What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কেমন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য? (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
W6XFvvG.jpg


যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য কে? আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, ঢাবির অনেক শিক্ষার্থীও উত্তরটা ‍ঠিকভাবে বলতে পারবেনা।

উত্তরটা হচ্ছে, স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ বা পি জে হার্টগ। এটা না শিখে সম্ভবত কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সারতে পারে না। আমিও পারিনি। আরও অনেক প্রথম কে বা কী—উত্তরগুলোর সঙ্গে আমি এটাও শিখেছিলাম। এরপর উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থী হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। কিন্তু ক্যাম্পাসের কোথাও এই নামটা চোখে পড়ল না। পরে জানলাম, আমরা যেটাকে ইন্টারন্যাশনাল হল বলি, সেটা আসলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের নামে। এরপর ক্লাস, পড়াশোনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে হার্টগকে নিয়ে আর কিছু জানার সুযোগ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে পি জে হার্টগ সম্পর্কে আমি আসলে কিছুই জানিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর পর তাঁর সম্পর্কে আর কী জানব? তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে আর না জেনে থাকতে হয়নি। একদিন প্রথমার দোকানে চোখে পড়ল 'স্যার ফিলিপ হার্টগ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য' বইটা। লেখক বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। বইটা কিনে ফেললাম। বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম।

বইটি পড়ার রেশ কাটতে না কাটতেই চলে এল ১ জুলাই। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড-খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবার উদ্‌যাপন করল ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের আবেগপূর্ণ স্ট্যাটাস বলে দিল, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তাঁরা কত ভালোবাসেন। তখন আমার মনে একটা প্রশ্ন এল—আমি যেমন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম উপাচার্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তাঁরাও কি এমন? নাকি সবকিছু জানেন তাঁরা!

যাঁরা জানেন, তাঁদের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা। কারণ, তাঁরা আমার মতো নন। তাঁরা নিজের প্রাণপ্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিকড় সম্পর্কে জানেন। কাদের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম, কারা এটাকে আজকের অবস্থানে আনতে অবদান রেখেছেন—তাঁরা সেসব জানেন। কিন্তু যাঁরা জানেন না, তাঁদের সঙ্গে বইটা থেকে পাওয়া কিছু তথ্য তুলে ধরার ভাগাভাগি না করে পারছি না।

NpgkiyF.jpg


স্যার হার্টগের জন্ম ১৮৬৪ সালের ২ মার্চ। তাঁর কয়েক পূর্বপুরুষের বাস ছিল হল্যান্ডে। সেখান থেকে উনিশ শতকের প্রথম দিকে তাঁর এক পূর্বপুরুষ ফ্রান্সে যান। একপর্যায়ে তাঁর বাবা ফরাসি ভাষার শিক্ষকের চাকরি নিয়ে ইংল্যান্ডে যান। সেখানেই পরিবারটি থিতু হয়। সে সূত্রে তিনি ব্রিটিশ আর ধর্মীয় পরিচয়ে তিনি ছিলেন ইহুদি। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশাসনিক দক্ষতা উভয় ক্ষেত্রেই স্যার পি জে হার্টগ ছিলেন অসাধারণ। তাঁর সময়ের সবচেয়ে আধুনিক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ স্কুলে। উচ্চশিক্ষা নেন ফ্রান্সের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ দ্য ফ্রান্স থেকে। সবশেষে তিনি ম্যানচেস্টারের ওয়েলস কলেজে বিশপ বার্কলে স্কলার ছিলেন। তাঁর কর্মজীবনের শুরু ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে রসায়নের সহকারী প্রভাষক হিসেবে। এরপর তিনি শিক্ষকতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যোগ দেন ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক রেজিস্ট্রার ছিলেন প্রায় ১৭ বছর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর প্রশাসনিক দক্ষতার কথা বিবেচনায় নিয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগকে। চার হাজার টাকা বেতন ও বাসভবন-সুবিধা নিয়ে ১৯২০ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি যোগ দেন কলকাতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প অফিসে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী লেডি ম্যাবেল হেলেন হার্টগ ও দুই শিশুপুত্র।

১৯২১ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকার বলধার বাগানবাড়ি প্রাঙ্গণে হার্টগ দম্পতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য সেদিন বলেন, 'এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পটভূমি আপনারা জানেন। নতুন প্রদেশ বাতিলের পর লর্ড হার্ডিঞ্জের কাছে মুসলমান প্রতিনিধিদের আলাপ-আলোচনার ফসল এই বিশ্ববিদ্যালয়।' তিনি চেয়েছিলেন পূর্ব বাংলায় একটি অসাম্প্রদায়িক ও জ্ঞানভিত্তিক মধ্যবিত্ত সমাজ গড়ে উঠুক, বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে। যাতে তাঁরা রাজনৈতিক ব্যাপারে আরও বেশি অংশ নিতে পারেন এবং ভবিষ্যতে বাংলার সরকার পরিচালনায় যথেষ্ট যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন।

