What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মেঘনাদ সাহা: জ্যোতিঃ পদার্থবিজ্ঞানের অগ্রদূত বাঙ্গালী বিজ্ঞানী (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
QKwNohA.jpg


আজ গল্প বলব এক একাকী তরুণের। যিনি কিনা তথাকথিত নিচু শ্রেণীর বাসিন্দা ছিলেন বলে ছাত্রজীবনে সদা নিগৃহীত হয়েছেন। সময়টা ১৯১১ সাল। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের ইডেন হিন্দু হোস্টেল। কাঁধের ঝোলাতে নিজের কিছু দরকারি জিনিসপত্র আর দুচোখে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে মূল ফটক ঠেলে কলেজ প্রাঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন বাংলাদেশের এক তরুণ।

হোস্টেল বেয়ারার সহায়তায় নিজের কক্ষে প্রবেশ করে গোছগাছ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হওয়ার পথে। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরটা টের পেল এবার তার খাবারের প্রয়োজন। তাই তিনি হোস্টেলের ডাইনিং রুমে গিয়ে পিছনের একটি টেবিলে বসলেন। টেবিলে বসার পরই তিনি এক আশ্চর্য জিনিস লক্ষ্য করলেন। দেখলেন, তার আশেপাশের সব ছাত্ররাই একে একে চলে যাচ্ছে। নির্বাক তরুণটি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলেন তাদের চলে যাওয়ার দিকে।

সেদিন তার বুঝতে বেশি সময় লাগে নি, কেন তার সহপাঠীরা তাকে ছেড়ে এভাবে চলে গিয়েছিল। তৎকালীন সমগ্র ভারতবর্ষের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর্ণবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সেদিনের হোস্টেলের নতুন ছাত্রটি জাতে ছিল শূদ্র। সমাজের নিচু শ্রেণীর মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতো তারা। নিচু শ্রেণীর সেই ছেলেটির সাথে মিশলে তাদের জাত যাবে যে! এ বৈষম্য শুধু যে খাবার ঘরেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। পদে পদে পোহাতে হতো নানা জটিলতা। হঠাৎ একদিন কলেজের ব্রাহ্মণ ছাত্ররা তাকে দেবী সরস্বতীর পূজায় আসা বারণ করে দিল। ধর্মের এ দোহাইকে সেদিন নিজের পরাজয় মেনে নিয়ে একাকী কেঁদে বুক ভাসিয়েছিলেন। কিন্তু হাল তিনি ছেড়ে দেন নি। ভাবলেন এই অন্ধকার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় জ্ঞান অর্জন। যাহোক, সেদিন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্ররা কি ভুলেও কল্পনা করেছিল যে, এই শূদ্র ছেলেটিই একদিন তাদের সবাইকেই ছাড়িয়ে যাবে?

হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, সেদিনের সেই প্রত্যাখ্যাত ছেলেটিই আজ বাংলার ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। তিনি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। তিনি সমগ্র ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী। তাঁকে বলা হয় জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানের জনক। বাংলার আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে একজন নিষ্ঠাবান বিজ্ঞানী ও জাতীয়তাবাদী বাঙালি হিসেবে বিশ্বাঙ্গনে প্রমাণ করেছেন সদর্পে। তাঁর অবদানের কথা আজ বিশ্বের সমস্ত বিজ্ঞানমহলে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়।

