What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review নায়ক রাজ্জাক, একজন অভিভাবকের প্রস্থান (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
IwFjNrZ.jpg


"আমি আমার জীবনের অতীত ভুলি না। আমি এই শহরে রিফিউজি হয়ে এসেছি। স্ট্রাগল করেছি। না খেয়ে থেকেছি। যার জন্য পয়সার প্রতি আমার লোভ কোনদিন আসেনি। ওটা আসেনি বলেই আজকে আমি এতদূর শান্তিতে এসেছি।"

এটাই বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক রাজ আব্দুর রাজ্জাক। যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে এক এবং অদ্বিতীয়। সারাজীবনের সংগ্রাম এবং সফলতার গল্প তৈরি করে গেছেন তিনি। বিদায়লগ্নে নায়ক রাজের প্রতি ভালবাসা থেকে এই আয়োজন।

প্রারম্ভিক জীবনের 'আব্দুর রাজ্জাক'

১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি টালিগঞ্জ, কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন আব্দুর রাজ্জাক। টালিগঞ্জে জন্মের সুবাদে অভিনয়ের রূপ-কলা দেখেই বড় বড় হয়েছেন। মাত্র ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় অভিনয় করেছিলাম ছোটদের নিয়ে লেখা বিদ্রোহী নাটকে। জীবনের তাগিদে ১৯৬৪ সাথে শরণার্থী হিসেবে ঢাকায় আসেন তিনি। এসেই জড়িয়ে পড়েন জীবন সংগ্রামে।

নায়ক রাজ্জাক এর পারিবারিক জীবন

১৯৬২ সালের ২রা মার্চ খাইরুন নেসা লক্ষীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। সুদীর্ঘ ৫৫বছর একসাথে কাটিয়েছেন। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত একসাথে কাটিয়েছেন। ভালোবাসার শক্তিই তাঁদের জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত একত্রে রেখেছে।

অনেকেই বলে বিয়ের পরপরই রাজ্জাকের জীবনে একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে। নায়করাজ তখন থেকেই ভালোবেসে স্ত্রীকে লক্ষ্মী বলে ডাকতে শুরু করেন।নিজের প্রতিটি কাজের সঙ্গেই নিজের স্ত্রীর নাম যুক্ত রেখেছেন তিনি। যেমন তার বাড়ির নাম 'লক্ষ্মীকুঞ্জ', প্রযোজনা সংস্থা 'রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন'। এছাড়া তিনি ১৯৮৪ সালে ঢাকার উত্তরায় গড়ে তোলেন একটি শপিংমল যার নাম দেন 'রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স'।

রাজ-লক্ষ্মীর সংসারে বাকি সদস্যরা বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসাইন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না সম্রাট (খালিদ হোসাইন)।

অভিনয় জীবনে চিত্রনায়ক রাজ্জাক

শুরুটা তখনকার পাকিস্তান টেলিভিশন দিয়ে। ঘরোয়া নামক ধারাবাহিকে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অভিনয় জীবনের সূচনা করেন নায়ক রাজ্জাক ! প্রথম নাটকেই তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। ছোট কিংবা বড় কোন চরিত্রকেই তিনি হেলা করতেন না। চলচ্চিত্র জীবন শুরু সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন দিয়ে। কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন সহ আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন।

FcGUzdj.jpg


চিত্রনায়ক রাজ্জাক অভিনিত 'অনন্ত প্রেম' সিনেমার পোস্টার

আব্দুর রাজ্জাকের 'নায়করাজ' হয়ে উঠার পিছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জহির রায়হান। জহির রায়হান পরিচালিত বেহুলা নায়করাজের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। বেহুলার পর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

নায়ক রাজ্জাক তার জীবনে প্রায় ৫০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দেশ স্বাধীনের আগে তার অভিনিত অনেক ছবি আছে যা চলচ্চিত্র জগতে অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সে সময়ের কিছু সাড়া জাগানো ছবি হল – দুই ভাই, আবির্ভাব, বাঁশরী, এতটুকু আশা, নীল আকাশের নীচে, যে আগুনে পুড়ি, পায়েল, দর্পচূর্ণ, যোগ বিয়োগ, ছদ্মবেশী, জীবন থেকে নেয়া, মধুর মিলন ইত্যাদি। এসব ছবির সাফল্যে রাজ্জাক হয়ে ওঠেন চলচ্চিত্রের অপরিহার্য নায়ক।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশি সিনেমায় রাজ্জাকের জনপ্রিয়তা

দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাদের উপর দায়িত্ব পড়ে, রাজ্জাক তাদের মধ্যে একজন। স্বাধীনতার পর নায়ক রাজ্জাক অভিনিত প্রথম ছবি মানুষের মন। ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার কারনে নতুনভাবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে জেগে উঠে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম ছবি চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'ওরা ১১ জন', এসএম শফির 'ছন্দ হারিয়ে গেল', বাবুল চৌধুরীর 'প্রতিশোধ' এবং কাজী জহিরের 'অবুঝ মন' ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক হয়ে যান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আইকন। ১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের 'রংবাজ' ছবির মাধ্যমে রাজ্জাক বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তার অভিনিত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হল – নীল আকাশের নীচে, জীবন থেকে নেয়া, ওরা ১১ জন, অবুঝ মন, রংবাজ, আলোর মিছিল, অশিক্ষিত, ছুটির ঘণ্টা এবং বড় ভালো লোক ছিল বেঈমান, অনির্বান, স্লোগান, ঝড়ের পাখি, আলোর মিছিল, এখানে আকাশ নীল, অতিথি, অবাক পৃথিবী ইত্যাদি।

