What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ধর্ম সুন্দর? নাকি মানুষ সুন্দর ! (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
rSv93LF.jpg


রাজকুমার সিদ্ধার্থ তখনও গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিত হননি। একদিন তিনি উদ্যানে বসে প্রকৃতি দেখছিলেন। আকাশে উড়ে যাচ্ছিলো একপাল হাঁস। হঠাৎ পালের মধ্য থেকে একটা হাঁস তীরবিদ্ধ হয়ে মাটিতে এসে পড়লো। সিদ্ধার্থ দৌড়ে হাঁসটার কাছে গেলেন। গিয়ে দেখলেন হাঁসটি মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছে। সিদ্ধার্থ পরম মমতায় হাঁসটির বুক থেকে তীরটা বের করলেন। হাঁসের শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বেরুচ্ছিলো। কোমল হৃদয়ের সিদ্ধার্থের প্রাণ কেঁপে উঠলো এই দৃশ্য দেখে। হাঁসটি ঠিক কতটুকু যন্ত্রণা পেয়েছে সেটা আন্দাজ করার জন্য তিনি নিজের হাতে তীরটি বিঁধিয়ে দিলেন।

সিদ্ধার্থ হাঁসটি বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেবা শুশ্রুষা করে হাঁসটিকে বাঁচালেন। তখন দেবদত্ত নামে আরেকজন রাজকুমার এসে হাঁসটি তার নিজের বলে দাবী করলো। সে জানালো হাঁসটিকে সে তীরবিদ্ধ করেছিলো, অতএব হাঁসটি তার। সিদ্ধার্থ সেটা মানলেন না। তিনি বললেন, তুমি হাঁসটিকে মারতে চেয়েছিলে। আমি সেটাকে বাঁচিয়েছি। অধিকার কার বেশি? যে মারে তার, নাকি যে বাঁচায় তার?

তাদের মধ্যে সুরাহা না হওয়ার ব্যাপারটা প্রবীন বিচারকদের কাছে গড়ালো। বিচারকরা সিদ্ধার্থের পক্ষে রায় দিলেন। সিদ্ধার্থ হাঁসটিকে পুরোপুরি সুস্থ করে সেটাকে উড়িয়ে দিলেন খোলা আকাশে। মুক্তির আনন্দে হাঁসটি উড়ে চলে গেলো অজানার দিকে। জয়টা কার হলো? যে মারে তার, নাকি যে বাঁচায় তার? যে বন্দী করতে চেয়েছিলো তার, নাকি যে মুক্তি দিলো তাঁর?

৬২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে মার্চ। ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসের ৭ তারিখ। ওহুদের প্রান্তরে বিশাল যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মদিনার মুসলমানরা একপক্ষ, মক্কার কাফির কুরাইশরা আরেকপক্ষ। কাফেররা সংখ্যায় বিশাল। মুসলমানরা সংখ্যায় নগণ্য তাদের তুলনায়।

যুদ্ধ শুরু হলো। মুসলমানরা প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। নবীজী (সঃ) একদল তীরন্দাজকে নির্দেশ দিয়েছিলেন জাবালে রুমাত নামক একটা স্থানে সবসময়ের জন্য অবস্থান নিতে। কোনো অবস্থাতেই যেনো তারা ওখান থেকে না সরে। যুদ্ধ যখন প্রায় মুসলমানদের হাতে চলে এসেছে, তখন ওই তীরন্দাজরা যুদ্ধ জিতে গেছে ভেবে জাবালে রুমাত থেকে চলে এসে মূল বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। তখন খালিদের নেতৃত্বে কাফিররা ওইদিক থেকে মুসলমানদের আক্রমণ করে। মুসলমানরা তাদের এই অতর্কিত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। তারা তখন দিশেহারা হয়ে পড়ে, এবং বেশকিছু মুসলিম মারা যায়। স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর একটা দাঁত ভেঙে যায় কাফিরদের আক্রমণে।

