What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made অদ্ভুত ভালোবাসা ❤💙💚💛💜 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
বেশ কিছুদিন ধরে লিমার আচরণ আমার কাছে অদ্ভুত লাগছিল । সে প্রায় প্রায়ই মোবাইলটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। বেশ অনেকক্ষণ পরে আবার ফিরে আসে । প্রথম প্রথম ব্যাপারটা overlook করেছি । প্রাইভেসি সবারই প্রয়োজন। কিন্তু দিন দিন ব্যাপারটা বাড়তেই থাকলো। একদিন জিজ্ঞাসা করলাম । তেমন কোন সদুত্তর দিতে পারলো না । বললো, কখন আবার মোবাইল নিয়ে গেলাম ? আমি খুব অবাক হলাম । আমাদের একমাত্র মেয়ে ভার্সিটিতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। এই বয়সে এসে বউকে সন্দেহ করার মত স্বামী আমি নই। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের কানেই শুনি লিমা ফিসফিস করে কথা বলছে। জিজ্ঞাসা করলে অস্বীকার করে । লিমা আমাকে দারুণ ভালোবাসতো। আমিই বরং একটু বিরক্ত হতাম । সারাক্ষণ এত মাখামাখি করার কি আছে? লিমা প্রথম প্রথম খুব অনুযোগ করতো, আমি তাকে সময় দিই না বলে। ওকে বলতাম, ছেলেরা পৃথিবীতে আসছেই কিছু করে খাওয়ার জন্য । সারাক্ষণ বউয়ের পিছে ঘুর ঘুর করার জন্য নয়। যখন লিমা আমার প্রেমিকা ছিল, তখন ঘুরেছি। কারন তখন তো আর সংসার চালানোর চিন্তা ছিল না । কিন্তু এখন সংসার চালাতে হয়। মেয়ের ফিউচার সিকিউরড করার জন্য কিছু সঞ্চায় করতে হয়। কাজেই লিমার এ ধরনের আচরণে আমি খুব বিরক্ত হতাম। প্যান প্যান করা মেয়ে মানুষের একটা স্বভাব, আগেই বন্ধুদের কাছে শুনেছিলাম । তাই পাত্তা দিতাম না । আস্তে আস্তে লিমা অভিযোগ করা ছেড়ে দিলো। মেয়েটাকে নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত থাকতো। মেয়েটা কে পড়ানো, স্যারের বাড়ি নেওয়া , ঘর গোছানো এসব নিয়েই থাকতো। আমি ও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । কিন্তু মেয়েটা ভার্সিটিতে যাওয়ার পরে লিমার ভিতর কেমন জানি পরিবর্তন এসেছে । অনেক কিছুই আজকাল মনে রাখতে পারে না । আর এর ভিতরে নতুন করে এই মোবাইলের সমস্যা।



আমি আজকাল একটু তীব্রভাবেই লিমা কে ফলো করছি। ভোরবেলায় সে এই কাজটা বেশি করে । আমি ঘুমানোর ভান ধরে থাকি। সে বেলকনিতে বসে ফিসফিস করে কার সাথে কথা বলে । মাঝে মাঝেই খিলখিল করে হাসে । আমি কখন দরজার পিছনে এসে দাড়ায় ও টের পায় না । ও কি বলছে আমি ঠিক শুনতে পাই না। কিন্তু মুখভঙ্গি দেখলে মনে হয় কোন রোমান্টিক আলাপই করছে। আমার রাগ বাড়তে থাকে । ওকে জিজ্ঞাসা করলে , ও পুরাই অস্বীকার করে ।



ওর মোবাইলটা চেক করলাম । call list এ দেখি একটা unknown নাম্বারে বহু বার ফোন করেছে। ম্যাসেজ চেক করে দেখি, অসংখ্য ছোট ছোট রোমান্টিক ম্যাসেজ ! আমি অবাক হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম । মানুষ এতটা অবিশ্বস্ত কেমনে হয় ! আমি ওদের জন্য দিনরাত এক করে খাটি। আর তার প্রতিদান এটা ? এভাবে লিমা আমার পিঠে ছুরি মারলো ?



আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, লিমা কে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আমার মেয়েটা খুব কষ্ট পাবে জানি । কিন্তু জেনেশুনেতো এমন চরিত্রহীন মহিলার সাথে সংসার করতে পারি না ! কিন্তু আগে সেই লোকটাকে আমি হাতে নাতে ধরতে চাই । আমি লিমার সাথে বেশি হৈ চৈ করলাম না । টেকনিক্যালি কাজটা করতে হবে । নাম্বারটা খুবই পরিচিত পরিচিত লাগছে । কোথায় যেন দেখেছি । আচ্ছা শিপনের নাম্বার নাতো ? শিপন আমার বন্ধু । ও লিমা কে পছন্দ করতো। এমনকি আমাদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও একদিন নির্লজ্জ ভাবে লিমার প্রশংসা করছিল। লিমা ও শিপনের কথা উঠলে বলতো, ভাইয়া কিন্তু খুবই ভালো মানুষ । আমার রাগে গা জ্বলে যেত। আস্তে আস্তে শিপনের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছি। গত দশ বছরে ওর সাথে আর কোন যোগাযোগ নেই । হতে পারে, লিমার সাথে চুপিচুপি যোগাযোগ রেখেছে। না হলে নাম্বারটা এত পরিচিত পরিচিত লাগছে কেন ? নাম্বারটায় ফোন দিলাম, দেখি মোবাইল বন্ধ । বেশ কয়েকদিন চেষ্টা করলাম। যখনই ফোন দিই তখনই বন্ধ পাই।



অফিসে যাওয়ার আগে দেখলাম, লিমা গোছল করতে বাথরুমে ঢুকেছে। এই সুযোগ । টেবিলের উপরেই দেখি লিমা তার আলমারির চাবি রেখে গেছে । ওর আলমারিটার তল্লাশি নিবো। সেখানে নিশ্চয়ই আরো অনেক কিছুই পাবো, যেটা দিয়ে প্রেমিক বেটাকে সহজেই ধরে ফেলতে পারবো। লিমা গোছলে গেলে আধা ঘন্টার আগে বের হয় না । কাজেই খুব সহজেই আমি কাজটা করে ফেলতে পারবো। আলমারিটা তন্নতন্ন করে খুঁজছি। দেখি নিচের তাকে একটা অনেক পুরানো শাড়ি । শাড়িটা দেখেই চিনে ফেললাম । একুশ বছর আগে আমার প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে লিমা কে কিনে দিয়েছিলাম। লিমা পাগল নাকি ? এত পুরানো শাড়ি কেউ রাখে? শাড়িটা হাতে নিয়ে বেশ আবেগ তাড়িত হলাম। হঠাৎই শাড়ির ভিতর থেকে একটা পুরানো ডায়েরি এবং একটা পুরানো নকিয়া মোবাইল পড়লো। ডায়েরিটা পড়বো না পড়বো না করেও খুলে ফেললাম । না কিছুই লেখা নেই। রাখতে যাবো হঠাৎ কি মনে করে শেষ পৃষ্ঠা উল্টে দেখলাম । আমার হাতের লেখা!

লিমা,

তুমি প্রতিদিন ভোরবেলা বেলকনিতে বসে গভীর মনোযোগ সহকারে গল্পের বই পড়ো । গল্পের বই এ তুমি এতটাই মগ্ন থাকো যে, আমি প্রতিদিন মোটর সাইকেলে করে তোমার বাসার সামনে দিয়ে দশ বারো বার চক্কর দিই। অথচ তুমি টেরই পাওনা । একটা মোবাইল নাম্বার দিচ্ছি, আমার ব্যাপারে তুমি যদি পজিটিভ হও, তাহলে এই নাম্বারে ফোন দিও প্লিজ ।