একজন 'পরিচালক' আব্দুর রাজ্জাক

পরিচালক হিসেবে রাজ্জাক মোট ১৮টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন, যার অধিকাংশই তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা থেকে নির্মিত। অনন্ত প্রেম, বদনাম, চাঁপাডাঙার বউ, মৌ চোর, সৎ ভাই, বাবা কেন চাকর, জ্বিনের বাদশা, কোটি টাকার ফকির, মন দিয়েছি ইত্যাদি তা‍ঁর পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। পরিচালক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র 'অনন্ত প্রেম' দিয়েই তিনি তার নিজস্বতা প্রমাণ করেন। গল্প নির্বাচন, দৃশ্যায়ণ, চরিত্রায়ণ সব মিলিয়ে 'অনন্ত প্রেম' কালজয়ী আসনে ঠাঁই পেয়ে যায়। এই চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকার মৃত্যু দেখানো হয়েছে। সে সময়ের বিবেচনায় এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ছিলো। বাংলাদেশের ছবির দর্শক মিলনই দেখে এসেছে এতকাল। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চাপা ডাঙার বউকে সিনেমার পর্দায় তিনি তুলে আনেন। এছাড়াও নীহাররঞ্জন গুপ্তের কালজয়ী উপন্যাস 'উত্তর ফাল্গুনী' -কে তিনি চলচ্চিত্রে রূপ দেন।

একজন 'প্রযোজক' রাজ্জাক

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আরো বেগবান হয়েছে নায়করাজ রাজ্জাকের রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের কল্যাণে। নিজের এবং স্ত্রীর নাম মিলিয়ে তিনি তৈরি করেন এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। অনন্ত প্রেম, পাগলা রাজা, চাঁপাডাঙার বউ, মৌচোর, বাবা কেন চাকর-এর মত সফল চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকে। শুধু সিনেমা তৈরিই নয়, প্রযোজক হিসেবে তিনি অরুণা বিশ্বাস, পুত্র বাপ্পারাজকে অভিনয়ের সুযোগ করে দেন। খল অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানকে তিনি চাঁপাডাঙার বউ চলচ্চিত্রে শাবানার বিপরীতে অভিনয় করিয়ে নতুন ইমেজ তৈরি করেন। ছোট ছেলে সম্রাটও তা&র হাত ধরে চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। রাজলক্ষ্মী প্রোডকশন থেকে ২০টি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। এই প্রোডাকশন থেকে তৈরি হওয়া চলচ্চিত্র 'বাবা কেন চাকর' এতটাই সফল হয়েছিলো যে, পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গে এই চলচ্চিত্রটি আবার নির্মিত হয়। উল্লেখ্য, বাবা কেন চাকর প্রযোজনার সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প অশ্লীলতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলো। সেই অন্ধকার কাটাতে এ চলচ্চিত্রটি বিরাট ভূমিকা রাখে। এরপর তিনি 'আরএস এন্টারটেইনমেন্ট' নামে আরেকটি প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন। এই প্রযোজনা সংস্থা থেকেও আমি বাঁচতে চাই, কোটি টাকার ফকির এবং মন দিয়েছি তোমাকে -এর মত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে।

পুরস্কার এবং সম্মাননা

অভিনয়ের জন্য নায়ক রাজ্জাক পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। কি যে করি (১৯৭৬), অশিক্ষিত (১৯৭৮), বড় ভালো লোক ছিল (১৯৮২), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪) এবং যোগাযোগ (১৯৮৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি ইন্দো-বাংলা কলা মিউজিক পুরস্কার, আজীবন সম্মাননা(২০০৩), বাচসাস পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০০৯), ইফাদ ফিল্ম ক্লাব পুরস্কার আজীবন সম্মাননা(২০১২), ব্যাবিসাস পুরস্কার আজীবন সম্মাননা(২০১২), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০১৩), মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা (২০১৪) সহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হন। এর বাইরেও নায়ক রাজ্জাক বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

নায়ক রাজ্জাকের মৃত্যু

নায়করাজ রাজ্জাক ২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট সন্ধ্যা ৬:১৩ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইউনাইটেড হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন।

আজ বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক রাজ্জাক আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন বাংলা চলচ্চিত্রে তা‍ঁর বিশাল ভান্ডার। সৃষ্টি করেছেন ৫০ বছরের সুবিশাল একটা অধ্যায়। পরকালে ভাল থাকুক নায়করাজ। অসংখ্যা শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা প্রিয় মানুষটার প্রতি !
 

Users who are viewing this thread

Back
Top