What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review প্রেক্ষাগৃহ ফিরলে ফিরবে আমাদের সিনেমার বসন্ত (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
Q81XbkW.jpg


আমাদের সিনেমাতেও বসন্ত ছিলো। সে বসন্তে পাখি গাইত, পরীরা ডানা মেলত, রাজকুমার আসত। তারা আমাদের মত প্রজাদের সুখের অনুভূতি দিত। সে অনুভূতি পূর্ণতা পেত প্রেক্ষাগৃহে…

সব ঋতুর থেকে বসন্তের প্রতিই আমাদের আগ্রহটা বেশি। বসন্তে যে আমেজ থাকে অন্য ঋতুতে তা থাকে না। সিনেমার বসন্ত যদি বারোমাস থাকত তবে কি ভালোই না হত ! তাই বলে কি আর বসন্ত থাকে বারো মাস ! আমাদের সিনেমায় বসন্ত ছিলো, সে বসন্ত আমাদের কাছে এখন যেমন গর্ব হয়ে আসে, তেমনি একগোছা বেদনা হয়েও আসে। বেদনাটা অনেক ভাবেই আসে। আমরা সে বেদনা নিয়ে যেমন কষ্ট পাই, পাশাপাশি বেদনা থেকে আনন্দে যাবার পথটাও খুঁজি…

ইতিহাস অনেকরকম। একেকটা ইতিহাস একেক রকম। আমাদের দেশের সিনেমা ছিল কি বা হল কি, এটাই এখন লোকমুখে বড় ইতিহাস সিনেমার জন্য। একটা চাপা আফসোস আছে। আফসোসটা আবার দুই রকম। প্রথমটা যে পক্ষ আর বাংলা সিনেমা (আমাদের সিনেমা) দেখে না। আর পরেরটা হচ্ছে, যে পক্ষ আবারো দেখতে চায়। যারা দেখে না, তারা যে দেখতেই চায় না ব্যাপারটা এমন না। তারাও দেখতে চায়। তাদেরকে দেখানোর জন্য কাজ করতে হবে। অনেক অনেক কাজ। আর এই কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে, প্রেক্ষাগৃহ ফেরাতে হবে। এখন সে কথায় আসি…

রূপকথা নয় সত্যি

রূপকথার গল্প যেভাবে শুরু হয় সেই যে 'সুয়োরাণী দুয়োরাণী'র মত করে (এক যে ছিল রাজা আর এক যে ছিল রাণী) সেভাবেই গল্পটা শুরু হতে পারে। যে গল্প আমাদের সিনেমার গল্প। ঐ গল্পে নায়ক-নায়িকা ছিল। আরো যারা থাকার তারা সবাই ছিল। যেমনটা বলছিলাম শুরুতে রাজা-রাণী-রাজকুমারদের গল্প, তেমনই ছিল সেই রাজ্জাক, সুজাতা, শবনম, অলিভিয়া, কবরী, শাবানা, ববিতা, রোজিনা, জাফর ইকবাল, মান্না, জসিম, রুবেল, সালমান শাহ, মৌসুমী,শাবনূররা। তারা আমাদের যে স্বপ্ন দেখাত। সে স্বপ্ন রূপকথা না হয়ে একসময় সত্যি হয়েই আসত সেলুলয়েডে !

আমাদের বাপদাদার মত আমরাও সেই রাজা-রাণী-রাজকুমারদের স্বপ্নেই স্বপ্নবাজ হয়ে যেতাম। সেই ১৮০০ বা ১২০০ প্রেক্ষাগৃহের গল্পটা যখন শুনি, আমার হয়ত জন্মই হয়নি তখন। আর আমার আপনার বাপদাদারা সেই সময়টাতে প্রেক্ষাগৃহকে রঙিন করে একের পর এক সুপারহিট করে গেছে আমাদের সিনেমাকে। সেসব দিন তো রূপকথার মতই শোনায় !

