বন্ধুরা, আপনাদের নিত্য দিনের অনুভূতির খোঁড়াক যোগাতে আমরা হাজির হয়ে যাই দারুণ সব রহস্য রোমাঞ্চ-পূর্ণ ঘটনা নিয়ে। তবে আজ কোন ঘটনা নয়। নিয়ে এসেছি দারুণ একটা গা শিউরানো হরর গল্প। আজকের গল্পের নাম ফাঁদ (হরর ছোটগল্প)। গল্পটি লিখেছেন এই সময়কার জনপ্রিয় লেখক নাজিম উদ দৌলা। তাহলে আর দেরি না করে চলুন গল্পটা শুরু করা যাক।
———————-
ফাঁদ – নাজিম উদ দৌলা
রাত বাজে বারোটা, রাস্তায় মানুষ জন নেই বললেই চলে। রিস্কা- সিএনজিও সংখ্যায় কম। কিন্তু সুযোগ পেয়ে ফুল স্পিডে চলছে বাস, ট্রাক আর প্রাইভেট কার। স্টপেজে বাস থামতেই নেমে পড়লাম আমি। আজকে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে।
রাস্তা পার হতে গিয়ে খেয়াল করলাম এক ষাটোর্ধ বয়স্ক মহিলা রাস্তা পার হতে পারছেন না। দুই তিন পা আগাচ্ছেন, কিন্তু দূর থেকে ফুল স্পিডে গাড়ি আসতে দেখে আবার পিছিয়ে আসছেন। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলছে এই অবস্থা! কিছুতেই তিনি পার হতে পারছেন না! আমার খুব খারাপ লাগল।
আমি দৌড়ে গেলাম তার দিকে। কাছে দাঁড়িয়ে বললাম, "ও নানি? রাস্তা পার হতে পারছেন না?"
বৃদ্ধা আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা করে বললেন, "না বাবা! অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করতেছি। এত জোরে জোরে গাড়ি আসতেছে! আমার সাহসে কুলাচ্ছে না"।
"তা তো দেখতেছি"। আমি আফসোসের ভঙ্গিতে বললাম, "কিন্তু আপনি এত রাতে একলা বাইরে কেন?"
"আসছিলাম একটু দোকানে, পান কিনতে?"
"আপনি আসছেন কেন? বাড়িতে কেউ নাই?"
"না বাবা"। বৃদ্ধা না-বোধক মাথা নাড়লেন। "সবাই গেছে বেড়াতে, আজকে আর ফিরবে না! আমি বাসায় একাই আছি"।
আমার খুব খারাপ লাগল মহিলার জন্য। আমার দাদি – নানি দুজনেই পরলোক গমন করেছেন আমার জন্মের পূর্বে। বন্ধুদের কত দেখি দাদি নানিদের সাথে মজার মজার কান্ডের কথা বলে! আমার বলার মত কিছু নেই!
আমি ভাল করে বৃদ্ধার দিকে তাকালাম। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন মহিলা। গায়ের চামড়া গুঁটিয়ে গেছে। মাথার চুল সব সাদা। ভীষণ রোগা। কিন্তু চেহারায় খুব মায়া। হঠাৎ এই মহিলাকে আমার খুব আপন লাগতে শুরু করল আমার।
"চলেন নানি, আমি আপনাকে পার করে দিচ্ছি"।
মহিলার মুখ দেখে মনে হল একশ ওয়াটের বাল্ব জ্বলে উঠল। হাসিতে বেরিয়ে পড়ল ফোকলা দাঁত। বললেন, "তাহলে তো খুব উপকার হয় বাবা"।
মহিলার হাত ধরে সাবধানে রাস্তা পার হতে লাগলাম। বৃদ্ধার শরীরে এক ফোঁটা জোর নেই। আমার হাত শক্ত করে ধরে ভয়ে ভয়ে পা ফেললেন। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগল রাস্তা পার হতে।
পার হয়ে আসার পর মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললেন, "থ্যাংক ইউ"।
আমিও "ওয়েলকাম" বলে হাত ছাড়িয়ে নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম মহিলা আমার হাত ছাড়ছেন না!
"কি ব্যাপার নানি?" আমি জিজ্ঞেস করলাম। "রাস্তা তো পার হয়েছেন। এবার বাসায় চলে যান!"
মহিলার মুখের হাসি কেমন যেন বলদে গেল। টিটকারির সুরে বললেন, "শুধু পান খেলেই হবে? রাতের খাবার খেতে হবে না? খুব খিদে পেয়েছে যে!"
"মানে কি? কি বলতে চাইছেন আপনি?"
মহিলা কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিল। তারপর একটা অন্ধকার গলির ভেতর টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
আমি হতবাক হয়ে লক্ষ করলাম মহিলার শীর্ণ হাত আমার হাতে সাঁড়াশির মত চেপে বসেছে। এই হাতের বাঁধন ছাড়ানোর শক্তি আমার নেই! বিস্ময়ে আমি চিৎকার করতেও ভুলে গেলাম। আর চিৎকার করেই বা কি হবে? দুই এক মাইলের মধ্যে কোন পথচারী দেখছি না!
আমি আতংকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় ধরে নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?"
বৃদ্ধা কোন জবাব দিলেন না। তার হাসিটা আরো চওড়া হওয়ায় মুখের দু'পাশে বেরিয়ে এসেছে দুটো জান্তব দাঁত! হিস হিস করে বলল, "দুই দিন ধরে না খেয়ে আছি, ঝামেলা করিস না তো!
এবার আমি স্পষ্ট বুঝতে পারলাম সব! না বুঝে এক পিশাচের ফাঁদে পা দিয়েছি, আজ রাতে তার পেটের খাবার হতে হবে আমাকে…
——- সমাপ্ত ——-