বিশালাকার এক বাড়ির সব কিছু আয়না দিয়ে তৈরি – এমন দৃশ্য শুধুমাত্র স্বপ্নেই সম্ভব। কিন্তু যদি বলি বাস্তবেই এমন বাড়ি আছে, যার অবস্থান কুয়েতে, তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? বাইরের দুনিয়ার কথা ছাড়ুন, এমনকি কুয়েতে বসবাসকারি অনেক মানুষ আছেন যারা হাউজ অফ মিরর বা কুয়েতের আয়নাঘর সম্পর্কে জানেন না। কুয়েতের সবচেয়ে রহস্যময় জায়গাগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে এই হাউজ অফ মিরর বা আয়নাঘর। এটি শিল্প সম্পদের এক অপূর্ব নিদর্শন যা সর্বসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত।
কুয়েতের আয়নাঘর
বাইরে থেকে দেখতে একটা স্বাভাবিক বাড়ি বলে মনে হলেও, বাড়ির ভেতরটা আয়না দিয়ে সাজানো। বাড়িটির মালিক খলিফা আল কাতান নামক একজন আর্টিস্ট এবং তার স্ত্রি লিডিয়া আল কাতান। লিডিয়া নিজ হাতে এই বাড়ির ভেতরটা সাজিয়েছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে – বাড়ির ভেতর কাচ দিয়ে সাজাতে গিয়ে কোন বিশেষ ধরনের আয়না কিনে আনা হয়নি। এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ভাঙা গ্লাস, ভাঙা আয়না ও বিভিন্ন ধরনের শো পিস। আনুমানিক ১০০ টন সাদা সিমেন্ট এবং ৭৫ টন আয়না দিয়ে দোতালা এই বাড়ির ভেতরটা মোজাইক করা হয়েছে। কুয়েতের কাদসিয়া অঞ্চলের এই বাড়িটি এখন যাদুঘর হিসেবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে একদিন কুয়েতের আয়নাঘর দেখার জন্য যে কেউ বেড়াতে যেতে পারেন, তবে সেজন্য আগে থেকে বুকিং দিতে হয়।
কুয়েতের আয়নাঘর এর ইতিহাস
এই আয়নাঘর সৃষ্টি হওয়ার পেছনে ছোট্ট একটা রহস্যময় ইতিহাস আছে। ১৯৬৬ সালের কথা। খলিফা আল কাতান ছিলেন কুয়েতের একজন নামকরা আর্টিস্ট, তার স্ত্রী লিদিয়াও একজন ভাস্কর্যশিল্পি ছিলেন। তাদের একটি মেয়ে ছিল জালিয়া নামে। একবার জালিয়া একটা আয়না ভেঙ্গে ফেলে। সে সময় কুয়েতে একটা প্রচলিত বিশ্বাস ছিল যে, ভাঙা আয়না বাড়িতে থাকলে অমঙ্গল হয়। তাই বাড়ির লোকেরা ভাঙা আয়নাটা ফেলে দিতে চায়। কিন্তু লিডিয়া এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন না। তিনি ভাঙা আয়নাটি বাড়িতে রাখতে চাইলেন। এইজন্য তার মাথায় এক অভিনব আইডিয়া এলো। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এভাবে ভাঙা আয়না দিয়ে সমস্ত বাড়ি মোজাইক করবেন। তার স্বামী খলিফা আল কাতান একটা বিজনেস ট্রিপে কিছুদিনের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। তখন তার স্ত্রী নিজ চেষ্টায় বাড়ির ভেতরটা আয়না দিয়ে সাজাতে শুরু করেন। স্বামী বাড়ি ফিরে এসে দেখেন তার স্ত্রী বাড়ির অনেকখানি অংশ কাচ দিয়ে সাজিয়ে ফেলেছেন। খলিফা এই উদ্যোগ দেখে খুশি হন, এবং স্ত্রীকে সাহায্য করেন। এরপর দুজনে মিলে গড়ে তুলেন স্বপ্নের আয়নাঘর।
ঘটনাটা শুনতে যতটা সহজ মনে হয়, ততটা সহজ কিন্তু নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই বাড়ি দুজন মানুষ মিলে সত্যিকার আয়না দিয়ে সাজাতে গেলে অন্তত একশ বছর লেগে যাবে। তাহলে লিদিয়া আর তার স্বামী মিলে কীভাবে এত অল্প সময়ে সমস্ত আয়নাঘর বারিয়ে ফেলল তা এক মহা রহস্য। তাছাড়া সাধারণ উপায়ে আয়না দিয়ে বাড়ি সাজাতে গেলে নানান প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ার সম্ভাবনা ছিল। আয়নার রঙ কালচে আকার ধারন করতে পারতো, সিলিং এর আয়না খসে পড়তে পারতো, আয়নার ফাকে ফাটল ধরতে পারতো- আরও অনেক বাজে ব্যাপার ঘটার সম্ভাবনা ছিল। সে সব এড়িয়ে বাড়ির ভেতরটা তারা কীভাবে হাউজ অফ মিরর এর কাজ কমপ্লিট করলেন তা আজও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। লিদিয়া বলেন, প্রচন্ড ইচ্ছা, বুদ্ধি, পরিশ্রম আর শৈল্পিক কাজের প্রতি ভালোবাসা থেকে তাদের পক্ষে এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে।
রহস্যময় আয়না ঘরের ভেতরের সব কিছুই আয়না দিয়ে মোড়া। বাড়ির দেয়াল, সিলিং, মেঝে, আসবাবপত্র, দরজা জানালা, খাট, সোফা, আলমারি সহ সব কিছুই আয়না দিয়ে ঘেরা। যেখানেই যাবেন, আয়নায় দেখতে পাবেন নিজের অবয়ব। শুরুতে চোখে ধাঁধা লেগে যাবে। পড়ে আস্তে আস্তে সয়ে আসবে সব।
যদি কখনো কুয়েতে যাওয়ার সুযোগ হয়, কুয়েতের আয়নাঘর ঘুরে দেখার সুযোগ কিন্তু মিস করবেন না! আর আপনারা যারা কুয়েতে থাকেন, তারা অন্তত একবার হলেও ঘুরে আসবেন কুয়েতের এই হাউজ অফ মিরর থেকে। অনেক ভালো লাগবে। আজকের মত এ পর্যন্তই, ভিডিওটি ভালো লাগলে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। ভালো থাকুন সবাই। ধন্যবাদ।