What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গোলকিপার থেকে কিলার : ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ব্যাঙ্গা বাবু (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
80k4IA0.jpg


"২০০১ সালের জানুয়ারী কিংবা ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে, দুপুরের দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী নান্টুর বড় ভাইয়ের বাসার সামনে যাই। উদ্দেশ্য ছিলো তার কাছে নান্টু ও তার ছোটভাইদের বিরুদ্ধে নালিশ করবো। আমার ছোটভাইদের মারধরের বিচার চাইবো। কিন্তু বাড়ির গেটের সামনে যাওয়ার পরপরই নান্টুর দেখা পাই। সে আমাকে দেখেই তার কোমড়ে হাত দেয়। তখন আর বুঝতে দেরী হয় নাই যে, নান্টু গুলি করার জন্যই কোমড়ে হাত দিছে। আমিও ভুল করি নাই। সাথে সাথেই আমি আর নজরুল মিলে ২ পিস্তলের ৪ গুলি দিয়ে তারে মাইরা ফেলি।"

তৎকালীন ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী নান্টু বাহিনীর প্রধান নান্টুকে খুন করার বর্ণনা এভাবেই দিয়েছিলো ব্যাঙ্গা বাবু ! কিন্তু কে এই ব্যাঙ্গা বাবু? কিভাবেই বা সে প্রবেশ করলো সন্ত্রাসবাদের পথে? সাধারণ মানুষ থেকে জায়গা করে নিলো দেশের আলোচিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়?

ব্যাঙ্গা বাবু'র পরিচয়

ব্যাঙ্গা বাবুর আসল নাম নাজমুল হাসান বাবু। কিশোর বয়সে বাবু ছিলো মিরপুর এলাকার নামকরা ফুটবলার। ফুটবল খেলায় গোলকিপারের ভূমিকা পালন করতেন তিনি। গোলকিপার হিসেবে অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন। বাবু গোলবারে দাঁড়ালে কোনো গোল হত না। জাম্প দিয়ে দিয়ে বল ধরতেন। অনেকেই সেই জাম্প নিয়ে হাসাহাসি করে বলত, বাবু ব্যাঙের মত লাফ দিয়ে গোল বাঁচিয়েছে। সেখান থেকেই বাবুর নামের সাথে ব্যাঙ্গা শব্দটি যুক্ত হয়। 'ব্যাঙ্গা বাবু' হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। ফুটবলার হিসেবে নিজের সেই খ্যাতি থেকেই মানুষকে জবাই করে মাথা দিয়ে ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন ব্যাঙ্গা বাবু…

মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হাতেম আলীর ছেলে ব্যাঙ্গা বাবু। ছোটবেলা থেকে তিনি বেড়ে উঠেছেন রাজধানীর মিরপুর এলাকায়। থাকতেন শাহ আলী এলাকার সি ব্লকের ৬ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়িতে। ১৯৯৩ সালে তার বাবা মারা যান। তখন থেকে সংসারের হাল ধরেন ব্যাঙ্গা বাবু ও তার বড় ভাই। কয়েকটি সেলাই মেশিন কিনে বাসায় বসে জামা তৈরি করে মার্কেটে ও দোকানে বিক্রি করতেন তারা। ধীরে ধীরে কারখানা গড়ে তোলেন। ঝামেলাহীনভাবে কারখানার ব্যবসা কর‍ার সুবিধার্থে ১৯৯৭ সাল থেকেই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট সন্ত্রাসী গ্রুপের সাথে তাকে ওঠাবসা করতে হয়। সন্ত্রাসী বাহিনী আলী গ্রুপ, নান্টু গ্রুপ, ইকবাল গ্রুপ সহ আরও একাধিক দলের সন্ত্রাসীর সাথে তিনি চলাফেরা শুরু করেন। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিক, কর্মী ও বস্তিবাসীর ওপর জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই কর্মকাণ্ড চালাত।

সবকিছু ঠিকভাবেই চলছিলো। কিন্তু ১৯৯৯ সালে হঠাৎ একদিন ব্যাঙ্গা বাবুর ছোটভাই হিসেবে পরিচিত বাপ্পী ও আকরামের কাছে চাঁদা দাবী করে বসে নান্টু গ্রপের সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না দিলে তারা বাপ্পী ও আকরামকে মারধর করে। মারধরের ঘটনায় নান্টু ও তার সহযোগী শাহাদাত, মামুন ও খায়রুলের কাছে ৪-৫ বার বিচার প্রার্থনা করে সে। বিচার না পেয়ে বাবু একদিন তার ছোটভাইদের পাঠিয়ে নান্টুর ছোট ভাইদের ডেকে আনতে বলে। বাবুর ডাকে সাড়া না দিয়ে উল্টো নান্টু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা ক্ষুর দিয়ে পোজ মারে তার ছোটভাইদের। এমনকি বাবুকেও ছুরিকাঘাত করে তারা। এতে নান্টু ও তার সহযোগী শাহাদাতের ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় বাবু। সুযোগ হাতে আসার সাথে সাথেই শাহাদাতকে ধরে মারধর করে সে। তারপর বাবু ওই এলাকা ছেড়ে মিরপুর ১৪ নম্বরে চলে যায়।