নিচে মোবাইল নাম্বারটা দেওয়া । আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, ডায়েরিটা আমিই লিমা কে গিফট করেছিলাম ।

লিমা এই নাম্বারেই ফোন করে ! নকিয়া মোবাইলটা ও চিনতে পারলাম । এই মোবাইলটা দিয়েই আমি লিমার সাথে কথা বলতাম। বিয়ের বেশ কিছু পরে মোবাইলটা এবং সিমটা চেন্জ করি। পুরানো মোবাইল এবং সিমের কথাটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম । আমার মাথা কাজ করছে না । কিছুই বুঝতে পারছি না । এই নাম্বারে লিমা কিভাবে, কাকে ফোন দেয় ? মোবাইলটা দেখি চার্জ দেওয়া । অন করলাম । মোবাইলটা একটিভ আছে কিনা দেখার জন্য আমার নিজের নাম্বারে ফোন দিলাম । আশ্চর্য! আমার সেই পুরানো নাম্বারটা এখনো সেই মোবাইলে সেট করা আছে । এবং মোবাইলটা এখনো সচল আছে ! আজকাল একটা মোবাইল কিনলে, এক দুইবছর যেতে না যেতেই আর একটা কিনতে হয়। অথচ এই মোবাইল একুশ বছর ধরে ঠিক আছে! মোবাইলটার call list এ শুধুই লিমার নাম্বার! মোবাইলে লিমার নাম্বার থেকে অনেক ম্যাসেজ এসেছে । এবং এই নাম্বার থেকে ও অনেক রোমান্টিক ম্যাসেজ লিমা কে দেওয়া হয়েছে ।



অফিসে এসেও মাথা থেকে ব্যাপারটা সরাতে পারছিলাম না । বারবার ভাবনায় মোবাইল এবং লিমার চুপিচুপি কথা বলাটাই ঘুরছিল। কিছুই বুঝছিলাম না । বেশ খানিকটা পরে আস্তে আস্তে দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারলাম । আমি বহু বহুদিন হলো লিমা কে কোন সময় দিই না । লিমা প্রথম প্রথম অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি স্বভাবগতভাবেই একটু রোবট হয়ে গেছি। তাই এক সময় সে নিজের একটা কল্পনার জগৎ তৈরি করে নিয়েছে । বিয়ের আগে যেমন বেলকনিতে বসে আমার সাথে চুপিচুপি কথা বলতো, রোমান্টিক ম্যাসেজ পাঠাতো, এখনো সে নিজের মোবাইল থেকে আমার পুরানো মোবাইলটাতে ফোন দেয় এবং ম্যাসেজ পাঠায়। নিজে নিজেই আবার ঐ মোবাইল থেকে আমার হয়ে রোমান্টিক ম্যাসেজ লিখে পাঠায় ! কথা বলার সময়ে মোবাইলটা অন করে আর কথা বলা হয়ে গেলে আবার মোবাইলটা বন্ধ করে রাখে !



কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিলাম । এই তিন দিন শুধুই লিমার সাথে সময় কাটাবো। জানি, যে মানুষিক সমস্যাটা দীর্ঘদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে, সেটা তিনদিনে ঠিক করা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ থেকে যতদিন পর্যন্ত লিমা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে না আসবে, ততদিন পর্যন্ত আমার চেষ্টা চলতেই থাকবে ।


(সমাপ্ত)
 
These are the rules that are to be followed throughout the entire site. Please ensure you follow them when you post. Those who violate the rules may be punished including possibly having their account suspended.

যারা কমেন্ট করবেন, দয়া করে বানান ঠিক রাখুন। উত্তেজিত অবস্থায় দ্রুত কমেন্ট করতে গিয়ে বানান ভুল করবেন না। আমরা যারা কমেন্ট পড়তে আসি, আমাদের কমেন্ট পড়তে অনেক অসুবিধা হয়।

Users who are viewing this thread

Back
Top