মিষ্টি জগতের উদ্ভট একটি মিষ্টির নাম হচ্ছে বালিশ মিষ্টি। প্রথমবার এই নামটা শুনেই অনেকের চোখ কপালে উঠে। বিছানায় শুধু মাথাকে আরাম দেয়ার জন্য তুলতুলে বালিশ ব্যবহার হয়, এটা সম্পূর্ণই ভুল। মুখের আরামের কথা ভেবেও বালিশ বানানো হয়, তারই প্রমাণ হতে পারে নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি !
নেত্রকোনা শহর চিনে, কিন্তু বালিশ মিষ্টি চিনেনা, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। অনেকটা লম্বা, চ্যাপ্টা ধরণের এই মিষ্টি একবার খেলে যে কেউ এর স্বাদ মনে রাখবে। এই বালিশ মিষ্টি নিয়ে নেত্রকোনায় সুন্দর একটি ছড়াও রয়েছে-
“জাম গোল্লা পেয়ে শ্বশুর চটে নালিশ
কথা ছিল আনবে জামাই গয়নাথের বালিশ…”
নেত্রেকোনার বালিশ মিষ্টি’র ইতিহাস
বালিশ মিষ্টির সর্বপ্রথম প্রচলন হয় বর্তমান নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা রোডের শতবর্ষী পুরনো গয়নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। যার তৎকালীন স্বত্বাধীকারী ছিলেন শ্রীযুক্ত গয়নাথ ঘোষ। এই বালিশ মিষ্টির আবিষ্কার শতবর্ষ আগ, মুক্তিযুদ্ধেরও বহুআগে যখন ব্রিটিশরা দেশ শাসন করছিলো।
বালিশ মিষ্টি দেখতে অনেকটা কোলবালিশের মত। টাঙ্গাইলের চমচমের সাথে এর কিছুটা মিল রয়েছে। দেখতে বালিশের মত হওয়ায় ক্রেতাদের পরামর্শেই এই মিষ্টির নাম বালিশ মিষ্টি রাখা হয়। আর এই মিষ্টির গুণেই গয়নাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার বিখ্যাত হয়ে উঠে।
বালিশ মিষ্টি তৈরির উপকরণ
বালিশ মিষ্টি তৈরিতে লাগে দুধ, ছানা, চিনি আর ময়দা। প্রথমে দুধের ছানার সাথে ময়দা মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। মন্ড দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ মিষ্টি। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে। ঠান্ডা হবার পর আবার চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেক সময় ধরে। সবশেষে বালিশের উপড়ে দেয়া হয় আকর্ষণীয় ও মজাদার দুধের মালাই। এ দুধের মালাই বালিশ মিষ্টিকে অতুলনীয় করে তুলে।
অন্যান্য মিষ্টির মত বালিশ মিষ্টি সাধারণত কেজিতে বিক্রয় হয় না। এটি দোকানে পিস হিসেবেই বিক্রয় করা হয়।
দোকানে সাধারণত ৩ সাইজের বালিশ মিষ্টি পাওয়া যায়। সবচেয়ে ছোট সাইজের দাম ২০টাকা, মাঝারি ৪০ টাকা, বড় সাইজ ৮০টাকা। বালিশের আবিষ্কারক গয়নাথ ঘোষ ১৯৬৯ সালে ভারত চলে যান। সেখানে চলে যাওয়ার আগে তিনি তার দোকানটি তার কর্মচারী (নিখিল মোদক) -কে দিয়ে যান। বর্তমানে নিখিল মোদক বেঁচে নেই। তবে তার তিন সন্তান দোকান পরিচালনা করছেন। বাবুল মোদক, দিলীপ মোদক, খোকন মোদক। বর্তমানে বালিশ মিষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় নেত্রকোনাতেই গয়নাথের দুটি শাখা খোলা হয়েছে।