What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হযরত উমর ফারুকের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘটনা (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,268
Messages
15,982
Credits
1,454,279
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
DES1TMD.jpg


উমর ফারুক, ইসলামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। যিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হয়ে অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন একটা কুটিরে বসে। যিনি নিজের কাঁধে করে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন অনাহারী মানুষদের বাসায়। যার শৌর্য বীর্য, যার মাহাত্ম্য ইসলামের ইতিহাসকে করেছে প্রশস্ত। মৃত্যুর পর যার স্থান হয়েছে মহানবী (সঃ) এর একপাশে। জানতে ইচ্ছা করেনা তিনি কীভাবে ইসলামের ছায়াতলে এলেন? আর কেমনই বা ছিলেন তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে? আজকের আলোচনা এসব নিয়েই।

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উমর ছিলেন কাফির কোরাইশদের বিশিষ্ট নেতা। তাকে সবাই খুব সমীহ করে চলত, কারণ তিনি ছিলেন একজন বীরপুরুষ। ইসলামের প্রধান শত্রুদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তার এক দাসী ইসলাম গ্রহণ করায় তার উপর তিনি মারাত্বক অত্যাচার করতেন।

তখন ইসলামের বাল্যকাল। মুসলমানরা সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে ধর্ম পালন করতো। তারপরেও কোরাইশদের চিন্তার অন্ত ছিলোনা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে। তারা কীভাবে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে থামানো যায় এটা নিয়ে সভা ডাকলো। সভার সভাপতি আবু সুফিয়ান ঘোষণা করলো, যে ব্যক্তি মুহাম্মদের মাথা কেটে আনতে পারবে, তাকে আমি ১০০ উট পুরষ্কার দিবো।

পুরষ্কারটা মারাত্বক লোভনীয় হলেও কেউই তাতে রাজী হলোনা। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সংখ্যার দিকে নগণ্য হলেও তার মাথা কেটে আনা সহজ কথা নয়। কারণ তার পক্ষে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট হোমড়া চোমড়া লোক ছিলেন। তাদের ফাঁকি দিয়ে মুহাম্মদের মাথা কেটে আনা ছিলো পুরোপুরি অসম্ভব। তাই সবাই নীরব রইলো। এমন সময় উমর দাঁড়িয়ে সিংহ গর্জনে বললেন, আমিই মুহাম্মদের মাথা কেটে আনবো। সুফিয়ান, তুমি পুরষ্কার প্রস্তুত রেখো। বলেই তিনি খোলা তরবারী হাতে নিয়ে হযরত মুহাম্মদের ডেরাপানে ছুটে চললেন।

পথিমধ্যে সা'দ বিন আবি ওয়াক্কাসের সাথে দেখা। তিনি উমরের ভয়ানক মুর্তি দেখে সহজভাবে প্রশ্ন করলেন, কোথায় যাচ্ছো উমর? তোমার ভাবসাব তো সুবিধার ঠেকছে না।
উমর জবাব দিলেন, মুহাম্মদের শিরচ্ছেদ করতে।

সা'দ বললেন, আমীর হামজার কথা জানো তো? সেও কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করেছে।

উমর ব্যপারটাকে পাত্তা না দিয়ে বললেন, সে বাঁধা দিলে তাকেও হত্যা করবো।

সা'দ বললেন, তাকে হত্যা করলে বনু কাশেম আর বনু আবদে মান্নাফ গোত্রের লোকেরা কি সেটার প্রতিশোধ নিবেনা?

উমর বুঝে ফেললেন সা'দ ইসলাম গ্রহণ করেছে। রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে তিনি বললেন, বুঝেছি তুমিও মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছো। তাই তোমার ইসলাম গ্রহণের স্বাদটাই আগে মিটাই।

সা'দ ভয় পেলেন। তিনি একটু দূরে সরে গিয়ে বললেন, শোনো উমর। বাইরের লোকেরা কী করলো না করলো সেটা না দেখে নিজের ঘরের মানুষের খবর নাও আগে। গিয়ে দেখো তোমার বোন আর তার স্বামীও ইসলাম গ্রহণ করেছে। যাও আগে তাদের গিয়ে হত্যা করো।