নবীজির (সঃ) দাঁত ভাঙার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। ইয়েমেনে বসবাসকারী একজন নবীভক্তের কানেও এই খবর পৌঁছালো। তার নাম ওয়ায়েস কারনী। তিনি নবীর সমসাময়িক লোক হলেও নবীর সাথে তার কখনও দেখা হয়নি। তিনি যখন শুনলেন নবীর দাঁত ভেঙে গেছে, তখন তিনি ভেবে পেলেন না কী করা যায়। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলেন, যেখানে নবীজীর (সঃ) দাঁত ভেঙে গেছে, সেখানে আমার দাঁত দিয়ে কী হবে? আমিও আমার দাঁত ভেঙে ফেলবো। এই ভেবে তিনি তার একটা দাঁত ভেঙে ফেললেন। ভাঙার পর তার মনে হলো তিনি তো জানেন না নবীর (সঃ) কোন দাঁতটা ভেঙেছে। তিনি যে দাঁতটা ভেঙেছেন, নবীজীর (সঃ) তো সেই দাঁতটা ভেঙে নাও থাকতে পারে। এই ভেবে তিনি তার আরেকটা দাঁত ভেঙে ফেললেন। কিন্তু তার সন্দেহ গেলো না। সন্দেহ দূর করার জন্য তিনি এক এক করে তার প্রতিটা দাঁত ভেঙে ফেললেন। বারবার জ্ঞান হারানোর পরেও তিনি থামেননি।

নিজের দাঁত ভাঙা অনেক বড় পাপ। ওয়ায়েস কারনী কি সেদিন তার দাঁত ভাঙার ফলে পাপী বলে আখ্যায়িত হয়েছিলেন?

ওয়ায়েস কারনীর এই ঘটনা যখন নবীজীর (সঃ) কানে গেলো, জানেন তিনি কী করেছিলেন?

তিনি তার নিজের শরীরে ব্যবহৃত একটি জুব্বা ওয়ায়েস কারনীর জন্য রেখে দেন। হযরত ওমরকে তিনি নির্দেশ দেন, তাঁর ইন্তেকালের পর যেনো এই জুব্বাটা ওয়ায়েস কারনীর কাছে পৌঁছানো হয়। নবীজীর ইন্তেকালের পর ওমর তার আদেশ পালন করেন। জুব্বাটি তিনি ওয়ায়েস কারনীর কাছে হস্তান্তর করেন।

সুবহান আল্লাহ! এই সৌভাগ্য নবীর সাথে সারাক্ষণ থেকেও অনেক সাহাবী লাভ করতে পারেননি। আর নবীজীকে কখনও স্বচক্ষে না দেখেও, দূর থেকেই তার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে এই অসামান্য সৌভাগ্য লাভ করেন ওয়ায়েস কারনী। ভাবতে পারেন!

মাইকেল এইচ হার্টের বর্ণনায় পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবদের তালিকার মধ্যে প্রথম নাম্বারে থাকা মানুষটির পরনের জামা পেলেন ওয়ায়েস কারনী। জয়টা কার হলো? পাপের নাকি ধর্মের?

ধর্ম কত সুন্দর। ধর্মের খাঁটি প্রচারকরা কত সুন্দর। ধর্মের খাঁটি অনুসারীরা কত সুন্দর। যদি আজকাল মানুষজন তার নিজের সুবিধার জন্য ধর্মকে বিক্রি করে না দিত, তাহলে এখনও হয়ত প্রতিটা মানুষ ধর্মের আওতায় থাকতো। ধর্ম কখনোই কোনো জাতিকে আলাদা করেনা, বরং একতা শেখায়। তবে ধর্মের সঠিক পথটা আমাদের জানা দরকার। ব্যক্তিগত দোষ কখনও ধর্মের গায়ে লাগতে পারেনা। কারণ ধর্ম কস্মিনকালেও খারাপ কিছু শেখায় না। কোনো ধর্মই না।

এখন বলুন, কে সুন্দর? ধর্ম সুন্দর নাকি মানুষ সুন্দর?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top