মেঘনাদ সাহার শৈশবকাল

বাংলাদেশের বংশাই নদের পাড়ে ছোট্ট গ্রাম শেওড়াতলীতে ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ভুবনেশ্বর দেবীর কোল আলো করে আসেন মেঘনাদ সাহা। বাবা জগন্নাথ সাহা ছোটখাটো মুদির ব্যবসা করতেন। টানাটানির সংসারে আট ভাইবোনের মধ্যে মেঘনাদ পঞ্চম। শেওড়াতলী গ্রামেই মেঘনাদের হাতেখড়ি। সেখানে তিনি তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। সেই সময় গ্রামে এর থেকে বেশি পড়ালেখার সুযোগ ছিল না। এদিকে মেঘনাদ ইতিহাস আর গণিতে অত্যন্ত ভালো ফল করায় গ্রামের শিক্ষকেরা তাকে ইংরেজি স্কুলে পাঠানোর জন্য সুপারিশ করেন। ব্রিটিশ আমলের মিডল স্কুল (চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার স্কুল) ছিল ১০ মাইল দূরে শিমুলিয়া গ্রামে। এত দূরে মেঘনাদ কিভাবে গিয়ে পড়বে? সেখানে রেখে পড়ানোর মতো ক্ষমতাও ছিল না মুদি দোকানি বাবা জগন্নাথের। উপায়ান্তর না দেখে মেঘনাদের বড় ভাই জয়নাথ খুঁজে পেয়েছিলেন শিমুলিয়া গ্রামের চিকিৎসক অনন্ত্য কুমার দাসকে। অনন্ত্য কুমার নিজ বাড়িতে মেঘনাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন, বিনিময়ে বললেন সময় পেলে মেঘনাদ যেন তাঁর গরুগুলোর দেখভাল করেন। এভাবেই মেঘনাদ তাঁর পড়াশোনাকে এগিয়ে নিয়ে যান। এর প্রতিদানস্বরূপ প্রাথমিক পরীক্ষায় শিমুলিয়া স্কুলের মেঘনাদ তৎকালীন ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন। সেজন্য তিনি মাসিক চার টাকার একটি সরকারি বৃত্তি ও বৈশ্য সমিতির পক্ষ থেকে মাসিক দুই টাকা বৃত্তি পান। সাথে ভাই জয়নাথ পাটকলে কাজ করে পাঠাতেন পাঁচ টাকা। এই মোট এগারো টাকা সম্বল করে শেওড়াতলী থেকে মেঘনাদ পা বাড়ান ঢাকার উদ্দেশ্যে।

১৯০৫ সালে ভর্তি হন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে। সে সময়টা ছিল দুই বাংলার জন্য অত্যন্ত সংকটময়। বঙ্গভঙ্গ নিয়ে দুই বাংলার নীতিগত দ্বন্দ্ব থেকে বিভিন্ন আন্দোলনের জন্ম নেয়। ছোট্ট মেঘনাদ সে আন্দোলনে সরাসরি যোগ দেন। এর পরিণাম কিন্তু খুব একটা ভালো হয় নি। অন্যান্য আন্দোলনকারীদের সাথে মেগনাদকেও কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং বৃত্তিও বাতিল করে দেওয়া হয়। এতে মেঘনাদ পড়েন অকূল পাথারে। তখন বাবার মুদি দোকানে বসা ছাড়া আর কোন রাস্তা মেঘনাদের সামনে খোলা ছিল না। এমন সময় বড় ভাই আবার তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান। পড়াশোনার খরচ দিতে থাকেন। মেঘনাদ সাহা আবার লেখাপড়ায় মনোযোগী হন। তিনি ১৯১১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। শুধু পাস নয়, গোটা ভারতবর্ষে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম আর গণিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এমন ফলে আরো উৎসাহিত হয়ে মেঘনাদ ঢাকা থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে যান।

উচ্চশিক্ষা

ঢাকার সংগ্রামী জীবন পার করে ১৯১১ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে মিশ্র গণিত বিভাগে ভর্তি হন। শত প্রতিকূলতার মাঝে অধ্যয়নকালে মেঘনাদ সাহা বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন বাংলার আরেক কিংবদন্তি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে। আর শিক্ষক হিসেবে সান্নিধ্য লাভ করেছেন স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এবং স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর। ১৯১৩ সালে মেঘনাদ সাহা স্নাতক ও ১৯১৫ সালে ফলিত গণিতবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে মেঘনাদ প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে মেঘনাদ সাহার মনোমালিন্য হয়। এই দ্বন্দ্বের জেরেই তাঁকে গণিত বিভাগ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বদলি করে দেওয়া হয়। এই ঘটনা মেঘনাদ সাহার জীবনে সোনায় সোহাগা হয়ে আসে। তিনি পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চলমান গবেষণাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছিল বলে পদার্থবিজ্ঞানের কোন বিদেশী বই ভারতবর্ষে আসত না। সেজন্য তিনি তাঁর বিদেশী বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তাঁর ডাকে সাড়া দেন পল জোহানেস ব্রাল নামক এক অস্ট্রিয় বিজ্ঞানী। তিনি মেঘনাদ সাহাকে বিভিন্ন বিদেশী বই সংগ্রহে সহায়তা করেন। সেসব বই পড়ে মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞানের পিপাসা মেটাতেন।

