What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review সাহিত্য থেকে রুপালী পর্দায় : বাংলাদেশের সেরা পাঁচ চলচ্চিত্র (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
j1xnxZD.jpg


সিনেমা, আমার কাছে শিল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো সিনেমা। সিনেমার অন্য এক প্রতিশব্দ হলো ফিল্ম। দুটোই ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ খু‍ঁজলে পাওয়া যায় ছায়াছবি বা চলচ্চিত্র। কিন্তু সিনেমা, ফিল্ম, চলচ্চিত্র যাই বলেন, এই জিনিসটা মূলত কি? উইকিপিডিয়ার মতে, সিনেমা হলো একপ্রকার দৃশ্যমান বিনোদন মাধ্যম। কিন্তু সিনেমা কি শুধুই বিনোদনের মাধ্যম? সিনেমাগুলো কি আমাদের শুধুই বিনোদিত করে? সিনেমা কি কখনো আমাদের ভাবায় না? কখনো কি আমাদের নতুন করে চিন্তা করতে বাধ্য করে না? সত্যটা হচ্ছে, কিছু সিনেমা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়, চিন্তা করতে শেখায়, বদলে দেয় জীবনযাত্রার দৃশ্যপট। কিন্তু কিভাবে? সিনেমা তো বিনোদনের জন্যই তৈরী। তাহলে ভাবতে কিভাবে শেখাবে?

নতুন করে ভাবতে শেখানোর সিনেমার মূল অস্ত্র হচ্ছে গল্প। একটা সিনেমার গল্পই আমাদের চিন্তাভাবনা মতাদর্শ বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে হ্যাঁ, সেটা সব সিনেমার ক্ষেত্রে নয়, বিশেষ কিছু সিনেমার ক্ষেত্রে। আর মজার বিষয় হচ্ছে, এধরণের সিনেমাগুলো নির্মাণের কাজে যেসব শক্তিশালী গল্পগুলো ব্যবহৃত হয়, সেগুলো আসে লিখিত সাহিত্য বা গল্প, উপন্যাস থেকে ! খেয়াল করে দেখবেন, উপন্যাস থেকে নেওয়া সিনেমাগুলো হয় একেবারেই আলাদা। প্রতিটাই কেমন যেনো হৃদয় ছু‍ঁয়ে যাওয়ার মত! সারা বিশ্বেই সাহিত্য থেকে সিনেমা বানানোর এই ধারাটি প্রচলিত আছে।

সেই ১৮ শতক এর শেষদিক থেকে তৈরী হচ্ছে সিনেমা। আমাদের দেশে প্রথম সিনেমা তৈরী হয় ১৯২৭ সালে, ঢাকার নবাব পরিবারের উদ্যোগে। ছবির নাম "সুকুমারী"। সুকুমারী ছিলো স্বল্পদৈর্ঘ্যের এক নির্বাক সিনেমা। ১৯৩১ সালের "দ্যা লাস্ট কিস" ছিলো প্রথম পূর্নদৈর্ঘ্য সিনেমা, এটাও ছিলো নির্বাক চলচ্চিত্র। বাংলা চলচ্চিত্রের মোড় ঘুরে যায় ১৯৫৭ সালে। যখন আব্দুল জব্বার খান তৈরী করেন "মুখ ও মুখোশ" নামের চলচ্চিত্রটি। এটা ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম সবাক সিনেমা। এরপর থেকে তৈরী হয়েছে অসংখ্য সিনেমা। এরমধ্যে অনেক সিনেমা রয়েছে, যেগুলো তৈরী হয়েছে সাহিত্য থেকে। আজকের এই লেখাটা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সেরা পাঁচ সাহিত্য নির্ভর সিনেমা নিয়ে। আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি চলে যাই বিষয়বস্তুতে !

