What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন যারা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
ByUmkMf.jpg


বাঙালি জাদুকরদের মধ্যে দুনিয়া কাঁপিয়েছেন পিসি সরকার। তার নাম কমবেশি সবারই জানা। তিনি নিজেকে 'দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ জাদুকর' হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এ পিসি সরকার বা প্রতুল চন্দ্র সরকারের জন্ম ১৯১৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার আশেকপুর গ্রামে। স্কুলে থাকতেই গণিতে তার পারদর্শিতা সবাইকে চমকে দিয়েছিল। অনেকে বলতেন, তিনি দানব। কিন্তু তিনি ছিলেন জাদুকর।

বালক বয়সেই জাদু শিখতে গণপতি চক্রবর্তীর শিষ্য হন। ১৯৩৩ সালে সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক হন। এরপর নানা জায়গায় জাদু দেখাতে শুরু করেন। তখনই তিনি নিজেকে ভারতের শ্রেষ্ঠ জাদুকর দাবি করতে শুরু করেন, কিছুদিন পর 'দুনিয়াসেরা'।

এরপর ভারতের নানা প্রান্ত থেকে তার ডাক আসতে শুরু করে, কিছুদিন পর বিভিন্ন দেশ থেকে। পিসি সরকারের বাড়ির কাছেই জন্মেছিলেন বিখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়; তিনি ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্ম নেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগ পর্যন্ত তিনি তত্কালীন পূর্ববঙ্গ বা এখনকার বাংলাদেশেই ছিলেন। দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে ভারতে চলে যান।

শীর্ষেন্দুর এক বছর আগে জন্মেছিলেন বাংলা সাহিত্যের আরেক খ্যাতিমান পুরুষ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। শীর্ষেন্দুর মতো সুনীলও জন্মেছিলেন এ বাংলাতেই। বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার মাইজপাড়া গ্রামে ১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুনীলের জন্ম। শৈশবেই সুনীল এ বাংলা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান।

বাঙালি পরিচালকদের মধ্যে দুই দিকপাল ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনের জন্ম বাংলাদেশে। মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে তত্কালীন ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ফরিদপুরেই তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন।

এরপর তিনি পড়াশোনার জন্য কলকাতায় যান এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করেন। ঋত্বিক ঘটক বা ঋত্বিক কুমার ঘটকের জন্ম ৪ নভেম্বর, ১৯২৫। তার জন্ম তত্কালীন পূর্ববঙ্গ, বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা শহরের ঋষিকেশ দাস লেনে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পরে তার পরিবার কলকাতায় চলে যায়। অভিনেতা, পরিচালক, লেখক, নাট্যকার উত্পল দত্তের জন্ম বরিশালে।

বাংলা ও হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর জন্ম বরিশালে। মিঠুনের জন্ম দেশভাগের পরে, ১৯৫০ সালে। পড়াশোনা করেছিলেন বরিশাল জিলা স্কুলেই। এরপর চলে যান কলকাতায়, সেখানে স্কটিশ চার্চে ভর্তি হন।

রমা সেন বা কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের জন্মও এই বাংলায়, বাংলাদেশের পাবনায়। তার জন্মসাল নিয়ে কিছু অস্পষ্টতা আছে। কোনো উৎসমতে তিনি জন্মেছিলেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল আবার কেউ বলেন তার জন্মসাল ১৯৩৪। কদিন আগেই ছিল তার জন্মদিন। তার বাবার নাম করুণাময় দাশগুপ্ত, তিনি ছিলেন স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সুচিত্রা পাবনা শহরেই পড়াশোনা করেছিলেন।

কৌতুকাভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মেছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট। ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি'স হাই স্কুল ও জগন্নাথ কলেজে শিক্ষা শেষ করে কলকাতায় যান ১৯৪১ সালে।