ওই বছরই এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যাঙ্গা বাবু তার প্রতিদ্বন্দ্বী সারোয়ারকে খুন করার মধ্য দিয়ে খুনি হিসেবে হাত পাকায়।

এর কিছুদিন পরই ২০০০ সালের জানুয়ারী মাসের এক রাতে ইকবাল নামে এক বন্ধু বাবুকে হঠাৎ ফোন করে ডেকে নিয়ে যায় মিরপুর ১ নম্বর কাশেম মোল্লা ক্লাবের সামনে। সেসময় খুব ঘনঘন লোডশেডিং হত। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎও পৌঁছায়নি ঠিকমত। মিরপুর ১ এর ওই এলাকায় তখন বিদ্যুৎ না থাকায় বেশ অন্ধকার ছিলো। বাবু সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ পর দেখতে পান, নান্টু বাহিনীর নান্টু, মামুন, আলী, খায়রুল, মুন্সি বাবু, মিঠু, শাহাদাত ও সালাউদ্দিন সহ আরো অনেকে এসে হাজির। তারা সবাই পিস্তল ও রিভলবার বের করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। হাতে ও রানে একাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে বাবু। এসময় কাশেম মোল্লা নান্টু বাহিনীকে পাল্টা ধাওয়া করে। তারা চলে যাওয়ার পর কাশেম মোল্লা সহ বাবুর আরেক বড়ভাই মিলে বাবুকে মহাখালীর আয়েশা মেমোরিয়াল ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৫ দিন পর বাবু কিছুটা সুস্থ হয়। এর প্রায় ৪ মাস পর নান্টু ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলাকায় ফিরে আসতে থাকে। চেষ্টা চালায় আধিপত্য বিস্তারের। বাবুও তখন ঠান্ডা মাথায় তাদেরকে একে একে খতম করার প্রস্তুতি নিতে থাকে…

এরপর ২০০১ সালে ব্যাঙ্গা বাবু মিরপুরের নান্টুকে হত্যা করে। জুলাই মাসে মিরপুর পাইকপাড়ায় শওকত আলী হত্যাকাণ্ডের আরেকটি সফল মিশন পরিচালনা করে সে। এর ৪ মাস পর ডিসেম্বরে নান্টুর আরেক সহযোগী আলীকে গুলি করে হত্যা করে। ২০০২ সালে সেগুনবাগিচায় হত্যা করে নান্টুর আরেক সহযোগী মুন্সী বাবুকে। ২০০২ সালে হত্যা করে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ঘোড়া মাসুদকে। এরপর একরকম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে ব্যাঙ্গা বাবু। মিরপুরের একচ্ছত্র চাঁদাবাজ হিসেবে তিনি পরিচিত হন। চাঁদার দাবীতে মিরপুরে ২ নম্বর এলাকার এক গার্মেন্টস ম্যানেজারকেও হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেন তিনি। ওই গুলিতে ম্যানেজার প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ২০০২ সালের শেষের দিকে ৫ লাখ টাকা চাঁদার জন্য ব্যাঙ্গা বাবু আরেক গার্মেন্টস মালিককেও গুলি করে আহত করেন।

ধরা খাওয়ার পর একবার ব্যাঙ্গ‍া বাবু গোয়েন্দাদের কাছে জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসীদের কারণেই তিনি সন্ত্রাসী হয়েছেন। গুলি করার মাধ্যমে গুলির বদলা নিয়েছেন…

