আমার বৌ কোনো বই পড়ে শেষ করে ফেললেই এমন ভাব নিবে যেন সে দুনিয়ার জ্ঞানী হয়ে গেছে! এজন্য আমি তাঁকে কোনো বই সহজে শেষ করতে দেই না। কারণ ম্যাডামের বই পড়ে শেষ হওয়া মানে, আমাকে কিছু উদ্ভট প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া!
এই মাত্র মনে হয় সে আরেকটা বই পড়ে শেষ করলো। যেভাবে হাফ ছেড়েছে তাইতো বুঝা যাচ্ছে। চোখগুলো চ্যাপ্টা করে বললো, " আচ্ছা, বলো তো ' এইচ-২১' ইতিহাসের কোন গুপ্তচরের কোড নেম ছিলো? "
তাঁর প্রশ্নের উত্তর না আমি জানি, আর না আমি প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক। জগ থেকে গরম পানি গ্লাসে ঢেলে লেবু কাটছি। কথাটা শুনিনি ভান করলাম।
সে আবার বললো, " কথা টা কানে গেছে তো মনে হচ্ছে, উত্তরটা দিলেই হয়! "
কারেন্ট চলে যাওয়ায় বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ! মাথা গরম হয়ে আছে। কোথায় সে হাতপাখা নিয়ে এসে একটু বাতাস করবে, নাহ সে কোন ইতিহাসের কোন ছাইয়ের কোড নেম নিয়ে পড়ে আছে! তাঁর দিকে ফিরে বললাম, " না বললে? "
সে বেশ আত্মবিশ্বাস আর হতাশা নিয়ে বললো, " না বললে মানে? তুমি আসলে কিচ্ছু জানো না, বলবে কীভাবে? আব্বা কার সাথে যে আমার বিয়ে দিছে! "
কথাটা বলার সাথে সাথেই তাঁর কপালে হাত। বুঝা যাচ্ছে কতো বড় ক্ষতি না জানি হয়ে গেছে! অথচ তাঁর তিন বোনের মধ্যে একমাত্র বুদ্ধিমান জামাই থাকলে আমিই আছি! চাপা মারছি না। তাঁর দুটো বোনের জামাই আসলে দুলাভাই নাকি দুলাবোন আমি বুঝে উঠতে পারি না।
বৌয়ের কথায় ঘর থেকে বের হয়, বৌ অনুমতি দিলে ছাদে যেতে পারে, বৌ বাপের বাড়ি চলে আসলে তাঁরাও পিছন পিছন দৌড়ে চলে আসে! পুরুষের একটু ওজন তো থাকা দরকার নাকি? যাগকে সে বিষয়।
আমি তাঁর প্রশ্নের জবাবে বললাম, " তুমি কী জানো ২০১১-২০১২ সিজনে, চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ী চেলসি ফুটবল ক্লাবের হ্যাড কোচ কে ছিলো? "
সে বেশ বিরক্ত হলো। প্রশ্নের প্রতিত্তোরে প্রশ্ন আশা করেনি মনে হয়।
বললো, " আমি কী তোমার মতো সারাদিন ফুটবল নিয়া পইড়া থাকি? খেয়েদেয়ে আমার কাজ আছে! "
এবার আমার পালা। বললাম, " তো আমি কী সারাদিন বই নিয়া পইড়া থাকি? না আমার খেয়েদেয়ে কাজ নাই? "
সে আধুনিক চৌকির মধ্যখানটায় বসে ছিলো। এক প্রান্তে সরে এসে বললো, " খোঁটা দিলা না? মূর্খ মানুষের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি আর কী আশাই করা যায়? "
গুরুজনেরা এজন্যই বলে, সংসারের শান্তির জন্যে মাঝে মাঝে সত্য বলতে নাই। আমি অবশ্য সে কথা মেনেই চলি। এজন্যই টিকে আছে আজও। নাহলে বাসর রাতেই সংসার ধ্বংসলীলায় পরিণত হতো! বই পড়া না কোনো খারাপ বিষয়, আর না আমি খোঁটা দিয়েছি!
