What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাংলাদেশের জন্য নিবেদিত একজন “আবেদ ভাই” (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
LtuzkvB.jpg


জাতি হিসেবে আমাদের পরম সৌভাগ্য যে দেশের স্বাধীনতার সাথে আমরা একজন ফজলে হাসান আবেদকে পেয়েছিলাম। সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করেও তিনি দেশ গড়ার কাজে হয়ে উঠেছিলেন সরকারের অলিখিত সহযাত্রী। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং উদ্যোগকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে গেছেন ব্র্যাকের মাধ্যমে।

৭০- এর ঘূর্ণিঝড় আর ৭১- এর মুক্তিযুদ্ধ জমিদার পরিবারে বেড়ে ওঠা স্যার আবেদের জীবনের সব হিসেব বদলে দেয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশ শূন্য থেকে গড়ার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়ে বিসর্জন দেন ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া, ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা।

এক সাক্ষাৎকারে স্যার আবেদ বলেছিলেন, "মুক্তিযুদ্ধ আমার প্রাণ ছুঁয়ে গেছে বিভিন্নভাবে। মুক্তিযুদ্ধের পরে যে বাংলাদেশকে আমি দেখেছি সেটা ছিল বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি- দরিদ্রতম দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ভাবলাম, আমাদের এত দরিদ্র দেশ, তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া প্রায় এক কোটি মানুষ ফিরে আসছে। এদের ঘরবাড়ি নেই, টাকা পয়সা নেই, ক্ষেতে কোন শস্য নেই। সাহায্য শুরু করলাম ত্রাণ দেয়ার মধ্য দিয়ে। আমার ধারণা ছিল, ত্রাণ দেওয়া শেষে বছর দু-তিনেক পর আমি আমার পেশায় ফিরে যাবো- ইংল্যান্ড-আমেরিকা বা অন্য কোথাও। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে যে দারিদ্র দেখলাম, এত দরিদ্র মানুষকে এভাবে ফেলে রেখে আমি বিদেশে চাকরি করে আরাম আয়েশে থাকব, এটা কোন কাজের কথা নয়। সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার সারা জীবনে বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের কাজে নিয়োজিত থাকবো।"

এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর তিনি যে আর পেছনে ফিরে তাকাননি তার সাক্ষী দেবে পুরো বাংলাদেশ। দেশের দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়ন এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে কাজ করেননি তিনি। একটা কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যুদ্ধের সময় শেল অয়েল কোম্পানির যে চাকরিটি ছেড়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গড়তে ও অর্থ জোগাড় করতে লন্ডন পাড়ি জমান, সেই চাকরি থেকে তিনি পেতেন মাসে ৪ হাজার ১০০ টাকা। দেশ এবং দশের কল্যাণে এভাবেই তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে থেকেছেন বাকি পুরোটা জীবন। এমনকি তিনি ব্র্যাকের মালিক নন, বরং বেতনভুক্ত কর্মী হিসেবে কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। তার নিজের নামে কোন সম্পত্তি নেই, বাড়ি-গাড়ি নেই। যা অর্জন করেছেন, তার সব কিছুই ব্র্যাকের।

নিজেকে পাহড়সম উচ্চতায় নিয়ে গিয়েও স্যার ফজলে হাসান আবেদ ছিলেন বাংলার মাটি এবং মানুষের কাছে। তার দেশপ্রেম এবং বর্নাঢ্য কর্মজীবন আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বহুকাল।

পরিবার

7AfpiNc.jpg


বাম থেকে ডানে (উপবিষ্ট): ফজলে হাসান আবেদের পিতা মরহুম সিদ্দিক হাসান, তদীয় মামা মরহুম নওয়াব জাস্টিস স্যার শামসুল হুদা কে.সি.আই.ই, চাচা মরহুম আতিকুল হাসান।

স্যার আবেদ জমিদার পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন। অর্থ-বৈভব, পড়াশোনা সব দিক দিয়েই তার পরিবার ছিল সেই সময়ের অভিজাত সমাজের প্রতিনিধি। তার বাবা সিদ্দিক হাসান ছিলেন হবিগঞ্জের ডিস্ট্রিক্ট সাব-রেজিস্টার। তিন চাচার মধ্যে একজন রাশিদুল হাসান ছিলেন জেলা জজ, ওবায়দুল হাসান ছিলেন নামকরা ডেন্টিস্ট, আরেক চাচা সায়ীদুল হাসান একসময় লন্ডনের পাকিস্তান দূতাবাসের বাণিজ্য সচিব ছিলেন।