সংগীতের অনেক দিকপালের জন্ম বাংলাদেশে, যারা পরবর্তীতে ভারত তথা দুনিয়াজুড়েই বিখ্যাত হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে প্রথমেই নাম আসে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর। তিনি জন্মেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। গায়ক কিশোর কুমারের জন্মও এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কিংবদন্তি শচীন দেব বর্মণের জন্ম কুমিল্লায়। সাগর সেনের জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে।

ইতিহাসবিদ তপন রায় চৌধুরী জন্মেছিলেন বরিশালের কীর্তিপাশায়, ১৯২৫ সালে। দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে তারা কলকাতায় চলে যান।

এভাবে খুঁজলে আরো অনেক বিখ্যাত নাম পাওয়া যাবে, যাদের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশে কিংবা এককালের পূর্ববঙ্গে। দেশভাগ কিংবা পারিবারিক কারণেই এদের অনেকে এ বাংলা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন পশ্চিম বাংলা বা ভারতে।

এখানে সবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে এমনটা বলা হচ্ছে না, অনেকের নাম বাদ থাকল। নাম উল্লেখের পাশাপাশি আরো কয়েকজন কীর্তিমান সম্পর্কে এখানে সামান্য দু-এক কথা গ্রন্থিত হলো। সঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের স্মৃতিচারণের কয়েক ছত্র।

অমিয় দাশগুপ্ত ছিলেন অসাধারণ মেধাবী এবং সৃষ্টিশীল একজন অর্থনীতিবিদ। অমর্ত্য সেন তাকে 'উন্নয়ন অর্থনীতি'র একজন সত্যিকার পথপ্রদর্শক বলে বিবেচনা করেন। অমিয় কুমার দাশগুপ্ত ছিলেন অমর্ত্য সেনের পিএইচডি গবেষণার গাইড।

অর্থনৈতিক ধারণার ইতিহাসে তিনি সারগর্ভ অবদান রেখেছেন। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা আছে। এসবের মধ্যে আছে অর্থনৈতিক তত্ত্বে 'সারপ্লাস' ধারণার ব্যবহার, মজুরি নীতির তত্ত্ব, পরিকল্পনা ও উন্নয়নের অর্থনীতি, 'কৃচ্ছ তার অর্থনীতি'র চাহিদা ও সীমাবদ্ধতা।

শিক্ষক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি কল্পনা, কৌতুক, সহজবোধ্য বর্ণনা দিয়ে বিষয়কে বিদ্যার্থীর সামনে বাস্তব করে তুলতে পারতেন। অমর্ত্য সেনের মতে, শিক্ষক হিসেবে তার আরেকটি গুণ ছিল, যাকে আমি বলতে চাই দরদ।

অর্থনীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, 'অর্থনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য দুনিয়াজুড়ে মানুষের দুর্দশা।' তিনি তার ছাত্রদের গভীর বিশ্লেষণ ও মানবিক প্রেরণার সমন্বয় ঘটাতে সবসময় উৎসাহ দিতেন। এ কঠোরতা এবং মানবিক দৃষ্টি নীতিনির্ধারণে দাশগুপ্তের উপদেষ্টার ভূমিকায়ও দেখা গেছে।

অমিয় কুমার দাশগুপ্তের জন্ম ১৯০৩ সালের ১৫ জুলাই, বাংলাদেশের বরিশালের গৈলা গ্রামে। তাদের পরিবারটি সেখানে বাস করছিল সপ্তদশ শতক থেকে, পরিবারটির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ঐতিহ্য ছিল।

অমর্ত্য সেন লিখেছেন, "মাস্টার মশাই (অমিয় কুমার দাশগুপ্ত) বলতেন, 'আমার জীবনের যা কিছু অর্জন তার ভিতটা গড়ে দিয়েছিল গৈলা স্কুল।'" অমিয় কুমারের মেয়ে অলকনন্দাও লিখেছেন, 'গৈলা গ্রামের সঙ্গে বাবার ছিল আত্মার টান, এত বছর হয়ে গেল গৈলাবাসী তাকে গর্বের সঙ্গে সন্তান করে রেখেছেন। যতই দেশ বিভাগ হোক… ওই গৈলা-বকশীবাড়ি আমার পরিচয়।'

