What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected রাজা - একটি লাল মোরগ (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
102
Messages
12,090
Credits
112,008
Calculator
Mosque
Calculator
LittleRed Car
LittleRed Car
LittleRed Car
"সংগৃহীত"


রাজা - একটি লাল মোরগ

মূল লেখকঃ জনাব এম আর খান সুমন




মাঠের যে প্রান্তেই থাকুক না কেন যদি সে আমাকে একটিবার দেখেছে তবেই হয়েছে- বন্ধু বান্ধবীর আড্ডা ছেড়ে ভু-দৌড় দিয়ে সোজা আমার কাছে। সবাই ঈর্ষার চোখে দেখত আর মনে মনে হয়তবা ভাবত! আহা! আমার যদি এমন সুন্দর একটি লাল মোরগ থাকতো!

হ্যাঁ, আমি একটি মোরগের গল্পই বলব। নাম ছিল তার রাজা। একেবারে ডিমে তা দেয়া থেকে শুরু করে বাচ্চা ফুটে বের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা-! গুনে গুনে পাক্কা এগারটি মুরগীর ছানা। আর তা দ্যাখে আমার শিশু মনের সে কি আনন্দ! চাউলের কুড়া,ধানের চিটা,কাউন দিয়ে পরম যত্নে সেগুলোকে লালন পালন করতে লাগলাম। উদ্দেশ্য, এদের মধ্যে যেগুলো মোরগ হবে সেগুলোকে আমি পুষব। কিছুটা বড় হতেই কিছু ছানা মারা পরল নিষ্ঠুর কাকের ছোবলে- আর বাকি কিছু পরিবারের ভোজন বিলাসিতায়। তারপরও বাকি যে কয়টা ছিল, ঠিক তার মাঝখান থেকেই আমি একটি মোরগ আবিস্কার করলাম। লাল পালকে আবৃত মোরগের বাচ্চাটি আমার মন কেড়ে নিল। নাম দিলাম তার রাজা। শুরু হল তাকে নিয়ে আমার আলাদা যত্ন আত্তি! অনেক সপ্ন বোনা! যে করেই হোক ওকে যে আমার মাঠের রাজা বানাতেই হবে। তাই বাকি গুলোর থেকে আমার রাজা কে একটু বেশী বেশীই খাওয়াতে লাগলাম। দিনে দিনে রাজাও আমার বড় হতে লাগলো, লাল সুন্দর পালক,গলায় সোনালী কেশ,লেজের দিকে রংধনুর মত বাক খাওয়ানো নেভি ব্লু বড় দুইটা পালক, লম্বা কানের লতি, মাথায় তার রক্তিম সূর্যের মত টক টকে লাল খাঁজকাটা বড় একটি ঝুটি! প্রথম প্রথম অস্ফুট কণ্ঠে কুক কুরুক কুউক... ডাকার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা; শেষবধি যার চূড়ান্ত সফলতা! সুন্দর করে কুক্কুরুউক কুক… ডাকতে শেখা! দেখতে দেখতে ও যেন আমার মনের মত হয়ে উঠল! ঠিক যেন ওই শিশুতোষ বইতে আঁকা হৃষ্টপুষ্ট মোরগ গুলির মতই। ঝলমলে সুন্দর!

ইতিমধ্যেই রাজা আমার অনেক নাম ডাক কামিয়ে ফেলেছে অল্প বয়সেই সমসাময়িক সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুদ্ধে হারিয়ে দিয়ে। এতদিনে রাজা আমার সত্যিকারের মাঠের রাজা হয়ে উঠেছে। সকাল- সকালে হাজারো মোরগ মুরগীর মাঝে রাজা যখন আমার দম্ভভরে কোন সুউচ্চ পিলার কিংবা গাছের মগডালে অথবা বারান্দার চালে উঠে কূক্কূড়ূক কূক… ডাকতো আমি অনেক দূর থেকেও তা স্পষ্ট শুনতে পেতাম। আনন্দে আমার মনটা নেচে উঠত। হাজারো মোরগের ডাকের মাঝে আমি আমার রাজার ডাক’টাকে ঠিকই আলাদা করতে পারতাম। চারদিকে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে ফিরে আসতো আমার রাজার সেই ডাক- কুক্কুরুউক কুক… !

