সময় মতো পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণ করা হলে তা স্বাস্থ্য রক্ষায় বেশি কার্যকর হয়। তাই দিনের কোন সময় কোন পুষ্টি বেশি কাজে লাগে তা জানা থাকলে সে অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করলে শরীর ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।
রাতে অতিরিক্ত প্রোটিন এড়িয়ে চলুন
যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়াগো’র পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ অ্যান শ জানান, যদি কারো হজমের সমস্যা থাকে তাহলে তাদের সন্ধ্যা বা রাতে উচ্চ চর্বি বা গুরুপাক প্রোটিন-জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা সবচেয়ে ভালো। বিকালের নাস্তা হিসেবে ওটামিল ও দারুচিনির সমন্বয়কে বেছে নিতে পারেন।
খাবারের পরে পেটের সমস্যা এড়াতে সাধারণ খাবার খাওয়াই ভালো।
সকালের নাস্তায় প্রোটিন
শ’য়ের মতে, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে শরীরের কথা শোনা উচিত। হতে পারে সকালে একটা মাফিন খাওয়া আপনার সারাদিনের প্রোটিনের চাহিদা মেটাবে। সকালে প্রোটিন খাওয়া শরীরের পক্ষে বেশ উপকারী। চাইলে সকালের নাস্তায় ডিম ওমলেট অথবা জটিল খাবার তৈরির সহজ উপায় ব্যবহার করে প্রোটিন মাফিন তৈরি করতে পারেন।
সকালের নাস্তায় স্বাস্থ্যকর চর্বি
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাবোট ল্যাবরেটরিজ’য়ের পামেলা নিসেভিক বেবে’র মতে, উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হলে সকালের নাস্তা অথবা দুপুর শুরুর আগেই খাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে বাদামের মাখন, প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিম অথবা খাঁটি দুধের দই খাওয়া যেতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা এই বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “এসব খাবারের চর্বি কেবল সারাদিনের খরচ করার জন্য শরীরে শক্তিই যোগায় না বরং এর সতেজ করা পুষ্টি আপনার অতিরিক্ত খাবার চাহিদা কমাবে। সঙ্গে সাধারণ চিনি বা শর্করা জাতীয় খাবার খেতে পারেন।”
রাতে চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্যা ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি ওয়েক্সনার মেডিকেল সেন্টার’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ সুসান বার্কম্যান জানান, খাবারে অবশ্যই সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকতে হবে। তবে শরীরে অনেক সময় বিশেষ কোনো পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
রাতে অতিরিক্ত উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া হলে নানান সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত চর্বি হজম হতে দুই থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। তাই বেশি রাতে এই খাবার খাওয়া হলে তা সঞ্চিত হওয়ার আগে ব্যবহৃত হতে পারে না।
ব্যায়াম করার আগে শর্করা খান
শরীরচর্চা শুরু করার আগে কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খান। এটা শারীরিক পরিশ্রম করার আগে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে সাহায্য করে বলে জানান বার্কম্যান।
শরীরে তাৎক্ষনিক শক্তির প্রয়োজন তাই ১৫০ থেকে ২০০ ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খান। গোটা শস্য ও তাজা ফলের মধ্য থেকে এই ধরনের আঁশজাতীয় খাবার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন বেবে।
শরীরচর্চার আগে হালকা নাস্তা হিসেবে মানসম্মত কার্বোহাইড্রেট যা নিম্ন চর্বি ও আঁশ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ এমন খাবার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের কাইন্ড হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস কমিউনিকেশন্স’য়ের বিশেষজ্ঞ স্টেফিনি পেরুজ্জা। তিনি আধা আউন্স কাঠবাদাম অথবা এক টেবিল-চামচ বাদামের মাখন খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ব্যায়াম করার পরে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট খান
ব্যায়ামের পরে শরীরের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ৩০ মিনিটের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন বার্কম্যান।
শরীরচর্চার পরে পেশি পুনর্গঠনের জন্য প্রোটিন দরকার। এটা শরীরের অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবারহ করে এবং ব্যায়াম করার সময় গ্লাইকোজেনের সঞ্চয় শেষ হয়ে যায়। তাই কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার ফলে এর ঘাটতি পূরণ হয় বলে ব্যাখ্যা করেন বার্কম্যান ।
ব্যায়াম করার ৪৫ মিনিটের মধ্যে খাওয়ার কথা বলেন বেবে। এতে কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের অনুপাত ২.১ থেকে ৪.১ পর্যন্ত। চাইলে তাজা ফলের সঙ্গে খাঁটি দই ও বাদাম অথবা স্লাইস টোস্টের সঙ্গে কলা ও বাদামের মাখন খেতে পারেন।
রাতে খান জটিল শর্করা
বেবে’র মতে, কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হল রাতের খাবার সময়। কারণ গবেষনায় দেখা গেছে, সন্ধ্যায় কার্বোহাইড্রেট খাওয়া হলে তা উপকারী হরমোন ল্যাপ্টিন ও অ্যাডিপোনেক্টিন এবং প্রোটিন যা ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
দ্যা আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফল থেকে বেবে বলেন, “সারাদিন প্রোটিন খাওয়াই শরীরের জন্য ভালো।”
এই গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক দ্বিগুণ প্রোটিন গ্রহণ করা হলে তা পেশি গঠনে, চর্বি কমাতে এবং শরীরচর্চার সময় অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
চাইলে তিন থেকে পাঁচ ভাগে ভাগে প্রোটিন গ্রহণ করতে পারেন। প্রতিবার খাওয়ার সময় ৩০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করারা পরামর্শ দেন বেবে।
এইভাবে অল্প অল্প করে অনেক ভালোভাবে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন যোগ করতে পারেন।
যদি শরীরের জ্বালানি ও শক্তির চাহিদা পূরণ করতে চান তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও খাবারের সময়সূচি মেনে চলুন। এতে দেহ সুগঠিত হবে ও সুস্থ থাকবে।