ফজলে হাসান আবেদের নানা খান বাহাদুর সৈয়দ মোয়াজ্জেম উদ্দীন অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী ছিলেন। আর তার বাবার মামা নওয়াব জাস্টিস স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা কলকাতার প্রখ্যাত আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনে তার মা সৈয়দ সুফিয়া খাতুনের প্রভাব ছিল ব্যাপক। ছেলেবেলায় মাকে দরিদ্র মানুষদের পাশে সবসময় দাঁড়াতে দেখতেন। সেই থেকেই হয়তো দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।

Y5BfqcT.jpg


তরুণ বয়সে স্যার ফজলে হাসান আবেদ

পড়াশোনা

স্যার আবেদ পড়াশোনায় সব সময়ই মনযোগী ছিলেন। পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে ভর্তি হন। পরে চাচা সায়ীদুল হাসানের পরামর্শে তিনি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নৌ- স্থাপত্যবিদ্যা বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু দেশের জন্য এই বিষয়ে পড়াশোনা কোন কাজে আসবে না বিবেচনা করে তিনি দুবছরের মাথায় লন্ডন চলে যান। সেখানে তিনি কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে সফলতার সাথে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি লন্ডন, কানাডা, আমেরিকায় চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে তিনি শেল অয়েল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন।

১৯৭০ সালের নভেম্বরে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের পরে স্যার আবেদ তার বন্ধুদের নিয়ে ত্রাণ কার্যে নিজেকে নিয়োজিত করেন। এর চার মাস পর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার উচ্চ বেতনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করার জন্য লন্ডনের পাড়ি জমান। লন্ডনে বন্ধুদের সাথে গড়ে তোলেন অ্যাকশন বাংলাদেশ এবং হেল্প বাংলাদেশ নামের দুটি সংগঠন। অ্যাকশন বাংলাদেশের প্রধান কাজ ছিল বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন আদায় করা। হেল্প বাংলাদেশের কাজ ছিল বাংলাদেশে সম্মুখ যুদ্ধ করা মুক্তিবাহিনীর জন্য অর্থ সংগ্রহ করা।

hDDSOhA.jpg


প্রফেসর ইউনুস ও হিলারি ক্লিনটনের সাথে এক বৈঠকে

দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি স্যার আবেদ দেশে ফিরে আসেন। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে মানুষের সাহায্য করতে অর্থের প্রয়োজন। বন্ধু ভিকারুল ইসলাম চৌধুরীর জমানো ২৫ হাজার রুপি আর নিজের লন্ডনের অ্যাকাউন্টে ফ্ল্যাট বিক্রি করে জমা রাখা ৬ হাজার ৮০০ পাউন্ড তুলে এনে সুনামগঞ্জের শাল্লায় "বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটিশন আসিস্ট্যান্স কমিটি (ব্র্যাক)" নাম দিয়ে এক সংগঠন তৈরি করে কাজ শুরু করেন। শাল্লায় প্রায় ২ লাখ মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দেয়া এবং পুনর্বাসনের কাজ করার পর থেকে ব্র্যাক মানুষের অসহায়ত্ব আর দারিদ্রতা দেখে ছুটে গেছে দেশের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়। সুনামগঞ্জের পর মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে কাজ করে ১৯৭৪ সালে রংপুরের বৌমারিতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে স্যার আবেদ তার দল নিয়ে ছুটে যান সেখানে। বৌমারির দুর্ভিক্ষের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শিশুকে প্রতিদিন দুই বেলা খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল ব্র্যাক। সমাজের চাহিদা ও প্রয়োজন বুঝে শুধু মাত্র ত্রাণ এবং পুর্বাসনের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ব্র্যাকের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত পরিসরে নিয়ে যান তিনি। তখন এর নাম বদলে নতুন নাম হয় "বাংলাদেশ রুরাল অ্যাডভান্সমেন্ট কমিটি"।