অমিয় দাশগুপ্ত পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, দ্রতই তিনি অসম্ভব মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তার ছিল প্রখর মেধা, যোগাযোগের ক্ষমতা এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করার আগ্রহ। তার পুত্র পার্থ দাশগুপ্তও একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ।

পার্থ লিখেছেন, 'আমার বাবা বহু বছর ধরে একটি কথা বারবার বলতেন যে তিনি জীবনে সচেতনভাবে শুধু একটি জিনিসই চেয়েছেন, আর তা হল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ।' তার সেই ইচ্ছা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পূরণ হয়েছিল। অমিয় দাশগুপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এতটাই মেধাবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন যে এমএ ডিগ্রি হাতে পাওয়ার আগেই তাকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

১৯২৬ থেকে ১৯৪৬ সাল—এ ২০ বছর অমিয় দাশগুপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। ১৯৩৪-৩৬ দুই বছরের বিরতি ছিল, যে সময়টায় তিনি দ্রুতগতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনে তিনি কাজ করেন লিওনেল রবিনসের সঙ্গে। ১৯৪৬ সাল নাগাদ দেশভাগ-পূর্ব নৈরাজ্য শুরু হয়ে যায়। পরের বছর দেশভাগ হয় এবং ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে দুটি দেশে পরিণত হয়। ধারাবাহিক দাঙ্গা ও রক্তপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-জীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছিল। অমিয় দাশগুপ্ত তখন ঢাকা ছেড়ে কটকের রাভেনশ কলেজে চলে যান।

অমিয় কুমার দাশগুপ্ত মারা গেছেন ১৯৯২ সালের ১৪ জানুয়ারি।

অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্রের জন্ম ঢাকায়, ১৯২৮ সালের ১০ এপ্রিল। স্কুলজীবন শুরু করেন আরমানিটোলা স্কুলে। "ক্রমে-ক্রমে কী করে যেন ছ'-সাত বছর বয়সে উত্তীর্ণ হলাম। আগের থেকেই জানা ছিল, পাড়ার বিদ্যালয় আর্মেনিটোলা সরকারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হবো। আমাদের পাড়া ও বংশাল পাড়ার প্রান্তসীমায় স্কুল।" স্কুল শেষ করে ভর্তি হয়েছেন জগন্নাথ কলেজে।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতক করেন। দেশভাগের কিছুদিন পর পরিবারের সঙ্গে কলকাতায় চলে যান। ভারতে গিয়ে উত্তর প্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করেন। এখানে তিনি শিক্ষক অমিয় কুমার দাশগুপ্তের সান্নিধ্য পান। নেদারল্যান্ডসে পিএইচডি করেন তিনি।

ইন্ধিরা গান্ধীর আমলে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ মেয়াদে ভারত সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন অশোক মিত্র। জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে ১৯৭৭ থেকে '৮৭ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হন অশোক মিত্র। সে সময় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। খ্যাতনামা সাময়িকী ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি (ইপিডব্লিউ) প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অশোক মিত্র।

অর্থনীতির ওপর বেশ কয়েকটি বই রয়েছে তার। সংবাদপত্রে প্রচুর কলাম লিখেছেন তিনি। শিল্প-সাহিত্য নিয়েও ছিল অশোক মিত্রের অগাধ পাণ্ডিত্য ও স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষেণ, যার উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে আছে কবিতা থেকে মিছিলে বইটি। তার অন্য বাংলা বইগুলোর মধ্যে আছে অচেনাকে চিনে-চিনে, নাস্তিকতার বাইরে, সমাজসংস্থা আশানিরাশা, পুরানো আখরগুলি প্রভৃতি।