কিছুই করার নাই। এক লাইন বেশি বুঝা মেয়ে মানুষদের জন্মগত অধিকার।
যাহোক, জবাব দিতে আমিও কম জানি না। আম্মা আমাকেও জন্মের পরে মধু খাওয়াইছে। পারলে তাঁর থেকে বেশি মধু খাওয়াইছে। কারণ আমার আব্বা মধুর ব্যবসা করতো। সুতরাং জবাব দেওয়ায় পিছে থাকা আমার রক্তের সাথে মানায় না।
বললাম, " তোমার তিন বোনের জামাই, তুমি সহ তোমার বাপ, মা যারা আছে পরিপারে। সবাই মিলে আমার মস্তিষ্কের এক মিলিগ্রামেরও সমান না বুঝছো? গরমে এমনিতেই অবস্থা চরম। আর মাথা খারাপ করো না! "
এটা শুনে সে সাপের মতো ফুসফুস করে উঠবে এটা পানির মতো পরিষ্কার। এমনভাবে তাকালো মনে হয় কালী দেবী ভর করেছে। চোখগুলো লাল টসটসে হয়ে গেছে। এক কদম আমার দিকে দিয়ে বললো, " আব্বা আম্মারে নিয়া কথা বলবা না একদম! "
" ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়, এটা কী কোনো বইয়ে পাওনি আজও? নাকি সব পড়ার নামে ভান করো? "
তাঁর রাগের তাপমাত্রা আরো কয়েক ডিগ্রী বেড়ে গেলো।
" মানে? কী বলতে চাচ্ছো? তুমি পানির মতো সোজা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলা না। আর আমি ইট মারছি? "
" তুমিও পানির মতো সোজা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো নাই। ধরে নাও এখন তাহলে, ওটা পাটকেল ছিলো না! "
" ওরকম ফালতু প্রশ্নের উত্তর জানার একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কোনো দরকার নাই। "
" তবে, সেম টু ইউ! "
" মানেহ? আমারটা ফালতু প্রশ্ন? "
বলে হাত থেকে বইটা খাটের উপরে রেখে চেঙ চেঙ করে রুম ত্যাগ করলো। কী তেজ বাবারে বাবাহ! এতো রাগ গোশ্যা করে কোনো লাভ আছে? সত্য মেনে নিলেই হয়।
হার আর সত্য, দুটো জিনিস মেয়েরা সহজে মেনে নিতে চায় না। কোনো এক কিংবদন্তী বলেছিলেন।
কারো এতো রাগ দেখার, কারো চোখের এতো আগুন দেখার মতো সময় আমার নাই। কালকেও ফ্রিজটা এসে দুজন ঝালাই-ঠালাই দিয়ে ঠিক করে গেছে। আজকেই আবার পানি ঠান্ডা হচ্ছে না! ওহ মনে পড়ে গেলো।
কাল দু'কেজি গোল্লা এনেছিলাম। ম্যাডাম বলেছিলো, কারণ মিস্ত্রি দুজন নাকি আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকার!
সুতরাং a√ × b√ প্রমাণ হয়ে গেলো যে। এক দিনের মধ্যে ফ্রিজ আবার পুনরো রূপ ধারণ করায় আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নাই!
সামনের বাসার পিংকীটা। গুলুমুলু পিংকীটা, হাতে করে কী যেন নিয়ে আসলো। আমার হাতে দিয়ে বললো, " আংকেল, বরফ খাও নাকি তুমি? আম্মু দিছে। "
বলেই সে দৌড় দিলো। মেয়েটার মা ঠিক আমার আম্মার মতো। চোখ দেখে শরীরের জ্বর মাপতে পারে। বড় কাজে দিলো বরফের টুকরোগুলো।
গোল টেবিলের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
দুয়েকটা বরফের টুকরা মাথায় দিয়ে বসে আছি। বাতাস নাই কোথাও। মাথা খুবই গরম। ঘামে একাকার। শান্তি লাগছে কিছুটা।
আমার এক ফোঁটা শান্তি ঘরের উচ্চবিত্ত নিম্নমনের মহিলাটার সহ্য হয় না একদম! একদমই না।
টেবিলে একটা থাপ্পড় দিলো, যেন ছোট্ট টেবিলে হাতির ভর! টেবিলের ঝাঁকুনিতে আমার মাথা থেকে বরফের টুকরা শার্টের ভেতর দিয়ে সোজা নিচে পড়ে গেলো! ময়লা লেগে গেছে। আর কী মাথায় দেয়া যাবে?
