সেই একই হুইসেল! এবার অন্তত বুঝলাম যে আরেকটা আসতেছে এবং তার সাথে বেড়ে গেলো হাকডাক "কোকো…সবার আগে ডাইরেক্ট ঢা….."! বাকিটা শ্রবণ করার আগেই আব্বার সাবধানবানী "আমার হাত ধরে রাইখো বাবা"!

এরপর পিছন দিকে কিছুটা টান দিয়ে ডানে ঘুরে সোজাসুজি চলে গেলো যুবরাজ। নিচে তাকাতেই আমার চোখে পড়লো ত্রিভুজাকৃতির একটা গর্তের মতো। আমার ছোট্ট ব্রেইনে শুধু এটুকু চিন্তাই আসলো "জায়গাটাকে এমন করলো কেন? মাটিও তো কষ্ট পায়!' এসব ভাবতে ভাবতে ঘাট এসে ঠিক ওই ত্রিভুজাকৃতির জায়গাটাতেই ঘাট করলো আরেকটা জলমানব। এবার নামটা খেয়াল করলাম "কোকো -২"! সবার শেষে আব্বা আমাকে নিয়ে উঠলেন। ভিতরে গিয়ে তো আমার বিস্ময় যেন কাটতেই চায় না। এ যে আমাদের ঘরের মতো। আব্বা আমাকে নিয়ে উঠলেন ছোট্ট একটা রুমে। এখন বুঝি সেটার নাম 'কেবিন'!

ধীরে ধীরে মৌলভীরহাট ঘাট ছেড়ে পিছনে গিয়ে ডানে ঘুরিয়ে সোজা টান দিলো কোকো। আমি তাকালাম আমার মাতৃছায়ার পানে। ধীরে ধীরে পেছনে সরে যাচ্ছে সেই জ্বলতে থাকা কুপির আলোগুলো, ইটের ভাটা এবং কবরস্থান সাথে প্রকৃতি। দূরত্ব বাড়ছে মাতৃছায়ার সাথে। আব্বা আমাকে নিয়ে নিচে নামলেন। আমি এক পলক চোখ বুলিয়ে নিলাম ভিতরের দিকটায়। ধর্ম, বর্ন, জাত ভেদাভেদের অস্তিত্ব এখানে নেই। সবার লক্ষ্য এক, উদ্দেশ্য এক, জীবিকার অবলম্বন হয়তো ভিন্ন! এসব দেখতে দেখতে নিচ থেকে রিং চিপস কিনে আবারও কেবিনে ফিরে আসলাম আব্বার সাথে।

লঞ্চের সামনের দিকে বসে আছি। বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে। চারদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। ডানে ছোট্ট সেই কেবিন। ভিতরে হলদে আলো জ্বলছে। সামনে অথৈ জলের মহাসমুদ্র। যদিও অন্ধকারে দৃশ্যমান নয় তবুও অস্তিত্ব টের পাওয়া কঠিন কিছু নয়। বামে নদীর এপাশ। সেখানে কোথাও আলো জ্বলছে, কোথাও শোনা যাচ্ছে অদ্ভুত শব্দ, আবার দেখা মিলছে ছোট্ট ডিঙ্গীর। সব মিলিয়ে নিজেকে বেশ সুখী সুখী মনে হচ্ছিলো। আব্বাকে জানালাম একটু নিচে তাকাবো। তিনি শক্ত করে হাত ধরে বললেন "তাকাও"। আমার সামনে দৃশ্যমান হলো জলের বুক কেটে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বহনকারী কোকো -২। অদ্ভুত মনে হলেও জলযানটাকে আমার কাছে ঠিক যেন রাঁজহাসের মতো মনে হতে লাগলো।

হঠাৎ আমার মনে হলো, আরেকবার নিচে গিয়ে একটু ঘুরে আসি। কিন্তু সিড়ির কাছে গিয়ে থমকে গেলাম। পা ফেলার জায়গা নেই যেখানে সেখানে পা ফেলাটা অবান্তর। তারচেয়ে বরং এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত দৃষ্টিটা একবার নিক্ষেপ করলাম। নাহ! এবার আর মানুষগুলো এলোমেলো হয়ে নেই। যে যার সুবিধামতো বিছানা কিংবা চাদর পেতে গভীর ঘুমে মগ্ন, একদল লোক স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে গোল হয়ে বসে তাস খেলছে, দাঁড়িয়ে সেটা উপভোগের দর্শকেরও অভাব নেই। বিনা টিকিটে বিনোদনের উত্তেজনার অংশীদার হতে কেইবা না চায়! কেউবা বসেছে লুডু নিয়ে, একপাশে হরদম চা বিক্রি হচ্ছে, ভাত বিক্রি হচ্ছে, আবার কেউবা বাসা থেকে নিয়ে আসা খাবার খাচ্ছে।এক লোককে দেখলাম, জানালার মতো বড় জায়গাটায় বসে হেলান দিয়ে নদীর দৃশ্য দেখছে আর একটু পর পর চোখ বুঝে বিড়িতে টান দিচ্ছে। বিষয়টি আমার কাছে হাস্যকর লাগলো অথচ এই একটি রাত আবার কতদিন পর পাবে সেটা ঐ লোকটা নিজেও জানে না। তাই এই ক্ষতিকর জিনিসটাও তার জন্য আজ সুখের বস্তু। দৃশ্যগুলো দেখে আমার মনে হলো, এরা এই একটি রাতের জন্য জগতের সবচেয়ে সুখী মানুষ। আবার আফসোসও হলো এদের দলের অংশীদার হতে না পারায়।

