What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected খুন (থ্রিলার ছোটগল্প) (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,263
Messages
15,953
Credits
1,447,334
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
Aihp2MH.jpg


খুন (থ্রিলার ছোটগল্প) - By Nazim Ud Daula

আমি যদি প্রচন্ড রাগের বশে একটা খুন করে বসি, তাহলে কি আমি খুন খারাবীতে আসক্ত হয়ে যাব? আমার কি নেশা হয়ে যাবে? কিন্তু আমার তো খুব বেশি খুন করার দরকার নেই! কেবল একটা খুন করলেই হবে! একটা খুন করলেই আমার বুকের ভেতরের সমস্ত জ্বালা নিভে যাবে!

কাকে খুন করব?
খুন করব আমার বাসার বাড়িওয়ালা, রফিক মিয়া কে।
কেন খুন করব?
সেটাই বলছি এখন…

আমাদের বিল্ডিংটা ছয় তালা। আমরা থাকি নিচতলায়। বাড়িওয়ালা থাকে তিন তালায়। বাড়িওয়ালা রফিক মিয়া আর আমার বাবা ছিলেন বন্ধু। সেই সূত্রে দুই ফ্যামিলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বাড়িওয়ালার দুই ছেলে-মেয়ে তান্না আর আনিকা আমার সমবয়সী, সেই সূত্রে আমাদের মাঝেও খুব ভাব। কিন্তু সমস্ত ভাব উধাও হয়ে গেল একটা ঘটনা ঘটার পর।

গত বছরের শুরুর দিকে জনাব রফিক আমাদের বাসায় এলেন। দরজা আটকে বেশ কিছুক্ষণ গোপন সলা-পরামর্শ করলেন আমার বাবার সাথে। পরে বাবার মুখে শুনলাম বাড়িওয়ালা এসেছিল টাকা ধার চাইতে। কি একটা নতুন বিজনেসে নেমেছেন রফিক মিয়া। অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হচ্ছে। তাই বাবার কাছে ধার চেয়েছে। দুই চার পাঁচ হাজার নয়! পাক্কা পঞ্চাশ হাজার টাকা! আমি একটু আপত্তি করলাম। সামান্য মুখের কথায় এতগুলো টাকা ধার দেয়া উচিত নয়। কিন্তু আমার দয়াময় পিতা সরল মনে টাকাটা দিয়ে দিলেন বাড়িওয়ালাকে। হাজার হোক, বন্ধু বলে কথা! কিন্তু তখনো আমরা জানতাম না, কি অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য!

এই ঘটনার সাত-আট মাস পর আমাদের পরিবারে নেমে এল ভয়ংকর এক অভিশাপ- বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ল। লাস্ট স্টেজ! আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল! সুস্থ সবল মানুষ দুদিন হল অসুস্থ হয়েছে, কাশির সাথে সামান্য একটু রক্ত আসছে- আর ডাক্তাররা বলে কি না ক্যান্সার! আয়ু আছে আর কেবল তিন মাস? এ কি করে সম্ভব? কিন্তু একটা সময় পর ভাগ্যকে মেনে নিতে হল। বাবার শারীরিক অবস্থা দিন কে দিন খারাপ হতে থাকল। পুরোপুরি বিছানায় পড়ে গেলেন, হাসপাতালে ভর্তি করতে হল।

বাবার চিকিৎসার জন্য তখন পানির মত টাকা খরচ হচ্ছে। জমানো টাকা ফুরিয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যে। আমার খেয়াল হল- বাড়িওয়ালার কাছে পাওনা টাকাটা আদায় করা দরকার! রফিক মিয়ার কাছে গিয়ে উপস্থিত হলাম। খুব বিনয়ের সাথে বাবার পাওনা টাকাটা ফেরত চাইলাম তার কাছে। কিন্তু তার জবাবে রফিক মিয়া যে কান্ড করল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না!

