What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার: সৌন্দর্যময় এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
mczeWwZ.jpg


বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয়, প্রাচীন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও স্থাপনা। এসব স্থাপনা ও স্থানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর অন্যতম। বর্তমানে এই স্থানটি ঘুরে দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় জমায়। অথচ একটি সময় কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল এই বৌদ্ধবিহারটি। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার অন্যতম নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নির্মাণ ও ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ইতিহাস থেকে শুরু করে ধ্বংসাবশেষের পুনরুদ্ধার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আজকে জানবো।

অবস্থান ও ইতিহাস

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বৌদ্ধবিহার হিসেবে খ্যাত সোমপুর বিহার, সোমনাথ বিহার কিংবা পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নামে সুপরিচিত। এই বৌদ্ধ বিহারটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর নামক ইউনিয়নে অবস্থিত। বর্তমানে একাধিক নামে ডাকা হলেও সোমপুর বিহারই এটির প্রাচীন নাম ছিল বলে ধারণা করা হয়। পাল বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে কিংবা নবম শতাব্দীর প্রথমদিকে এই বৌদ্ধবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে অনুমান করা হয়। তবে তার পুত্র দেবপাল নির্মাণ করেছিলেন বলেও কথিত রয়েছে। তবে ধর্মপাল কিংবা দেবপাল যে-ই নির্মাণ করে থাকুক না কেনো; এটি পাল রাজাদের দ্বারাই নির্মাণ হয়েছিল এই বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।

প্রায় ৩০০ বছরব্যাপী এই বৌদ্ধবিহারটি বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র হিসেবে টিকে ছিল। তখনকার সময়ে তিব্বত, চীন, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধরা ধর্মচর্চা ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য এখানে আসতেন। মনে করা হয় যে, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান খ্রিস্টীয় দশম শতকে এই বিহারের আচার্য ছিলেন। সোমপুর বিহার হঠাৎ করেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি; ধারণা করা হয়, পাল বংশের পর এই উপমহাদেশে হিন্দু রাজাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেলে আস্তে আস্তে এই বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধদের আনাগোনা কমতে থাকে। ধীরে ধীরে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মূল মন্দিরের ওপর মাটি জমা হতে থাকে এবং গাছপালাও জন্ম নিতে থাকে; আর এভাবে এটি দেখতে অনেকটা পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে যায়। ফলে স্থানটিকে দেখে জনগণের কাছে পাহাড় বলে মনে হতো; আর এ থেকেই এই স্থানের নাম পাহাড়পুর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

e5TTJpn.jpg


মূল মন্দিরের চারদিকে মাটি চাপা পড়া কক্ষ

দীর্ঘ প্রায় ছয়শত বছর মাটিচাপা থাকার পর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই বিহারটির সন্ধান মেলে। তারপর ১৮৭৯ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম এই স্থান পরিদর্শন করতে এসে এখানে খনন কার্য পরিচালনার চেষ্টা করেন কিন্তু স্থানীয়দের বাঁধার মুখে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে কিছুটা খনন কার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আশির দশকে এখানে পুরোদমে খনন কার্য পরিচালনা করা হয় এবং পরিপূর্ণভাবে জনগণের কাছে উন্মোচন করা হয় কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এই বৃহৎ ও প্রাচীন বৌদ্ধবিহারটি।

অভ্যন্তরীণ বর্ণনা ও বর্তমান সৌন্দর্য

প্রায় ২৭ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত সোমপুর বিহারটিতে ১৭৭টি কক্ষ রয়েছে এবং মাঝে রয়েছে বিখ্যাত মূল মন্দিরটি। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করেই কক্ষগুলো গড়ে উঠেছে। চতুর্ভুজাকৃতির বিহারটির এসব কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা অবস্থান করতেন। বর্তমানে এই কেন্দ্রীয় মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ২০ মিটার, যা ঐসময় ৩০ মিটারেরও বেশি ছিল বলে মনে করা হয়। স্থানীয়দের ধারণা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় মন্দিরটি ক্রমাগত নিচের দিকে ডেবে যাচ্ছে; তারা বলেন, আশির দশকে যখন খনন করা হয়েছিল তখনো এটির উচ্চতা আর একটু বেশি ছিল।

icjduyT.jpg


মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোটার কাজ; Image Source: commons.wikimedia

এই মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ করা ছিল, যা এখনও বিদ্যমান আছে। কেন্দ্রীয় মন্দির ও কক্ষগুলো ছাড়াও স্নানাগার, শৌচাগার, সন্ধ্যাবতীর ঘাট, উন্মুক্ত অঙ্গন, সত্যপীরের ভিটা, গন্ধেশ্বরী মন্দির, ক্ষুদ্রাকৃতির অনেকগুলো ইমারত, রন্ধনশালা, ভজনশালা, কূপ, পাকা নর্দমা, বিভিন্ন মূর্তি ইত্যাদির সমন্বয়েই সোমপুর বৌদ্ধবিহারটি তখনকার সময়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থাপনা হিসেবেই পরিচিত ছিল; যার ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। আর এই ধ্বংসাবশেষ দেখতেই প্রতিদিন ভিড় করে অসংখ্য দর্শনার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের দল।

বর্তমানে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জাদুঘর। বিহারটির প্রবেশ মুখ থেকে শুরু করে মন্দির পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে রয়েছে বিভিন্ন ফুলের বাগান, যা দর্শকদের সহজেই মোহিত করে। আবার দেখতে পাবেন প্রাচীনকালে নির্মিত লাল রংয়ের ছোট ছোট ইটের প্রশস্ত দেওয়াল। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ও এটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ইউনেস্কো ইতিমধ্যেই এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এই স্থানটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নানাবিধ পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলছে।


 

Users who are viewing this thread

Back
Top