What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

৩৩টি ধর্ষণ এবং একজন রুখে দাঁড়ানো মাস্টারমশাই (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
M8TNatt.jpg


১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল মাত্র তিন বছরে পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার সুঁটিয়া এবং তার আশেপাশের গ্রামে এক টানা ৩৩ টি ধর্ষনের ঘটনা ঘটে। আর এই ধর্ষণে বাধা দিতে এসে খুন হন ১২ জন। তখনকার সময় পশ্চিম বঙ্গের ক্ষমতায় ছিলো বাম সরকার। ধর্ষণ এতটাই নৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো যে, এরজন্য সুঁটিয়াকে বলা হত 'ধর্ষনগ্রাম' !

সুঁটিয়াসহ আশেপাশের বিষ্ণুপুর, গাজনা, কানাপুকুর, কুঁটিপাড়া, পশ্চিম বারাসাত, স্বরূপনগরের সবার সামনেই দিনে দুপুরে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটত। এমনকি প্রশাসনও এই অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলো। আর এসবের নেতৃত্ব দিত ওখানকার নাগবাড়ির কুখ্যাত তোলাবাজ এবং মস্তান সুশান্ত চৌধুরী।

সুশান্ত চৌধুরী ধর্ষণ তাদের অধিকার মনে করত। সে তার 'কার্গিল পার্টি'র ছেলেদের বলত, "এলাকার কোন মেয়েটাকে ভাল লাগছে বল। তুলে আন, রেপ কর। বাকিটা আমি সামলে নেব।"

কয়েকটা ঘটনা বলি – সুশান্ত আর তার পার্টির ছেলেরা কিভাবে দিন দুপুরে সবার সামনে ধর্ষণ করতো। গ্রামের বিয়েবাড়িতে সবাই খাচ্ছে। হঠাৎ সুশান্তর দলবল নিয়ে এসে সেখান থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল। কারণ মেয়েটির অপরাধ, খাওয়ার সময় মেয়েটি বলেছে বিয়েবাড়ির ফুচকাটা ভাল নয়। শুধুমাত্র এটুকু কথার জন্য মেয়েটিকে সারা রাত ধরে গনধর্ষন করে রক্তাক্ত এবং অজ্ঞান অবস্থায় বাড়িতে ফেলে দিয়ে আসে। হুমকি দেওয়া হয় মেয়েটির পরিবারকে – পুলিশকে জানালেই বাড়ি সুদ্ধু লোক 'হাওয়া' হয়ে যাবে। তার পরের রাতে আবার তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষন করা হল মেয়েটিকে। তারপর আবার, আবার। এভাবে যখন চলতেই থাকলো তখন মেয়েটিকে নিয়ে তার মা গ্রাম ছেড়ে চলে গেলো!

সুশান্ত এবং তাদের পার্টির ছেলেরা কয়েকদিন পর পর এলাকার যুবতীদের লিস্ট করত। তারপর এই লিস্ট ধরে ধরে ধর্ষণ করত। ধর্ষণের প্রকোপ এতটাই বেড়ে গেছিলো যে রাস্তায় মেয়েরা বের হত না। ঘরের ভেতর মেয়েরা জোরে কথা বলত না।

কি মনে হচ্ছে, এটা সিনেমার মত? নাহ, এটা একদম সত্যি ঘটনা…

এবার ২০০২ সালে এই এলাকার হাওয়া একটু ঘুরে গেল। বন্যা-বিধ্বস্ত সুঁটিয়ার হাইস্কুলের মাঠে একটা 'ফ্লাড সেন্টার' বানানোর জন্য টাকা বরাদ্দ করল সরকার। কাজ শুরুর আগে সুশান্ত সরকারী ঠিকাদারের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা দাবি করে। ঠিকাদার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা সরকারকে জানান। সরকারের মুখরক্ষার খাতিরে সুশান্তর পেছনে থাকা রাজনৈতিক নেতারাই সাময়িকভাবে তাকে আত্মসমর্পন করতে বলেন।

এরপর অল্প কিছু মানুষ সাহসে ভর করে তৈরী করলেন 'প্রতিবাদী মঞ্চ।' আসলে মানুষের অনেক দিন ধরে ভেতরে জ্বলতে থাকা আগুনগুলো বাইরে আসতে শুরু করে সুশান্ত জেলে যাওয়ার পরেই। ২৭ জুলাই, ২০০২, 'প্রতিবাদ মঞ্চ'এর প্রথম সভায় বক্তৃতা দিতে সাহস হচ্ছিল না কারও। কারন সুশান্তর দলের অর্ধেক ছেলে তখনও জেলের বাইরে। হঠাৎই মানুষের ভীড় ঠেলে এগিয়ে এলেন একজন ছিপছিপে চেহারার যুবক। সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দারের হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে গর্জে ওঠেন তিনি "আমরা যদি নিজেদের মা-মেয়ে-বোনেদের সম্মান রক্ষা করতে না পারি তাহলে সভ্যসমাজে থাকার যোগ্য নই আমরা। ধর্ষকদের মুখোমুখী হওয়ার সাহস না থাকলে তাদের চেয়েও বেশি শাস্তি হওয়া উচিত আমাদের।"

… লোকটির নাম বরুণ বিশ্বাস !