লোকটা স্ট্রেট বলে দিল – "কিসের টাকা? আমি কোন টাকা নেইনি তোমার বাবার কাছ থেকে"।

"নেন নি মানে?" আমি তো হতবাক! "মাস ছয়েক আগে আপনি নিজে আমাদের বাসায় এসে টাকা চেয়ে নিয়ে গেলেন"।

লোকটা টিটকারী করার ভঙ্গিতে হেসে উত্তর দিল, "তাই নাকি? মনে পড়ছে না যে!"

আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, "আংকেল প্লিজ! আমার বাবা হাসপাতালে, বেশিদিন বাঁচবেন না! ডাক্তাররা সব আশা ছেড়ে দিয়েছেন। শেষ চেষ্টা হিসেবে আমরা তার চিকিৎসা করছি। প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে! এই অবস্থায় আপনি বন্ধু হয়ে এমন নির্দয়ের মত আচরণ করবেন না!"

"হ্যা, ঠিক আছে"। রফিক মিয়া হ্যা-বোধক মাথা নেড়ে বললেন। "তোমার বাবা হাসপাতালে, টাকা পয়সা দরকার বুঝি। দুই এক হাজার টাকা ধার দিতে পারি তোমাকে। কিন্তু বানোয়াট কাহিনী ফেঁদে পঞ্চাশ হাজার টাকা চাইছ, সেটা কেমন কথা?"

রাগে দুঃখে আমার চোখে পানি চলে এল! নিজেকে এতটা অসহায় আগে কখনও লাগেনি আমার! "আমি… আমি… আমি পুলিশের কাছে যাব। আমার বাবার কষ্টের টাকা এভাবে মেরে দিয়ে ভেবেছেন পার পেয়ে যাবেন? তা কখনো হবে না!"

"পুলিশের কাছে যাবে? ঠিক আছে যাও!" রফিক মিয়ার ঠোঁট বাকিয়ে হাসছেন। "কি প্রমান আছে তোমার কাছে যে আমি টাকা নিয়েছি?"

আসলেই তো! আমার কাছে কোন প্রমাণ নেই। বাবা মুখের কথায় বিশ্বাস করে বন্ধুকে ধার দিয়েছিলেন। কোন ডকুমেন্টস রাখেন নি! মানুষকে বিশ্বাস করার চরম মাশুল দিতে হবে এবার তাকে। মাথা নিচু করে রফিক মিয়ার সামনে থেকে চলে আসা ছাড়া আমার কোন উপায় থাকল না।

তারপরও আমি হয়ত পুলিশের কাছে যেতাম। ব্যাপারটার একটা হেস্ত নেস্ত করেই তবে ছাড়তাম। কিন্তু সে সুযোগ আমার আর হলো না। চিকিৎসার অভাবে বাবার অবস্থা আরও খারাপ হলো। একরাতে জমে মানুষে ভীষণ টানাটানির পর জমের জয় হল। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

বাবা মারা যাওয়ার পর কয়েক মাস পেরিয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে মায়ের চোখের জল। বুকের ভেতরের হাহাকার চাপা পড়েছে সময়ের কঠিন পাথরের নীচে। কিন্তু আমার মনের ভেতর ধিকি ধিকি আগুন তখনো জ্বলছিল! প্রতিশোধের আগুন! রফিক মিয়া কষ্টের দিনে বেঈমানি করেছে আমাদের সাথে। এর মাশুল তাকে দিতেই হবে!

লোকের মুখে রফিক মিয়ার অনেক বদনাম শুনেছি আগেও। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে লোকটা যে তার বন্ধুর সাথে বেইমানী করে বসবে, তা ছিল আমার অচিন্তনীয়! এটা ঠিক যে, রফিক মিয়া যদি টাকাটা ফেরত দিতেন, তারপরও বাবাকে হয়তো বাঁচানো যেত না। কিন্তু বুকে তো একটু বল পেতাম! আরও অন্তত কিছুদিন বাবার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারতাম ঐ টাকা দিয়ে! আরও অন্তত কিছুদিন "বাবা" বলে ডাকার সুযোগ পেতাম আমি! যার সব গেছে তার জন্য এইটুকুও তো অনেক! আজ আমি বাবার ছবি হাতে নিয়ে চিৎকার করে ডাকি বাবাকে, কিন্তু বাবার ছবি তো কোন জবাব দেয় না!

অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি- খুন করব! খুন করব বাড়িওয়ালা রফিক মিয়াকে! আমার পিতা অসহায় অবস্থায় বিছানায় ছট ফট করে মারা গেছেন, আর সে এত বড় বেঈমানি করেও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে! আমি অন্তত তা হতে দেব না! কিছুতেই না!
এখন নিশ্চয়ই আমাকে আর উন্মাদ মনে হচ্ছে না? এখন নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পারছেন আমি কেন খুন করার মত এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি?

এখন প্রশ্ন হল – খুনটা কীভাবে করব? এমন ভাবে করতে হবে যেন কাকপক্ষীও টের না পায়! আমার বয়স কেবল পঁচিশ। এখনও একটা প্রেম করতে পারলাম না! এই বয়সে কাউকে খুন করে ফাঁসির দড়িতে ঝোলা কিংবা আজীবন জেলের ভাত খাওয়ার কোন ইচ্ছেই আমার নেই! তাই গত কিছুদিন যাবত আমি বাড়িওয়ালার গতিবিধি লক্ষ করছি। সে কোথায় যায় , কি করে, রুটিন কি। এবং সুযোগ টা পেয়ে গেছি অনায়াসেই!

ইদানীং আমদের বাড়িওয়ালার অদ্ভুত এক বাতিক হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি করার জন্য ছাদে ওঠেন তিনি। এই সময় সাধারণত ছাদে কেউ থাকে না। রফিক মিয়া ছাদের এই মাথা থেকে ওই মাথা পর্যন্ত পায়চারি করে, তার হাতে থাকে একটি কাগজ। কাগজ থেকে কি যেন বিড় বিড় করে পড়ে সে। একদিন লুকিয়ে শুনেছি রফিক মিয়া কি করে। সে আসলে কাগজ দেখে দেখে কবিতা আবৃত্তি করে! সম্ভবত স্বরচিত কবিতা! রাগে গায়ের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে গেল আমার। আমার বাবা অন্ধকার কবরে শুয়ে আছেন আর এই লোক বাবার টাকা দিয়ে বিজনেস করে টাকা কামিয়ে পোলাও কোর্মা খেয়ে ভুঁড়ি বানাচ্ছে! এখন আবার কবিতা পাঠ করাও হচ্ছে!

আমি বুঝতে পারলাম- এই কবিতা পড়ার টাইমেই মারতে হবে রফিক মিয়াকে। এই সময়ে তার কোন হুশ জ্ঞান থাকে না। পায়ে পায়ে পেছনে গিয়ে দাঁড়ালে কিচ্ছু টের পাবে না। রেলিং এর কাছাকাছি যাওয়ার পর পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলেই শূন্যে উড়াল দেবে তার দেহ। পড়বে গিয়ে বাড়ির সামনের রাস্তায়! এত উপর থেকে পড়লে পর বাঁচার সম্ভবনা দশমিক পাঁচ ভাগেরও কম। যদি ল্যাংরা লুলা অবস্থায় বেঁচেও থাকে রফিক মিয়া, তাকে দুই বেলা ঐ অবস্থায় দেখে বেশ তৃপ্তি পাব!

আজ সেই দিন!

আজ খুন করব রফিক মিয়া কে! আজ বুকের ভেতর ধিকি ধিকি জ্বলা আগুন নিভে যাবে আমার। এখন সময় সন্ধ্যা ৬ টা। রফিক মিয়া রোজকার মত স্বরচিত কবিতার কাগজ হাতে ছাঁদে পায়চারি করছে আর বিড় বিড় করে কবিতা আবৃত্তি করছে। আমি সিঁড়ি ঘরের কাছে লুকিয়ে বসে আছি সুযোগের অপেক্ষায়।