বর্তমানে ব্র্যাকের কাজের ক্ষেত্র অতি ব্যাপক। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি, পয়োনিষ্কাশন, শিক্ষা, কৃষি সম্প্রসারণ, ক্ষুদ্র ঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্র্যাক কাজ করে যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবদান আজ পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।

NiZdN6E.jpg


শিশুটির মুখে নির্মল হাসিই বলে দিচ্ছে স্যার আবেদ কতটা আপন হতে পেরেছিলেন তাদের

শিশু মৃত্যুহার এবং মাতৃ মৃত্যুহার

যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দারিদ্র্য বিমোচন। সেসময় প্রত্যেক নারী ৬.৪ জন শিশু জন্ম দিত। স্যার আবেদ অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার না কমালে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে না। তাই ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই তিনি স্বাস্থ্য কর্মসূচির পাশাপাশি জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ শুরু করেন।

শিশু মৃত্যুর হার কমলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমবে। এই বিবেচনায় তিনি সেই সময় শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ ডায়েরিয়া প্রতিরোধে কাজ করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে লবণ, গুড় আর আধা সের পানি মিশিয়ে খাবার স্যালাইন কীভাবে বানাতে হয় তার প্রশিক্ষণ দেয় ব্র্যাক। এরপর প্যাকেটজাত স্যালাইন আসলে সরকারের পাশে থেকে সেটির প্রচার ও প্রসারে ব্র্যাকের অবদান উল্লেখযোগ্য।

শিশু মৃত্যুর হার কমাতে টিকাদান কর্মসূচিতেও অংশ নেয় ব্র্যাক। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশের টিকাদানের হার ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। তখন ইউনিসেফ দেশে টিকাদানের হার ১৯৯০ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্মসূচি শুরু করে। কিন্তু সরকারের সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে স্যার আবেদের বন্ধু তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব মনয়ূর-উল-করিম ব্র্যাককে সরকারের সঙ্গে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। টিকা দানের জন্য অর্ধেক বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয় সরকার, আর বাকি অর্ধেকের দায়িত্ব পড়ে ব্র্যাকের ওপর। পরবর্তী চার বছরে ব্র্যাক তাদের নির্দিষ্ট এলাকার ৮২ শতাংশ কভারেজ দেয়, আর সরকার কভারেজ দেয় তাদের নির্দিষ্ট এলাকার ৬১ শতাংশ। বর্তমান বাংলাদেশে টিকাদানের হার ৯৬ শতাংশ।

QKeadkJ.jpg


ব্র্যাকের মাঠ পর্যায়ের কাজ পরিদর্শনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং তার স্ত্রী চেরি ব্লেয়ার

বাংলাদেশে এখন মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মৌলিক জ্ঞান ছড়িয়ে দিতেও ব্র্যাক কাজ করেছে। প্রায় দশ বছর ধরে ব্র্যাক বাংলাদেশের প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে স্যানিটারি ল্যাট্রিন দেওয়া, দিনে অন্তত তিনবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া শিখানো, প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে বাচ্চাদের হাত ধোয়া শেখানোর কাজটি করে গেছে অকান্ত ভাবে।

এখন আমাদের শিশু মৃত্যুর হার ২০০ থেকে কমে ৪০ এর নিচে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর হার আগে প্রতি লাখে যেখানে ৮০০ ছিল, এখন সেটি ১৭৫ এর নিচে নেমে এসেছে। মাতৃমৃত্যুর হার কীভাবে ৩০ এর নিচে নামানো যায় সেটি নিয়ে এখন কাজ করছে ব্র্যাক। প্রতিটা ইউনিয়েনে দুজন করে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মিডওয়াইফ তৈরি করতে এসএসসির পর তিন বছর মেয়াদি মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্স করাচ্ছে তারা।

vgN7Uzu.jpg


নন-ফরমাল শিক্ষা পদ্ধতি দিয়ে স্যার আবেদ পুরো পৃথিবীর সামনে রেখে গেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত

শিশু শিক্ষা

স্যার আবেদ অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতিষ্ঠাতা। যেসব জায়গায় সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি, সেসব জায়গায় তিনি নন-ফরমাল শিক্ষা পদ্ধতিতে একটি ক্লাসরুম আর একজন মাত্র শিক্ষিকার মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। নন-ফরমাল শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় এক সময় ব্র্যাক ৬৩ হাজার স্কুল পরিচালনা করেছে।

এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২০ লাখের বেশি শিশু ব্র্যাকের প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করেছে, যাদের ৬০ শতাংশের বেশি মেয়ে। নারীর ক্ষমতায়নে সর্বদা সচেষ্ট ব্র্যাকের কল্যাণেই আজকে আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৯৬ জন ছেলের বিপরীতে ৯৮ জন মেয়ে ভর্তি হয়। সময়ের পরিবর্তন এবং চাহিদা বুঝে ব্র্যাক বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও উগান্ডা ও তানজিনিয়ায় ৬৫৬ টি প্লে ল্যাব বা খেলার মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে প্রতিদিন ১১ হাজার ৫০০ শিশুকে শিক্ষা দিচ্ছে।
ব্র্যাক নন ফরমাল শিক্ষা পদ্ধতি ছড়িয়ে দিতে সারা দেশে ৬০ হাজারেরও বেশি স্কুল চালু করেছিল

২০১৯ সালে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রের নোবেল হিসেবে পরিচিত ইয়াইদান পুরস্কার পেয়েছিলেন স্যার আবেদ। পুরষ্কারের সঙ্গে ৩৩ কোটি টাকাও তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি জানান, পুরো টাকাটাই তিনি শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় কাজে লাগাবেন।

ক্ষুদ্র ঋণ

স্যার ফজলে হাসান আবেদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করা। এজন্য তিনিই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প চালু করেন। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্যার আবেদ খেয়াল করেন ঋণের টাকার যথাযথ ব্যবহার দরিদ্র মানুষেরা করছে না বা করতে পারছে না। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, শুধু ঋণের টাকা দিলেই হবে না বরং প্রতিপদে ব্র্যাককে এই ঋণ নেওয়া মানুষদের পাশে থাকতে হবে। তাই এরপর থেকে তিনি যে ছোট ব্যবসার জন্য দরিদ্র মানুষেরা ঋণ নিচ্ছেন, সেই ব্যবসার বিভিন্ন দিক সন্মন্ধে শিক্ষা দিয়ে তাদের প্রশিক্ষিত করতে উদ্যোগী হন।

9M2Ntmj.jpg


স্যার আবেদের সাথে গ্রামের নারীদের কথা শুনছেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্র্যাক মুরগী লালন পালনের জন্য যে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প চালু করেছিল সেটি সফল করতে তারা পুরো প্রক্রিয়ায় ঋণ গ্রহীতাদের পাশে ছিল। বিদেশ থেকে উন্নত মানের মুরগীর বাচ্চা সরবরাহ, মুরগীর রোগ বালাই দমনের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ, মুরগীর উন্নত মানের খাবারের জন্য ফিড মিল গড়ে তোলার সবই ব্র্যাক করেছে। এমনকি যখন অসংখ্য মানুষ সফলভাবে হাঁস-মুরগী লালন পালন করতে পেরেছেন, তখন তাদের বাজার নিশ্চিত করতে তৈরি করেছেন ব্র্যাক পোল্ট্রি।
নারীর ক্ষমতায়ন

zYySCnN.jpg


স্যার আবেদ দেশের সাধারণ মানুষের কাছেও হয়ে ছিলেন "আবেদ ভাই"

স্যার ফজলে হাসান আবেদ জানতেন বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারগুলোর আর্থিক ব্যবস্থাপনার কাজ মেয়েরাই সামলিয়ে থাকেন। তাই তিনি সবার আগে মেয়েদের করতে চেয়েছেন শক্তিশালী। ব্র্যাকের ক্ষুদ্র ঋণের অধিকাংশ গ্রহীতাই ছিলেন নারী।