উমর রাগে হিতাহীত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। তিনি মুহাম্মদের হত্যা আপাতত স্থগিত রেখে ছুটে চললেন তার ভগ্নিপতির বাড়ির দিকে। বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি শুনলেন তার বোন আর তার স্বামী ভেতরে ক্বোরআন শরীফ পাঠ করছে। তারা উমরের আগমন বুঝতে পেরে দ্রুত ক্বোরআন শরীফের আয়াত লিখিত বস্তুটি লুকিয়ে ফেললেন। উমর ভেতরে ঢুকেই প্রশ্ন করলেন, তোমরা এতক্ষণ কী পাঠ করছিলে? তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জবাব দিলো, কই কিছুনা তো। উমর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা নাকি মুহাম্মদের ধর্ম গ্রহণ করেছো? সাহস তো কম না তোমাদের। এখনি সেটার ফল দেখাচ্ছি। বলেই তিনি তাদের বেদম প্রহার শুরু করলেন। আর বলতে লাগলেন, এই ধর্ম তোমাদের ত্যাগ করতে হবে। তারা জানালেন তাদের জীবন চলে গেলেও এই ধর্ম ত্যাগ করবেনা। তাদের মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছিলো। এই অবস্থায় তাদের এরকম দৃঢ়তাব্যঞ্জক কথা শুনে উমরের মনে ভাবান্তর সৃষ্টি হলো। তিনি একটু নরম হয়ে বললেন, তোমরা এতক্ষণ কী পাঠ করছিলে তা আমাকে শোনাও।

উমরের বোন ফাতেমা তখন মনে কিছুটা সাহস পেয়ে সূরা তাহার প্রথম কয়েকটি আয়াত পাঠ করে শোনালেন। যার অর্থ ছিলো," আসমান যমীনে যা কিছু আছে, তারা সকলেই আল্লাহর প্রশংসা করছে। আল্লাহই সর্বশক্তিমান প্রভু।"

ক্বোরআনের এই লাইনগুলো উমরের মনে তীরের মত আঘাত করলো। তিনি আবার হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দরবারে ছুটে চললেন। তবে মুহাম্মদকে হত্যা করতে নয়, তার কাছে নিজেকে সপে দিতে।

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তখন সাহাবী আকরামার ঘরে বসে অনুসারীদের উপদেশ দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় উমরকে দেখে সকলেই একটু ভীত হয়ে পড়লো। কারণ হচ্ছে উমরের হাতে তখনও খোলা তরবারীটা ছিলো। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বললেন, উমরকে ভেতরে আসতে দাও। সে সৎ উদ্যেশ্যেই এসেছে।

উমর ভেতরে ঢুকতেই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজের হাতে উমরকে স্পর্শ করে বললেন, বসো উমর। এখানে কেন এসেছো? উমর মহানবীর স্পর্শে বিগলিত হয়ে নিজের হাত থেকে তরবারীটা ফেলে দিয়ে বললেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছি। দয়া করে আমাকে গ্রহণ করুন। হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তখন 'মাশা-আল্লাহ বলে উমরকে বসালেন। তারপর তাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করলেন।

কোরাইশরা এহেন সংবাদে অবাক হয়ে গেলো। এদিকে মুসলিমরা উমরকে পেয়ে অনেকটাই সাহসী হয়ে উঠলো। এতদিন তারা লুকিয়ে ধর্ম পালন করতেন। উমর বুলন্দ কন্ঠে ঘোষণা দিলেন, আর লুকিয়ে নয়, এখন থেকে আমরা প্রকাশ্যে নিজের ধর্ম পালন করবো।

এই উমরই পরে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রধান সঙ্গী হন। তিনি যখন অর্ধ পৃথিবীর শাসক ছিলেন ছিলেন, তখন যাকাত নেয়ার মত একটা লোক পাওয়া যেতোনা। এই অর্ধ পৃথিবী তিনি শাসন করেছিলেন একটা খেঁজুর পাতার তৈরি কুটিরে বসে। স্বমহিমায় তিনি মৃত্যুর পর স্থান পেয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর বাঁমপাশে।

সুবহান আল্লাহ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top