মেজাজ এখন খুবই খারাপ হলো! দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম। সে আমার বরফের টুকরাটাকে পরোয়া না করে বললো, " ২০১১-১২ সীজনে চ্যাম্পিয়ন লীগ জয়ী চেলসি ফুটবল ক্লাবের হ্যাড কোচ ছিলো রবার্টো ডি মাতেও। আমি জানতাম, ঐ সময় এমনিতেই বলি নাই। আর তোমার মস্তিষ্কের সাথে আমার পুরো পরিবারের তুলনা করো না। আমি একাই যথেষ্ট! "
কথাগুলো একটানে বলে সে হাফ ছেড়ে চলে গেলো! কথাগুলো বলার পরে মুখের মধ্যে তাঁর এমন ছাপ ছিলো। যেন এই মুহূর্তেই সে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জিতেছে ডায়লগের উপর!
কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হলাম। যে মেয়ে ফুটবলের ধারে কাছেও যায় না। ফুটবল শুনলেই যার গা জুড়ে এলার্জি হয়। সে কীভাবে ২০০১১-১২ সীজনে চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ী ফুটবল ক্লাব চেলসির হ্যাড কোচের নাম জানলো?
হিসাব মিলাতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি ফাইনালে গিয়ে হেরে যাচ্ছি! এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। হার মেনে নেয়া আমার স্বভাব নয়। আমার আব্বা বলে দিয়েছে ছোট থাকতেই। কমপক্ষে মেয়েদের সাথে হারিস না, মান সম্মান বলেও একটা কথা আছে।
নিচে পড়ে যাওয়া বরফটা আবার ধুয়ে মাথায় দিলাম। হঠাৎ করে মনে হলো কীভাবে বরফ বানানো যায় এটা জানা দরকার আসলে। তাহলে গরমের দিনে খুবই কাজে আসবে। মাথায় বরফ নিয়ে চিন্তা করা যাবে। কীভাবে মেয়েটাকে বদ করা যায়!
মোবাইলটা আমার কোথায়? আলমারির উপরে হবে। বরফের টুকরাটা আপাতত টেবিলের উপর রেখে মোবাইলের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি ম্যাডাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে কি যেন করছে আর হাসছে! তাঁর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললাম, " তোমার বাপে না খুব দামি মোবাইল দিছে? আমার কমদামিটা ধরছো কেনো? "
সে দাঁত কামড়িয়ে বললো, " সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছো তুমি। বারবার আব্বারে তুলে কথা বলবা না। "
" তুমিও সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছো। "
" মানেহ? এতো বড় কথা? আমি কী করছি শুনি? "
" কিছুক্ষণ আগেই আমার মাথা থেকে বরফের টুকরা নিচে ফেলে দিছো! "
মোবাইল হাতে নিয়ে গুগলে সন্ধান করতে গেলাম– কীভাবে বরফ বানাতে হয়?
উত্তর আসলো, সবার আগে ফ্রিজ চাই। আমার তো ফ্রিজই ভালো না! এর মাঝে হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়ে গেলো বেরিয়ে আসার সময়।
সার্চ হিস্টোরিতে লেখা– হো ওয়াজ হ্যাড কোচ অফ চেলসি ইন ২০১১-১২!