ঢাকার স্মৃতিচারণ করে অশোক মিত্র তার আত্মজৈবনিক রচনা আপিলা-চাপিলায় লিখেছেন, 'বাংলাদেশ সরকারের পীঠস্থান ঢাকা শহরে এখন যাঁরা গেছেন, তাঁরা আমাদের পুরনো ঢাকাকে আদৌ চিনে উঠতে পারবেন না। রাজধানী ঢাকা, চকমকে, ঝকঝকে। চওড়া-চওড়া রাস্তার বিস্তার, সৌধপ্রতিম অট্টালিকার পর অট্টালিকা। নেতৃপর্যায়ভুক্ত মানুষজন তুখোড়, অতি সংস্কৃত। যদিও, আমার সন্দেহ, গরিব-গুর্বোরা আজ থেকে সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগে যে-তিমিরে ছিলেন, আছেন সেই তিমিরেই।

…চেতনার উন্মেষ-মুহূর্তে ভাসা-ভাসা এটুকু জানতে পেরেছি, আমাদের যে-পাড়ায় বাড়ি, তার নাম আর্মেনিটোলা। কে জানে কবে, হয়তো সপ্তদশ শতাব্দীতে, এক দঙ্গল আর্মেনি ব্যবসায়ী আমাদের শহরে উপনীত হয়েছিলেন, আমাদের পাড়ায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন। তাঁদের ইতিহাস পুরোপুরি হারিয়ে গেছে; শুধু স্মৃতির স্বাক্ষর হিশেবে থেকে গেছে আর্মেনিটোলা পাড়া এবং সে-পাড়ার পূর্ব প্রান্তে আড়াইশো-তিনশো বছরের পুরনো আর্মেনি গির্জা। আশ্চর্য, আমার মতো শিশুর চোখেও তার স্থাপত্য চোখ ধাঁধিয়ে দিত।'

এ বছরের ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা ভাষায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তার উল্লেখযোগ্য সৃষ্টির মধ্যে আছে নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে, অলৌকিক জলযান, মানুষের ঘরবাড়ি, ঈশ্বরের বাগান, ঋতুসংহার, নগ্ন ঈশ্বর, নীল তিমি। পেয়েছিলেন সাহিত্য আকাদেমি, বঙ্কিম পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা।

অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ঢাকায় (রাইনাদি গ্রাম), ১৯৩৪ সালে। জীবিকার টানে ট্রাক পরিষ্কারের কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতার কাজও করেছেন তিনি। এক জীবনে কাজ করেছেন জাহাজের খালাসি হিসেবেও। পরবর্তী সময়ে সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন। দেশভাগের কিছুদিন পর অতীনের পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতা চলে যায়। বাংলাদেশে কাটানো জীবনের স্মৃতিচারণ করে এক সাক্ষাত্কারে (সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের নেয়া) তিনি বলেছেন—

"ঢাকা জেলার রাইনাদি গ্রামে আমার জন্ম। (একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ে) ছোটবেলার একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে আবছাভাবে, বাকিটা শুনেছি বড়দের কাছে। মা ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। বললেন, 'ওঠ। তোর ঠাকুরদা মারা গেছেন।' ঠাকুরদার সাহচর্য আমার তেমন ছিল না। দেখতাম, খাটে বসে উনি সারা দিন কাশছেন। মা ডেকে দেয়ায় বারান্দায় এসে দেখি, ঠাকুরদাকে খাটসুদ্ধ উঠোনে শোয়ানো হয়েছে।