কিন্তু না শেষে আর রূপকথা থাকেনি। সেগুলো সত্যি ছিল। তার কারণ, সেগুলো বলতে বলতে বাপ-দাদাদের চোখে মুখে যখন একটা উজ্জ্বল আভা খেলা করত। তারা রোমান্টিক হয়ে যেত। তখন রূপকথা ছেদ করে এই মাটির পৃথিবীতেই যেন বাস্তবতা খেলা করত, আর শুনতে শুনতে আরাম পেতাম…

প্রেক্ষাগৃহ বা ছবিঘরের স্বপ্নের দিনগুলো

প্রেক্ষাগৃহকে কি বলা যেতে পারে? আমার মনে হয় (ছবিঘর) বলাই সবচেয়ে ভালো। একটা আদুরে ব্যাপার থাকে এতে। আদর করে প্রেক্ষাগৃহকে (ছবিঘর) বলে আমাদের ও আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি বা স্বপ্নকে একটুখানি ছুঁয়ে দেখা যেতেই পারে। ছোট থেকে গ্রামেই বড় হয়েছি, তাই মাটির সোঁদা গন্ধ বা ধানক্ষেতে দৌঁড়ানোর অভিজ্ঞতা যেমন জ্বলজ্বল করে তেমনি প্রতি শুক্রবার বিটিভিতে সিনেমা দেখার নেশাটা পাকাপোক্তই ছিল। তার পাশাপাশি সিনেমাহলে যেতেও ভুল হত না। যতই তার জন্য সেজো ভাইয়ের পিটুনি খাই না কেনো, সিনেমার সেই নেশা আমার বা আমাদের ছেলে ছো‍ঁকরাদের যেমন ছিল তার থেকে বাপ দাদাদেরও কোনো অংশেই কম ছিল না। তারা তো প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া বুঝতই না। এমনও ঘটনা আছে, ওখানে গিয়েই অনেকের ভালোবাসা শুরু হয়েছে। তারপর লিখেছে প্রেমপত্র। লুকিয়ে দেখাদেখি, তারপর গাঁটছড়া বাঁধার গল্প। সে গল্প শেষমেষ রাজ্জাক-ববিতার (অনন্ত প্রেম) এর মধ্যে বন্দী না থেকে বাস্তবে এসেই অনন্ত হয়ে গেছে ! আহারে দিনগুলো…

কিছু গল্প শুনুন, যা গল্প নয়, সত্যি !

১. বাবার মুখে শোন‍া, বাবা যখন 'ছুটির ঘণ্টা' সিনেমাটি প্রথম দেখেন, প্রেক্ষাগৃহে বসে তখন তাঁর চোখ জলে ভিজে টলমল করছে। পাশের সিটে বসে থাকা একজন লোক বাবার চোখের জল মুছে দিয়ে বলে, এটা তো ছবি। কাঁইদেন না। বাবা এরপর একদিন স্কুলে গিয়ে হেডমাস্টারকে বলে দেন, যেকোনো ছুটির সময় স্কুলের সব জায়গা যেনো ভালোমত দেখে তারপর তালা মারা হয়। কেউ যাতে আটকে না থাকে। এভাবে অনেকেই তাদের সন্তানদের জন্য সচেতন হয়েছিল।

২. প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা দেখার জন্য আমার বড়কাকা একবার গরুর গাড়ি করে সৈয়দপুরে গেল। তারপর কোনো মতে টিকেট কেটে সিনেমা দেখল প্রেক্ষাগৃহে বসেই।

৩. গ্রামের মাবুদ চাচার কাছে শোনা একটা গল্প। শাবানা-আলমগীরের 'ভাত দে' সিনেমা দেখার সময় নাকি চাচীর কান্না প্রেক্ষাগৃহে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না। তারপর থেকে চাচী খুব হিসেবি হওয়া শুরু করলো। একটা ভাতও নষ্ট করত না। মেপে মেপে চাল দিত রান্নার জন্য। তার হিসেবি হওয়া দেখে চাচা খুব খুশি হয়েছিলেন।