আমি কতোটা বোকা আল্লাহ। ম্যাডাম এজন্যই হাসছিলো ফোন নিয়ে! সে যদি সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে গুগল করতে পারে, তবে আমিও পারি।
একটু খোঁজাখুঁজি করার পর তাঁর প্রশ্নের উত্তরটা পেয়ে গেলাম। এবার আমি তাঁর কাছে গিয়ে আয়নায় একটা থাপ্পড় বসালাম। এটা মনে হয় থাপ্পড়ের চেয়ে বেশি কিছু, ঘুষি বলা যেতে পারে। সে ভয় পেয়ে গেলো একরকম।
" এয়াও! কী হইছে? "
তাঁর ভয় পাওয়া দেখে আমিও ভয় পেয়ে গেছি৷ যদিও বুঝতে দেই নাই।
বললাম, " জার্মানদের হয়ে কাজ করা গুপ্তচর মাতাহারির কোড নেম ছিলো ' এইচ-২১ '। আমিও এটা জানতাম। ঐ সময় এমনিতেই বলি নাই! "
সে কানে হাত লাগিয়ে বললো, " গুগল করে আসছে কাচে ঘুষি মেরে পুরুষগিরি দেখাইতে! ইতিহাস সমন্ধে কানা-ফোঁটা জ্ঞান নাই হেহ! "
" তুমিও গুগল করে ইতিহাসবিদ সাজবা না। "
" আমি গুগল করে ইতিহাসবিদ সাজি না। "
" একটু আগেই একজন আমার ফোন থেকে কী যেন সন্ধান করেছিলো? "
" হ্যাঁ, কারণ আমি ফুটবলে আন্ডাও জানি না, সুতরাং! "
এক গ্লাস পানি পান করে নিলাম। গরমে অবস্থা কাহিল। তার উপর এই মেয়ের সাথে পেরে উঠা যাচ্ছে না! এই মুহূর্তে আমি ক্লান্ত, বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি। তাঁর চোখে তাকিয়ে নরম হয়ে শান্ত গলায় বললাম, " আমরা যদি ঝগড়া না শেষ করি৷ ঝগড়া আমাদের শেষ করে দিবে! "
সে অবাক হয়ে বললো, " এক মিনিট, এটা তো এইচ জি ওয়েলস বলেছিলো। তুমি জানলে কীভাবে? গুগল না? "
ফের আমার মাথায় হাত। এই মেয়ে ঝগড়া ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। মাথা টা কনকন করছে...!
| ইতিহাস ও ফুটবল
| সিয়াম আহমেদ জয়
এই মাত্র মনে হয় সে আরেকটা বই পড়ে শেষ করলো। যেভাবে হাফ ছেড়েছে তাইতো বুঝা যাচ্ছে। চোখগুলো চ্যাপ্টা করে বললো, " আচ্ছা, বলো তো ' এইচ-২১' ইতিহাসের কোন গুপ্তচরের কোড নেম ছিলো? "
তাঁর প্রশ্নের উত্তর না আমি জানি, আর না আমি প্রশ্নের উত্তর দিতে ইচ্ছুক। জগ থেকে গরম পানি গ্লাসে ঢেলে লেবু কাটছি। কথাটা শুনিনি ভান করলাম।
সে আবার বললো, " কথা টা কানে গেছে তো মনে হচ্ছে, উত্তরটা দিলেই হয়! "
কারেন্ট চলে যাওয়ায় বৈদ্যুতিক পাখা বন্ধ! মাথা গরম হয়ে আছে। কোথায় সে হাতপাখা নিয়ে এসে একটু বাতাস করবে, নাহ সে কোন ইতিহাসের কোন ছাইয়ের কোড নেম নিয়ে পড়ে আছে! তাঁর দিকে ফিরে বললাম, " না বললে? "
সে বেশ আত্মবিশ্বাস আর হতাশা নিয়ে বললো, " না বললে মানে? তুমি আসলে কিচ্ছু জানো না, বলবে কীভাবে? আব্বা কার সাথে যে আমার বিয়ে দিছে! "
কথাটা বলার সাথে সাথেই তাঁর কপালে হাত। বুঝা যাচ্ছে কতো বড় ক্ষতি না জানি হয়ে গেছে! অথচ তাঁর তিন বোনের মধ্যে একমাত্র বুদ্ধিমান জামাই থাকলে আমিই আছি! চাপা মারছি না। তাঁর দুটো বোনের জামাই আসলে দুলাভাই নাকি দুলাবোন আমি বুঝে উঠতে পারি না।
বৌয়ের কথায় ঘর থেকে বের হয়, বৌ অনুমতি দিলে ছাদে যেতে পারে, বৌ বাপের বাড়ি চলে আসলে তাঁরাও পিছন পিছন দৌড়ে চলে আসে! পুরুষের একটু ওজন তো থাকা দরকার নাকি? যাগকে সে বিষয়।