রাত হয়তো ৮-৯টা। শীতকাল। তখন ঘরের মধ্যে মৃত্যু পরিবারের পক্ষে অমঙ্গল মানা হতো। উঠোনেই ঠাকুরদা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। ওকে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হলো। শ্মশান নয়, আমাদের বাড়ির সামনেই পুকুরের ওপাড়ে বড়সড় অর্জুন গাছের নিচে। এরই মধ্যে আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শোরগোল পড়ে গেল। এদিকে ঠাকুরদাকে দাহ করতে হবে। ওকে তুলতে গিয়ে দেখা গেল, আমি জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছি। কখন ফাঁকতালে ঢুকে গেছি ঠাকুরদার লেপের তলায়। (একটু থেমে) এভাবেই মৃত্যুর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ।"

বুদ্ধদেব বসু বাংলা ভাষার খ্যাতনামা সাহিত্যিক। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গল্পকার, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকের নতুন কাব্যরীতির সূচনাকারী অন্যতম কবি হিসেবে তিনি সমাদৃত। তবে সাহিত্য সমালোচনা ও কবিতা পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্য তিনি বিশেষভাবে সম্মানীয়।

বুদ্ধদেব বসুর জন্ম হয়েছিল কুমিল্লায়, ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর। তার বাবা ভূদেব বসু পেশায় ঢাকা বারের উকিল ছিলেন। তার মায়ের নাম বিনয় কুমারী। বুদ্ধদেব বসুর মাতামহ চিন্তাহরণ সিংহ ছিলেন পুলিশ অফিসার।

তার পৈতৃক আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের মালখানগর গ্রামে। জন্মের ২৪ ঘণ্টা পরেই তার মা বিনয়কুমারীর ১৬ বছর বয়সে ধনুষ্টঙ্কার রোগে মৃত্যু ঘটে। এতে শোকাভিভূত হয়ে তার বাবা সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন। মাতামহ চিন্তাহরণ ও মাতামহী স্বর্ণলতা সিংহের কাছে প্রতিপালিত হন বুদ্ধদেব। বুদ্ধদেবের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথম ভাগ কেটেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী আর ঢাকায়।

১৯২১ সালে ১৩ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় আসেন এবং প্রায় ১০ বছর ঢাকায় শিক্ষালাভ করেন। বুদ্ধদেব বসু ১৯২৩ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯২৫ সালে ওই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম বিভাগে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে আইএ পাস করেন।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০-এ প্রথম শ্রেণীতে বিএ অনার্স এবং ১৯৩১-এ প্রথম শ্রেণীতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন মেধাবী এক ছাত্র। বিএ অনার্স পরীক্ষায় তিনি যে নম্বর লাভ করেন, তা একটি রেকর্ড এবং অদ্যাবধি (২০০৯) এ রেকর্ড অক্ষুণ্ন আছে বলেই শোনা যায়।

ঢাকার পুরানা পল্টনের স্মৃতিচারণ করে বুদ্ধদেব বসু লিখেছিলেন—

"পুরানা পল্টন আজ স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে; তাই তার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা ক'রে শুধু তার সৌন্দর্য উজ্জ্বল হয়ে আমার মনে ফুটে উঠছে; বর্তমানে যাকে নিয়ে সম্পূর্ণ সুখী হতে পারিনি, আজ অতীতের প্রেক্ষিতে তাকে একান্তরূপে ভালোবাসছি।

বাস্তবে যার মধ্যে অনেক অভাব ছিলো, স্মৃতিপটে তার যে ছবি উঠলো, দেখলুম তাতে কোনো খুঁত নেই। আজ যদি কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করে, পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর কোন জায়গা, আমি অনায়াসে উত্তর দিই: পুরানা পল্টন।" ('পুরানা পল্টন', হঠাৎ আলোর ঝলকানি)

নিভৃতচারী, প্রচারমাধ্যম থেকে দূরে থাকায় কবি মণীন্দ্র গুপ্ত সেই অর্থে তুমুল আলোচিত হয়ে ওঠেননি। তবে মনোযোগী পাঠক তাকে ঠিকই চেনেন।