wy9Qz5F.jpg


বাংলার বিজ্ঞানীরা। বাঁ থেকে বসা মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ (রসায়নবিদ)। বাঁ থেকে দাঁড়ানো স্নেহময় দত্ত (পদার্থবিজ্ঞানী), সত্যেন্দ্র নাথ বসু, দেবেন্দ্র মোহন বসু (পদার্থবিজ্ঞানী), নিখিল রঞ্জন সেন (পদার্থবিজ্ঞানী), জ্ঞানেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় (পদার্থবিজ্ঞানী), নগেন্দ্র চন্দ্র নাথ (রসায়নবিদ)

মেঘনাদ সাহার গবেষণা

প্রেসিডেন্সি কলেজে মেঘনাদ সাহা স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে শুরু করেন। তার পড়ানোর বিষয় ছিল হাউড্রোস্ট্যাটিক্স, বর্ণালিবিদ্যা ও তাপগতিবিদ্যা। শিক্ষকতার পাশাপাশি গবেষণার কাজও শুরু করেন তিনি। কিন্তু প্রেসিডেন্সি কলেজে সেসময় কোন উন্নত গবেষণাগার না থাকায় বেশ অসুবিধায় পড়েন তিনি। ১৯১৭ সালে মেঘনাদ সাহা 'Selective Radiation Pressure' নামক একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লিখে Astrophysical Journal এ প্রকাশ করার জন্য প্রেরণ করেন। সেখান থেকে মেঘনাদকে জানানো হলো, প্রকাশনার খরচ লেখককে বহন করতে হবে। কিন্তু মেঘনাদের কাছে যথেষ্ট অর্থ না থাকায় তখন তাঁর গবেষণাটি প্রকাশ করতে পারেন নি। আস্তে আস্তে মেঘনাদ সাহা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। সেখানে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে যান সহপাঠী সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়নকালে মেঘনাদ সাহা জার্মান ভাষা শিখেছিলেন। আর সেটাই কাজে লাগালেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। তিনি এবং তাঁর বন্ধু সত্যেন্দ্রনাথ বসু দুজনে মিলে ১৯১৯ সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের উপর প্রকাশিত বিখ্যাত নিবন্ধটি জার্মান ভাষা থেকে প্রথম ইংরেজি অনুবাদ করেন। এই অনুবাদের সাহায্যেই ব্রিটিশ জ্যোতির্বিদ আর্থার এডিংটন আইনস্টাইনের তত্ত্বের প্রতিপাদন করেছিলেন। ১৯১৯ সালে মেঘনাদ সাহা বেশ কয়েকটি গবেষণা কাজ শুরু করেন। তিনি আলোর তত্ত্ব ও বিভিন্ন মহাকাশীয় ঘটনাবলী ব্যাখ্যায় এর ব্যর্থতা নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। তিনি ম্যাক্সওয়েল তত্ত্বের উপর বিশদ গবেষণা করে এর ব্যাখ্যা তৈরি করতে সক্ষম হন। এভাবে মেঘনাদ সাহা বিশ্বের দরবারে তাঁর গবেষণার জন্য প্রশংসিত হতে থাকেন। সে বছরই অর্থাৎ ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মেঘনাদ সাহাকে 'ডক্টর অব সায়েন্স' প্রদান করে। তাঁকে হার্ভার্ডের তারকা বর্ণালী সম্পর্কিত শ্রেণিবিন্যাসের তাত্ত্বিক আলোচনার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে গবেষণা করার সুযোগ পান। এরপর তিনি প্রথমে পাঁচমাস লন্ডনে বিজ্ঞানী আলফ্রেড ফাউলারের ল্যাবরেটরিতে এবং পরে বার্লিনে ওয়াস্টার নার্নস্টের সঙ্গে কাজ করেন।