কে ছিলেন এই বরুণ বিশ্বাস ?

কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে (মেন) স্কুলশিক্ষক। সবাই যাকে ভালোবেসে মাস্টারমশাই বলে ডাকতেন। ধর্ষণ বিরোধী "প্রতিবাদী মঞ্চ" এবার তাদের কার্যক্রম প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন। সারারাত ঘুরেঘুরে তারা পুরো গ্রাম পাহারা দেন। প্রতিবাদী মঞ্চ'এর আন্দোলনের চাপে ধরা পড়লো পাঁচজন অপরাধী। একজন অভিযুক্তের হাতে নাকি বরুন তুলে দিয়েছিলেন 'শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত'। বলেছিলেন "জেলে বসে পড়িস।" ভাবা যায়!

বরুণ বিশ্বাস শুধু এই ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে গুটিয়ে রাখেননি। তার বেতনের প্রায় পুরোটা টাকা খরচ হতো গ্রামের ছেলে-মেয়েদের বই খাতার পিছনে। গ্রামের যেসব ধর্ষিতা মেয়ে বরুণ বিশ্বাস তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। অন্ধকার সুঁটিয়ায় কারেন্টের ব্যবস্থা করে দেন। কারণ বরুণ বিশ্বাস করতো আলো আসলেই সব অন্ধকার কেটে যাবে।

প্রতিদিনের মত ৫ই জুলাই, ২০১২। মিত্র ইনস্টিউশনের বাংলার শিক্ষক বরুন কলকাতা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। যদিও অন্যদিন বরুণের সাথে তার বন্ধুরা থাকতো, কিন্তু ওদিন একটা মেয়ের বিয়ের আয়োজনে সবাই ব্যস্ত থাকায় বরুণ একাই বাড়ি ফিরছিলো।

গোবরডাঙা স্টেশনের কাছে যেখানে বরুণের মোটরসাইকেল রাখা থাকত। সেদিন নিজের বাইকে উঠে স্টার্ট দেওয়ার সাথে সাথে পেছন থেকে ছুটে আসে একটা গুলি। প্রায় আধঘন্টা ওই স্টেশনে রক্তে মাখামাখি হয়ে পড়েছিলেন বরুণ। কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার লিখেছেন, "যতক্ষন বরুনের দেহে প্রাণ ছিল ও বলেছিল – আমায় বাঁচাও। স্টেশন সংলগ্ন শ্রমিক সংগঠনের অফিসে ১৫-২০ জন সদস্য থাকা সত্ত্বেও কেউ এগিয়ে আসেনি বরুনকে বাঁচাতে।"

যদি বরুণকে হাসপাতালে নেওয়া হতো তাহলে আজ বরুণ বেচে থাকতো। কি নির্মম, বরুণ বিশ্বাস যাদের জন্য লড়াই করছিলো, তারাই পুলিশি ঝামেলার ভয়ে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো একজন স্বপ্নদ্রষ্টা বীর বরুণ বিশ্বাসের মৃত্যু।

বরুণ বিশ্বাসের খুনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলো ভাড়াটে খুনি সুমন্ত দেবনাথ ওরফে ফটকে, দেবাশীষ সরকার, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও রাজু সরকার। এদের বেশিরভাগই স্থানীয় ছাত্র। এরা প্রত্যেকে বরুণ বিশ্বাসের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই আর পোশাক কিনত। এরা পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী সুশান্ত চৌধুরীর নির্দেশে তারা বরুণ বিশ্বাসকে খুন করেছে।

কিছুদিন পরেই বরুণ বিশ্বাস খুনের অনেক আসামি ছাড়া পেয়ে যায়। বরুণ বিশ্বাসের লড়াই নিয়ে 'প্রলয়' নামে একটা সিনেমাও হয়েছে। তবে বরুণ বিশ্বাসের যে লড়াই সে লড়াই তার মৃত্যুর সাথে সাথে অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে।

তবে কেউ বরুণ বিশ্বাসকে মনে রাখুক বা না রাখুক, ইতিহাসে একজন বরুণ বিশ্বাস জ্বলজ্বল করে থাকবেন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে ধর্ষণ বিরোধী লড়াইয়ে বরুণ বিশ্বাসের জন্ম হবে। আর এই ভাবেই মাস্টারমশাইয়ের দ্রোহ ছড়িয়ে পড়বে আবার, বারেবার, চারিদিকে…
 

Users who are viewing this thread

Back
Top