৪. আলী চাচা তার দীর্ঘদিনের জমি ছাড়াতে পারছিলেন না। উনি প্রেক্ষাগৃহে বসেই পেয়ে গেলেন সাহসটা। ফারুকের 'লাঠিয়াল' সিনেমায় ওই সাহসটা পেলেন আলী চাচা। গ্রাম্য পলিটিক্সকে ইকভাবে চালাতে হয়, মোড়লের পলিটিক্স দেখার পর চাচা ঠিকই জেনে গেলেন কিভাবে প্রতিবাদ করে ফারুক প্রতিবাদী হয়ে উঠল। তারপরই মছলে দাদার সেই ভূমিদস্যু চেহারার সামনে লাঠি হাতেই নাকি দাঁড়িয়ে গেলেন চাচাজী। সিনেমার কি প্রভাব ! চাচা এভাবেও বলেন যে, প্রেক্ষাগৃহে যখন ফারুকের লাঠি হাতে প্রতিবাদের দৃশ্যগুলো দেখায়, একসাথে সব দর্শক বলে "মার মার জোরে মার" ! তখন চাচার গলাতেও ছিল 'মার মার জোরে মার' আওয়াজ। শক্তিটা তো ওখান থেকেই পাওয়া !

৫.আমাদের থানা শহরের সাগর টকিজে সেজো ভাই দেখেছিল 'নারীর মন' সিনেমাটা। ওর প্রেম তো এরপরেই দানা বাঁধল, যেটাতে সে আমাকেও কাজে লাগালো। শাবনূরকে রিয়াজ কিভাবে প্রপোজ করে, বড়পর্দায় দেখেই তো সেজো ভাইর মাথাটা খারাপ হয়ে গেল। বলত, বড়পর্দায় নায়ক-নায়িকাকে না দেখলে নাকি জীবনটাই বৃথা। ওর চিঠি লিখে দিতে হত আমাকে। কি মুশকিল ! ছোটভাইকে দিয়ে প্রেমপত্র লিখিয়ে নেয় বড়ভাই। কি আর করা ! ওর লেখার হাত ভালো না যে, তাই আমি ছিলাম ভরসা।

৬. শুধু কি সেজো ভাই? আমিও তো কম ছিলাম না। কতদিন লুকিয়ে সিনেমা দেখেছি প্রেক্ষাগৃহে। রিয়াজ, শাবনূর, ফেরদৌস, শাকিল খান,শাকিবদের তো প্রেক্ষাগৃহে দেখেই চিনি। তাদের রোমাঞ্চে নিজেও রোমাঞ্চিত বোধ করেছি। তারা যেভাবে মনের কথাটা প্রিয়জনকে বলে, আমিও তো সেভাবেই একদিন বলেছিলাম তাকে। তবে প্রেক্ষাগৃহের কাছে আমিও তো ঋণী। তাহলে দাঁড়াল কি? প্রেক্ষাগৃহ একজনের জায়গা না, সবার জায়গা। প্রেক্ষাগৃহে বা ছবিঘরে গিয়ে এই মানুষগুলো যেমন স্বপ্ন দেখত, তেমনি আমিও দেখতাম। আর এভাবে আমি আপনি সবাই সে স্বপ্নের অংশীদার যে যার মত করেই।

৭. '১২০০ থেকে ৩০০' – স্বপ্ন যখন দুঃস্বপ্ন ! প্রেক্ষাগৃহ যখন ১২০০ থেকে ৩০০ তে নেমে এলো, আমাদের সিনেমার রঙ বদলে গেল। রঙটা আগে যেমন ছিল তাতে ৩৫ মিলিমিটার থাকলেও প্রেক্ষাগৃহ ভালো থাকত। প্রেক্ষাগৃহের শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকত। লোকে ঘরে সিনেমা দেখত না, যেত প্রেক্ষাগৃহে। কারণ ওটাই আসল ঘর ছবির জন্য। এখন ছবিঘর কমেছে আর ৩৫ এর জায়গায় এসে গেছে ডিজিটাল যন্ত্রের বাহাদুরি। এই বাহাদুরি যতই বাড়ছে প্রেক্ষাগৃহ আরো কমার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। যে গল্প ৩৫ মিলিমিটারে ছিল, সে গল্প ডিজিটালে থাকছে না। কম খরচে যে নির্মাণ তখন ছিল, এখন সে নির্মাণ কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাতেগোনা কিছু সিনেমায় থাকছে, আর বাকিগুলোতে নেই। অভিনয়ে তো দুয়েকজন ছাড়া শূন্যতা আছেই। কোয়ানটিটি আর কোয়ালিটির তফা‍ৎটা এখন অনেক অনেক বেশি। দুঃস্বপ্নকে এভাবেই বলব…