কত শত মোরগের সাথে যে ফাইট করেছে আমার রাজা! কিন্তু কেও রাজাকে হারাতে পারেনি। সব সময় রাজাকে খুব চোখে চোখে রাখতাম! বাজার কিংবা ব্যাচেলর কোয়ার্টারের দিকে খুব একটা ঘেষতে দিতাম না। কেননা ঐ দুইটি জায়গাই ছিল মোরগ-মুরগীর জন্য মৃত্যুকূপ!

তখন মহসিন কাকার (পারভিন, পারভেজ, পাভেলের আব্বা) মোরগ মুরগীর একটি খামার ছিল। সখের বশে কিছু মোরগ মুরগি পালতেন। একবার মনে আছে- সে সময় তিনি ৫০০ টাকায় একটি বিশালদেহী বিদেশি মোরগ কিনে আশ-পাশে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন! আমিও দেখতে গেলাম, সত্যিইতো! অনেক বড়! আমার রাজার চাইতেও প্রায় দিগুণ বড় হবে। যেমন সাস্থ্য, তেমন শক্তি! আমার ছোট্ট মনে ভর করে বসল একটি ভয়, একটি শঙ্কা! কারন- কাকার ছোট ছেলে পাভেল আমার বন্ধু। ও খুব ভাল করেই জানে আমার দেশি মোরগটা তখন মাঠের রাজত্ব করছে। আমি খুব করে মনে মনে চাইছিলাম পাভেল যেন আমার মোরগটার কথা ক্ষণিকের জন্যে একেবারেই ভুলে থাকে! কারন আমি জানতাম পাভেল আমার রাজার সাথে ওর হাতির মত দানব মোরগের লড়াই বাঁধানোর একটি গোপন ফন্দি আঁটতে পারে। দিতে পারে প্রস্তাব।
চল তর রাজার সাথে আমাদের নতুন কেনা মোরগের সাথে একটি যুদ্ধ বাধিয়ে দেই।

মনে উকি দেয়া ভাবনাটি এবার সত্যিই সত্য হল। প্রস্তাব দিয়ে বসল পাভেল। চল তোর মোরগের সাথে আমারটার যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলি। এখন দেখি কারটা মাঠের সেরা! কারটা মাঠের রাজা।
অন্তরটা সায় না দিলেও-মুখেও না করতে পারলাম না। কারণ- তাতে যে আমার অহংবোধে লাগবে আঘাত! রাজা আমার হয়ে যাবে অনেকটাই ছোট! তাই মনকে কোন ভাবে সান্ত্বনা দিয়ে রাজাকে নিয়ে এলাম যুদ্ধের ময়দানে! বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা! কচিকাঁচাদের ভিড়! আর শুরু হল দুই মোরগের এক ঐতিহাসিক লড়াই!

আমার ছোট্ট রাজা রাজার মতই যুদ্ধ শুরু করল। গলার কেশ গুলো ফুলিয়ে দিয়ে ঢালের মত করে প্রতিপক্ষকে জানান দিল, আমি প্রস্তুত! এইবার তুমি তৈরি হও সৈনিক। তুমুল যুদ্ধ। কিন্তু এত বিশাল মোরগের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে আকৃতিগত কারণে আমার রাজাকে পর্যুদস্ত হতে হচ্ছিল বারবার। কারণ অই ঢাউস সাইজের মোরগটাকে ঠোকর দিতে গেলে আমার রাজাকে কয়েক ফিট উপর থেকে ঝাপিয়ে পরতে হয়, যে কাজটা কিনা পাভেলের অই মোরগটা দাঁড়িয়ে থেকেই অনায়াসে করতে পারে। তার পায়ের নিচ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে আমার ছোট্টরাজা। এ যেন একটি অসম লড়াই! দানবের সাথে মানবের। সিংহের সাথে চিতার। অনেক বেশী ক্যালরি ব্যয় হচ্ছিল আমার রাজার। প্রায় আধা ঘণ্টা কেটে গেল তবুও লড়াই চলছে! দেখতেই পাচ্ছি রক্তে রক্তে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ওর ছোট্ট শরীর!মাথার লাল ঝুটি! তবুও হাল ছাড়ছে না- ও। যেন পণ করেই নেমেছে রণক্ষেত্রে আমাকে খুশি করতে, তাই জীবন বাজী রেখে সেয়ানে সেয়ানে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে আমার ছোট্ট রাজাটা…।