কবিতা লিখেছেন ১৯৪০-এর দশক থেকে। প্রথম কবিতার বই নীল পাথরের আকাশ প্রকাশিত হয় অনেক পরে, ১৯৬৯ সালে। লিখতে এসেই বিদগ্ধ পাঠকের নজর কাড়েন তিনি। এর পরে প্রকাশিত হয় মৌপোকাদের গ্রাম, লাল স্কুলবাড়ি, ছত্রপলাশ চৈত্যে দিনশেষে, শরেমঘ ও কাশফুলের বন্ধু কাব্যগ্রন্থ। ১৯৯১-এ বের হয় তার আলোড়ন তোলা প্রবন্ধ গ্রন্থ চাঁদের ওপিঠে।

১৯৯১-এ প্রকাশিত হয় মণীন্দ্র গুপ্তের আত্মজীবনী অক্ষয় মালবেরির প্রথম খণ্ড। তিন খণ্ডে বিন্যস্ত এ লিখন বাংলা সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

সম্পাদনা করেছে পরমা পত্রিকা। ১৯৭০-এর দশকে কবি রঞ্জিত সিংহের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন এক বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতার মতো সংকলন। হাজার বছরের বাংলা কবিতা ঘেঁটে সংকলন করেছেন তিন খণ্ডে আবহমান বাংলা কবিতা।

মণীন্দ্র গুপ্তর জন্ম ১৯২৬ সালে, অবিভক্ত বাংলার বরিশালের গৈলা গ্রামে। শৈশব বরিশালে কাটিয়ে পরিবার উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে একসময় চলে যান আসামের বরাক উপত্যকায় মামার বাড়িতে।

সেই যাত্রার বিবরণ পাওয়া যায় অক্ষয় মালবেরিতে, 'বেলা বাড়লে দেতলার রেলিঙের সারি সারি লাইফ বয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দেখি রৌদ্রে ঝকঝক করছে নদীজল। পদ্মা মেঘনা—সাদা জল কাজল জল গায়ে গা লাগিয়ে চলেছে। এখন আর ওপার দেখা যায় না। শুশুক ভুস করে লাফিয়ে উঠে কালো পিঠ দেখিয়ে আবার জলে পড়ে।

কীর্তনখোলা-পদ্মা-মেঘনার রাত্রি আর দিনের জলস্রোত পাড়ি দিয়ে স্টীমার যেখানে আমাকে পৌঁছে দিল সেই তিন-দিকে-নদী জায়গাটার নাম চাঁদপুর। চাঁদপুরে দাদামশায়ের একটা অফিস ছিল, সেখানে মাঝে মাঝেই তাঁকে আসতে হয়। এবারে এসে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

সন্ধেবেলা চাঁদপুর থেকে আমাদের ট্রেন ছাড়ল। ট্রেনেও দাদুর কাজ থাকে। আমি জানালার পাশে বসে চাঁদনীরাতের আবছা বন, পাহাড়, পতিত জমি, জলজমা খানাখন্দ দেখতে দেখতে চললাম। মাঝে মাঝে ট্রেন আধঘুমন্ত স্টেশন পেরুচ্ছে—লাকশাম, আখাউড়া, কুলাউড়া। পৃথিবী বড় রহস্যময়, অপরিচিত। বালকদেরও রাত্রের ঘুম কেড়ে নেয়।'

মণীন্দ্র গুপ্ত ২০১০ সালে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার এবং ২০১১ সালে সাহিত্য আকাদেমি।

ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার ১৮৭০ সালের ১০ ডিসেম্বর নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলাধীন কর্চমারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন কর্চমারিয়ার জমিদার রাজকুমার সরকারের পুত্র। শিক্ষা অর্জনের জন্য যদুনাথকে শুরুতেই রাজশাহী ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল।

এখানে প্রাথমিক শিক্ষালাভের পর যদুনাথ সরকার রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। কিছুদিন পর কলকাতায় গিয়ে ভর্তি হন কিন্তু তারপর আবার রাজশাহীতেই ফিরে আসেন। ১৮৮৭ সালে কলেজিয়েট থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। এবার ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। বৃত্তিসহ ইন্টারমিডিয়েট পাস করে যদুনাথ ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে।