বাংলাদেশের সেরা ৫টি সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র

১. তিতাস একটি নদীর নাম : শুধু সাহিত্য নির্ভর সিনেমা হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের সেরা ছবির একটি তালিকা করা হলে সবার উপরে যে নামটি থাকবে, তা হচ্ছে 'তিতাস একটি নদীর নাম'। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের সেরা ১০টি সিনেমা নিয়ে দুটি তালিকা প্রকাশ করে। একটি তালিকা হয়েছে চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মতে, আর অপরটি দর্শকদের মতে। দুটি তালিকায়ই 'তিতাস একটি নদীর নাম' সিনেমাটি প্রথম স্থান অধিকার করে।

CpZpbvg.jpg


তিতাস একটি নদীর নাম সিনেমাটির পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় ১৫৯ মিনিটের এই সিনেমাটি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে আমাদের দেশে আগমণ করে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন তিনি। অদ্বৈত মল্লবর্মনের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস 'তিতাস একটি নদীর নাম' -এর কাহিনী অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদী আর তার আশেপাশের মানুষদের, বিশেষ করে জেলেদের জীবনযাত্রা এই সিনেমার উপজীব্য বিষয়। সিনেমাটিতে গোলাম মুস্তাফা, কবরী চৌধুরী, রোজী সামাদ, প্রবীর মিত্র প্রমুখ গুণী শিল্পীরা অভিনয় করেছেন। সিনেমাটিতে ঋত্বিক ঘটক নিজেও তিলকচাঁদ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

নিঃসন্দেহে শুধু আমার নয়, যে কারো তৈরী করা তালিকার প্রথমেই থাকবে 'তিতাস একটি নদীর নাম' চলচ্চিত্রটি !

২. সূর্য দীঘল বাড়ি : বাংলা চলচ্চিত্রে যখন রোমান্টিক সিনেমার স্বর্ণযুগ চলছিলো, তখনই মুক্তি পায় 'সূর্য দীঘল বাড়ি' নামে ব্যতিক্রমী একটি সিনেমা। এই ছবিটি পায় 'আর্টফিল্ম' এর মর্যাদা। সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী। বিশিষ্ঠ গ্রন্থকার আবু ইসহাক -এর ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত কালজয়ী উপন্যাস সূর্য দীঘল বাড়ী অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ছবিতে প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন ডলি আনোয়ার, রওশন জামিল, জহিরুল হক, আরিফুল হক, কেরামত মাওলা, এটিএম শামসুজ্জামান।

iKgGoC5.jpg


১৯৫০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অবিভুক্ত ভারতের বাংলায় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে 'পঞ্চাশের আকাল' নামে যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো, তাতে লক্ষ‍াধিক দরিদ্র মানুষ প্রাণ হারায়। সেসময় কোনোমতে যারা শহরের লঙ্গরখানায় আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে পেরেছিলো, তাদেরই একজন হচ্ছেন স্বামী পরিত্যক্ত নারী 'জয়গুন'। সাথে রয়েছে তার মৃত প্রথম স্বামীর ঘরের ছেলে ও দ্বিতীয় স্বামীর ঘরের মেয়ে। আরো আছে মৃত ভাইয়ের স্ত্রী-পুত্র। তারা গ্রামে ফিরে এসে এমন এক খন্ড জমিতে ঘর তৈরী করে, যা কিনা 'অপয়া ভিটে' বলে পরিচিতি ছিলো। জীবনযুদ্ধে সে যখন প্রাণপণ লড়াই করছে, তখন তার উপর কুদৃষ্টি পরে গ্রামের মোড়লের। ঠিক সেসময় দ্বিতীয় স্বামীও তাকে আবার ঘরে তুলতে চায়। জয়গুন কারো প্রস্তাবেই সায় দেয়না। কিন্তু এ দুজনের সাক্ষাৎ ঘটে যাওয়ায় মোড়ল বিষয়টি মানতে না পেরে হত্যা করে তার প্রতিযোগীকে। ঘটনার একমাত্র দর্শক হিসেবে জয়গুনকেও মূল্য দিতে হয় অন্যভাবে !