আমি তাঁর প্রশ্নের জবাবে বললাম, " তুমি কী জানো ২০১১-২০১২ সিজনে, চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ী চেলসি ফুটবল ক্লাবের হ্যাড কোচ কে ছিলো? "
সে বেশ বিরক্ত হলো। প্রশ্নের প্রতিত্তোরে প্রশ্ন আশা করেনি মনে হয়।
বললো, " আমি কী তোমার মতো সারাদিন ফুটবল নিয়া পইড়া থাকি? খেয়েদেয়ে আমার কাজ আছে! "
এবার আমার পালা। বললাম, " তো আমি কী সারাদিন বই নিয়া পইড়া থাকি? না আমার খেয়েদেয়ে কাজ নাই? "
সে আধুনিক চৌকির মধ্যখানটায় বসে ছিলো। এক প্রান্তে সরে এসে বললো, " খোঁটা দিলা না? মূর্খ মানুষের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি আর কী আশাই করা যায়? "
গুরুজনেরা এজন্যই বলে, সংসারের শান্তির জন্যে মাঝে মাঝে সত্য বলতে নাই। আমি অবশ্য সে কথা মেনেই চলি। এজন্যই টিকে আছে আজও। নাহলে বাসর রাতেই সংসার ধ্বংসলীলায় পরিণত হতো! বই পড়া না কোনো খারাপ বিষয়, আর না আমি খোঁটা দিয়েছি!
কিছুই করার নাই। এক লাইন বেশি বুঝা মেয়ে মানুষদের জন্মগত অধিকার।
যাহোক, জবাব দিতে আমিও কম জানি না। আম্মা আমাকেও জন্মের পরে মধু খাওয়াইছে। পারলে তাঁর থেকে বেশি মধু খাওয়াইছে। কারণ আমার আব্বা মধুর ব্যবসা করতো। সুতরাং জবাব দেওয়ায় পিছে থাকা আমার রক্তের সাথে মানায় না।
বললাম, " তোমার তিন বোনের জামাই, তুমি সহ তোমার বাপ, মা যারা আছে পরিপারে। সবাই মিলে আমার মস্তিষ্কের এক মিলিগ্রামেরও সমান না বুঝছো? গরমে এমনিতেই অবস্থা চরম। আর মাথা খারাপ করো না! "
এটা শুনে সে সাপের মতো ফুসফুস করে উঠবে এটা পানির মতো পরিষ্কার। এমনভাবে তাকালো মনে হয় কালী দেবী ভর করেছে। চোখগুলো লাল টসটসে হয়ে গেছে। এক কদম আমার দিকে দিয়ে বললো, " আব্বা আম্মারে নিয়া কথা বলবা না একদম! "
" ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়, এটা কী কোনো বইয়ে পাওনি আজও? নাকি সব পড়ার নামে ভান করো? "
তাঁর রাগের তাপমাত্রা আরো কয়েক ডিগ্রী বেড়ে গেলো।
" মানে? কী বলতে চাচ্ছো? তুমি পানির মতো সোজা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলা না। আর আমি ইট মারছি? "
" তুমিও পানির মতো সোজা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারো নাই। ধরে নাও এখন তাহলে, ওটা পাটকেল ছিলো না! "
" ওরকম ফালতু প্রশ্নের উত্তর জানার একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কোনো দরকার নাই। "
" তবে, সেম টু ইউ! "
" মানেহ? আমারটা ফালতু প্রশ্ন? "
বলে হাত থেকে বইটা খাটের উপরে রেখে চেঙ চেঙ করে রুম ত্যাগ করলো। কী তেজ বাবারে বাবাহ! এতো রাগ গোশ্যা করে কোনো লাভ আছে? সত্য মেনে নিলেই হয়।
হার আর সত্য, দুটো জিনিস মেয়েরা সহজে মেনে নিতে চায় না। কোনো এক কিংবদন্তী বলেছিলেন।
কারো এতো রাগ দেখার, কারো চোখের এতো আগুন দেখার মতো সময় আমার নাই। কালকেও ফ্রিজটা এসে দুজন ঝালাই-ঠালাই দিয়ে ঠিক করে গেছে। আজকেই আবার পানি ঠান্ডা হচ্ছে না! ওহ মনে পড়ে গেলো।
কাল দু'কেজি গোল্লা এনেছিলাম। ম্যাডাম বলেছিলো, কারণ মিস্ত্রি দুজন নাকি আমার শ্বশুরবাড়ির এলাকার!
