আমরা সবাই জানি, গুগল ইন্টারনেট জগতের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন। প্রতিদিন গুগল বিভিন্ন সার্ভিসের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি সার্চ রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে। Google শব্দটি মূলত Googol শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ১ লিখে ১০০ টি শূণ্য দিলে যে বিশাল সংখ্যাটি পাওয়া যায় তাকে সাধারনত এক গুগোল বলে। অনেক ক্ষেত্রে এই শব্দ দ্বারা বৃহৎ আকৃতিকে বোঝানো হয়। গুগলের আকৃতি যে অনেক বড় তা বোঝানোর জন্যই এই নামটি রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এ নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে।
যাদের হাত ধরে গুগলের যাত্রা
জনপ্রিয় এই সার্চ ইঞ্জিন ১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন ছাত্র ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে তাদের পিএইচডি কোর্স চলাকালীন সময়ে গবেষণা প্রকল্প হিসাবে এর কাজ শুরু করেন তারা। তাদের লক্ষ্য ছিল সেই সময়ের প্রযুক্তির চেয়ে উন্নত নতুন কোনো একটা সার্চ ইঞ্জিন বানানো, যেটি বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষন করে ফলাফল দেখাবে।
১৯৯৭ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর ডোমেইন নাম গুগল নিবন্ধন করা হয়। শুরুর দিকে গুগল এতটা জনপ্রিয়তা ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে এর প্রয়োজনীয়তা এবং জনপ্রিয়তা সমান হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর অন্যতম কারণ গুগল তার বিশেষ ধরণের অ্যালগরিদমের কল্যাণে ব্যবহারকারীদের কাছে যথাযথ তথ্য তুলে ধরতে পারে এবং নিজেদের সব সময়ই আপডেটেড রাখে। তবে একটা মজার তথ্য পাঠকদের বলা যেতে পারে। ১৯৯৯ সালে ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন গুগল বিক্রি করে দেয়ার একটি চেষ্টা করেছিলেন। শুরুতে ১ মিলিয়ন ডলার দাম হাকালেও, পরে তা কমিয়েও কোন খদ্দের পাওয়া যায়নি তখন।
যে লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছিল গুগল
মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ এবং সিআইএ বহুদিন ধরে এমন একটি সিস্টেম তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাচ্ছিলেন যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ ব্যক্তিদের উপর নজর রাখতে পারেন। শুরুতে তারা সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই ধরনের প্রযুক্তির সন্ধান করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালে ম্যাসিভ ডিজিটাল ডাটা সিস্টেম (MDDS) এর একটি বড় অনুদান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কম্পিউটার সায়েন্স রিসার্চ টিমকে দেয়া হয়।
কোয়রি অপটিমাইজ এবং ডিজিটাল লাইব্রেরি তৈরি করাই ছিলো এই টিমের মূল দায়িত্ব। এই খাতের অনুদানের অর্থটি মূলত যে টিমকে দেয়া হয়েছিলো তাদের মধ্যেই ছিলেন ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন। তারা এমন একটি ফাংশন বের করে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সার্চ অপশন ব্যবহার করে অনেক বড় ডাটা টেবিল থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদার একটি লিস্ট রিসার্চকারীদের দেয় এবং সে মতেই ডিজাইন তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ল্যারি পেজ পৃথকভাবে গুগল এর কার্যক্রম শুরু করে এবং এনএসএ আর সিআইএ তাদের প্রয়োজনীয় ডিজাইন পেয়ে যায়।
বর্তমানে একজন ব্যবহারকারী যখন গুগল প্রোডাক্ট জিমেইল, ইউটিউব কিংবা গুগলের অন্য যেকোনো সার্ভিসে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছেন বা লগ ইন করছেন, তখনই গুগলের ইনফরমেশন স্টোরেজে তার ব্যক্তিগত সব তথ্য জমা হয়ে যাচ্ছে। এখানে এটা বলা যায় যে এটি হলো গুগলের তথ্য সংগ্রহের একটি সক্রিয় পদ্ধতি। তবে গুগল পরোক্ষ ভাবেও তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, গুগল একটি নির্দিষ্ট দিনে যত তথ্য সংগ্রহ করে, তার দুই–তৃতীয়াংশই করে এই 'পরোক্ষ' উপায়ে। অর্থাৎ, আপনি গুগল বা গুগলের কোনো পণ্য ব্যবহার করছেন না, কিন্তু এরপরও গুগল আপনার ব্যক্তিগত তথ্য খুব সহজেই তাদের ভান্ডারে জমা করে ফেলতে পারে। যেটা ছিলো গুগলের অনেক বড় একটি লক্ষ্য।