আমার দু’চোখ তখন পানিতে ছল ছল করছিল। চাইছিলাম লড়াইটা মধ্যপথে থামিয়ে দিতে। কিন্তু বলতে পারছিলাম না। ততক্ষনে দেখলাম পাভেলের মোরগটাও প্রায় সমান ভাবে অনেকটাই আঘাতপ্রাপ্ত! ও অ, হয়ত মনে মনে তা-ই চাচ্ছিল! কিন্তু মুখে কারোরই সেই অভিব্যক্তি নেই। মান সম্মানের ব্যাপার! শেষমেশ যখন প্রায় নিশ্চিত যে, এ যুদ্ধের কোন ফলাফল আসবেনা, তখন দুজনের সম্মতিতেই যুদ্ধটা থামিয়ে দিলাম- দুটিকেই যৌথ জয়ী ঘোষণা করে। ঠিক সে মুহূর্তে আমার চেয়ে সুখী মানুষ পৃথিবীতে বুঝি দ্বিতীয়টি আর কেউ ছিলনা!

ততক্ষনে ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে আমার রাজার। আমি দৌড়ে গিয়ে রাজাকে আঁকড়ে ধরি। বুক তোলা করে তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে আগে ক্ষত গুলো পরিষ্কার করি তাতে মলম লাগিয়ে দিই, ভাল করে খাওয়াই। এতক্ষণে যেন আমার রাজা প্রাণ ফিরে পেল!জীবনে অনেক যুদ্ধ বাঁধিয়েছি আমি রাজাকে নিয়ে কিন্তু সেদিনের মত এতটা নির্মম আর এতটা হৃদয়বিদারক যুদ্ধের অনুভূতি আগে কখনও হয়নি আমার।

সবই ভালই চলছিল। তখন আমার রাজার বয়স প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেছে। অনেক বার বাবা মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজনদের লোভাতুর দৃষ্টি থেকে রাজাকে আমি রক্ষা করতে পেরেছি বটে কিন্তু এ যাত্রায় আর পারলামনা। হঠাত সে সময় হাস মুরগীর- রাণীক্ষেত রোগটা মহামারী আকার ধারণ করল। আমার রাজাও এ রোগে আক্রান্ত হল। যথাসাধ্য চেষ্টা করেও নিরাময় করা যাচ্ছিলোনা। মা জবাই করার জন্য পায়তারা শুরু করলেন কিন্তু আমার পীড়াপীড়িতে তা পারছিলেন না। মা গৃহিণী মানুষ। তার সোজা সাপটা হিসাব, চোখের সামনে প্রায় দুই কেজী ওজনের ওমন মোরগটাকে স্বেচ্ছায় মরতে দেখার আসলে কোন মানেই হয়না। তাই অনেকটা আমার অগোচরেই জবাই করে দিলেন, সময়টা বিকেল বেলা, যখন আমি মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম।

আর বিপত্তিটা ঘটল ঠিক তখন, যখন আমি রাতে খেতে আসলাম। বড় রানটা (মুরগীর উরুর অংশ) আমার থালাতেই বেড়েছেন আমার মা। ভেবেছিলেন হয়ত এটা দেখেই আমি নিশ্চুপ হয়ে যাবো। তিনি হয়তো অতোটা ভাবতে পারেননি যে এর পরিণতিটা ঠিক কতটা ভয়াবহ হতে পারে! আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি সেদিন রাগে-ক্ষোভে প্লেটটা ছুড়ে মেরেছিলাম আর অসহায় বালকদের মত ডুকরে ডুকরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলাম। আর চীৎকার করে কেবলই বলছিলাম- আমার মোরগ ফিরিয়ে দাও! আমার মোরগ ফিরিয়ে দাও!! আমার মোরগ ফিরিয়ে দাও!!!
যদিও বিষয়টা সবার অনেকটা অনুমেয়ই ছিল তবে ঠিক এতটা নয়। সবাই মিলে তখন আমাকে বৃথা বুঝিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছিল- আবার তোকে আরও অনেক বড় মোরগ কিনে দিবো -আরও সুন্দর, হৃষ্টপুষ্ট আরও অধিক বলবান… ।

কিন্তু ওঁরাতো জানতোনা- আমার শিশু মনে রাজা যে ছিল একটাই! আমার আত্মার-আত্মা! ওকে জবাই করে সেদিন আমার সে অনেক দিনের জমাট বাঁধা আত্মাটার- নীরব সমাধি দিয়েছিল ওঁরা....।

"সংগৃহীত"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top