সূর্য দীঘল বাড়ি ছবিটি ১৯৮০ সালে জার্মানিতে ম্যানহেইম চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করে এবং ৩টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। পর্তুগালের ফিগুএরা দা ফোজ চলচ্চিত্র উত্সব (১৯৮০) -তে একটি বিভাগে অংশ নিয়ে পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও ৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে কালজয়ী এই ছবিটি।

৩. হাঙর নদী গ্রেনেড : ১৯৯৭ সালে দেশের প্রখ্যাত পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় 'হাঙর নদী গ্রেনেড' সিনেমাটি মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন সুচরিতা, সোহেল রানা, অরুণা বিশ্বাস, অন্তরা, ইমরান, দোদুল ও আশিক। সিনেমার গল্পটি নেওয়া হয়েছে সেলিনা হোসেনের হাঙর নদী গ্রেনেড নামক উপন্যাস থেকে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৬ সালে।

RLgqBAI.jpg


হাঙর নদী গ্রেনেড চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত এই গল্পটি আবর্তিত হয় বুড়ি নামের এক মা'কে কেন্দ্র করে। যে মুক্তিযুদ্ধে দুই ছেলে কলিম আর সলিমের মৃত্যু হওয়া সত্বেও অন্য দুই মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ বাঁচাতে তার প্রতিবন্ধী ছেলে রইসকে তুলে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে। 'হাঙর নদী গ্রেনেড' ছবিটি যারা দেখেছেন, তারা জানেন এই বুড়ি শুধু সলিম কলিম বা রইসের মা নয়। তিনি ছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধার মা।

চাষী নজরুলের এই সিনেমা ঢালিউডের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে চিরকাল বিবেচিত হবে।

৪. শ্রাবণ মেঘের দিন : শ্রাবণ মেঘের দিন সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। তা‍ঁরই লেখা 'শ্রাবণ মেঘের দিন' উপন্যাস অবলম্বনে তৈরী হয়েছে সিনেমাটি। অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, শাওন, মাহফুজ আহমেদ, আনোয়ারা, ডাঃ এজাজ সহ অনেকে।

s6o4JKX.jpg


মতি নামের একজন যুবককে গ্রামেরই কুসুম নামের এক মেয়ে মনে মনে ভালোবাসে। মতি একজন গায়ক। কুসুমের গলাও বেশ ভালো। ঢাকা থেকে আসা জমিদারের নাতনী শাহানা'কে ভালোবেসে ফেলে মতি। এদিকে কুসুমেরও বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। তারপর কি ঘটে, জানতে হলে দেখে ফেলুন পুরো সিনেমাটি।

'শ্রাবণ মেঘের দিন' সিনেমাটি মোট ৬টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলো।

৫. সারেং বৌ : সারেং বৌ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। গল্পটি নেওয়া হয়েছে শহীদুল্লাহ কায়সারের সারেং বৌ উপন্যাস থেকে। এতে অভিনয় করেছেন ফারুক, কবরী, আরিফুল হক, জহিরুল হক, বিলকিস, বুলবুল ইসলাম, ডলি চৌধুরী সহ আরো অনেকে। সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে।

uKf8icM.jpg


এই সিনেমাটির গল্প আবর্তিত হয় জাহাজের সারেং কদম, তার স্ত্রী নবীতন ও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে। এই সিনেমাটিতেই ব্যবহৃত হয়েছিলো আব্দুল জব্বারের গাওয়া "ওরে নীল দরিয়া" গানটি, যা কিনা আজও রয়েছে সবার মুখে মুখে।

বর্তমান সময়ের বিচারে আমাদের চলচ্চিত্র অনেক পিছিয়ে আছে। অনেকেই আছেন, যারা 'বাংলা সিনেমা' শব্দটি শুনলেই নাক সিটকাবেন। কিন্তু আমাদেরও আছে এক সোনালী অতীত। আমাদের ভান্ডারেও আছে অসংখ্য মাস্টারপিস। আমার এই লেখাটি সেই ভান্ডারের সেরা ছবিগুলো সম্পর্কে, শুধুমাত্র আপনাদের জানানোর জন্যই নয়, বরং নির্জনমেলার মূল লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি নির্জনমেলার উদ্যোক্তা সহ এই টিমে কাজ করা প্রতিটা মানুষকে, যারা দেশের শিল্প, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে নাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। আর সেইসাথে আশা রাখছি, উল্লেখিত এই বাংলাদেশের সেরা পাঁচ চলচ্চিত্র দেখে না থাকলে অবশ্যই দেরী না করে দেখে ফেলুন। শীঘ্রই আবার বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে লিখতে বসবো। ভালো থাকুন, ধন্যবাদ…
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top