১৮৯৮ সালে যদুনাথ সরকার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগ দেন। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজে বদলি হয়ে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। মাঝখানে কিছুকাল ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক জীবনের বেশির ভাগটাই ব্যয় করেছেন পাটনা ও কটকে। ৪ আগস্ট, ১৯২৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে মনোনীত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম অধ্যাপক ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন।

যদুনাথ সরকার ১৯২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত সদস্য হন।

যদুনাথ সরকার অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। সম্পাদনা করেছেন ১২টি গ্রন্থ। ১৯০১ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গ্রন্থ পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত হিস্ট্রি অব ঔরঙ্গজেব। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থ হলো:

দ্য ফল অব দ্য মোগল এম্পায়ার, শিবাজী (বাংলা), মিলিটারি হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া, দ্য রানী অব ঝাঁসি, ফেমাস ব্যাটেল?স? অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি, শিবাজী অ্যান্ড হিজ টাইম, ক্রোনোলজি অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি

যদুনাথ সরকার তার প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি প্রদান করে। ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৪৪ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় যদুনাথ সরকারকে ডি.লিট উপাধি প্রদান করে।

আচার্য যদুনাথ সরকার ৮৮ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালের ১৯ মে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ কালিকারঞ্জন কানুনগো ১৮৯৫ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়া গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম রাজমনি কানুনগো। রাজশাহী কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ ১৯১৫ সালে তিনি বিএ, ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ এবং ১৯১৮ সালে ল' ডিগ্রি লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে যদুনাথ সরকারের অধীনে শের শাহ অ্যান্ড হিজ টাইমস শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কালিকারঞ্জন কানুনগো দিল্লির রামযশ কলেজে ইতিহাসের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৩ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি লক্ষৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে রিডার পদে যোগ দেন। ১৯৩৭ সালে তিনি প্রফেসর এবং বিভাগীয় প্রধান পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি লক্ষৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় যোগ দেন এবং সেখান থেকে ১৯৫৫ সালে অবসর নেন।

অধ্যাপক কালিকারঞ্জন কানুনগোর গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র ছিল উপমহাদেশের মধ্যযুগের ইতিহাস। মুসলমান শাসক, রাজপুত ও মারাঠাদের বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ ছিল। ফারসি, উর্দু, হিন্দি, আওধী এবং বেশকিছু স্থানীয় ভাষার ওপর দক্ষতা স্থানীয় ঐতিহাসিক উৎস অনুসন্ধানে তাকে সাহায্য করে। কালিকারঞ্জনের সর্বশ্রেষ্ঠ গবেষণামূলক গ্রন্থটির নাম শের শাহ অ্যান্ড হিজ টাইমস।

সমসাময়িক ফারসি উেসর ভিত্তিতে রচিত গ্রন্থটিতে আফগান বীর শের শাহের জীবনের মহত্ত্বের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়েছে। দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপনার সময়ে জাঠদের সম্পর্কে কালিকারঞ্জনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে তিনি তার গবেষণার পক্ষে অলিখিত এবং মৌখিক উপকরণ সংগ্রহের জন্য হরিয়ানা ও রাজস্থানের দূরবর্তী গ্রামে অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য জরিপ কাজ সম্পন্ন করেন। তার রচিত স্টাডিজ ইন রাজপুত হিস্ট্রি ও রাজস্থান কাহিনী গ্রন্থ দুটিতে রাজপুতদের সম্পর্কে অত্যন্ত আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হিস্ট্রি অব বেঙ্গল, দ্বিতীয় খণ্ড প্রণয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। লক্ষৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিকালে তিনি হিস্ট্রি অব দ্য বেরোনিয়াল হাউজ অব দিল্লি গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন। এ গবেষণায় তিনি প্রধানত স্থানীয় মহাফেজখানায় সংরক্ষিত সরকারি দলিলপত্র ব্যবহার করেন। কানুনগোর প্রধান প্রকাশনাগুলোর মধ্যে দুটি তার অবসর গ্রহণের পর প্রকাশিত হয়। গ্রন্থ দুটি হলো ইসলাম অ্যান্ড ইটস ইম্প্যাক্ট অন ইন্ডিয়া (১৯৬৮) ও শাহজাদা দারা শিকোহ। শেষোক্ত গ্রন্থটি কালিকারঞ্জন ঢাকায় অবস্থানকালে রচনা করেছিলেন।