৮. সময় পাল্টালেও স্বপ্ন থেকেই যায়। আমরা আবার স্বপ্ন দেখছি নতুন দিনের। যত শূন্যতা আছে সেগুলোকে কাটিয়ে নতুন সময় দেখার অপেক্ষায় আছি। প্রেক্ষাগৃহ বাড়ানোর জন্যই এখন কাজ করতে হবে। নূতন যৌবনের দূত শুধু নতুন দিনের সিনেমা তারকারাই নন, আরো হতে পারে অনেকেই। সেজন্য সিনেমাবান্ধব হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমার কম জ্ঞানে যা কুলায়, কিছু পথ বলছি, যে পথে হয়ত সাফল্য আসবে…

৯. প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখেই বাড়ি ফিরবো, এটা না হয়ে যদি প্রেক্ষাগৃহেই কেনাকাটা হয়ে যায় বা খাওয়া-দাওয়া হয়ে যায় বা বাচ্চাদের আনন্দ করাটাও হয়ে যায়, তবে কেমন হয় ! এজন্য প্রেক্ষাগৃহের সাথে আরো থাকতে পারে বিনোদনের সব ব্যবস্থাও…

১০. সরকারের কথা বলছিলাম, শুধু সরকার না প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোও এগিয়ে আসতে পারে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের জন্য। এজন্য ঘাপটি মেরে বসে না থেকে তারকা, পরিচালক, প্রযোজক এমনকি দর্শকও এগিয়ে আসতে পারেন, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন বা ডোনেশন নিতে পারেন প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের জন্য..

১১. এমনকি এ স্বপ্নও দেখি, যদি স্বচ্ছতা থাকে তো দর্শকও তহবিল করতে পারে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের জন্য। জানি বাংলা (আমাদের) সিনেমা সবাই দেখেনা। কিন্তু এখনো যারা দেখে বা যারা নতুনভাবে দেখতে আসছে তারাও এতে অংশ নিতে পারে এবং এফডিসি ভিত্তিক একটা স্বচ্ছ উপায়ে সে টাকাটা প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণে ব্যয় হতে পারে। দায়িত্বটা যেহেতু আমাদের, তাই উপায় যে কোনোভাবেই বের করা যেতে পারে, যদি থাকে একতা ! যা বললাম স্বপ্ন থেকেই বললাম। স্বপ্নটা অতীত থেকে আসা, যে অতীত ছিলো স্বপ্নময়…

অতীত থেকে আজকের বর্তমানে স্বপ্নটা হয়ত কোনো জায়গায় থমকে আছে, আবার হয়ত কোনো জায়গায় গতি পাচ্ছে নতুন করে। এ গতিটাকে হারাতে দিতে পারিনা আমরা। প্রেক্ষাগৃহ বাঁচাতে বা আরো প্রেক্ষাগৃহ বাড়াতে জাতীয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করতে হবে। যে বসন্ত গতবছর চলে গেছে, সে বসন্ত এবছর আগেরবারের মত করে আসবে না। তবে এবছরের বসন্তকে গতবছরের থেকে আরো রঙিন করতে আমরাও অনেক কিছুই করতে পারি। সে কাজগুলো বলে দেবে কি হবে আর কি হবেনা !

প্রেক্ষাগৃহ ফিরে আসুক, প্রেক্ষাগৃহেই ফিরবে আমাদের সিনেমার বসন্ত…
 

Users who are viewing this thread

Back
Top