What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ট্রয় যুদ্ধের লোমহর্ষক কাহিনী – ট্রয় নগরী ধ্বংসের ইতিহাস (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
RkY6x1R.jpg


গ্রিক মিথোলজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন অংশ – ট্রয় যুদ্ধ ও ট্রয় নগরী ধ্বংস হওয়ার কাহিনী। এই যুদ্ধ সম্পর্কে আমরা অনেকেই কম বেশি জানি। কিন্তু এর পেছনের চমকপ্রদ ইতিহাসটি অনেকেরই অজানা। তাই পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজন- ট্রয়ের যুদ্ধ।

ট্রয়ের যুদ্ধ

প্রাচীন এশিয়া মাইনরে (বর্তমানে তুরস্কের আনাতোলিয়া রাজ্য) ছিল ট্রয় নামক এক নগরী। এই ঐতিহাসিক ট্রয় নগরীর রাজা ছিলেন প্রিয়াম এবং রাণীর নাম ছিলেন হেকবা। তাদের আদরের পুত্রের নাম ছিল প্যারিস। এই প্যারিসই ছিল মুলত ট্রয় যুদ্ধের পেছনে মুল হোতা। রাজপুত্র প্যারিস, গ্রিসের স্পার্টা রাজ্যের রাজা মেনেলাস এর স্ত্রী হেলেন এর প্রেমে পড়ে যান। তারপর তিনি হেলেনকে নিয়ে ট্রয়ে পালিয়ে আসেন। এর ফলে শুরু হয় স্পার্টা আর ট্রয়ের মধ্যকার সেই যুদ্ধ! এই কাহিনি এতোটাই চমকপ্রদ এবং রোমাঞ্চকর যে, গ্রিক সাহিত্য এবং রোমান সাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ট্রয়ের যুদ্ধ। আপনারা নিশ্চয়ই মহাকবি হোমারের নাম শুনেছে। তার দুটো মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসির কারনে এই রোমান্টিক ট্র্যাজেডি অমর হয়ে আছে। এরপর আরও অনেক বিখ্যাত কবি ট্রয়ের যুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন। এদের মদ্ধে আছেন গ্রিক কবি হেরোডোটাস, সোফোক্লেস এবং রোমান কবি ভার্জিল আর ওভিড। তাদের এসব লেখার মধ্যমেই আমরা জানতে পারি হেলেন, প্যারিস, অ্যাকিলিস, হেক্টর, আগামেমনন, অডিসিয়াস এবং অ্যাজাক্সের মত ট্রয়ের যুদ্ধের সাথে জড়িত অন্যান্য চরিত্রগুলো সম্পর্কে কাহিনি।

WyHeGdE.jpg


ট্রয় যুদ্ধের কারন

আগেই বলেছি ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস আর স্পার্টা রাজ্যের রানি হেলেনের মধ্যকার প্রেমের কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- প্রেম না হয় হয়েছে, কিন্তু কীভাবে প্যারিস হেলেনকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্ররোচনা পেল? রাজার প্রাসাদ থেকে একজন রাণীকে নিয়ে পালানো তো চাট্টিখানি কথা নয়! তাছাড়া এটা কোনো জোরপূর্বক অপহরণের ঘটনাও ছিল না। রানি নিজেই প্যারিসের হাত ধরে প্রাসাদ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কেন রানী এটা করতে গেলেন? আর কেনই বা লাগলো এই যুদ্ধ?

ট্রয় যুদ্ধের সঠিক কারন নিয়ে বিভিন্ন মত চালু রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, গ্রিক মিথোলজিতে বলা হয়েছে – পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো। ফলে দেবতাদের প্রধান যিউস চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন জনসংখ্যা কমিয়ে আনতে। আর এজন্যই একটি যুদ্ধ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা তার মাথায় আসে। সেখান থেকেই ট্রয় যুদ্ধের সূত্রপাত।

তবে, হোমারের লেখায় মূলত ফুটে উঠেছে – প্যারিস আর হেলেন এর ভালোবাসার কাহিনী। হেলেন প্যারিসকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলেছিল যে স্বামী মেনেলাসকে আর স্পার্টার রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যেতে বাঁধেনি তার। তাই তো সে ট্রয় নগরীর রাজপুত্রের সাথে পালিয়ে যায়। কিন্তু এমন শক্তিশালী এক রাজ্যের রাণী আরেকজনের হাত ধরে পালিয়ে যাবে, আর রাজা বসে বসে আঙুল চুষবে? তা তো হয় না! তাই মেনেলাস তার সমস্ত শক্তি নিয়ে ট্রয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরলেন। প্রায় দশ বছর স্থায়ী ছিল সেই যুদ্ধ। এর ফলস্বরূপ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ঐতিহাসিক ট্রয় নগরী!