রফিক মিয়ার পায়চারির স্পিড বেড়েছে। ঘন ঘন দম ফেলছে। চারিদিকে কি ঘটছে, হুশ নেই তার। সুযোগটা চিনতে আমার ভুল হল না! পা টিপে টিপে হেঁটে গিয়ে রেলিং এর যতটা সম্ভব কাছাকাছি দাঁড়ালাম। এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! রফিক মিয়া কাছে আসতেই গায়ের সব জোর এক করে মারলাম ধাক্কা! পঁচিশ বছরের একজন সুঠাম দেহের অধিকারী যুবকের ধাক্কা খেয়ে একজন পঞ্চাশ বছরের বয়স্ক ব্যক্তির তাল সামলাতে পারার কথা নয়! রফিক মিয়াও তা পারলেন না! তার দেহটা রেলিং টপকে উড়ে গেল। শেষ মুহূর্তে এক সেকেন্ডের সিকি ভাগের এক ভাগ সময়ের জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন রফিক মিয়া। তার চোখে ভয় আর আতংক মেশানো মিশ্র অনুভূতি।

মাটির টানে পড়ে যাচ্ছে রফিক মিয়া। প্রতি মুহূর্তে পতনের গতি বাড়ছে। প্রথমে তার দেহটা গিয়ে পড়ল চার তলার বারান্দার সানসেটের উপর। সাথে সাথে "মড়াৎ" করে ঘাড় ভাঙল তার। এরপর দেহটা গড়িয়ে আবার পড়তে থাকল। বাড়ির সামনের রাস্তায় আছড়ে পড়ার আগেই মৃত্যু হয়েছে তার। আমি উঁকি দিয়ে দেখলাম- রফিক মিয়ার দেহটা দুমড়ে মুচড়ে স্তূপাকারে পড়ে আছে। কেউ দেখেনি! কাক-পক্ষীও টের পায়নি! তৃপ্তির হাসি ফুটল আমার মুখে! প্ল্যান সাকসেসফুল!

আমাদের গলিটা নির্জন। রফিক মিয়ার লাশ আবিস্কার হতে আরও সময় লাগবে। কিন্তু এখানে আর আমার থাকাটা ঠিক হচ্ছে না! ধরা খেয়ে যেতে পারি। আমি দ্রুত সরে গেলাম রেলিং এর কাছ থেকে। সিঁড়ি ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি- তখন রফিক মিয়ার কবিতার কাগজটার উপর চোখ পড়ল আমার। ধাক্কা খেয়ে পড়ার সময় হাত থেকে কাগজ টা ছুটে গিয়েছিল তার। এখন ছাঁদের উপরেই বাতাসে গড়াচ্ছে। আমার কৌতূহল হল- দেখি তো কি কবিতা লিখত লোকটা!

এগিয়ে গিয়ে কাগজটা হাতে তুলে নিলাম আমি। চোখের সামনে মেলে ধরলাম। দিনের আলো শেষ হয়ে এসেছে। পড়া যাচ্ছে না! অতি কষ্টে চোখ কুঁচকে পড়ার চেষ্টা করলাম- ওকি! এটা তো কবিতা নয়। গোটা গোটা অক্ষরে অল্প কয়েকটা লাইন লেখা-

লোভের ফাঁদে পা দিয়ে আমার সব শেষ হয়ে গেছে! বিজনেস করে শর্টকাটে বিরাট বড়লোক আশায় যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে দিয়েছি। বিশ লাখ টাকা ধার করেছি মানুষের কাছ থেকে। বাড়ি বন্ধক দিয়ে টাকা এনেছি ব্যাংক থেকে। কিন্তু বিজনেসে বিরাট লস খেয়ে আমি আজ পথের ফকির। বাইরে বের হলে পাওনাদাররা জেঁকে বসে। কয়জনকে বুঝ দেব? আমার কাছে একটা কানা কড়িও নেই আর। আগামীকাল ব্যাংকের লোকেরা এসে বাড়ির দখল নেবে। আমার চোখের সামনে আমার ছেলে মেয়েগুলোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে বাড়ি থেকে। বাবা হয়ে আমি তা দেখতে পারব না! তাই আমি সব ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য শুধুমাত্র আমিই দায়ী, আর কেউ নয়!

— রফিক মিয়া

আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কাগজ ধরা হাত দুটো কাপছে আমার! চোখের সামনে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে…

——– সমাপ্ত ——–
 

Users who are viewing this thread

Back
Top