হার্টগ যে কত বড় স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন; ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত-পাকিস্তানের জন্ম, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় জীবনের যেকোনো আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান, তারই প্রমাণ। প্রশাসনের দিকে তাকালেও কিন্তু তাঁর স্বপ্ন সত্য হওয়ার চিত্র পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের মাধ্যমে তখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হতো। হার্টগ সেটাকে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মনোনীত সদস্যদের তিনি স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ দিতেন, কেউ কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে শুনতেন। প্রতিটি ছাত্রের সুবিধা-অসুবিধা দেখতেন। সমস্যার সমাধান করতেন। পাস করে স্নাতক-মাস্টার্স করে কে কোথায় চাকরি পাচ্ছেন, সে খবরও রাখতেন। ছাত্ররা ঠিকমতো ক্লাস করছেন কি না, সে খোঁজ নিতেন। শিক্ষার মানের প্রশ্নে তিনি কখনোই নমনীয় হননি।

বাজেটের সীমিত অর্থ দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতো হার্টগকে। পাঠাগারের জন্য তাই তিনি ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন পারিবারিক ও ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার গড়ে তোলেন। কোন শিক্ষক কেমন ক্লাস নিচ্ছেন, ছাত্রদের কাছ থেকে তিনি সেটা জেনে নিতেন। কারও কোনো দুর্বলতা থাকলে গোপনে সে সম্পর্কে বলতেন। সবার সঙ্গে আচরণ ছিল সহানুভূতিপূর্ণ।

বইটিতে স্যার হার্টগের স্ত্রী লেডি ম্যাবেল হেলেন হার্টগ সম্পর্কে সুন্দর কিছু তথ্য আছে। এই নারী চাইতেন—বাঙালি মেয়েরা বেশি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক। ছেলেসর্বস্ব ক্লাসে কোনো মেয়ের পক্ষে ক্লাস করা সেকালের সামাজিক অবস্থায় সম্ভব ছিল না। পাঁচ বছর তিনি কয়েকজন ছাত্রীকে ক্লাসে সঙ্গ দিয়েছেন। পর্দা-প্রথার সেই যুগে ক্লাস শেষ হওয়ার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আবার কখনো কখনো ছাত্রীদের নিজেদের বাসভবনে নিয়ে গেছেন, আপ্যায়ন করেছেন, তারপর তাদের পরিবারের কোনো পুরুষ আত্মীয় গিয়ে তাদের নিয়ে গেছেন।

স্যার পি জে হার্টগ পাঁচ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি ঢাকা ছাড়েন। ১৯৪৭ সালের ২৭ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। তবে, আমৃত্যু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চিঠিপত্রে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য সম্পর্কে লেখকের মূল্যায়ন, 'তিনি শুধু উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়-সংগঠক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সংস্কারক ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন পূর্ব বাংলার মানুষের পরম হিতার্থী ও বন্ধু।' তবে এমন মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে কাজ না হওয়াটাকে অকৃতজ্ঞতা বলে মন্তব্য তাঁর।

সৈয়দ আবুল মকসুদের এ মন্তব্যটি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। দেশের এত বড় একটা বিদ্যাপীঠে নিজের সব শ্রম আর মেধা-মনন যিনি অকাতরে বিলিয়ে দিলেন, তাঁর সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানব না, এটা কেমন কথা? সত্যিই তো, আমরা অকৃতজ্ঞ। অন্যের কথা জানি না, নিজের কথা বলতে পারি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কতশত মানুষের ত্যাগ-অবদানের কথা আমি জানি না। যে প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব করি, আপ্লুত হই; সে প্রতিষ্ঠান কাদের শ্রমে, ঘামে, মেধায় গড়ে উঠেছে, সেটা না জানাটা অবশ্যই আমার অকৃতজ্ঞতা। কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ হতে চাই, জানতে চাই আমার পূর্বসূরিদের কথা। হাত বাড়ালেই যেন তাঁদের গল্পগুলো পাই, সে ব্যবস্থা করে আমাকে ও আমার মত আরও অনেককে কৃতজ্ঞ হওয়ার সুযোগ দেবে কে?

তপতী বর্মণকে ধন্যবাদ তার অনুভূতির কথা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য…
 

Users who are viewing this thread

Back
Top