নিশ্চই আপনার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে- কিভাবে হেলেন ও প্যারিসের মধ্যে ভালবাসা হয়েছিল, আর কিভাবে তারা পালিয়ে যাওয়ার সাহস পেল? এবার আসছি সেই ঘটনায়…

ট্রয় যুদ্ধের পেছনের ইতিহাস

ট্রয় যুদ্ধের ইতিহাস জানতে হলে মর্ত থেকে ফিরে যেতে হবে স্বর্গে। গ্রিক পুরানের কাহিনী অনুযায়ী একবার তিনজন গ্রিক দেবীর মধ্যে ঝগড়ার হয়েছিল। সেই দেবী তিনজন হলেন এথেনা, হেরা এবং আফ্রোদিতি। তাদের মধ্যে আবার ঝগড়া লাগিয়েছিলেন আরেক দেবী "এরিস"। তাই তো এরিসকে বলা হয়ে থাকে ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর বিশৃঙ্খলার দেবী! এরিস একটা সোনালী আপেল দিয়েছিলেন এই তিন দেবীকে, (এই আপেলটিকে মিথোলজিতে "বিশৃঙ্খলার আপেল" হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে)। আপেলটির গায়ে খোদাই করে লেখা ছিল – "শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর জন্য"। ফলে তিনজন দেবীর প্রত্যেকেই নিজেকে এই আপেলের দাবীদার বলতে লাগলেন। কারণ তারা তিনজনই নিজেকে "শ্রেষ্ঠ সুন্দরী" ভাবতেন। তাই সেরা সুন্দরী নির্বাচনের দায়িত্ব গেল দেবতাদের হাতে, কিন্তু কেউই তিন দেবীর রূপ বিচারের সাহস পেলেন না। শেষে বাধ্য হয়ে দেবতাদের রাজা যিউস "সেরা সুন্দরী" নির্বাচনের ভার দিলেন মর্তের একজন মানুষকে। এই মানুষটি হলে প্যারিস, ট্রয় নগরীর রাজপুত্র!

Bfk6RW2.jpg


তিনজন দেবী থেকে বিচার করে প্যারিস আফ্রোদিতিকেই সবচেয়ে সুন্দরী বললেন। ফলে আফ্রোদিতি খুব খুশি হলেন। তিনি প্যারিসকে খুশী হয়ে এক বিশেষ বর দিলেন, এই বর ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরীর ভালোবাসা। আর সে সময় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মানবী ছিলেন হেলেন, যার রুপের প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ ছিল। কিন্তু হেলেন তখন ছিলেন স্পার্টার রাজা মেনেলাসের স্ত্রী। অন্যের স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আফ্রোদিতির দেওয়া বরের কারনে হেলেন তার মনপ্রাণ সঁপে দিলেন ট্রয়ের রাজপূত্র প্যারিসকে। দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা হয়ে গেল। এক রাতের আধারে দুজনে হাত ধরে পালিয়ে চলে এলেন ট্রয় নগরে।

এদিকে রানি হেলেন পালিয়ে যাওয়ার পরে স্পার্টার রাজা মেনেলাসের বুকে জ্বলছিল ক্রোধের আগুন। মেনেলাস তার ভাই আগামেমননকে আহ্বান করলেন তার পক্ষে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য। আগামেনন ছিলেন পার্শ্ববর্তী মাইসিন রাজ্যের রাজা। ভাইয়ের স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার জন্য আগামেমনন তার বিশাল অ্যাশিয়ান্স দল নিয়ে রওনা দিলেন ট্রয়ের উদ্দেশ্যে। তারপর ট্রয় নগরের সম্মুখে শুরু হল এক ভয়ংকর যুদ্ধ। প্রায় দশ বছর ধরে চলল এই যুদ্ধ! আগামেমননের সৈন্যবাহিনী চারদিক দিয়ে ট্রয় নগরীকে ঘিরে রাখলো। এদিকে ট্রয়ের বাসিন্দারা কিছুতেই হেলেনকে ফেরত দিতে রাজি হল না। তারা শক্ত প্রতিরোধ ধরে রাখলো। রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধে মারা গেলেন অ্যাশিয়ান্স বীর অ্যাকিলিস, অ্যাজাক্স এবং ট্রোজান বীর প্যারিস ও তার ভাই হেক্টর। কিন্তু দুই পক্ষ ছিল শক্তিতে সমান ফলে যুদ্ধে কারো জয় বা পরাজয় হল না। এর পরই ঘটলো সেই ট্রোজান হর্স নামক বিশাল আকৃতির কাঠের ঘোড়ার ঘটনা।

