What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

তাজউদ্দীন আহমদঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা পথ রচিত হয়েছিলো যার হাত ধরে (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
h7T7QWC.jpg


স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যে কজন নেতার নাম সবার প্রথমে উচ্চারণ করতে হয় তাদের মধ্যে তাজউদ্দীন আহমদ অন্যতম। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, তখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের হাল ধরে তিনি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে বিজয়ের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছিলেন। প্রজ্ঞা, সাহস, সততা ও দক্ষতার আলো ছড়িয়ে তিনি তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য।

জন্ম, শৈশব এবং শিক্ষা

ত্যাগী এই নেতা ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মাতার নাম মেহেরুন্নেসা খান।

দশ ভাই-বোনের মাঝে তাজউদ্দীন ছিলেন চতুর্থ। শৈশবে মৌলভী বাবার কাছেই আরবি শিক্ষার মাধ্যমে পড়ালেখায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। কিছুদিন পর স্কুলে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শিশু বয়স থেকেই অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন তাজউদ্দীন। নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি কোরান হেফজ (তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন কোর-আনে হাফেজ) করেছিলেন বাবার কাছে। জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে মেট্রিক ও ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। সম্মিলিতভাবে মেট্রিকে তিনি মেধাতালিকায় দ্বাদশ এবং ইন্টারমিডিয়েটে চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বি.এ. ডিগ্রী অর্জন করেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৬৪ সালে জেলে রাজনৈতিক বন্দী থাকা অবস্থায় এল এল বি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাথে পাস করেন।

রাজনৈতিক জীবন

১৯৪৩ সালে আবুল হাশিম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যান তাজউদ্দীন। রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখার পর থেকেই সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে সমাদৃত হয়েছিলেন গুণী এই নেতা। ফলশ্রুতিতে, এক বছর পরেই অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যপদে বহাল থেকেছেন দীর্ঘদিন।

0zbf6ZS.jpg


তাজউদ্দীন ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান যেদিন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের (আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম পরিবর্তন করে পরবর্তীতে ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগ রাখা হয়) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাজউদ্দীন আহমদ সেদিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে তাজউদ্দীন আহমদ মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদককে নির্বাচনে পরাজিত করে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়াও ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে যখন বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবী উত্থাপন করে তখন তিনিও বঙ্গবন্ধুর সাথেই ছিলেন। দেশরক্ষা আইনে ১৯৬৮ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর জেলে থাকা অবস্থাতেই তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ এবং তাজউদ্দীন

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পরেও তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান আওয়ামীলীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অপারগতা জানায় এবং জাতীয় পরিষদের সকল অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে। শাসকগোষ্ঠীর এহেন আচরণের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এই আন্দোলন সফল করার জন্য গাধার খাটুনি খাটতে হয়েছিলো তাজউদ্দীনকে। পাকিস্তানের শাসকদের টালবাহানা চলতেই থাকে। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ ঘৃণিত গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে যায়।

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঐদিন থেকেই। এক সাক্ষাতকারে তাজউদ্দীন বলেছিলেন, "সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বার্থে সেদিন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা হলোঃ একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য কাজ শুরু করবো।"

মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সকল সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত ঠাণ্ডা মাথায় অত্যন্ত বিচক্ষ্মণতার সহিত নিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে আত্মরক্ষা, এরপর প্রস্তুতি এবং সবশেষ আক্রমণ এই নীতিতে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেছিলেন তিনি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেলে বন্দী ছিলেন তাই তার অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে তাজউদ্দীনের ঘাড়ে। দেশে থাকাটা নিরাপদ ছিলো না বিধায় তিনি ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামকে সাথে নিয়ে ৩১ মার্চ মেহেরপুর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান। ওখানে গিয়ে তিনি বিএসএফের কর্তাদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাহায্য চান। কিন্তু তৎকালীন বিএসএফ প্রধান বলেছিলেন যে, মুক্তি সেনাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারটি নির্ভর করছে ভারত সরকারের উপর। ভারত সরকারের সরাসরি আদেশ না পেলে এই কাজে কোন অগ্রগতি হবে না। এরপর তাজউদ্দীন দিল্লী যান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাত করার জন্য। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পূর্বে তাঁকে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে বেশ কয়েক দফা বৈঠক করতে হয়। বৈঠকের এই সময়গুলোতেই তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে, আওয়ামীলীগের একজন নেতা হিসেবে তাঁর আবদার কখনোই অতোটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কোন দেশই মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে এগিয়ে আসবে না প্রত্যক্ষভাবে। কেবল সহানুভূতি আর সমবেদনা ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না।

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের আগে এক কর্মকর্তা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, বাংলাদেশে কোন সরকার গঠন হয়েছে কি না। তখনই তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেফতার হওয়ার আগেই স্বাধীনতা ঘোষণা করে সরকার গঠন করে গিয়েছেন। সেই সরকারে শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী।

nTUaKw4.jpg


বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠন প্রশ্নে এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় তাজউদ্দীন হতাশ হয়েছিলেন।

ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকে তিনি তাঁর কাছে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তখন বলেছিলেন, চিন্তার কোন কারণ নেই, সময়মত আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই বৈঠক শেষে ১৭ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী এই সরকার শপথ গ্রহণ করে। তাজউদ্দীনসহ বাংলাদেশের তৎকালীন নেতারা (যারা জেলের বাইরে ছিলেন) সবাই মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (মুজিবনগর) সমবেত হয়ে তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে অস্থায়ী সরকারের শপথ নেন এবং তাজউদ্দীনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করা হয় সেখান থেকেই। তাজউদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

অস্থায়ী সরকার গঠনের পর তিনি পুনরায় ভারতে চলে যান। উল্লেখ্য যে, ভারতীয় সীমান্তে পৌঁছার পর তাজউদ্দীন বিনা প্রটোকলে ভারতের মাটিতে পা রাখবেন না বলে বেঁকে বসেন। তখন তিনি বলেছিলেন, একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে অন্য একটি দেশে বিনা আমন্ত্রণে বা বিনা প্রটোকলে তিনি প্রবেশ করতে পারেন না। এটা তাঁর এবং তাঁর নিজের দেশের জন্য অসম্মানের। এরপর ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তাঁকে গার্ড অব অনার দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়।

এরপর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সময়গুলোতে ভারতে বসেই বিভিন্ন কূটনৈতিক সমস্যার সমাধান, যুদ্ধের পরিকল্পনা এবং যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে ঢাকায় ফিরলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, তিনিই বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে বাজেট পেশ করেছিলেন।

VaLCe2t.jpg


বাংলাদেশের জাতীয় চার নেতা

শেষ জীবন এবং মৃত্যু

বঙ্গবন্ধুর আশপাশের চাটুকারদের জন্য বঙ্গবন্ধুর সাথে একসময় তাজউদ্দীনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাজউদ্দীনকে ভুল বুঝে একরকম দূরে সরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু। ১৫ ই আগস্ট অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের নির্দেশে তাজউদ্দীনকে গৃহবন্দী করা হয় এবং ২৩ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। কারাগারের ভেতরেই ৩ নভেম্বর তাজউদ্দীন আহমদ সহ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোঃ মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে জেল হত্যা দিবস নামে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। সেই প্রেরণাকে সুনির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। পাকিস্তান কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবর্তমানে তাজউদ্দীন তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে শক্তি সঞ্চার করেছিলেন এক আপোষহীন স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে। বাংলাদেশের জনগণ তাঁর কাছে চিরজীবন ঋণী।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top