তখন কেবিনে ফেরার জন্য উঠতে যাবো, চোখে পড়লো লাল রংয়ে সিড়ির গায়ে লেখা 'প্রথম শ্রেনীর সিড়ি'! কিছুটা খটকা লাগলো "তবে ডেকে বসা এরা কোন শ্রেনী?" ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝতে সময় লাগলো আরো প্রায় এক যুগের মতো। মীরগঞ্জের সেই ব্ল্যাকারের দলে এরা, বর্তমানের এই আমি'র দলের এরা, এরা নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখা বিশাল নদীর বুকে জলের মায়ায় সওয়ার হওয়া তৃতীয় শ্রেনীর পথিক। উচ্চবিত্তের বিলাসীতায় মুখ ফিরানো স্বল্পের বিলাসিতায সুখ খুঁজে নদীর বুকে এক রাতের জীবন উপভোগের নেশায় মত্ত এরা! এরা নিজেদের রাজ্যে রাজাধিরাজ 'থার্ডক্লাস'!

সিড়ির ঐ লেখা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কেবিনের সামনে এসে দেখি অবাক করা দৃশ্য। লঞ্চ তখন মেঘনার বুক পাড়ি দিয়ে উত্তাল ত্রি-নদের বুকে। আমি দেখলাম, একটা চেয়ারে বসে রেলিংয়ে পা তুলে শুভ্র সাদা পাঞ্জাবী গায়ে এক লোক বসে আছে। শোঁ শোঁ বাতাসের তীব্রতা থেকে তীব্রতর শব্দের সাথে কানে এসে ধাক্কা লাগলো আরো একটা গুনগুন করা মধুর কন্ঠ! বিশাল নদীর বুকে সওয়ার হয়ে শূন্যতে দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে গান ধরেছেন যৌবনের চূড়ান্ত সীমানায় পর্দাপণ করা এক লোক, আমার আব্বা।

"সাজাইতে সাজাইতে ডিঙ্গা সাজাইয়া ফেলিলো
মদনকুমারও ডিঙ্গায় উঠিয়া বসিলো……
ওরেএএএএ…মদনকুমারও রেএএএএএ….."

আমি এসে কখন যে তার পাশে দাঁড়িয়েছি সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। কলকল ছলছল শব্দের মায়ায় জলদানবের গায়ে ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার সাথে তার কন্ঠও যেন আরো মায়াবী হয়ে উঠলো। এই রাত যে জীবনের গল্পের একটা অংশের, এই অশান্ত নদীর বুকে কাটিয়ে দেয়া স্মৃতিময় সুখের উল্লাসের! এই রাতে প্রকৃতির মায়ায় নিজেকে সঁপে দেয়া ছাড়া আর কোনো রূপকথা নেই, থাকতে পারেও না।

ঠিক এত বছর পর এসে জীবনের গল্পের অতীতের একটা অংশে যখন ফিরে যাই তখন সবার আগে স্মৃতির পাতায় এসে ভীড় করে আমার শৈশব। আমার শৈশব স্মৃতি! সেই প্রথম দেখা যুবরাজ, উত্তাল মেঘনার জীবন, তৃতীয় শ্রেনীর সেই স্বল্প সুখবিলাসী মানুষগুলোর গল্প, নদীর জল আর প্রকৃতির মায়ায় নিজেকে সঁপে দেয়া আমার বাবার কন্ঠ, ত্রিমোহনার উত্তাল ঢেউকেও তাচ্ছিল্যতায় ভাসিয়ে নিশ্চিন্তে উপভোগ করে একটা তাস তুলে উল্লাসে মেতে ওঠা সেই মানুষগুলোর গল্প কিংবা নদীর বুক জুড়ে চিরকাল বহমান শান্তির নীড়!

বিঃদ্রঃ মীরগঞ্জের বিখ্যাত ব্ল্যাকার ভাই এখন আর থার্ড ক্লাসের যাত্রীদের মাঝে মিশে নিজের সময় নষ্ট করেন না। টিকিট ব্ল্যাকের ব্যবসা করে এখন তিনি এসিওয়ালা কেবিনে যাতায়াত করেন। শরীরের প্রয়োজনে আরো অতিরিক্ত দু'টি ফ্যান তার জন্য বরাদ্দ থাকে। টিকিট ব্ল্যাকার থেকে এখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের ফিল্মপাড়া টালিগঞ্জের পরিচিত মুখ "ব্ল্যাকার হাসান"।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top