ব্যাঙ্গা বাবুর আরেকটি ভয়ংকর খুনের ঘটনা বলি…

১৯ বছর আগে এক রাতে মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের মাঠে ‌একটি নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছিলো। ওই কলেজের ছাত্র রিংকু হত্যাকাণ্ডের কথা অনেকেই হয়ত জানেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ছিলো এরকম, "ছেলেটিকে মাটিতে ফেলে কয়েকজন লোক শক্ত করে ধরে রেখেছে। এরপর একজন ধাঁরালো একটি রামদা নিয়ে এগিয়ে এলো। লোকটি ওই ছেলেটার গলায় কসাইয়ের মত করে রামদা চালিয়ে দিলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। সেই রক্তের ছিটায় ভিজে যাচ্ছে ঘাতকদের শরীর। অসহায় ছেলেটির তখন বাঁচার জন্য সেকি প্রাণপণ চেষ্টা ! ছেলেটি হাত পা ছুড়ছিলো। কাটা গলা দিয়ে গো গো শব্দ বেরোচ্ছে। একসময় ছেলেটির হাত পা ছোটাছুটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু রামদা হাতের যুবকটির জবাই করা তখনো শেষ হয়নি। সে রামদা চালিয়েই যাচ্ছিলো। একপর্যায়ে ছেলেটির শরীর থেকে মাথাটি আলাদা হয়ে যায়। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা মাথাটি দিয়ে ওই যুবকদল ফুটবল খেলা শুরু করে। ফুটবল খেলতে খেলতেই তারা মাথাটি নিয়ে চলে যায়। সেখান থেকেই খুনের নেশা পেয়ে বসে ব্যাঙ্গা বাবুকে…

… সিনেমার ঘটনা নয়, এটা খোদ রাজধানীরই ঘটনা !

এভাবেই নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিলো কলেজছাত্র রিংকুকে। আর নিষ্ঠুর এই ঘাতক হলো মিরপুরের সেই বাবু, আন্ডারওয়ার্ল্ডের ব্যাঙ্গা বাবু ! রাজধানীর পেশাদার কিলারদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত একটি নাম ব্যাঙ্গা বাবু। খুন করা তার কাছে শুধু নেশা নয়, খুন করা তার কাছে পেশা। কখনো রামদা দিয়ে জবাই, আবার কখনো পিস্তলের গুলি, দুভাবেই খুন করতে পারদর্শী ছিলো সে। শুধ‍ুমাত্র ঢাকাতেই একাধারে ২৬টি খুন করেছে ব্যাঙ্গা বাবু…

তৎকালীন পত্রপত্রিকা ঘেটে জানা যায়, ওই বছর বাংলা কলেজের জিএস ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আলীকে গুলি করে হত্যা করে ব্যাঙ্গা বাবু। সেগুনবাগিচার নবাব আলীকেও সে একই কায়দায় খুন করে। এরপর একে একে খুন করে ছাত্রদল নেতা বিপ্লব, মিরপুরের সাবেক কমিশনার তৈয়েবুর রহমানের ভাগ্নে যুবলীগ নেতা মাহবুব, প্রিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান আফতাব আহমেদ, মিরপুর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিটুর ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা মামুন, ১২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শওকত হোসেন মিস্টার, মিরপুর ১ নম্বরের মাসুদ ওরফে ঘোড়া মাসুদকে। এসব সিরিজ খুনের পর আন্ডারওয়ার্ল্ডে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। আলোচিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন শাহাদাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলো এই ব্যাঙ্গা বাবু। কিন্তু পরবর্তীতে সে নিজেই দল গঠন করে চাঁদাবাজি, খুন সহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ব্যাঙ্গা বাবু শুধু রাজধানীতেই নয়, ভাড়াটে কিলার হিসেবেও খুন করেছে বিভিন্ন জেলাতেও ! সে হিসেবে তার খুনের সংখ্যা ২৬টিরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়। ব্যাঙ্গা বাবুর সিরিজ খুনের কারণে একসময় পুলিশের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অবশেষে পুলিশের হাতে পাকড়াও হয় এই ব্যাঙ্গা বাবু। স্বস্তি ফিরে আসে পুলিশ বাহিনীতে।

অপারেশন ক্লিনহার্ট সহ পুলিশ সহ সশস্ত্র বাহিনীর আরো কিছু অভিযানে যখন একে একে দেশের সব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ক্রসফায়ারে মারা যেতে থাকে, ব্যাঙ্গা বাবু তখন ভারতে চলে যায়। দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে থাকার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্যাঙ্গা বাবু। পরে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানাধীন একটি গ্রামে তাকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সেখানকার জনতা। কথা বাড়াবাড়ি করলে সে জনতার হাতে গণপিটুনি খায়। পুলিশে সোপর্দ করার পর তার আসল পরিচয় জানাজানি হয়। তা সত্ত্বেও গোয়ালন্দ থানা পুলিশ তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করে। এতে সহজেই সে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায়। তবে গোয়েন্দা নজরাধীনে থাকা ব্যাঙ্গা বাবু পরবর্তীতে আবারো ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top