সুতরাং a√ × b√ প্রমাণ হয়ে গেলো যে। এক দিনের মধ্যে ফ্রিজ আবার পুনরো রূপ ধারণ করায় আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নাই!
সামনের বাসার পিংকীটা। গুলুমুলু পিংকীটা, হাতে করে কী যেন নিয়ে আসলো। আমার হাতে দিয়ে বললো, " আংকেল, বরফ খাও নাকি তুমি? আম্মু দিছে। "
বলেই সে দৌড় দিলো। মেয়েটার মা ঠিক আমার আম্মার মতো। চোখ দেখে শরীরের জ্বর মাপতে পারে। বড় কাজে দিলো বরফের টুকরোগুলো।
গোল টেবিলের কাছে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।
দুয়েকটা বরফের টুকরা মাথায় দিয়ে বসে আছি। বাতাস নাই কোথাও। মাথা খুবই গরম। ঘামে একাকার। শান্তি লাগছে কিছুটা।
আমার এক ফোঁটা শান্তি ঘরের উচ্চবিত্ত নিম্নমনের মহিলাটার সহ্য হয় না একদম! একদমই না।
টেবিলে একটা থাপ্পড় দিলো, যেন ছোট্ট টেবিলে হাতির ভর! টেবিলের ঝাঁকুনিতে আমার মাথা থেকে বরফের টুকরা শার্টের ভেতর দিয়ে সোজা নিচে পড়ে গেলো! ময়লা লেগে গেছে। আর কী মাথায় দেয়া যাবে?
মেজাজ এখন খুবই খারাপ হলো! দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম। সে আমার বরফের টুকরাটাকে পরোয়া না করে বললো, " ২০১১-১২ সীজনে চ্যাম্পিয়ন লীগ জয়ী চেলসি ফুটবল ক্লাবের হ্যাড কোচ ছিলো রবার্টো ডি মাতেও। আমি জানতাম, ঐ সময় এমনিতেই বলি নাই। আর তোমার মস্তিষ্কের সাথে আমার পুরো পরিবারের তুলনা করো না। আমি একাই যথেষ্ট! "
কথাগুলো একটানে বলে সে হাফ ছেড়ে চলে গেলো! কথাগুলো বলার পরে মুখের মধ্যে তাঁর এমন ছাপ ছিলো। যেন এই মুহূর্তেই সে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জিতেছে ডায়লগের উপর!
কিঞ্চিৎ আশ্চর্য হলাম। যে মেয়ে ফুটবলের ধারে কাছেও যায় না। ফুটবল শুনলেই যার গা জুড়ে এলার্জি হয়। সে কীভাবে ২০০১১-১২ সীজনে চ্যাম্পিয়নস লীগ জয়ী ফুটবল ক্লাব চেলসির হ্যাড কোচের নাম জানলো?
হিসাব মিলাতে পারছি না। মনে হচ্ছে আমি ফাইনালে গিয়ে হেরে যাচ্ছি! এটা আমি মেনে নিতে পারছি না। হার মেনে নেয়া আমার স্বভাব নয়। আমার আব্বা বলে দিয়েছে ছোট থাকতেই। কমপক্ষে মেয়েদের সাথে হারিস না, মান সম্মান বলেও একটা কথা আছে।
নিচে পড়ে যাওয়া বরফটা আবার ধুয়ে মাথায় দিলাম। হঠাৎ করে মনে হলো কীভাবে বরফ বানানো যায় এটা জানা দরকার আসলে। তাহলে গরমের দিনে খুবই কাজে আসবে। মাথায় বরফ নিয়ে চিন্তা করা যাবে। কীভাবে মেয়েটাকে বদ করা যায়!
