গানস অফ বরিশাল বা বরিশাল গানস শব্দগুলো আপনারা ইতিপূর্বে শুনেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসের অমীমাংসিত রহস্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। কিন্তু এই বিষয়ে বিস্তারিত খুব কম মানুষই জানেন। তাই আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে আনার চেষ্টা করবো গানস অফ বরিশাল আসলে কি, এটি ঘটার পেছনে সম্ভাব্য কি কারণ থাকতে পারে এবং কেন এই রহস্যের সমাধান আজও হয়নি।
পৃথিবীর ইতিহাসে বেশ কিছু রহস্যময় বিস্ফোরণের কথা উল্লেখ আছে। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করে চারিদিক কাঁপিয়ে প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ ঘটেছে মাটির অভ্যন্তরে, মাটির উপরিভাবে অথবা বায়ুমন্ডলে। আর পৃথিবীর মানুষ হতবাক হয়ে সেই ঘটনার সাক্ষী থেকেছে। এই সব বিস্ফোরণের ঘটনার কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এতটুকু নিশ্চিত যে এই ঘটনার জন্য মানুষ দায়ি নয়। এমন এক রহস্যময় বিস্ফোরণের সাক্ষি হয়ে আছে বাংলাদেশের বরিশাল জেলার মানুষেরা। ইতিহাসে জাকে বলে হয়ে থেকে বরিশাল গানস বা গানস অফ বরিশাল। আজ আমরা সেই রহস্যময় বরিশাল গানস সম্পর্কে জানবো...সাথেই থাকুন।
গানস অফ বরিশাল
গানস অফ বরিশাল বলতে ঊনবিংশ শতাব্দীতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ঘটা বিকট কিছু শব্দকে বোঝায়। এ ধরনের অব্যাখ্যেয় শব্দগুলোকে একত্রে বলা হয় মিস্টপুফার্স।
ব্রিটিশদের আগমনের প্রায় একশো বছর পরের কথা। সে সময় বরিশালের পূর্বনাম ছিল নাম ছিল বাকেগঞ্জ। এক নিস্তব্ধ দুপুরে চারিদিক কাপিয়ে ভেসে প্রচন্ড এক বিস্ফোরণের শব্দ। সমস্ত বরিশালের মানুষ শুনতে পেল সে শব্দ। সবার ধারণা ছিল বিশাল আকৃতির শক্তিশালি কোন কামান থেকে গোলা বর্ষণের আওয়াজ ছিল এটা। আওয়াজের স্থান ছিল বরিশালের কাছ থেকে সাগরের তীরবর্তী অঞ্চল। এখানে চারদিকে ছিল শুধু ঘন বন। সেই বনের উপরিভাগে বায়ুমন্ডলে একদিন ঘটে প্রচন্ড বিস্ফোরণ। সেই বিস্ফোরণের আওয়াজে কেপে উঠে বাড়িঘর, স্থাপনা আর পায়ের নিচের মাটি। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই প্রকট ছিল যে, আশে পাশের কয়েকটা শহরের মানুষও তা শুনতে পেয়েছিল। বেশ কিছুক্ষন হল সেই শব্দ। মানুষ জন ভয়ে শিউরে উথলো বার বার। তারপর সব চুপ।
কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়! পরদিন আবার ঠিক একই সময়ে শুরু হোল কামান দাগার আওয়াজ। চলতে থাকল অনেকক্ষণ। এভাবে প্রায়ই এখানে জোরে জোরে বিস্ফরন হওয়ার শব্দ পাওয়া যেত। কিন্তু এর কারণ কেউ জানতে পারেনি। বাকেরগঞ্জের ততকালীন ব্রিটিশ সিভিল সার্জন প্রথম ঘটনাটা লেখেন। বর্ষা আসার আগে আগে গভীর সাগরের দিক থেকে রহস্যময় কামান দাগার আওয়াজ আসতো। ব্রিটিশরা সাগরে জলদস্যু ভেবে খোঁজাখুজি করেও রহস্যভেদ করতে পারে নাই।
গানস অফ বরিশাল এর মতো আরও কিছু ঘটনা
১৮৭০-এর দিকে প্রথম বারের মত বরিশাল গানসের কথা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই এটি শোনা যেত বলে নথিপত্রগুলোতে উল্লেখ করা হয়। ১৮৮৬ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির হিসাব অনুযায়ী খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, হরিশপুর প্রভৃতি স্থানে বরিশাল গানস শোনা গেছে।
বরিশালের মত ভারতের গঙ্গা নদীর তীর, যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, জাপান, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর সাগরসহ আরও কিছু এলাকায় এ ধরনের শব্দ শোনা গেছে।
কি ছিল এই রহস্যের পেছনে?
এ ধরনের শব্দের সঠিক কারণ এখনো খুঁজে বের করতে পারেননি গবেষকরা। তবে বিজ্ঞান এ ধরনের বিস্ফোরণকে স্বীকৃতি দেয়। প্রাকৃতিক কারণেই এ ধরনের বড় আকারের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলেছেন অনেকেই। কিন্তু কোন ব্যাখ্যাই রহস্যপ্রিয় মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি।
বরিশাল গানস নিয়ে এই ছিল আমাদের আজকের প্রতিবেদনে। আগামিতে অন্য কোন রহস্যময় ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করব। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন সবাই।