১৯১৯ সালের মতো ১৯২০ সালটাও মেঘনাদ সাহার কাছে ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। সে বছর তিনি চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এ নিবন্ধগুলোর মূলবিষয় ছিল তাপীয় আয়নবাদ (Thermal Ionisation)। এ তত্ত্বই বিজ্ঞানে 'সাহা সমীকরণ' নামে পরিচিত। গুরুত্বপূর্ণ এ সমীকরণ আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ মেঘনাদ সাহাকে সম্মানজনক 'গ্রিফিথ পুরস্কারে' ভূষিত করা হয়।

WWJDgps.jpg


গবেষণাগারে সহকর্মীদের সাথে মেঘনাদ সাহা

দেশপ্রেমিক মেঘনাদ

১৯২৩ সালে দেশমাতৃকার টানে মেঘনাদ ইউরোপ ছেড়ে এসে যোগদান করেন প্রথমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর চলে যান এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এলাহাবাদে তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর অধ্যাপনা করেন। এদিকে মেঘনাদ সাহাকে ১৯২৫ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মেঘনাদ সাহা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউক্লিয় পদার্থ বিজ্ঞান বিষয় সংযোজন করেন। এছাড়া তিনি ভারতবর্ষে প্রথম সাইক্লোট্রন নির্মাণ করেন। ১৯৫০ সালে ভারতীয় নিউক্লিয়ার পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। পাশাপাশি মেঘনাদ সাহা দামোদর উপত্যকার মূল নকশা করেন।

রাজনীতিতে মেঘনাদ

মেঘনাদ সাহা এটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছিলেন বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোতে সরাসরি যুক্ত হতে হবে। এ লক্ষ্যে ১৯৫১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি স্বাধীন ভারতের বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে হাত দেন। ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মেঘনাদ সাহা নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউটের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিতে নয়াদিল্লি ভ্রমণ করেন। কিন্তু সে বৈঠকে তাঁর আর বসা হয়নি। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাত্রাপথেই পৃথিবী থেকে মেঘনাদ সাহা চিরবিদায় নেন। আর সেই সঙ্গে নিভে যায় ভারতবর্ষের জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

নরওয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিদ ভাইন রসল্যান্ড মেঘনাদ সাহাকে নিয়ে লিখেছিলেন, "যদিও বোরকে পরমাণু তত্ত্বের অগ্রদূত বলা হয়ে থাকে, আমার মতে পরমাণু তত্ত্বকে কেন্দ্র করে মহাকাশের তারকারাজির বর্ণালীক্রম নিয়ে একটি সুসজ্জিত তত্ত্ব তৈরি করে (১৯২০ সালে) সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন একজন ভারতীয় বিজ্ঞানী। তাঁর নাম মেঘনাদ সাহা।"

মেঘনাদ সাহা প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন, বিজ্ঞানকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে একটি দেশের জাতীয়তাবাদের সুশৃঙ্খল কাঠামো গঠন করা যায়। তিনি ভারতের রাজনীতিতে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন পুরো নব্য ভারতের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। অনেকে মনে করেন সাহা সমীকরণের চেয়ে জাতীয়তাবাদের ফসল নিউক্লিয় ইনস্টিটিউট মেঘনাদ সাহার সেরা কীর্তি। যাঁদের অবদানের কারণে বর্তমান ভারত বিজ্ঞানক্ষেত্র চষে বেড়াচ্ছে তাঁদের তালিকা তৈরি করলে প্রথম সারিতে উঠে আসবে যাঁর নাম, তিনি মেঘনাদ সাহা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top