ট্রয়ের যুদ্ধ এবং ট্রোজান হর্স

দশ বছরের চেষ্টার পরও যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পেরে গ্রিক যোদ্ধারা এক চাতুরির আশ্রয় নিল। এই চাতুরির নামই হচ্ছে ট্রোজান হর্স। তারা সবার অজান্তে কালো রঙের বিশাল আকৃতির এক ঘোড়া এনে ট্রয় নগরির সম্মুখে রেখে গেল। ট্রয়ের মানুষজন মনে করলো স্পারটানরা যুদ্ধে হার মেনে নিয়েছে আর তাদের জন্য উপহার হিসেবে এই ঘোড়া রেখে গেছে। তারা কিছু না বুঝে এই ঘোড়াটিকে ট্রয় নগরীর ভেতরে নিয়ে আসলো। আর এটাই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় ভুল।

6K9SqVb.jpg


মাঝরাতে যখন ট্রয়ের বাসিন্দারা ঘুমিয়ে পড়েছে। তখন এই কাঠের ঘোড়া খুলে গেল। আর ভেতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে এলো স্পারটান যোদ্ধারা। নগরে ঢুকার পর অ্যাশিয়ান্সরা সামনে যাকে পেলো, তাকেই জবাই করা শুরু করলো। শুধুমাত্র কয়েকজন শিশু আর মহিলা রক্ষা পেলো, যাদেরকে পরে দাসদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিলো। এভাবেই ধ্বংস হয়ে গেলো ঐতিহ্যবাহী ট্রয় নগরী।

ট্রয় যুদ্ধের ঘটনা কি সত্য নাকি পুরোটাই কল্পনা?

প্রাচীনকালের গ্রিসের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতেন- ট্রয়ের যুদ্ধ একটা ঐতিহাসিক সত্য কাহিনি। তাদের ধারণা অনুযায়ী, ঘটনাটি ঘটেছিলো খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ বা ১২০০ সালে। তবে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এসে বেশিরভাগ মানুষই এই বিশ্বাস থেকে সরে এসেছেন। সে সময় অনেক গবেষক বলেছেন, ট্রয় নগরী বা ট্রয়ের যুদ্ধ – উভয় বিষয়ই নিছক গল্পগাঁথা। বাস্তবে এর কন অস্তিত্ব কখনও ছিল না! কিন্তু ১৮৬৮ সালে হেইনরিখ শ্লিম্যান এবং ফ্র্যাঙ্ক ক্যাল্ভার্ট নামক দুজন প্রত্নতাত্ত্বিক এক অবিশ্বাস্য আবিস্কার করেন। তারা তুরস্কের হিসার্লিক অঞ্চলে এক প্রাচিন নগরীর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান। ধ্বংসাবশেষ থেকে যা কিছু উদ্ধার করা গেছে, তার সাথে প্রাচীন ট্রয় নগরীর বর্ণনার অনেক মিল পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে গবেষকরা সিদ্ধান্তে আসেন যে এটাই সেই গ্রিক পুরানে বর্ণিত ঐতিহাসিক ট্রয় নগরী। তাদের এই আবিস্কার পৃথিবীর ইতিহাস সম্পর্কে মানুষকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই সবাই আবার নতুন করে ট্রয়ের যুদ্ধের কথা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ট্রয় ছাড়াও গ্রিক মিথোলজিতে উল্লিখিত আরও অনেক নগরীর অবস্থান পরবর্তীকালে খুঁজে পাওয়া গেছে! আগামী সে সব স্থান সম্পর্কে জানবো আমরা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top