কালিকারঞ্জন প্রবাসী পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোর ইতিহাস রচনায় স্থানিক উপকরণের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ কানুনগোর ইতিহাস রচনার একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার মতে, মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাসের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সামাজিক সংশ্লেষণ।

কালিকারঞ্জন কানুনগো ইতিহাস চর্চার জন্য সম্মানিত হয়েছেন। ১৯৪০ সালে (১৩৪৭ বঙ্গাব্দ) ইতিহাস গবেষণায় অবদানের জন্য তিনি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক রামপ্রাণ গুপ্ত স্মৃতি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। রাজস্থান কাহিনী শীর্ষক গ্রন্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান করেন।

১৯৭২ সালের ২৯ এপ্রিল লক্ষৌর নিজস্ব বাসভবনে কালিকারঞ্জন কানুনগো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ভারতীয় গণসংগীত ও গণসংস্কৃতি আন্দোলনের অবিস্মরণীয় নাম হেমাঙ্গ বিশ্বাস। ১৩১৯ সালের ২৭ অগ্রহায়ণ তথা ১৪ ডিসেম্বর ১৯১২ সালে বৃহত্তর সিলেটের বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার মিরাশী গ্রামে এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম। আর ১৯৮৭ সালের ২২ নভেম্বর কলকাতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৭৫ বছরের জীবনে হেমাঙ্গ বিশ্বাস তার শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন হবিগঞ্জে, সিলেটে, যৌবনে আসামে আর প্রৌঢ় বয়সে কলকাতায়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি, চীনা জনগণের বিপ্লব ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার প্রতি ছিলেন গভীরভাবে অনুরক্ত ও বন্ধুভাবাপন্ন।

হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জনপ্রিয় গণসংগীতগুলোর মধ্যে 'জন হেনরী', 'ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না', 'থাকিলে ডোবাখানা', 'কাস্তে টারে দিও জোরে শান', 'শঙ্খচিল', 'শহীদের খুনে রাঙা পথে দেখো হায়েনার আনাগোনা', 'সাম্যের গান গেয়ে রেল চলে', 'আন্তর্জাতিক', 'আরো বসন্ত বহু বসন্ত' 'আজব দেশের আজব লীলা', 'মাউন্টব্যাটেন মঙ্গলকাব্য', 'আমরা তো ভুলি নাই শহীদ' এখনো বাংলাদেশের বামপন্থী ও শ্রমজীবী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সমাবেশ, কর্মসূচিতে গাওয়া হয়।

১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন, ঢাকা এবং বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে গান গাওয়ার পাশাপাশি ছুটে গিয়েছিলেন তার জন্মভূমি হবিগঞ্জে। জন্মভূমির প্রতি তার টান ও বেদনার কথা তার লেখা গানেই ফুটে উঠেছে—'হবিগঞ্জের জালালী কইতর, সুনামগঞ্জের কুরা, সুরমা নদীর গাংচিল আমি শূন্যে দিলাম উড়া, শূন্যে দিলাম উড়ায়ে ভাই যাইতে চান্দের চর, ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কৈলকাত্তার উপর, তোমরা আমায় চিনছনি।'
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top