কৃষি সম্প্রসারণে কাজ করতে গিয়ে ব্র্যাক প্রায় তিন লাখ নারীকে ঋণ দিয়ে সবজি চাষ করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেইসব নারীরা ভালো বীজ না থাকায় শাক সবজি উৎপাদনে সুবিধা করতে পারছিলেন না। এখানেও স্যার আবেদ তাদের একা ছেড়ে দেননি। সব সময়ের জন্যই মাথার ওপর বটবৃক্ষ হয়ে ছিলেন ব্র্যাককে সাথে নিয়ে। তিনি তখন শাক সবজির বীজ তৈরি করা শুরু করার উদ্যোগ নেন।

ব্র্যাকের আরেক বড় প্রতিষ্ঠান আড়ং এর যাত্রাও নারীদের উপার্জনমূলক কাজে যুক্ত করার অভিপ্রায় থেকে। প্রাকৃতিকভাবে মানিকগঞ্জ রেশম চাষের উপযোগী হওয়ায় তিনি সে এলাকার দরিদ্র নারীদের রেশম পোকা পালনের প্রশিক্ষণ দেন। এরপর রেশমের গুটি থেকে রেশমের কাপড় তৈরির কাজ শুরু করেন তারা। কিন্তু বিপণন সমস্যার কারণে নারীরা সেই কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিল। তখন প্রয়োজন থেকেই স্যার আবেদ ১৯৭৮ সালে আড়ং প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে নারী উৎপাদকেরা পণ্য দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা পেতেন।

2jZz7tZ.jpg


শুধু ঋণের ব্যবস্থা করেই স্যার আবেদ তার দায়িত্ব শেষ করতেন না, সেই টাকা যেন তারা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সেটিরও দেখভাল করতেন

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ার কারিগর

ব্র্যাক সামাজিক মূল্যবোধ নির্ভর প্রতিষ্ঠান হলেও স্যার আবেদ ব্র্যাককে পরিচালিত করেছেন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আদলেই। ব্যক্তিগত জীবনে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আবেদ তার ব্যবসা শিক্ষার পুরোটাই বিনিয়োগ করেছিলেন ব্র্যাক গঠনে। তিনি দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে যখন যে কাজ করতে হবে বলে মনে করেছেন সে কাজটাই করেছেন। তবে শুধু বায়বীয় আবেগ নয়, স্যার আবেদ সিদ্ধান্ত নিতেন একটি সমস্যার প্রতিটি স্তর পর্যবেক্ষণ করে, চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। আমরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনের কথা শুনি। সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যে উদ্ভাবন হতে পারে সেটি পুরো বিশ্বকে দেখিয়েছেন স্যার আবেদ।

xuhMeNx.jpg


সামাজিক উন্নয়নেও যে উদ্ভাবন সম্ভব সেটি নিজে মেধা, প্রজ্ঞ্রা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন

তিনি যেকোন কর্মসূচি আগে কার্যকর করার দিকে মন দিতেন। গবেষণালব্ধ ফলাফল ফিয়ে কার্যকরিতা মাপতেন। তারপর সেই কর্মসূচি এফিসিয়েন্ট করে ছড়িয়ে দিতেন পুরো বাংলাদেশে। এই মূলমন্ত্র কাজে লাগিয়েই ব্র্যাককে তিনি পরিণত করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

স্যার আবেদের নেতৃত্ব দান করার ক্ষমতা যেন রুপকথার গল্পের মতোই। ব্র্যাকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার যেমন মনোযোগ পেত, ঠিক একই রকম মনোযোগ পেত একজন অধিনস্ত কর্মচারীও। সবার কাছেই তিনি ছিলেন "আবেদ ভাই" হয়ে।

স্যার আবেদের সাংগঠনিক প্রতিভা ও কর্মোদ্যমের কারণেই আজকে এক লাখের বেশি বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে ব্র্যাক বিশ্বের ১২ টি দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। এশিয়া, আফ্রিকার গরীব দেশগুলো ব্র্যাকের তৈরিকৃত মডেল কাজে লাগিয়ে শিক্ষা এবং দারিদ্রতা দূর করতে কাজ করে যাচ্ছে।

স্বীকৃতি ও অর্জন

5NPLwgD.jpg


২০১০ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানজনক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন

যেসব পুরস্কার পেয়েছেন:

– ২০১৯ সালে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কয়েক দশকব্যাপী অনবদ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ নেদারল্যান্ডসের নাইটহুড 'অফিসার ইন দ্য অর্ডার অব অরেঞ্জ-নাসাউ' খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
– ২০১৯ সালে শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ে অত্যন্ত মর্যাদাসূচক এবং অর্থমূল্যের দিক থেকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ইদান প্রাইজ লাভ করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। হংকংভিত্তিক ইদান প্রাইজ ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার ঘোষণা করে।
– ২০১৮ সালে প্রাকশৈশব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ লেগো ফাউন্ডেশন, ডেনমার্ক প্রদত্ত লেগো পুরস্কার।
– ২০১৭ সালে দারিদ্র্যপীড়িত লক্ষ-কোটি মানুষের সম্ভাবনা বিকাশে সুযোগ সৃষ্টির জন্য লুডাটো সি অ্যাওয়ার্ড।
– ২০১৬ সালে গ্লোবাল লিডারশিপ ফোরাম অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ, ওয়াশিংটন ডিসি প্রদত্ত হোসে এডগারডো ক্যাম্পোস কোলাবোরেটিভ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ।
– ২০১৬ সালে জনস্বাস্থ্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথ পুরস্কার।
– খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ লাভ করেন।
– ২০১৪ সালে রাশিয়ান চিলড্রেন ফান্ড কর্তৃক লেভ তলস্তয় স্বর্ণপদক এবং স্পেনের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা অর্ডার অব সিভিল মেরিট (অর্ডেন ডেল মেরিটো সিভিল) লাভ করেন।
– ২০১৪ সালে নারীর অধিকার রক্ষা ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
– ২০১৩ সালে ওপেন সোসাইটি প্রাইজ লাভ করেন।
– ২০১১ সালে কাতার ফাউন্ডেশন প্রবর্তিত শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ওয়াইজ প্রাইজ লাভ করেন।
– ২০১০ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাজ্যের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মানজনক নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত হন।
– ২০০৯ সালে দ্য ওয়ার্ল্ড আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ ফোরামের পক্ষ থেকে আন্ট্রপ্রেনিওর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড লাভ করেন।
– ২০০৮ সালে ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং ফেলোশিপ অব এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ লাভ করেন।
– ২০০৭ সালে হেনরি আর. ক্রাভিস প্রাইজ ইন লিডারশিপ এবং ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেনশিপ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
– ২০০৭ সালে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
– ২০০৪ সালে গেটস অ্যাওয়ার্ড ফর গ্লোবাল হেলথ ও ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন বিষয়ক পুরস্কার মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
– ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সেন্টার ফর পাবলিক লিডারশিপ প্রদত্ত গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার লাভ করেন।
– ২০০২ সালে দ্য শোয়াব ফাউন্ডেশন সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওরশিপ প্রতিষ্ঠান থেকে 'আউটস্ট্যান্ডিং সোশ্যাল আন্ট্রপ্রেনিওর' স্বীকৃতি লাভ করেন।
– ২০০১ সালে সুইডেন থেকে ওলফ পামে অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
– ১৯৮০ র‌্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।

ব্র্যাককে যেসব পুরস্কার এনে দিয়েছেন:

– ২০০৮ সালে মানবিক ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য কনরাড এন হিলটন হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড।
– ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার।
– ১৯৯২ সালে ইউনিসেফ মরিস পেট অ্যাওয়ার্ড।
– ১৯৯০ সালে অ্যালানশন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার।
– ১৯৮৫ সালে ইউনেসকো নোমা পুরস্কার অর্জন।

সম্মানসূচক ডিগ্রি:

– ১৯৯৪ কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
– ২০০৩ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে ডক্টর ইন এডুকেশন ডিগ্রি।
– ২০০৭ যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স ডিগ্রি।
– ২০০৮ যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
– ২০০৯ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লেটার্স ডিগ্রি।
– ২০০৯ জাপানের রিক্কিও ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স লাভ।
– ২০১০ যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
– ২০১২ যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি।
– ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অব লজ ডিগ্রি।
– ২০১৪ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব দি সাউথ থেকে ডক্টর অব সিভিল লজ ডিগ্রি।

– ২০১৬ যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ব্র্যাডফোর্ড থেকে ডক্টর অব এডুকেশন ডিগ্রি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top