মোবাইলটা আমার কোথায়? আলমারির উপরে হবে। বরফের টুকরাটা আপাতত টেবিলের উপর রেখে মোবাইলের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি ম্যাডাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে কি যেন করছে আর হাসছে! তাঁর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললাম, " তোমার বাপে না খুব দামি মোবাইল দিছে? আমার কমদামিটা ধরছো কেনো? "
সে দাঁত কামড়িয়ে বললো, " সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছো তুমি। বারবার আব্বারে তুলে কথা বলবা না। "
" তুমিও সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছো। "
" মানেহ? এতো বড় কথা? আমি কী করছি শুনি? "
" কিছুক্ষণ আগেই আমার মাথা থেকে বরফের টুকরা নিচে ফেলে দিছো! "
মোবাইল হাতে নিয়ে গুগলে সন্ধান করতে গেলাম– কীভাবে বরফ বানাতে হয়?
উত্তর আসলো, সবার আগে ফ্রিজ চাই। আমার তো ফ্রিজই ভালো না! এর মাঝে হঠাৎ একটা জিনিস চোখে পড়ে গেলো বেরিয়ে আসার সময়।
সার্চ হিস্টোরিতে লেখা– হো ওয়াজ হ্যাড কোচ অফ চেলসি ইন ২০১১-১২!
আমি কতোটা বোকা আল্লাহ। ম্যাডাম এজন্যই হাসছিলো ফোন নিয়ে! সে যদি সামান্য একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে গুগল করতে পারে, তবে আমিও পারি।
একটু খোঁজাখুঁজি করার পর তাঁর প্রশ্নের উত্তরটা পেয়ে গেলাম। এবার আমি তাঁর কাছে গিয়ে আয়নায় একটা থাপ্পড় বসালাম। এটা মনে হয় থাপ্পড়ের চেয়ে বেশি কিছু, ঘুষি বলা যেতে পারে। সে ভয় পেয়ে গেলো একরকম।
" এয়াও! কী হইছে? "
তাঁর ভয় পাওয়া দেখে আমিও ভয় পেয়ে গেছি৷ যদিও বুঝতে দেই নাই।
বললাম, " জার্মানদের হয়ে কাজ করা গুপ্তচর মাতাহারির কোড নেম ছিলো ' এইচ-২১ '। আমিও এটা জানতাম। ঐ সময় এমনিতেই বলি নাই! "
সে কানে হাত লাগিয়ে বললো, " গুগল করে আসছে কাচে ঘুষি মেরে পুরুষগিরি দেখাইতে! ইতিহাস সমন্ধে কানা-ফোঁটা জ্ঞান নাই হেহ! "
" তুমিও গুগল করে ইতিহাসবিদ সাজবা না। "
" আমি গুগল করে ইতিহাসবিদ সাজি না। "
" একটু আগেই একজন আমার ফোন থেকে কী যেন সন্ধান করেছিলো? "
" হ্যাঁ, কারণ আমি ফুটবলে আন্ডাও জানি না, সুতরাং! "
এক গ্লাস পানি পান করে নিলাম। গরমে অবস্থা কাহিল। তার উপর এই মেয়ের সাথে পেরে উঠা যাচ্ছে না! এই মুহূর্তে আমি ক্লান্ত, বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি। তাঁর চোখে তাকিয়ে নরম হয়ে শান্ত গলায় বললাম, " আমরা যদি ঝগড়া না শেষ করি৷ ঝগড়া আমাদের শেষ করে দিবে! "
সে অবাক হয়ে বললো, " এক মিনিট, এটা তো এইচ জি ওয়েলস বলেছিলো। তুমি জানলে কীভাবে? গুগল না? "
ফের আমার মাথায় হাত। এই মেয়ে ঝগড়া ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। মাথা টা কনকন করছে...!
| ইতিহাস ও ফুটবল
| সিয়াম আহমেদ জয়